কর্মমুখী শিক্ষা কেন প্রয়োজন
১৮ মার্চ ২০২৩, ০৭:৫৮ পিএম | আপডেট: ৩০ এপ্রিল ২০২৩, ১১:৩৭ এএম
বাংলাদেশের শিক্ষাব্যবস্থায় বিদ্যমান সংকটগুলো কী ধরনের? এই প্রশ্নটির এক কথায় উত্তর সবাই হয়তো কমবেশি জানেন। তবে বিস্তৃত পরিসরে বলতে গেলে, এই সহজ প্রশ্নের উত্তরটা সহজ নয়। অভিভাবক হিসেবে আপনাকে প্রথম যে সংকটের সম্মুখীন হতে হয়, তা হলো, সন্তানকে কোন ধরনের স্কুলে ভর্তি করবেন? তারপর কোনো রকমে পঞ্চম শ্রেণিতে পা রাখতে না রাখতেই বাচ্চাদের শৈশবের সব আনন্দ কেড়ে নেওয়া সেই পিএসসি; কয়েক বছর না যেতে না যেতেই জেএসসি।
একজন অভিভাবক যিনি তাঁর ¯েœহের সন্তানকে কাকডাকা ভোর বেলা জোর করে ঘুম থেকে তুলে নিয়ে স্কুল কিংবা কোচিং সেন্টারের দিকে দৌড়াদৌড়ি করেন, তিনিই ভালো বলতে পারবেন এই পিএসসি কিংবা জেএসসি আমাদের কী দিয়েছে। তবে কর্তৃপক্ষকে ধন্যবাদ, তাঁরা বুঝতে পেরেছে এই ধরনের পাবলিক পরীক্ষা শিশুর মানসিক বিকাশ বাড়ায় না, ক্ষতিগ্রস্ত করে। এমন অপ্রয়োজনীয় পরীক্ষা পদ্ধতি থেকে সরে আসা অবশ্যই উত্তম সিদ্ধান্ত।
মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক পর্যায়ের শিক্ষা নিয়েও বিতর্ক কম হচ্ছে না। বিশেষ করে সবাই কমবেশি প্রশ্ন তুলছেন ‘কথিত সৃজনশীল’ পরীক্ষা পদ্ধতিতে সৃষ্টিশীলতা কতটুকু, তা নিয়ে। এরপর বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে উচ্চশিক্ষার সুযোগ পাওয়ার পরীক্ষা পদ্ধতির নাম সবাই দিয়েছেন ‘ভর্তিযুদ্ধ’। পরের প্রশ্ন, প্রচলিত শিক্ষা কতটুকু কর্মমুখী এবং সেখানে কারিগরি শিক্ষার সম্পৃক্তি কতটুকু? জীবনে খেয়ে পরে বেঁচে থাকার ক্ষেত্রে সনদনির্ভর শিক্ষা কতটুকু ভূমিকা রাখবে তা নিয়েও নানা জন নানা কথা বলছেন।
শিক্ষাব্যবস্থায় বিদ্যমান সংকটগুলোকে একপাশে রেখে এর উপযোগিতা নিয়ে প্রশ্ন করতে গেলে সবার আগে খুঁজে দেখতে হবে কর্মমুখী শিক্ষা কী এবং বাংলাদেশের শিক্ষাব্যবস্থায় সেই সুযোগ কতটুকু রয়েছে? মূলত, যে শিক্ষা ব্যবস্থায় মানুষ কোনো একটি বিষয়ে হাতে কলমে শিক্ষা লাভ করে এবং শিক্ষা শেষে জীবিকার্জনের যোগ্যতা অর্জন করে তাকেই কর্মমুখী শিক্ষা বলা যেতে পারে। তবে আমরা জানি যে, শিক্ষা মানুষের সুপ্ত সম্ভাবনার যেমন বিকাশ ঘটাতে পারে তেমনি জীবন ও জীবিকার ক্ষেত্রে তাকে সামর্থ্য ও দক্ষতা অর্জনেও সাহায্য করে।
