পেসমেকার কী এবং কার প্রয়োজন
২৪ অক্টোবর ২০২৪, ১২:০৩ এএম | আপডেট: ২৪ অক্টোবর ২০২৪, ১২:০৩ এএম
মানব দেহের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ হলো হৃদপিন্ড বা হার্ট। যা সমস্থ শরীরে রক্ত পাম্প করার কাজ করে। দেহের বুকের মধ্য প্রকোষ্ঠে ফুসফুস দুইটির মাঝখানে পেশীবহুল অঙ্গটির নাম হৃদপিন্ড। তবে এটি বাম দিকে তুলনায় স্ফীত। তাই বামদিকে রয়েছে বলে অনুভূত হয়। একজন প্রাপ্ত বয়স্ক মানুষের হৃদপিন্ডের ওজন প্রায় ২৫০-৩৫০ গ্রাম। কোনে কারণে হৃদপিন্ডের হৃদস্পন্দনে যদি দুর্বলতা দেখা দেয় বা অনিয়ন্ত্রিত হৃদস্পন্দন হয় তখন হৃদপিন্ডের কাজ সচল রাখার জন্য বিকল্প ব্যবস্থার জন্য যে ব্যাটারি চালিত যে যন্ত্র বুকের চামড়ার নীচে ব্যবহার করা হয় তাঁর নাম পেসমেকার।
* ইতিহাস: ১৯৫৮ সালে হৃদস্পন্দনের শব্দ শোনার জন্য কম্পন যন্ত্র তৈর করতে গিয়ে পেসমেকারটি আবিষ্কার করেন যুক্তরাষ্ট্রের উইলসন গ্রেটব্যাচ। ১৯৬০ সালে সর্বপ্রথম মানুষের শরীরে পেসমেকার স্থাপন করা হয়। স্থাপন করা এই রোগী ১৮ মাস বেঁচে ছিলেন।
* পেসমেকার কী এবং কেন: অসুস্থ ও দুর্বল হৃদপিন্ড বিদ্যুৎ তরঙ্গ সৃষ্টি করে স্বাভাবিক স্পন্দন হার ফিরিয়ে আনার ও নিয়ন্ত্রণের উদ্যেশ্যে বুকে বা পেটের চামড়ার নিচে স্থাপিত ছোট একটি যন্ত্রেরই নাম হলো পেসমেকার। হৃদপিন্ডের সুস্থতা পরিমাপের প্রাথমিক ধাপ হলো হৃদস্পন্দনের পরীক্ষা-নিরীক্ষা। মানুষের স্বাভাবিক হৃদস্পন্দনের হার প্রতি মিনিটে ৬০-৯০ বার। হৃদস্পন্দন স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি বা ধীরগতি কিংবা অনিয়ন্ত্রিত হলে অর্থাৎ অস্বাভাবিক স্পন্দন হলে তাকে বলা হয় অ্যারিথমিয়া। এই অ্যারিথমিয়ার হাত থেকে দেহকে রক্ষা করার জন্য বা সুস্থতা ফিরিয়ে আনার জন্য এই পেসমেকার ব্যবহার করা হয়। যখন দরকার হয়: হৃদস্পন্দন যদি স্বাভাবিকের চেয়ে কম হয় তখন হৃদস্পন্দন স্বাভাবিক রাখতে পেসমেকার প্রয়োজন হয়। নানা কারণে হৃদপিন্ডের স্পন্দন গতি কমে যেতে পারে।
তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য কারনগুলো হলো ইসকেমিক হার্ট ডিজিজ হার্টের অপারেশন, জন্মগত ক্রুটি, হার্টের প্রদাহ, ইত্যাদি কারণে হৃদপিন্ডের স্পন্দন অস্বভাবিকভাবে কমে যেতে পারে। আবার হৃদস্পন্দন যদি অনিয়মিত বা দ্রুতগতি হযয়ে পড়ে তখন পেসমেকার স্থাপন করা প্রয়োজন হয়। হৃদস্পন্দনে হৃদস্পন্দন কমার লক্ষণ : আমাদের দেহের হৃদপিন্ডের স্পন্দনের গতি প্রতি মিনিটে ৬০ থেকে ৯০ বার এই গতি যদি কোনো কারণে কমে যায় তখন শরীরে নানা লক্ষণ প্রকাশ পায়। যেমন মাথা ঝিমঝিম করা, মাথা ঘুরানো, শরীরে ঘাম হওয়া, চোখে সরষে ফুল দেখা, দুর্বল লাখা, বুক ধড়ফর করা, হঠাৎ পড়ে যাওয়া, অজ্ঞান হওয়া ইত্যাদি।
গঠন ও কর্মপদ্ধতিঃ পেসমেকার আসলে এক ধরনের ক্ষুদ্র ইলেক্ট্রনিক ডিভাইস। একটি লিথিয়াম ব্যাটারি, কম্পিউটারাইজড জেনারেটর ও শীর্ষে সেন্সর যুক্ত কতগুলো তার নিয়ে একটি পেসমেকার গঠিত। সেন্সরগুলোকে ইলেক্ট্রোড বলে। পেসমেকারে অপরিবাহী তারযুক্ত ১ থেকে ৩টি তার থাকে। পেসমেকারের তারকে লিড বলে।
হৃদপিন্ডের বিভিন্ন প্রকোষ্ঠের তার প্রবেশের ধরন অনুযায়ী পেসমেকার ৩ প্রকার। এক প্রকোষ্ঠ পেসমেকার: এ ধরনের পেসমেকারে একটি তার থাকে। যা জেনারেটর থেকে হৃদপিন্ডের শুধু অ্যার্টিয়াম বা ডান ভিন্ট্রিকলে বিদ্যুৎ তরঙ্গ বহন করে। দ্বি- প্রকোষ্ঠ পেসমেকার : এ ধরনের পেসমেকারে দুইটি তার থাকে, যা জেনারেটর থেকে হৃদপিন্ডে দুই প্রকোষ্টে অর্থাৎ ডান অ্যার্টিয়াম ও ডান ভেন্ট্রিকলে বিদ্যুৎ তরঙ্গ বহন করে। তিন-প্রকোষ্ঠ পেসমেকার : এ ধরনের পেসমেকারে তিনটি তার থাকে যার একটি জেনারেটর থেকে ডান অ্যান্টিয়ামে, আরেকটি ডান ভেন্ট্রিকলে এবং অন্যটি বাম ভেন্ট্রিকলে বিদ্যুৎ তরঙ্গ বহন করে। এটি অত্যন্ত দুর্বল হৃদপেশির হৃদপিন্ডে স্থাপন করা হয়। পেসমেকার এক্ষেত্রে ভেন্ট্রিকল দুইটিকে সংকোচন ক্ষমতার উন্নতি ঘটিয়ে রক্ত প্রবাহ উন্নতি ঘটায়।
যে ভাবে কাজ করে: হৃদপিন্ডের বৈদ্যুতিক তরঙ্গ পর্যবেক্ষণ করে প্রয়োজনবোধে পেসমেকার তাৎক্ষনিক ভাবে বৈদ্যুতিক সংকেতের মাধ্যমে হৃপিন্ডের গতি নিয়ন্ত্রণ করতে পারে এবং হৃদপিন্ডের বৈদ্যুতিক তরঙ্গ স্বাভাবিক অবস্থায় এলে পেসকোর স্বয়ংক্রিয়ভাবে বন্ধ হয়ে হৃদপিন্ডকে স্বাভাবিক গতিতে চলতে সাহায্য করে। পেসমেকার থাকা কালে হৃদপিন্ড তার নিজ গতিত চলে।
