এই সময়ে তরমুজ খান
২৭ মার্চ ২০২৫, ১২:০২ এএম | আপডেট: ২৭ মার্চ ২০২৫, ১২:০২ এএম

এই সময়ে বাংলাদেশের হাট বাজারে যে সব ফল ফলাদি প্রচুর পরিমাণে পাওয়া যায় এবং মানব দেহের পুষ্টি চাহিদা পূরণ করে তার মধ্যে তরমুজ উল্লেখযোগ্য একটি ফল। এটি ছোট বড় সবার নিকট অতি পরিচিত ফল। গ্রীষ্মের প্রচন্ড গরমে দেহ-মন শীতল করণে তরমুজের শাঁস খাওয়ার তুলনা নেই। শুধু তাই নয় এটি যেমন শরীরকে শীলত করে তেমনি দেহের পুষ্টি সাধনের মাধ্যমে খুব্ই উপকার করে।
তরমুজের আদি নিবাস আফ্রিকায়। পর্তুগিজরা বাংলাদেশে তরমুজের আগমন ঘটায়। বর্তমানে বাংলাদেশের প্রায় সব জেলাতেই তরমুজ প্রচুর পরিমাণ চাষ হয়। অতি সহজেই সাশ্রয়ী দামে প্রত্যেক মানুষ খেতে পারে। তরমুজের ফলে থাকে মুক্ত অ্যামাইনো এসিড, আরজিনিন, গøাইমিন লাইসিন, অ্যাানিন, অ্যাসপারজিন লিউসিন ইত্যাদি। আরও থাকে ফলিক, ফেরালিক, ফ্যাফিক, কিউকারটিন, সাইটুলিন, কিউকার বিটাসিন। তরমুজ বেশ সুস্বাদু এবং প্রায় সব ভিটামিন ও অ্যান্টি-অক্সডেন্টের ভালো উৎস। তরমুজে প্রায় ৯৫ শতাংশ পানি থাকে। তাই প্রচন্ড গরমে শরীরকে ঠান্ডা রাখে এবং পানির অভাব পূরণে সাহায্য করে। যারা রোদে কাজ করেন তারা গরমে বেশী ঘামে থাকেন তারা নিয়মিত তরমুজ খেলে শরীরে দুর্বলতা কম হয়। শরীরকে কর্মক্ষম রাখতে সাহায্য করে। যারা একটু মোটা বা স্বাস্থ্য বেশী তারা শরীরের ওজন কমাতে নিয়মিত তরমুজ খান বেশ উপকার পাবেন। তরমুজে ভালো পটাশিয়াম পাওয়া যায়। আর এ পটাশিয়াম দেহের পানির ভারসাম্য হৃদপিন্ডের সুস্থ্যতা এবং দেহের রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে যথেষ্ট সাহায্য করে।
পুষ্টিবিদদের মতে তরমুজ মানব দেহের স্ট্রোক, হৃদরোগ, হাঁপানী রোগের বেশ উপকার করে। তরমুজে এমন সব উপদান রয়েছে যা খাবারকে কোষীয় শক্তিতে রূপান্তর করতে এবং অ্যান্টি-অক্সিডেন্টের কো-ফ্যাক্টর হিসেবে কাজ করে। তাছাড়া তাজা তরমুজে লাইকোপিন, বিটা-ক্যারোটিন লুটেইন, জিয়াজেস্থিন, ক্রিপ্টোজেন্থিন পাওয়া যায়। এসব ফ্লেভনয়েডস অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট দেহের ক্যান্সার কোষ বৃদ্ধি প্রতিরোধ করে। ফলে পাকস্থলির, ফুসফুসের, স্তনের, প্রোস্টেট ক্যান্সার হতে বাঁধা দেয়। তরমুজ দেহের ফ্রি র্যাডিকেলমের পরিমাণ কমায়।
পুষ্টি বিজ্ঞানীদের মতে প্রতি ১০০ গ্রাম খাবার উপযোগী তাজা তরমুজের খাদ্য উপাদান হলো জলীয় অংশ ৯৫.৮ গ্রাম, আমিষ ০.৫ গ্রাম, শ্বেত সার ৬.৫গ্রাম, ভিটামিন এ ৫৬৯ মিলিগ্রাম, ভিটামিন সি ৬ মিলিগ্রাম, আঁশ ০.২ গ্রাম, খাদ্য শক্তি ৩০ মিলিগ্রাম, চর্বি ০.২ মিলিগ্রাম, শর্করা ৩.৩ গ্রাম, ক্যাসিয়াম ১১ মিলিগ্রাম, লৌহ ৭.৯ মিলিগ্রাম, ভিটামিন বি১ ০.০৩ মিলিগ্রাম, ভিটামিন বি২ ০.০৪ মিলিগ্রাম, নিয়াসিন ০.১ মিলিগ্রাম।