আমাদের অজানা নয়, নানাবিধ নতুন আবিষ্কারের ফলে বিজ্ঞান আমাদের সামাজিক, অর্থনৈতিক, সাংস্কৃতিক অগ্রগতিকে ত্বরান্বিত করেছে। এর মাধ্যমে নিত্যনতুন কর্মদিগন্তও খুলে গেছে। ফলে বংশ পরম্পরায় কোনো পেশা ধরে রেখে নিশ্চিত জীবনযাপনের সময়টা আর নেই। তাই চারপাশের নিত্যনতুন যে কর্মক্ষেত্র উন্মোচিত হচ্ছে তার সঙ্গে গুরুত্ব বাড়ছে বিভিন্ন বিশেষায়িত শিক্ষার। এজন্য বিশ্বেও উন্নয়ন অগ্রযাত্রার সঙ্গে তাল মিলিয়ে বাংলাদেশেও সাধারণ শিক্ষার তুলনায় কর্মমুখী শিক্ষার গুরুত্ব বেড়ে গিয়েছে বহুগুণে।
বৃহৎ পরিসরে চিন্তা করতে গেলে চলমান বিশ্ববাজারের সঙ্গে মিল রেখে পেশা নির্বাচন করতে কর্মমুখী শিক্ষা কতটুকু গুরুত্ব পেতে পারে, এমন প্রশ্ন করছেন অনেকেই। এ প্রসঙ্গে সরাসরি কোনো উত্তর দেওয়া না গেলেও এটুকু বলা যেতে পারে যে, কর্মমুখী শিক্ষা জীবিকা অর্জনের জন্যে সম্ভাব্য পেশাগত কর্মের সঙ্গে সম্পর্কিত একটা বিশেষায়িত শিক্ষা পদ্ধতি। এটা মূলত শ্রমবাজার, কর্মস্থল ও চাহিদা সামনে রেখেই ঠিক করা হয়ে থাকে। মানুষের জীবনযাত্রার ধরন ও বৈশিষ্ট্যের ব্যাপক পরিবর্তন এবং জীবন ও জীবিকার ক্ষেত্রে ক্রমবর্ধমান প্রতিযোগিতা এর গুরুত্বকে অনেকটা উসকে দিয়েছে।
নিওলিবারেল তথা নয়া উদারতাবাদের সম্প্রসারণ কর্মমুখী শিক্ষার গুরুত্ব ও চাহিদা দিন দিন আরও বাড়িয়ে দিয়েছে। আমরা জানি, তথ্য প্রযুক্তির উন্নয়ন এক অর্থে পুরো বিশ্বকে আমাদের হাতের মুঠোয় এনে দিয়েছে। আমরা চাইলে যে কোনো মুহূর্তে বিশ্বের অন্য কোনো প্রান্তে থাকা যার সঙ্গে প্রয়োজন তার সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারি। এর মাধ্যমে শুধু কুশল বিনিময় নয়, ব্যবসা বাণিজ্য এবং শিক্ষাও প্রভাবিত হয়েছে। এর প্রভাব রয়েছে শ্রমবাজারের উপরেও। পাশাপাশি মুক্ত বাজার অর্থনীতির প্রভাবকেও এর সঙ্গে যুক্ত করা যেতে