ঢাকা   বৃহস্পতিবার, ২১ নভেম্বর ২০২৪ | ৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১

বিশ্বে নতুন মারবার্গ ভাইরাস কী ও কতটা ভয়ঙ্কর?

Daily Inqilab অনলাইন ডেস্ক

২৪ মার্চ ২০২৩, ১২:০৩ পিএম | আপডেট: ৩০ এপ্রিল ২০২৩, ১১:৩৮ পিএম

আন্তর্জাতিক স্বাস্থ্য সংস্থা ‘গাভি’র মতে, আফ্রিকার বাসিন্দাদের বন্যপ্রাণীর মাংস পরিহার করা উচিত। ডব্লিউএইচও বলছে, প্রাদুর্ভাবের অঞ্চলে শূকরের সংস্পর্শ এড়ানো উচিত। ভাইরাসে আক্রান্ত পুরুষদের উপসর্গ শুরু হওয়ার এক বছর পর বা তাদের বীর্য দুইবার নেগেটিভ না হওয়া পর্যন্ত কনডম ব্যবহার করা উচিত। যারা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুদের দাফন করেন তাদেরও সংস্পর্শও এড়িয়ে চলা উচিত।

পূর্ব আফ্রিকার দেশ তাঞ্জানিয়ার উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলে মারবার্গ ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে পাঁচজনের মৃত্যু হয়েছে। উচ্চ সংক্রামক ভাইরাসটি ইবোলার সমগোত্রীয়। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে আফ্রিকার বিভিন্ন দেশে এই ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে শত শত মানুষের মৃত্যু হয়েছে।

আসুন জেনে নেওয়া যাক- মারবার্গ ভাইরাস আসলে কী ও কতটা ভয়ঙ্কর?

উৎপত্তি ও নামকরণ

মারবার্গ ভাইরাস এর আগেও ছড়িয়েছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) তথ্যানুসারে, ১৯৬৭ সালে জার্মানির মারবার্গ এবং ফ্রাঙ্কফুর্টে মারবার্গ ছড়িয়েছিল। এ ছাড়া সার্বিয়ার বেলগ্রেডেও ছড়িয়েছিল ওই ভাইরাস। পরে মারবার্গের নামানুসারেই এর নামকরণ করা হয়।

যেভাবে ছড়ায়

আফ্রিকান সবুজ বানর এবং শূকর এটির জীবাণু বহন করে। মিশরের রাওসেত ফলের বাঁদুড়ও ভাইরাসটি বহন করে। মানুষের দেহে মারবার্গ ভাইরাস প্রাণী থেকে ছড়ায় এবং শারীরিক তরলের মাধ্যমে এক দেহ থেকে আরেক দেহে সংক্রমিত হয়।

এমনকি আক্রান্তরা সুস্থ হওয়ার পরেও তাদের রক্তে বা বীর্যে পরবর্তী বেশ কয়েক মাস পর্যন্ত এই ভাইরাসের উপস্থিতি থাকতে পারে।

আক্রান্তের লক্ষণ

মারবার্গ ভাইরাসে আক্রান্ত হলে সাধারণত জ্বর, তীব্র মাথাব্যথা ও পেশি ব্যথার মতো উপসর্গ দেখা দেয়। তিন দিন পর এসব উপসর্গের সঙ্গে যুক্ত হয় পাতলা পায়খানা, পেট ব্যথা, বমি ভাব এবং বমি।

অনেক সময় এই ভাইরাসে আক্রান্তদের শরীরের বিভিন্ন অংশ থেকে রক্তক্ষরণও হয়। অত্যধিক রক্তক্ষরণের মাধ্যমেও অনেকের মৃত্যু হয়ে থাকে। এগুলো ছাড়াও মারবার্গ ভাইরাসের অন্যান্য লক্ষণ হল- ম্যালেরিয়া, টাইফয়েড, গায়ে-হাতে র‌্যাশ ও ফুসকুড়ি।

ডব্লিউএইচও-এর মতে, “এই ভাইরাসে আক্রান্তদের চেহারা দেখতে ‘ভূতের মতো’ টানা টানা লাগে, চোখকে গভীর স্থির মনে হয়, চেহারা দেখা যায় অভিব্যক্তিহীন এবং চরম অলসতায় আচ্ছন্ন।

