ঢাকাবাসীর জীবনযাত্রা উন্নয়নে কি কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে?
১৭ মার্চ ২০২৩, ০৭:৫২ পিএম | আপডেট: ৩০ এপ্রিল ২০২৩, ০৫:১৭ পিএম
কর্মসূত্রে সাভার অবস্থান করছি। ঢাকার অদূরের এই উপজেলায় বসবাসকারী মানুষের দাপ্তরিক, পারিবারিক, ব্যক্তিগত নানাবিধ কারণে প্রায়ই ঢাকা শহরে যাতায়াত করার প্রয়োজন পড়ে। ঠিক যেমন আমার অফিসের একটি টিম সম্প্রতি গিয়েছিলাম ঢাকায় অবস্থিত আমাদের হেড অফিসের একটি প্রোগ্রামে যোগ দিতে। আমাদের অফিসের সাভার ক্যাম্পাস থেকে প্রতিদিন একটি স্টাফ বাস ঢাকায় চলাচল করে। বেশ বড় আকারের এই স্টাফ বাসটিতে ধামরাই, মানিকগঞ্জ, সাভার ও এর আশপাশের এলাকা থেকে অনেকেই হেড অফিসে যাতায়াত করে। আমরা ৫ জন সহকর্মীর একটি টিম স্টাফ বাসে করে হেড অফিসে যাব বলেই আগের দিন মোটামুটি মনস্থির করে রেখেছিলাম। এর পেছনে অবশ্য বেশ কিছু কারণ ছিল। যেমন- অফিসের স্টাফ বাসে গেলে বেশ দ্রুত যাওয়া যাবে, পথে যাত্রী ওঠানামা বা অন্যান্য যাত্রীদের ভিড় বা কোনরূপ ঝক্কিঝামেলা থাকবে না। এছাড়া সবচেয়ে বড় সুবিধা অফিসের ভিতর থেকে বাসে উঠে আবারো হেড অফিসের ভিতরে নামা যাবে। এসকল সুবিধার কথা চিন্তা করে স্টাফ বাসে করে আমাদের রওনা দেওয়া। সকাল ৭টা বেজে ২০ মিনিটে সাভার ক্যাম্পাস থেকে আমাদের স্টাফ বাস ছাড়ল। অফিস টাইম সকাল ৯টার আগে হেড অফিসে পৌঁছাতে হবে। আমাদের গন্তব্য বাংলাদেশ বিজ্ঞান ও শিল্প গবেষণা পরিষদ (সাইন্স ল্যাব), ধানমন্ডি ক্যাম্পাস, গুগল ম্যাপে দেখলে আমার বর্তমান কর্মস্থল থেকে যার দূরত্ব দেখায় ৩৩ কি. মি.। এই ৩৩ কি. মি. দূরত্ব যাওয়ার জন্য আমাদের স্টাফ বাসের চালক ১ ঘণ্টা ৪০ মিনিট সময় হাতে নিয়ে রওনা দিলো।
স্টাফ বাসে যাওয়ার সময় রাস্তার দুইপাশের নানান দৃশ্য চোখে পড়ল। তার মধ্যে সামান্য কিছু এখানে উল্লেখ করলাম। সাভারের নবীনগর সমগ্র উত্তরবঙ্গ, দক্ষিণবঙ্গ এবং ঢাকাবাসীর কাছে অতি পরিচিত একটি নাম। একদিকে এখানে জাতীয় স্মৃতিসৌধ স্বগর্বে মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে আছে অন্যদিকে উত্তরবঙ্গগামী সকল পরিবহন এখান থেকে ডানে মোড় নেয়। আবার দক্ষিণবঙ্গের অধিকাংশ পরিবহনও এই নবীনগর হয়ে যাতায়াত করে। বিপরীতপক্ষে উত্তরবঙ্গ ও দক্ষিণবঙ্গ থেকে ঢাকায় প্রবেশের অন্যতম সড়ক হিসেবে নবীনগরকে বিবেচিত করা হয়। এককথায় বলা চলে হাজার হাজার পরিবহন এখান থেকে দিনরাত ২৪ ঘণ্টা নিজ নিজ গন্তব্যের