পারে, যার ফলে পুরো বিশ্বের চাহিদা ও শ্রমবাজারে পার্থক্য থাকছে খুব সামান্যই। আর এজন্যই উন্নত বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে বাংলাদেশের মতো দেশগুলোতেও গুরুত্ব ও চাহিদা বাড়ছে কর্মমুখী শিক্ষার। অন্যদিকে আমরা বিশ্বের নানা দেশে যে জনশক্তি রফতানি করে রেমিটেন্স অর্জন করছি সেখানেও এই শিক্ষাকে সম্পৃক্ত করার বিকল্প নাই। সবমিলিয়ে প্রতিযোগিতামূলক বিশ্ব শ্রমবাজারে নিজেদের অবস্থান ধরে রাখার জন্যই শিক্ষাকে আমাদের কর্মমুখী করা উচিৎ। অন্তত বাংলাদেশের মতো রেমিটেন্স নির্ভর দেশে কর্মক্ষম জনশক্তি বাইরে পাঠানোর প্রক্রিয়াকে সাবলীল ও টেকসই করার ক্ষেত্রেও কর্মমুখী শিক্ষা জরুরি।
কেউ কেউ মনে করতে পারেন, হঠাৎ পুরো বিশ্বে কী এমন পরিবর্তন দেখা দিল যাকে সামনে রেখে শিক্ষার গাঠনিক দিক ও কার্যক্রমের ক্ষেত্রে এই ধরণের পরিবর্তন আনতে হয়েছে? আমরা জানি যে, বর্তমান বিশ্বের শ্রমবাজারে ‘সার্টিফিকেট তথা সনদের থেকে কর্মক্ষমতা তথা স্কিলের গুরুত্ব অনেক বেড়ে গিয়েছে’। বেশিরভাগ বহুজাতিক কোম্পানি থেকে শুরু করে ইন্টারন্যাশনাল জায়ান্টরা তাদের কর্মীর বেতন নির্ধারণের ক্ষেত্রে কর্মক্ষমতাকে গুরুত্ব দেয়। একটা সময় যেই শ্রম নির্ধারণ করা হয়েছিল কর্মঘণ্টা হিসেবে। সম্প্রতি সেটাকে সক্ষমতার মানদ-ে যাচাই করার চেষ্টা চলছে। যেখানে অপেক্ষাকৃত স্কিলড কর্মী অনেক আনস্কিলড কর্মীর তুলনায় অনেক কম সময় কাজ করেও কয়েকগুণ বেশি বেতন পাচ্ছে। আর এগুলোর চূড়ান্ত ফলাফল হিসেবে আমরা বলতে পারি কর্মমুখী শিক্ষার গুরুত্ব বাড়ার কথা।
চ্যালেঞ্জ সৃষ্টির মূল কারণটা দক্ষতা ও অদক্ষতার প্রশ্নে। আমরা শুরু থেকেই অদক্ষ শ্রমিক রফতানি করে কম আয় করি। তার বিপরীতে অন্য অনেক দেশ বহুগুণে মুনাফা অর্জনের পাশাপাশি শ্রমিক প্রেরণের ক্ষেত্রে অনেকটাই টেকসই অবস্থানে চলে গিয়েছে। শুধুমাত্র টেকসই কর্মমুখী শিক্ষার কারণে ভারত, ভিয়েতনাম ও চীনের কর্মীরা উন্নত বিশ্বের বেশিরভাগ শ্রমবাজার নিজেদের আয়ত্বে নিয়ে নিয়েছেন। এর বাইরে জলবায়ু পরিবর্তন ও বৈশ্বিক উষ্ণতা বৃদ্ধির মতো চিরচেনা বিষয়গুলো তো রয়েছেই। সেইসঙ্গে বিশ্বের প্রতিটি দেশেই নিয়মিত বাড়ছে জনসংখ্যা। এই বাড়তি জনসংখ্যা চাপ সৃষ্টি করছে খাদ্য শিকলের উপর।