কোন কোন দেশে মারবার্গ ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব ঘটেছে

বিষুবীয় গিনি, ঘানা, কঙ্গো গণতান্ত্রিক প্রজাতন্ত্র, কেনিয়া, দক্ষিণ আফ্রিকা, উগান্ডা ও জিম্বাবুয়ে- এসব দেশে এই ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব ঘটেছে।

এছাড়াও ২০০৫ সালে অ্যাঙ্গোলায় এই ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব ঘটেছিল। সে সময় দেশটিতে ৩০০ জনেরও বেশি মানুষ মারা গিয়েছিল। যদিও বিশ্বের বাকি অংশে গত ৪০ বছরে মারবার্গ ভাইরাসে মাত্র দু’জন মারা গেছে। এর মধ্যে একজন ইউরোপে এবং একজন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে। তাদের দু’জনই উগান্ডার গুহায় অভিযানে গিয়েছিলেন।

কী বলছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা?

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) বক্তব্য, মারবার্গ আসলে ইবোলা ভাইরাস গোষ্ঠীর অন্তর্গত। গবেষণায় প্রমাণিত, মারবার্গ ইবোলার চেয়েও দ্রুত সংক্রমণ ছড়ায়। তাই এই ভাইরাস নিয়ে সতর্ক থাকা জরুরি। সবচেয়ে উদ্বেগের বিষয় হল মারবার্গ ভাইরাস প্রতিরোধের কোনও টিকা এখনও আবিষ্কার হয়নি। তাই কোনও রকম বিপদের ঝুঁকি না নেওয়াই ভাল। মারবার্গ ভাইরাস শরীরে বাসা বেঁধেছে, তা সব সময়ে বোঝা যায় না। তাই আগে থেকেই সুরক্ষা নেওয়া প্রয়োজন। এক্ষেত্রে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার পরামর্শ- জনসমাগম এড়িয়ে চলুন। বাইরে থেকে এসে ভাল করে হাত-পা ধুয়ে নিন এবং অবশ্যই মাস্ক পরুন।

প্রতিকার

মারবার্গ ভাইরাসের কোনও চিকিৎসা নেই কিংবা এখন পর্যন্ত টিকা আবিষ্কার হয়নি। ডব্লিউএইচও বলছে, রক্তের বিভিন্ন প্রডাক্টস, ওষুধ এবং রোগ প্রতিরোধক থেরাপি তৈরি করা হচ্ছে। চিকিৎসকরা বলছেন, প্রচুর পরিমাণে পানি পান এবং উপসর্গগুলোর চিকিৎসায় রোগীর বেঁচে থাকার সম্ভাবনা বাড়ে। এছাড়া রক্ত প্রতিস্থাপনের জন্য ট্রান্সফিউশন ব্যবহার করেও চিকিৎসা দেওয়া যায়। সূত্র: বিবিসি


বিভাগ : স্বাস্থ্য


মন্তব্য করুন

HTML Comment Box is loading comments...

এই বিভাগের আরও

কাঁচকলার উপকারিতা
অপরিণত নবজাতকরাও ফিরবে স্বাভাবিক জীবনে
বিমান ভ্রমণে জেট ল্যাগ
চোখ ওঠা রোগের কারণ ও প্রতিকার
ডায়াবেটিস রোগীর হৃদরোগের ঝুঁকি
আরও

আরও পড়ুন

সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার সঙ্গে ছাত্র আন্দোলনের নেতাদের কুশল বিনিময়

সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার সঙ্গে ছাত্র আন্দোলনের নেতাদের কুশল বিনিময়