* সতর্কতা: বুকের যে পাশে পেসমেকার স্থাপন করা হয়েছে। সে দিকের কানে মোবাইল ফোন ব্যবহার করা উচিৎ নয়।* উচ্চ ক্ষমতাসম্পন বৈদ্যুতিক ও চুম্বকীয় ক্ষেত্র থেকে দূরে থাকতে হবে * পেসমেকারের অপারেশনের স্থান নখ দিয়ে চুলকানো বা হাত দিয়ে চাপ দেওয়া বা নাড়া চাড়া করা যাবে না।* হৃদপিন্ডের গতি অনিয়ন্ত্রিত হলে বা কমে গেলে লাগানোর আগের অসুবিধা দেখা দিলে দ্রুত হাসপাতালের জরুরী বিভাগে যেতে হবে বা হৃদরোগ বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিতে হবে। * লাগানোর একমাস বা ৩ মাস ৬ মাস বা ০১ বছর পর চেক আপের জন্য অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ নিত হবে। ভারী কাজ কর্ম বা বোঝা এবং চলাফেরা সর্তকতার সাথে করা উচিৎ।
মোঃ জহিরুল আলম শাহীন
শিক্ষক স্বাস্থ্য বিষয়ক কলাম লেখক
ফুলসাইন্দ দ্বি-পাক্ষিক উচ্চ বিদ্যালয় ও কলেজ,
গোলাপগঞ্জ, সিলেট।
বিভাগ : স্বাস্থ্য
মন্তব্য করুন
আরও পড়ুন
আগামী জাতীয় নির্বাচন হবে জাতির জন্য কঠিন নির্বাচন
ভারত বিরোধী স্লোগানে উত্তাল খুলনা
রেকর্ডের মালা গেঁথে বাংলাদেশের সিরিজ জয়
মমতা ব্যানার্জির জাতিসংঘের শান্তিরক্ষী বাহিনী পাঠানোর প্রস্তাবটি বাস্তবতা বিবর্জিত গালগল্প
গত সাড়ে ১৫ বছর এ জাতি জিম্মি দশায় ছিল- জামায়াত আমির ডা.শফিকুর রহমান
বেনাপোলের বিএনপির সহ-সভাপতি দ্বীন ইসলামকে হত্যা, সাবেক তিন পুলিশ কর্মকর্তাসহ ১৬ জনের বিরুদ্ধে মামলা
গ্যাস লাইন সংযোগ সহ ১০ দফা দাবিতে সিলেটের জৈন্তাপুরে সাংবাদিক ও নাগরিক সমাজের সাথে মতবিনিময়
৬ দফার ভিত্তিতে মাসব্যাপী কর্মসূচি জাতীয় নাগরিক কমিটির
সব ভারতীয় টিভি চ্যানেলের সম্প্রচার বন্ধে হাইকোর্টে রিট
উইন্ডিজ শিবিরে নাহিদের জোড়া আঘাত
আন্তবিভাগ ফুটবল প্রতিযোগিতায় চ্যাম্পিয়ন জবির ফিন্যান্স বিভাগ
আগরতলা হাইকমিশনে ভাঙচুরের ঘটনায় ক্ষুব্ধ বাংলাদেশ
বায়তুল মোকাররমের খতিবসহ ১২ আলেমের বিরুদ্ধে সাদপন্থীদের মামলা
নেতাদের ভুল শুধরে নিয়ে জনগণের পাশে থাকার আহবান তারেক রহমানের
‘বাংলাদেশের ভাবমর্যাদা ক্ষুন্ন করতে জাতিসংঘে সেনাবাহিনীর আহবান করেছে মমতা ব্যানার্জি’
‘উগ্রহিন্দুদের আট দাবিতে বাংলাদেশকে অখণ্ড ভারতের অংশ বানানোর পরিকল্পনা চলছে’
ফুটবল মাঠে সংঘর্ষ, ৫৬ জন নিহত
বিগ ব্যাশে খেলবেন না রিশাদ
ভারতে বাংলাদেশ দূতাবাসে হামলা, ঢাবিতে ছাত্র অধিকারের বিক্ষোভ
হিন্দুত্ববাদী ভারত কোনোদিন বাংলাদেশের স্বাধীনতা মেনে নিতে পারেনি: মাহমুদুর রহমান