প্রতিনিয়ত কার্বন নিঃসরণ, জীবাশ্ম জ্বালানির ব্যবহারে ওজোন স্তরের ক্ষয়ের পাশাপাশি বিপর্যয় আরও ত্বরান্বিত করছে বনভূমি উজাড় এবং জলাভূমির দূষণ। তাই আমাদের পূর্বপুরুষরা এককালে যে অফুরন্ত প্রাকৃতিক সম্পদের মধ্যে বাস করে সুখে শান্তিতে জীবন কাটিয়েছেন এখন সেই সুযোগ নেই। তখন পেশাগত শিক্ষা নিয়েও তাদের ভাবতে হয়নি। ফলে কৃষিকাজ, মাছ চাষ, ফল-ফলাদির চাষ কিংবা মাছ ধরার মতো পেশাগুলোকে অবলম্বন করেও অনেকে বেশ সহজে জীবিকা নির্বাহ করেছেন। কিন্ত পরিবর্তিত বিশ্ব পরিস্থিতি নতুন একটা চ্যালেঞ্জ তৈরি করছে যা থেকে উত্তরণের পথটা বেশ বন্ধুর।
পরিবর্তিত বিশ্ব পরিস্থিতিতে এখন পরিপূর্ণ প্রাকৃতিক সম্পদে সমৃদ্ধির সেই দিন আর অফুরান সুযোগ টিকে নেই। জনসংখ্যা বিপুলভাবে বেড়ে যাওয়ায় তার প্রচ- চাপ পড়ছে সীমিত সম্পদের ওপর। তাই অল্প পরিমাণ কৃষি জমিই শুধু নয় অল্প ব্যয়ে যতটুকু সম্ভব কম সময়ে অধিক ফসল উৎপাদনের কথা ভাবতে হচ্ছে। পাশাপাশি টেকসই কৃষি বিকাশের প্রয়োজনে সার ও কীটনাশক ব্যবহারের ক্ষেত্রেও সতর্ক থাকা জরুরি হয়ে পড়েছে। এই কারণে কৃষিকাজ, পোলট্রি, গরু-ছাগল-মহিষ পালন কিংবা মাছ চাষের মতো বংশানুক্রমিক পেশাগুলোতেও বৈজ্ঞানিক ও কারিগরি জ্ঞান অপরিহার্য হয়ে পড়েছে। এগুলো একদিক থেকে যেমন নতুন কর্মসংস্থান তৈরি করেছে তেমনি উন্মুক্ত করেছে শিক্ষার নতুন ক্ষেত্র।
বাংলাদেশের চলমান শিক্ষাব্যবস্থায় কর্মমুখী শিক্ষার সুযোগ তুলনামূলক কম হওয়ায় আমরা বারংবার পিছিয়ে পড়ছি। খেয়াল করে দেখুন, ‘মাছে ভাতে বাঙালি’, ‘গোয়াল ভরা গরু, গোলা ভরা ধান’, প্রচলিত এসব প্রবাদ বাস্তবে কতটুকু টিকে আছে? নাকি সময়ের সঙ্গে সঙ্গে ফিকে হয়ে গেছে? এই প্রশ্নের উত্তর খুঁজে দেখুন। আপনি দেখবেন সেখানেই আপনার এই প্রশ্নের উত্তর আছে। খেয়াল করলে দেখবেন, যাকে বলা হচ্ছে ‘মাছে ভাতে বাঙালি’ সে প্রতিদিনের খাদ্যতালিকায় মাছ রাখতে পারছে কী?