নেতানিয়াহুর বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেছে আইসিসি

নেতানিয়াহুর বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেছে আইসিসি

শিখ নেতা হত্যা, মোদীর বিরুদ্ধে গুরুতর অভিযোগ কানাডার

শিখ নেতা হত্যা, মোদীর বিরুদ্ধে গুরুতর অভিযোগ কানাডার

দলীয় ভিত্তিতে প্রশাসন সাজিয়ে কেউ ক্ষমতায় আসতে পারবে না: এ এম এম বাহাউদ্দীন

দলীয় ভিত্তিতে প্রশাসন সাজিয়ে কেউ ক্ষমতায় আসতে পারবে না: এ এম এম বাহাউদ্দীন

আদানির সঙ্গে জড়িত মোদিও: রাহুল গান্ধী

আদানির সঙ্গে জড়িত মোদিও: রাহুল গান্ধী

আইসিসির প্রধান কৌঁসুলি ২৫ ন‌ভেম্বর ঢাকায় আস‌ছেন

আইসিসির প্রধান কৌঁসুলি ২৫ ন‌ভেম্বর ঢাকায় আস‌ছেন

সোহেল-টুকু-হেলালসহ খালাস পেলেন বিএনপির ২২ নেতাকর্মী

সোহেল-টুকু-হেলালসহ খালাস পেলেন বিএনপির ২২ নেতাকর্মী

ইরানে উদ্ভাবনে নারীদের অবদান ২৪ শতাংশের বেশি

ইরানে উদ্ভাবনে নারীদের অবদান ২৪ শতাংশের বেশি

প্রকাশায় ৯৩ শতাংশ নকল করেও পদোন্নতি পান রাবি অধ্যাপক সাহাল উদ্দিন

প্রকাশায় ৯৩ শতাংশ নকল করেও পদোন্নতি পান রাবি অধ্যাপক সাহাল উদ্দিন

বোরহানউদ্দিনে নিখোঁজের দুই ঘন্টা পর লেবু বাগানে মিললো শিশুর লাশ

বোরহানউদ্দিনে নিখোঁজের দুই ঘন্টা পর লেবু বাগানে মিললো শিশুর লাশ

নাবালক ছাত্রের সঙ্গে জবরদস্তি যৌন সঙ্গম, ৩০ বছরের জেল শিক্ষিকার

নাবালক ছাত্রের সঙ্গে জবরদস্তি যৌন সঙ্গম, ৩০ বছরের জেল শিক্ষিকার

সেনাকুঞ্জে আয়োজিত সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ-এর প্রতিনিধি দলের অংশগ্রহণ

সেনাকুঞ্জে আয়োজিত সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ-এর প্রতিনিধি দলের অংশগ্রহণ

মার্কিন সংসদের নারী শৌচাগার ব্যবহার করতে পারবেন না রূপান্তরকামী এমপি

মার্কিন সংসদের নারী শৌচাগার ব্যবহার করতে পারবেন না রূপান্তরকামী এমপি

বাগেরহাটে হত্যা মামলায় যুবকের যাবজ্জীবন কারাদন্ড

বাগেরহাটে হত্যা মামলায় যুবকের যাবজ্জীবন কারাদন্ড

অন্তবর্তীকালীন সরকারের নির্দেশনা পালনের প্রত্যয় ব্যক্ত করলেন জিওসি

অন্তবর্তীকালীন সরকারের নির্দেশনা পালনের প্রত্যয় ব্যক্ত করলেন জিওসি

কুড়িগ্রামের উলিপুরে অগ্নিদগ্ধ হয়ে শিশুর মৃত্যু

কুড়িগ্রামের উলিপুরে অগ্নিদগ্ধ হয়ে শিশুর মৃত্যু

ভারতে পাচারকালে সাতক্ষীরা সীমান্ত থেকে দুই নারী উদ্ধার

ভারতে পাচারকালে সাতক্ষীরা সীমান্ত থেকে দুই নারী উদ্ধার

কুরআন-সুন্নাহর আইন ছাড়া দেশে শান্তি আসবে না : চাঁদপুরে হাবিবুল্লাহ মিয়াজী

কুরআন-সুন্নাহর আইন ছাড়া দেশে শান্তি আসবে না : চাঁদপুরে হাবিবুল্লাহ মিয়াজী

শাহজাহান ওমরকে জুতা ও ডিম নিক্ষেপ

শাহজাহান ওমরকে জুতা ও ডিম নিক্ষেপ

জীবনে উত্তম কর্ম, জ্ঞান ও উন্নত চরিত্র অর্জন করতে হলে সফল ব্যক্তিদের সান্নিধ্য অবলম্বন আবশ্যক

জীবনে উত্তম কর্ম, জ্ঞান ও উন্নত চরিত্র অর্জন করতে হলে সফল ব্যক্তিদের সান্নিধ্য অবলম্বন আবশ্যক