তরমুজে অতি মাত্রায় ভিটামিন এ থাকায় ভিটামিন ‘এ’ এর যাবতীয় অভাব জনিত রোগ হতে বাঁচিয়ে রাখে। বিশেষ করে রাতকানা রোগ হতে মুক্ত রাখে। বাংলাদেশে প্রতি বছর প্রায় ৪০ হাজার শিশু ভিটামিন ‘এ’ এর অভাবে অন্ধ হয়ে যায়। আমরা একটু সচেতন হয়ে যদি মৌসুমী ফল খাই তাহলে পরিবারের সবাই নানা রোগ হতে মুক্তি পেতে পারি। তাছাড়া তরমুজে থাকে ভিটামিন সি যা আমাদের দাঁতের সমস্যা, চামড়ার, সৌন্দর্য, দেহের ঘাঁ শুকানো, হাপানি রোগ, সর্দি, গরম ও ঠান্ডা, জ্বর নিরাময়ে বেশ ভালো সুফল এনে দেয়।
তরমুজ অত্যান্ত রসাল ফল বলে কিডনি বা বৃক্কের জন্য খুবই উপকারী। তরমুজ রক্তে ইউরিক এসিডের পরিমান কমিয়ে রাখে। ফলে কিডনিতে সহজে কোন সমস্যা হতে পারে না। অনেকেই মনে করেন তরমুজ মিষ্টি তাই ডায়বেটিস রোগীরা খেতে চান না। এ ব্যপারটি পুরোপুরি সত্য নয়। তরমুজের পটাশিয়াম ও ম্যাগনেশিয়াম রক্তের ইনসুলিনকে সুষ্ঠুভাবে কাজ করতে শক্তি যোগায়। পুষ্টিবিদরা বলছেন ডায়বেটিস রোগীরা পরিমিত হারে খেতে পারবেন। তবে প্রত্যেক রোগী তার চিকিৎসকের পরামর্শ অনুসারে খেতে হবে। তাছাড়া তরমুজের নানা ঔষুধী গুণাগুণ রয়েছে যা নিম্নে আলোচনা করা হলোঃ
* যারা ঘনঘন সর্দিতে বা ঠান্ডাতে আক্রান্ত হন তারা নিয়মিত তরমুজ খান উপকার পাবেন।
* যাদের প্রসাবে জ্বালা পোড়া করে বা নানা সমস্যা হয় এবং পেটের আলসার ও শক্ত পায়খানা হয় তারা নিয়মিত তরমুজ খান ভালো উপকার পাবেন।
* তরমুজের রস বা শরবত টাইফয়েড জ্বরের তীব্রতা কমাতে সাহায্য করে।
* যারা গরমে বেশী দুর্বল হয়ে যান তারা তরমুজ খান পিপসাও মিটবে দুর্বলতা কমবে।
* যারা বেশী রোদে থাকেন তাদের শরীর বেশী ঘামে ফলে শরীরে পানির অভাব দেখা দেয়। এ অভাব পূরণে তরমুজ বলিষ্ট ভূমিকা পালন করে।
* তরমুজে লাইকোপেন নামে একধরনের খাদ্য উপাদান থাকে যা নানা প্রকার ক্যান্সার থেকে বাঁচিয়ে রাখে।
* তরমুজের রস পুঁদিনা পাতা ও চিনি মিশিয়ে খেলে কিডনি সুস্থ্য এবং সবল থাকে।
* তরমুজের রসের সাথে সামান্য জিরার গুঁড়া ও লবণ মিশিয়ে খেলে হার্ট অ্যাটাক বা হৃদরোগ কমে যায়।
* দেহের রক্ত শূন্যতায় তরমুজ বেশ উপকার সাধন করে।
* মুখে রোদে পোড়ার ছোপ ছোপ দাগ থাকলে তরমুজের রস ষ্ট্রেবেরির রস ও আঙ্গুরের রস একসাথে মিশিয়ে দাগে লাগালে উকার পাওয়া যায়। কয়েকদিন লাগাতে হবে।
* মূলতানি মাটিতে তরমুজ চটকিয়ে লেবুর খোসা গুঁড়ো করে লেবুর রস একসাথে মিশিয়ে মুখে এবং হাত পায়ে লাগিয়ে ১৫ মিনিট পর ধোয়ে ফেললে চামড়ার সৌন্দর্য বৃদ্ধি পায় ও মসৃণ হয়ে উঠে।
* আমাশয় রোগীরা আদা, জিরা, গোল মরিচ এবং লবণ মিশিয়ে তরমুজ খেলে উপকার পাবেন।
* যারা অপুষ্টিতে ভোগেন তাদের জন্য তরমুজ বেশ উপকারী। কাঁচা তরমুজ টুকরো টুকরো করে কেটে তা রোদে শুকিয়ে গুঁড়ো করে পাত্রে ভরে রাখুন এক কাপ দুধের সাথে এক চামচ গুঁড়ো নিয়ে সকাল বিকাল খান উপকার পাবেন। বেশী করে ফল এবং শাক সবজি খান দেহকে সুস্থ্য রাখুন।
মোঃ জহিরুল আলম-শাহীন
শিক্ষক ও স্বাস্থ্য বিষয়ক কলাম লেখক
ফুলসাইন্দ উচ্চ বিদ্যালয় ও কলেজ
গোলাপগঞ্জ, সিলেট।
মোবাইলঃ ০১৭৩১-১৯৭২৯৪
বিভাগ : স্বাস্থ্য
মন্তব্য করুন
আরও পড়ুন