একটি গবেষণা প্রতিষ্ঠানের প্রতিবেদনে দেখেছিলাম বিশ্বের সব থেকে কম আমিষ তথা মাছ মাংস খাওয়া দেশের তালিকায় অনেক উপরের দিকে আছে বাংলাদেশের নাম। গবেষণা প্রতিষ্ঠান স্ট্যাটিস্টা’র দেওয়া তথ্যমতে, পুরো বছরজুড়ে একজন মানুষকে ১.২৩ কিলোগ্রাম মাংস ভক্ষণেই হিমশিম খেতে হয়। অথচ, সুষম খাবারের তালিকায় এই পরিমাণ অনেক বেশি হওয়ার কথা। তাই বর্ধিত খাদ্যের যোগান দিতে গেলে অনেকই পোল্ট্রি শিল্পে আমাদের আরও মনোযোগ দিতে হবে। গরু-ছাগল-মহিষ পালনের ক্ষেত্রেও আধুনিক প্রযুক্তিকে সংযুক্ত করতে হবে। আর এই কাজে অবশ্যই আমাদের কর্মমুখী শিক্ষার কোনো বিকল্প নেই।
শুধুই কি কৃষিকাজ, মাছ চাষ আর পশুপালনের জন্য এই শিক্ষা জরুরি! অবশ্যই নয়। কারণ বাংলাদেশের বৈদেশিক বাণিজ্য, রফতানি আয় এবং রেমিটেন্স অনেকাংশে নির্ভর করে যেই পোশাক শিল্পের উপর সেখানেও টেকসই উন্নয়নের জন্য ভোকেশনাল ট্রেনিং এর প্রয়োজন রয়েছে। আমরা বিশ্বের নানা দেশে যে জনশক্তি রফতানি করি তাদের বিভিন্ন কারিগরি শিক্ষা, নার্সিং প্রশিক্ষণ ও উন্নত কৃষি প্রযুক্তির প্রশিক্ষণ দিতে পারি। এতে করে কর্মী হিসেবে তাঁদের গুরুত্ব যতটা বাড়বে, তাঁদের আয় বৃদ্ধির পাশাপাশি বাংলাদেশও অর্থনৈতিক দিক থেকে উপকৃত হবে। তবে বাংলাদেশের বিদ্যমান ব্যবস্থায় কর্মমুখী শিক্ষা বিস্তারের সম্ভাবনা অনেক সীমিত।
পরিসংখ্যানগত দিক থেকে দেখতে গেলে বাংলাদেশে কর্মমুখী শিক্ষার ক্ষেত্র ক্রমেই সম্প্রসারিত হচ্ছে। দেশে একের পর এক প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ^বিদ্যালয়, কৃষি বিশ^বিদ্যালয়, টেক্সটাইল বিশ^বিদ্যালয় ও পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট। কিন্ত অনেক বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে ইংরেজি সাহিত্য, দর্শন, রাষ্ট্রবিজ্ঞান, লোকপ্রশাসন ও সমাজকর্মের মতো বিষয় খুলে রাখা হয়েছে। এই বিষয়গুলো তো পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় এবং জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনস্থ নানা কলেজ এবং উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনেও পড়ানো হয়। আমি সন্দিহান, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে এই বিষয়গুলোর উপযোগিতা কতটুকু রয়েছে, তা নিয়ে অনেকে যখন সমালোচনা করেন এই বিষয়গুলো বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ানোর মাধ্যমে একমাত্র শিক্ষিত বেকার তৈরি বাদে তেমন কোনো লাভ হচ্ছে না। আমি তাদের কথার প্রতিবাদ করার মতো উপযুক্ত উত্তর খুঁজে পাইনি।