দিকে ছুটে চলে। আমাদের স্টাফ বাসটি নবীনগরের ক্রসিংয়ে গিয়েই ৫ মিনিটের মতো জ্যামে আটকে ছিল। ঐ সাত সকালে রাস্তায় জ্যাম দেখে একটু হলেও অবাক হলাম। অবশ্য এখানকার জ্যাম সম্পর্কে আগে থেকেই আমার জানা ছিল। ট্রাফিক ভিড়ের কারণে ঐ জায়গায় সচারাচার জ্যাম লাগে না। সবসময় দেখা যায় লোকাল বাসগুলো যাত্রী ওঠানোর উদ্দেশ্যে ইচ্ছামত ওখানে সময়ক্ষেপণ করে। সামনে কোনরকম ট্রাফিক সিগন্যাল বা গাড়ি না থাকলেও এসব বাসের চালক ইচ্ছা করেই বসে থাকে। পিছনে দীর্ঘ যানজট লেগে গেলেও যাদের কোনো ভ্রুক্ষেপ নেই। পেছন থেকে একের পর এক হর্ন বাজলেও এসব লোকাল বাসের চালকেরা সবসময় উপেক্ষা করে। আমাদের স্টাফ বাস যখন একে একে সব গাড়িকে পেছনে ফেলে আসল তখন দেখা গেল, যে বাসের কারণে পেছনে অন্তত ৩০টি গাড়ি আটকে ছিল সেটির চালক কারও তোয়াক্কা না করে আরামছে নিজের ইচ্ছায় রাস্তা বন্ধ করে বসে আছে এবং যাত্রী উঠাচ্ছে। পেছনে দেখলাম বেশ কয়েকটি দূরপাল্লার পরিবহনও আছে, যেগুলোতে যাত্রীরা গত রাতে রওনা হয়ে গন্তব্যে পৌঁছানোর প্রহর গুনছে। কাছেই ট্রাফিক পুলিশের আনাগোনা খেয়াল করলাম। কিন্তু এই যানজট নিরসেন তাদের কোনো ভ্রুক্ষেপ চোখে পড়ল না। দেখতে পেলাম সাধারণ পোশাকের উপর বিশেষ ধরনের হাত কাটা এক ধরনের পোশাক পরা হাতে বড় বড় লাঠি নিয়ে ঘোরাফেরা করা এক বাহিনী। এদের সঠিক কোনো নাম আমার জানা নেই। তবে এখানে থেমে থাকা লোকাল পরিবহন বা লেগুনার প্রতিটি থেকে নির্দিষ্ট পরিমাণের কিছু টাকা নিয়ে তাদেরকে রাস্তা ব্লক করে ইচ্ছামত দাঁড়িয়ে থাকার অনুমতি দিচ্ছে এই বাহিনী। নবীনগর ক্রসিংয়ের সকল পাশেই ট্রাফিক পুলিশের পাশাপাশি এধরনের বিশেষ বাহিনীর তৎপরতা সবারই চোখে পড়ার কথা। ঠিক যেমন আমাদের চোখ এড়াতে পারিনি। একদিন এক লেগুনা চালকের থেকে জানতে পেরেছিলাম এদের টাকা বেশি দিলে বেশিসময় ধরে মহাসড়ক বন্ধ করে যেকোন লোকাল পরিবহন যাত্রী তোলার অনুমতি পায়। হাতে যে বড় বাঁশের লাঠির কথা বললাম সেটাও তারা মাঝেমধ্যে ব্যবহার করে, তবে টাকার মেয়াদ শেষ হয়ে যাওয়ার পরে। অর্থাৎ গাড়ির হেল্পার বা চালকের থেকে পাওয়া টাকার পরিমাণের উপর নির্ভর করে গাড়ির কতসময় থেমে যাত্রী তোলার অনুমতি মিলবে। গাড়িতে বসে আমরা সবাই বিষয়গুলো খেয়াল করছিলাম। ট্রাফিক পুলিশের সাথে এই বিশেষ বাহিনী এখানকার এই কৃত্রিম যানজটের প্রধান কারণ সেটা বুঝতে বাকি রইল না। সকাল ৯টায় অফিসের উদ্দেশ্যে সাত সকালে রওনা দিয়ে লোকাল বাস, দূরপাল্লার পরিবহনসহ আমাদের মতো স্টাফ বাসের যাত্রীরা এসকল বাহিনীর কাছে একরকমের জিম্মি বলা চলে।