ঈদ মিছিলে মূর্তি ঈদের মূল স্পিরিটের সঙ্গে সাংঘর্ষিক: হেফাজত

ফার্নান্দেসের রিয়ালে যাওয়ার ব্যাপারে যা বললেন তার কোচ

রোনালদোকে ছাড়িয়ে যেতে পারেন এমবাপে: আনচেলত্তি

উইন্ডিজের নেতৃত্ব ছাড়লেন ব্র্যাথওয়েট

ঈদের আনন্দ ৫ আগস্ট শুরু হয়েছে : শিবির সভাপতি

আমাকে যুদ্ধাপরাধের মামলায় ফাঁসানোর ভয় দেখানো হয়েছিল: জামায়াত আমির

বাকিটা জীবন বুড়িচং-ব্রাহ্মণপাড়াবাসীর পাশে থাকতে চাই : ব্যারিস্টার আব্দুল্লাহ আল মামুন

পশ্চিমবঙ্গ-গুজরাটে আতশবাজি কারখানায় বিস্ফোরণ, নিহত ২১

আমাদের চেতনার প্রাণপুরুষ আল্লামা ফুলতলী (র.)

লক্ষ্মীপুরে অস্ত্রধারীদের গুলিতে শিশু গুলিবিদ্ধ

রামুতে গুলিতে নিহতের ঘটনায় ২ টি দেশীয় তৈরি অস্ত্র উদ্ধার আটক ২

সিলেটে ৬ তলা ভবন থেকে লাফ দিয়ে এক গৃহবধুর আত্মহত্যা
ঈদ পরবর্তী শুভেচ্ছা বিনিময়ে মোরেলগঞ্জের পথে প্রান্তরে বিএনপি নেতা কাজী শিপন

ঈদে কক্সবাজার সমুদ্র সৈকত পর্যটকে মুখরিত

কুমিল্লায় বিদ্যুতের খুঁটিতে ধাক্কা বাসের, নিহত ৩

দাউদকান্দিতে এক যুবকের লাশ উদ্ধার

ঈদের পাঞ্জাবি নিয়ে বিপাকে বাবর, ডিজাইনারকে ছাঁটাই করতে বললেন ভক্তরা

লন্ডনে ঈদের জামাতে প্রকাশ্যে হাছান মাহমুদ

সুপ্রিম কোর্টে মুখ পুড়ল যোগী আদিত্যনাথের

মির্জাপুরে প্রশাসনের হস্তক্ষেপে বিরোধপূর্ণ দুই ঈদগাহসহ আড়াই শতাধিক মাঠে উৎসবমুখর পরিবেশে ঈদের জামাত