আমরা জানি, কম্পিউটার রিপিয়ারিং মেকানিক্স, মোটর মেকানিক কিংবা অটোমোবাইল সার্ভিসিংয়ের মতো পেশাগুলোতে প্রচুর মানুষ কাজ করছে। তবে তাঁদের কারও বিষয়ভিত্তিক কোনো ট্রেইনিং নেই। পাশাপাশি গ্রাফিক্স আর্টস ইনস্টিটিউট কিংবা ভাষা শিক্ষা ইনস্টিটিউটেও শিক্ষাদানের সুযোগ অনেক সীমিত। আমি মনে করি, এখানেও কর্মমুখী শিক্ষার দিকটি যথেষ্ট উপেক্ষিত হয়েছে। তাই সরকার ও জনগণের প্রচেষ্টায় আরো বেশি মানসম্পন্ন কর্মমুখী প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলা জরুরি। এছাড়া বস্ত্রশিল্প, সুঁচিকর্ম, জাহাজ নির্মাণ শিল্প, চিনিকল ও পাটকল, ইস্পাত শিল্প ইত্যাদি খাতে দক্ষ কারিগর সৃষ্টিতেও আমাদের দৃষ্টি দিতে হবে। তার জন্য অবশ্যই সহায়ক কর্মমুখী শিক্ষার প্রয়োজন রয়েছে।
দেশব্যাপী কারিগরি শিক্ষার জন্য অনেক প্রফেশনাল ইনস্টিটিউট ও ভোকেশনাল ট্রেনিং সেন্টার রয়েছে। এসব প্রতিষ্ঠানে স্বল্প খরচে মেকানিক্যাল, ইলেকট্রিক্যাল, সিভিল, অটোমোবাইল ইঞ্জিনিয়ারিং ইত্যাদির উপর স্বল্প ও দীর্ঘ মেয়াদি কোর্স করার ব্যবস্থা রয়েছে। সরকারি প্রতিষ্ঠানের পাশাপাশি বেসরকারি উদ্যোগেও বিভিন্ন জেলা শহরে এমনকি উপজেলা পর্যায়েও কারিগরি প্রশিক্ষণ প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠেছে। আবার কোথাও কোথাও এনজিও কর্তৃক প্রতিষ্ঠিত কারিগরি প্রশিক্ষণ প্রতিষ্ঠান থেকেও কারিগরি জ্ঞান আহরণের সুযোগ রয়েছে।
কর্মমুখী শিক্ষার ক্ষেত্র প্রসারিত হলেও তাদের জন্য কর্মক্ষেত্র কেমন হতে পারে? পাশাপাশি জাতীয় এবং আন্তর্জাতিক পরিসরে এর উপযোগিতা নির্ধারণ কিভাবে হবে। এমন প্রশ্নের উত্তর খোঁজার ক্ষেত্রে সহায়ক ভূমিকা রাখতে পারে জাতীয় শিক্ষা-সেবা পরিষদ (জাশিপ)। কয়েকজন অধ্যাপক, গবেষক এবং শিক্ষাবিদকে সঙ্গে নিয়ে আমরা যখন জাশিপ প্রতিষ্ঠা করি শুরুতে এই বিষয়গুলোকেই সর্বাধিক গুরুত্ব দিয়েছিলাম। আমরা বিভিন্ন সেমিনার সিম্পোজিয়ামে বারংবার একটা বিষয় উল্লেখ করেছি যে ‘কর্মমুখী শিক্ষার ক্ষেত্র এখন প্রসারিত হওয়া জরুরি এজন্যই যে তাদের জন্য কর্মক্ষেত্র অবারিত’।
অনেক প্রতিষ্ঠানে উপযুক্ত ব্যক্তির অভাবে তাদের প্রয়োজনীয় প্রজেক্টগুলো চালানো যাচ্ছে না। পাশাপাশি বিশ্বের নানা দেশ যখন দক্ষ জনশক্তির খোঁজ করছে আমরা উপযুক্ত ব্যক্তি না থাকায় সেখানে সাড়া দিতে পারছি না। তাই কর্মমুখী শিক্ষার বিকাশ ঘটাতে পারলে তাদের কর্মক্ষেত্র নিয়ে আমাদের আপাতত চিন্তা না করলেও চলবে। তাই শুরু থেকেই শিক্ষাকে গণমুখী ও কর্মমুখী করে তোলার