যাইহোক, আমাদের স্টাফ বাসটি নবীনগরের কৃত্রিম যানজট শেষ করে ঢাকার উদ্দেশ্যে এগিয়ে চলল। এরপরে গাবতলীর আগ পর্যন্ত তেমন কোনো বড় ধরনের ট্রাফিক জ্যাম পাইনি। তাই স্বভাবতই মহাসড়কের আশপাশে দৃষ্টি গেল। দেখতে পেলাম মহাসড়কের ধার ঘেঁষে যত্রতত্র গড়ে উঠেছে ইটভাটা, বালির আড়ৎসহ বিভিন্ন কলকারখানা। দূরপাল্লার পরিবহন, লোকাল পরিবহনসহ সকল পরিবহনের সাথে পাল্লা দিয়ে চলছে এসকল ইটভাটা বা বালির আড়ৎ থেকে ইট বা বালু ভর্তি করে নিয়ে যাওয়া বড় বড় ট্রাক। যেগুলোর অনিয়ন্ত্রিত গতি, ইঞ্জিন থেকে নির্গত উচ্চমাত্রার শব্দ ও হাইড্রোলিক হর্নের শব্দে সড়কে যাতায়াতকারী সকল যাত্রীর মন মেজাজ বিগড়ে দিচ্ছে। সেইসাথে এসব ট্রাক থেকে অনবরত ঝরতে থাকা বালির কণা, ইটের গুড়ো, ইঞ্জিনের কালো ধোঁয়া অনায়াসে বাতাসে মিশে যাচ্ছে। আমাদের স্টাফ বাসটি সবদিক থেকে দরজা জানালা বন্ধ থাকার পরও জামা কাপড়ের উপর জমতে থাকা ধুলার আস্তরণ সহজেই জানান দিচ্ছে ঐসকল এলাকায় বসবাসকারী মানুষের দুর্বিষহ জীবনযাত্রা সম্পর্কে।
সাভার থেকে গাবতলী পর্যন্ত যেতে সময় লাগল ৩৫ মিনিট। এরপর ট্রাফিক জ্যাম শুরু। গাড়ি চলে না তো চলেই না। কল্যাণপুর গিয়ে ১ ঘণ্টার মতো একজায়গায় স্থির থাকলাম। ঘড়ির কাঁটা তখন ৯টা ছুঁই ছুঁই। গাড়িতে অন্য সবার ধারণা ১০টার আগে অফিসে পৌঁছানো অসম্ভব। মাঝেমধ্যে একটু জ্যাম ছাড়লেই গাড়িগুলো সব হুমড়ি খেয়ে পড়ছে, যে যার মতো আগে যাওয়ার আশায়। কেউ কেউ বারে বারে হর্ন বাজাচ্ছে আবার কেউ কেউ এদিক সেদিক চালানোর চেষ্টা করছে। সকলের একটাই উদ্দেশ্য, কে কার আগে যাবে। আর গাড়িগুলোর ভিতরে নিরীহ যাত্রীদের অনেকেই বার বার ঘড়ির দিকে তাকাচ্ছে আর হতাশা প্রকাশ করছে। গাড়িতে বসে থাকতে থাকতে একটু ঝিমুনি ভাব চলে আসল, কিন্তু জ্যাম আর ছাড়ে না। একই রাস্তায় সারি সারি রিকশা, মোটরসাইকেল, প্রাইভেটকার, বাস কারও নির্দিষ্ট কোনো লেন নেই, যে যার ইচ্ছামত চলছে। অনেক মোটরসাইকেল চালককে দেখলাম, পেছনে যাত্রীসহ দুর্বিষহ এই জ্যামের মধ্যেও জীবনের হুমকি নিয়ে বড় বড় গাড়ির পাশের ফাকফোঁকর দিয়ে ঢুকে যাচ্ছে। আমাদের বাসটিও এই জ্যামের মধ্যে থেমে থেমে চলতে চলতে অফিসে পৌঁছাল ৯টা ৪৫ মিনিটে। যারা ঢাকা শহরের আশপাশ থেকে নিয়মিত ঢাকার অফিসে যাতায়াত করেন তাঁদের জন্য এধরনের অভিজ্ঞতা অবশ্য নতুন নয়। তারপরেও নিজের কাছে বিস্ময় লাগল এইটা ভেবে যে, সামান্য ৩৩ কি. মি. পথ যেতে আমাদের সময় লেগেছে প্রায় আড়াই ঘণ্টা। জানা আছে, ঢাকা শহরের অভ্যন্তরে কোনো কোনো জায়গায় ১ কি. মি. পথ যেতেও এই আড়াই ঘণ্টা সময় লেগে যায়। যেখানে জ্যামে আটকে পড়ে নগরবাসী কাহিল হয়ে শরীরে বিভিন্ন রোগের সঞ্চার করে। কেননা, জ্যামে আটকে থাকলেও সকল গাড়ির ইঞ্জিন চালু থাকে। আর রাস্তায় চলাচলকারী মানুষ সরাসরি এসকল ইঞ্জিন থেকে অনবরত নির্গত বিষাক্ত ধোঁয়ার সম্মুখীন হয়। পাশাপাশি এই বিষাক্ত ধোঁয়া আশেপাশের বায়ুম-লকে ভারি করে তোলে, যেটা ঢাকায় বসবাসকারী সকলের জন্য হুমকি। এই ঢাকাবাসীর কথা চিন্তা করলে বেশ অবাক লাগে। সত্যিই এতটা হুমকির মুখেও কীভাবে তারা টিকে আছে সেটা এক বিস্ময়। দূষিত বায়ু সেবন ও ভেজাল খাবার খেয়ে যে মানুষগুলো একরকম টিকে আছে বিভিন্ন রোগ জীবাণুর সাথে লড়াই করে, সাত সকাল থেকে যেখানে শুরু হয় দুর্বিষহ জীবনযাত্রা আর চলতে থাকে বাসায় ফেরার আগ পর্যন্ত। বাসায় ফিরে যে শান্তিতে ঘুমাবে সেই নিশ্চয়তাটুকুও ঢাকাবাসীর নেই। একদিকে যেমন আছে ডেঙ্গু আতঙ্ক, অন্যদিকে যোগ হয়েছে ভূমিকম্প আতঙ্ক। পরিসংখ্যান বলছে, এই মুহূর্তে ঢাকায় যদি মাঝারি ধরনের ভূমিকম্পও হয় সেটা হবে সম্প্রতি তুরস্কে ঘটে যাওয়া মর্মান্তিক পরিস্থিতির চেয়েও ভয়ঙ্কর পরিস্থিতির সৃষ্টি করতে পারে। পত্রপত্রিকা বা টিভি চ্যানেলের লাইভ টক শোতে সম্প্রতি স্থান পাচ্ছে ঢাকা শহরের বায়ুদূষণ ও ভূমিকম্পের ঝুঁকি নিয়ে বিশদ আলোচনা। বায়ুদূষণ বা ভূমিকম্পের সম্ভাব্য বিপদ ও আতঙ্ক প্রশমনের নানান মতামত। ঢাকা শহরে কত মাত্রার ভূমিকম্প কোন সময়ে অর্থাৎ রাতে হলে, শেষ রাতে না মাঝরাতে আবার দিনে হলে ছুটির দিনে না কর্মদিবসে হলে কী পরিমাণ প্রাণহানি বা জানমালের ক্ষতি হবে সেই পরিসংখ্যানের অতি আধিক্য থাকলেও এই বিপদ থেকে পরিত্রাণের কোনো উদ্যোগ এখনো পর্যন্ত দৃশ্যমান নয়।
বিগত দিনে চলমান নানারকম ঘটনা বা দুর্ঘটনা ঘটে যাওয়ার পরে এমন অনেক টকশো দেখেছি। পক্ষ-বিপক্ষ নিয়ে জ্ঞান-গর্ব আলোচনার পাশাপাশি চুলচেরা বিশ্লেষণ দেখেছি। ক্ষমতাসীন দল, বিরোধী দল, সুধীজন, সমাজপতি, ব্যবসায়ী, সুশীল সমাজের বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গের উপস্থিতিতে অনেক রকমের মতামত শুনেছি। একপক্ষ অন্যপক্ষকে দোষারোপ করতে দেখেছি। কিন্তু দুর্ঘটনা প্রশমনে জ্ঞানীজন বা বিশেষজ্ঞের