চেষ্টা নিতে হবে। বাংলাদেশের নানা অঞ্চলের মানুষকে সাধারণ সনদনির্ভর শিক্ষার বদলে কর্মমুখী শিক্ষাকে গুরুত্ব দিয়ে গ্রহণ করার জন্য অনুপ্রাণিত করার বিকল্প নাই। তাদের এটুকু বোঝাতে হবে যে সাধারণ শিক্ষায় শিক্ষাজীবন শেষ করে একটা উপযুক্ত চাকরির অভাবে নিরন্তর সংগ্রাম করতে হয়, তার বিপরীতে কর্মমুখী শিক্ষা ঠিক তাই যেখানে শিক্ষার্থী শিক্ষালাভের পূর্বেই তার কর্মক্ষেত্র প্রস্তুত হয়ে থাকে। তাই কাজ আছে দেখে সেই বিষয়েই আমাদের শিক্ষা গ্রহণ করা উচিৎ। বিপরীতে অনিশ্চিত ভবিষ্যৎ সামনে রেখে খেয়ালখুশি শিক্ষা নিয়ে সাধারণ খেয়ে পরে বাঁচার জন্য একটা কাজ খুঁজতে হয়রান হওয়ার মতো বোকামির সুযোগ এখন সত্যিই সীমিত হয়ে গিয়েছে। অবশ্যই কর্মক্ষেত্রের চ্যালেঞ্জ সামনে রেখে আমাদের এমন বিষয়ে শিক্ষা নিতে হবে যা সনদধারী বেকার তৈরি না করে, বিভিন্ন সেক্টরের দক্ষ কর্মী গড়ে তোলে।
লেখক: অধ্যাপক, বাংলাদেশ উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়।
বিভাগ : সম্পাদকীয়
মন্তব্য করুন
আরও পড়ুন
গণমাধ্যমে বস্তুনিষ্ঠ সংবাদ প্রচারের ওপর গুরুত্বারোপ করলেন উপদেষ্টা
বগুড়ার ধুনট পল্লীতে জয় বাংলা স্লোগান দিয়ে ব্যবসায়ীর ৩৫ হাজার টাকা ছিনতাই
দীর্ঘ ১৩ বছর পর দেশে ফিরছেন কায়কোবাদ
সিদ্দিরগঞ্জে নির্মাণাধীন ভবনের ছাদ থেকে পড়ে বিদ্যুতায়িত, দুই শ্রমিকের মৃত্যু
নাচোলে পিয়ারাবাগানে এক গৃহবধূ খুন
৫ জানুয়ারি থেকে ৪৪তম বিসিএসের মৌখিক পরীক্ষা শুরু
নোয়াখালীর সুবর্ণচরে মোটর থেকে বৈদ্যুতিক তার খুলতে প্রাণ গেল যুবকের
কারখানায় আগুন, পরিদর্শনে হাতেম
নির্বাচনের তারিখ নিয়ে যা জানালেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার
কবি জসীমউদ্দিনের মেজ ছেলে ড. জামাল আনোয়ার আর নেই
ভাঙ্গায় দুই গ্রামবাসীর মধ্যে সংঘর্ষে নারী-পুরুষসহ আহত- ১০
আমাদের সংস্কৃতির অংশ হলো সব ধর্মের মাঝে সম্প্রীতি ও সহাবস্থান: পররাষ্ট্র উপদেষ্টা
রাতের আধারে অসহায় ব্যাক্তিদের বাড়ির দরজায় গিয়ে কম্বল দিলেন ইউএনও
জুলাই গণঅভ্যুত্থানের প্রশংসা করলেন রাহাত, জানালেন নিজ অনুভূতি
সাবেক দুদক কমিশনার জহরুল হকের পাসপোর্ট বাতিল, দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা
শ্রীপুরে ভুয়া মেজর আটক
প্রশ্ন: কিসব কারণে বিয়ের বরকত নষ্ট হয়ে যায়?
মানবাধিকার প্রতিষ্ঠার অনুপম দৃষ্টান্ত মুহাম্মদুর রাসূলুল্লাহ (সা:)
আল-কুরআন তাজকেরায়ে মীলাদ নামায়ে আম্বিয়া (আ:)
ভারত উপমহাদেশে মুসলিম সভ্যতার জাগরণে আবুল হাসান আলী নদভির শিক্ষাচিন্তা