মতামতের বাস্তবে রূপ দেওয়া নিয়ে কোনরকম পদক্ষেপ আমরা দেখিনি। দেখিনি পরবর্তীতে যাতে ঐসকল দুর্ঘটনার পুনরাবৃত্তি না হয় সেজন্য যথাযথ ব্যবস্থা নিতে। খুবই জানতে ইচ্ছা হয়, এই টকশো বা নামিদামি ব্যক্তিবর্গের মতামতকে প্রাধান্য দিয়ে বিদ্যমান নানাবিধ সমস্যা বা দুর্ঘটনা প্রতিরোধী কোনরকম পদক্ষেপ আদৌ কখনো নেওয়া হয়েছে কিনা। নাকি এগুলো শুধুমাত্র টিভি চ্যানেল বা পত্রপত্রিকার পাতার মধ্যেই সীমাবদ্ধ রয়ে গেছে। দুর্ঘটনা ঘটার পূর্বে যদি সেগুলো প্রশমনের বিষয়ে যথাযথ উদ্যোগ নেওয়া হয় বা হতো তাহলে নিঃসন্দেহে জানমালের ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ অনেকাংশে কমিয়ে আনা সম্ভব ছিল।
আমরা ঢাকা শহরে বসবাসের অভিজ্ঞতা প্রায় দুই দশক ধরে। নিজের অভিজ্ঞতার আলোকে এইটুকু বলতে পারি, বিগত দুই দশকে ঢাকা শহরের মানুষের জীবনযাত্রা দিনকে দিন দুর্বিষহ হয়েছে এবং ক্রমাগত অবনতির দিকে এগুচ্ছে। বায়ুদূষণে লাগাতার ঢাকা শহরের শীর্ষে অবস্থান, অসহনীয় যানজটে আটকে পড়ে কাহিল অবস্থা, সামান্য ডেঙ্গু মশার কাছে অসহায় আত্মসমর্পণ, সর্বত্র চোর-ছিনতাইকারীর আধিক্য, সুপেয় পানি, বিদ্যুৎ ও গ্যাস সংকটে নগরবাসীর নাজেহাল অবস্থা ছাড়াও আরো নানাবিধ সমস্যা দিনকে দিন প্রশমনের পরিবর্তে ক্রমান্বয়ে বেড়েই চলেছে। বিগত দিনগুলোতে ঢাকা শহরকে বাসযোগ্য ও সহনশীল করার লক্ষ্যে পরিচালনা পর্ষদের দায়িত্বে থাকা বহু জনের নিকট থেকে বহুরকম আশাব্যঞ্জক প্রতিশ্রুতি থাকলেও বাস্তবে তার প্রতিফলন ঢাকাবাসী আদৌ দেখেনি। তাই ভবিষ্যতেও এই পরিস্থিতির কোনরকম উন্নতি নগরবাসী আশা করে না। ত্রুটিপূর্ণ নকশা, যত্রতত্র বিল্ডিং নির্মাণ, মাত্রারিক্ত জনসংখ্যা, প্রয়োজনীয় রাস্তাঘাটের তুলনায় অধিক সংখ্যক গাড়ি, এককথায় অপরিকল্পিত নগর ব্যবস্থাপনা ঢাকা শহরকে বিষিয়ে তুলেছে। ঢাকাকে কেন্দ্র করে গড়ে ওঠা বিভিন্ন শিল্পকলকারখানা দেশের সমগ্র জনগণকে ঢাকামুখী করতে বাধ্য করেছে। এতে করে ঢাকা শহর বহু আগে থেকেই ধারণ ক্ষমতা হারিয়েছে এবং প্রতি পদে পদে ঢাকাবাসী নানান প্রতিবন্ধকতার সম্মুখীন হচ্ছে। ঢাকার আশপাশে অবস্থিত ইটভাটা, বালুর আড়ৎ থেকে নির্গত ধুলিকণা অন্যদিকে রাস্তায় যানজটে আটকে থাকা মেয়াদোত্তীর্ণ যানবাহন থেকে নির্গত দূষিত ধোঁয়া ঢাকার বাতাসকে ভারি থেকে ভারিতর করেছে। একসময়ের তিলোত্তমা নগরী ঢাকাকে এখন প্রতিনিয়ত দূষিত বায়ুর শীর্ষে অবস্থানে বাধ্য করেছে। যদিও বায়ুদূষণ নিয়ন্ত্রণে আনতে দীর্ঘ সময়ের প্রয়োজন, সেখানে বায়ুদূষণের ব্যাপারটি কোনভাবেই পাত্তা দেওয়া হচ্ছে না এবং এই দূষণ নিয়ন্ত্রণে এখনো পর্যন্ত কোনো দৃশ্যমান পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি। ঢাকা শহরে বসবাসকারী মানুষের মধ্যে ধনীরা অধিক খরচের বিনিময়ে ভালো খাবারের দিকে নজর দিতে পারলেও টাকার বিনিময়ে বিশুদ্ধ বায়ু কিনে আনার ক্ষমতা থাকলেও তার প্রচলন এখনো পর্যন্ত শুরু হয়নি। তাই বায়ুদূষণে ধনী-গরিব নির্বিশেষে সকলে সমপরিমাণ ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছে বলে প্রতীয়মান হয়। এই দূষিত বায়ুর বিষাক্ত উপাদান সকল মানুষের শ্বাসযন্ত্রের নানাধরনের দীর্ঘস্থায়ী রোগের পাশাপাশি হৃদরোগ থেকে শুরু করে আরও জটিল রোগের শঙ্কা বাড়িয়ে দিচ্ছে, যার আশু সমাধানে যথাযথ ব্যবস্থা না নিলে সামনে বেশ ভয়াবহ অবস্থা অপেক্ষা করছে।
লেখক: গবেষক ও কলামিস্ট।
[email protected]
বিভাগ : সম্পাদকীয়
মন্তব্য করুন
আরও পড়ুন
শ্বশুরবাড়ির অদূরেই মিললো যুবকের মরদেহ
নাজিরপুরে উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আশুতোষ বেপারীর মৃত্যু
সংস্কার কমিশনের সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে প্রশাসন ক্যাডারদের সভা
সুইমিং পুলে প্রস্রাব করে নতুন বিতর্কে আল্লু অর্জুন, হয়েছে মামলা
কুড়িগ্রামে নসিমন খাদে পড়ে চালক নিহত
ভারত সীমান্তে চিন প্রদেশও মিয়ানমারের বিদ্রোহীদের দখলে
বাংলাদেশিদের অবদান শান্তিরক্ষা মিশনে বিশ্ব স্বীকৃত
গাজায় যুদ্ধের প্রভাবে বেথেলহেমে খ্রিস্টানদের বড়দিনে হতাশা, নেই আনন্দ উৎসব
গণধর্ষণ মামলার সাজাপ্রাপ্ত আসামি এক যুগ পর গ্রেপ্তার
ভূঞাপুরে শিক্ষিকাকে যৌন হয়রানির অভিযোগে প্রধান শিক্ষককে বরখাস্ত
আমরা নির্বাচন নিয়ে ধৈর্য ধরতে প্রস্তুত: জামায়াত আমির
ভূরুঙ্গামারীতে নিজ ভটভটি উল্টে যুবকের মৃত্যু
মিজানুর রহমান আজাহারীর আগমনে পেকুয়ায় দশ লক্ষ মুসল্লি সমাগমের সম্ভাবনা
ক্ষমতা ছাড়ার আগে রাশিয়ার ওপর আরেক দফা নিষেধাজ্ঞা বাইডেনের
আব্দুল্লাহ আল মামুন খান রনির উদ্যোগে শীতার্তদের মাঝে কম্বল বিতরণ
চট্টগ্রাম বোর্ডের নূরানি কেন্দ্রীয় সনদ পরীক্ষার ফলাফল প্রকাশ : পাশের হার ৯৭.৮৮%
বিপিএলের সূচি
পিআইবির উদ্যোগে তিন দিনব্যাপী কর্মশালার উদ্বোধন করেন ডঃ মানোয়ার হোসেন মোল্লা
বিজয় দিবস হ্যান্ডবল আজ শুরু
শান্তি ও মানবতার জয়গানেই খুলনায় বড়দিন উদযাপন