মহান স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবস
২৫ মার্চ ২০২৩, ০৭:৫১ পিএম | আপডেট: ৩০ এপ্রিল ২০২৩, ০৭:৩৫ এএম
আজ ২৬ মার্চ। মহান স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবস। আমাদের স্বাধীনতা ৫০তম বর্ষ অতিক্রম করে ৫৩তম বর্ষে পদার্পণ করলো। ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ রাতে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী এদেশের নিরস্ত্র মানুষের ওপর অতর্কিত হামলা চালিয়ে ইতিহাসের নৃশংসতম গণহত্যার সূচনা করে। হানাদার বাহিনীর এই হামলা ও গণহত্যার বিরুদ্ধে তখনই দুর্বার প্রতিরোধ শুরু হয়ে যায়। জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে স্বাধীনতা সংগ্রামের সূচনা হয়। তাঁর ৭ মার্চের ঐতিহাসিক ভাষণ গোটা জাতিকে ঐক্যবদ্ধ করতে ও লড়াইয়ে অবতীর্ণ হতে নিয়ামক ভূমিকা পালন করে। দীর্ঘ ৯ মাসের মরণপণ সশস্ত্র যুদ্ধের মধ্য দিয়ে দেশমাতৃকা হানাদারমুক্ত হয়। মুক্তিযুদ্ধে ৩০ লাখ মানুষ শাহাদাত বরণ করেন, অসংখ্য মানুষ আহত হন, বহু মা-বোন সমভ্রম হারান, সম্পদ-সম্পত্তির বেশুমার ক্ষতি হয়। এত কিছুর বিনিময়ে অর্জিত হয় স্বাধীনতা, যার প্রতীক্ষায় যুগযুগ ধরে অপেক্ষায় ছিল দেশের মানুষ। স্বাধীনতা যেকোনো জাতির জন্য পরম আকাক্সক্ষার বিষয়। আত্মপ্রতিষ্ঠার অধিকার, গণতন্ত্র, ন্যায়বিচার, সুশাসন, অর্থনৈতিক মুক্তি, বৈষম্যের অবসান ইত্যাদি ছিল আমাদের স্বাধীনতার লক্ষ্য। এইসব লক্ষ্য অর্জনের প্রত্যাশা নিয়েই জাতি মুক্তিযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েছিল এবং বিপুল ত্যাগ ও মূল্যে স্বাধীনতার স্বপ্নের বন্দরে উপনীত হতে সক্ষম হয়েছিল। শুরুতেই স্বাধীনতার তিনটি মৌলিক লক্ষ্যের প্রতি গুরুত্ব প্রদান করা হয়েছিল। এই তিনটি মৌলিক লক্ষ্য হলো, সামাজিক ন্যায়বিচার, মানবিক মর্যাদা এবং সাম্য। এর সঙ্গে গণতান্ত্রিক অধিকার, সুশাসন ও অর্থনৈতিক মুক্তির বিষয়গুলোও ওতপ্রোতভাবে সংযুক্ত ছিল।
আমরা স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী পালন করেছি এবং করছি। স্বাধীনতার মহান স্থপতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী পালিত হয়েছে। সমৃদ্ধ দেশ গঠনই বঙ্গবন্ধু ও লাখো মুক্তিযোদ্ধার স্বপ্ন ছিল। সেই লক্ষ্য এখনো অনেক দূরে। এখন পর্যন্ত এই অঙ্গীকার-প্রতিজ্ঞা অনেকটাই অপূর্ণ রয়ে গেছে, রাজনীতি এখনো পারস্পরিক শ্রদ্ধা ও সহাবস্থানমূলক ধারায় প্রতিষ্ঠিত হয়নি। পারস্পরিক দোষারোপের রাজনীতি তীব্র হয়ে উঠেছে। গণতন্ত্র এখনো প্রাতিষ্ঠানিক রূপ লাভ করেনি। সুশাসন, ন্যায়বিচার, মানবিক মর্যাদা ও সাম্য প্রশ্নবিদ্ধ। অর্থনৈতিক মুক্তির ক্ষেত্রে বৈষম্য চরম আকার ধারণ করেছে। গভীর উদ্বেগের বিষয় এই যে, সাম্প্রতিক বছরগুলোতে জাতিকে বিভক্ত করার এক সর্বনাশা তৎপরতা চলছে। অনেকটা ইচ্ছাকৃতভাবেই এ অপতৎপরতা চলছে। অথচ জাতি ঐক্যবদ্ধ ছিল বলেই স্বাধীনতা অর্জন সম্ভবপর হয়েছিল। বলা হয়, স্বাধীনতা অর্জনের চেয়ে স্বাধীনতা রক্ষা করা অনেক কঠিন। স্বাধীনতা তখনই সুরক্ষিত থাকে যখন জাতি ইস্পাতকঠিন ঐক্যে দৃঢ়বদ্ধ থাকে। যারা জাতিকে বিভক্ত করতে তৎপর তারা মূলত স্বাধীনতাকে অরক্ষিত করে তুলছে। জাতিকে ঐক্যবদ্ধ ও একই সমতলে আনার ঐকান্তিক প্রচেষ্টা ছিল বঙ্গবন্ধুর। তিনি জানতেন এবং বিশ্বাস করতেন, স্বাধীনতা সংরক্ষণ এবং স্বাধীনতার স্বপ্ন বাস্তবায়নের জন্য সুদৃঢ় জাতীয় ঐক্য প্রয়োজন। আমাদের রাজনীতি, নির্বাচন, শাসন ইত্যাদির যে চিত্র আমরা এখন প্রত্যক্ষ করছি, তা গভীর উদ্বেগজনক। ক্ষমতা যখন মুখ্য হয়ে দাঁড়ায় এবং ক্ষমতার জন্য কর্তৃত্ববাদী প্রবণতা যখন দৃশ্যমান হয়ে ওঠে, তখন জাতির ভবিষ্যত নিয়ে শংকা জাগা স্বাভাবিক। বলা হয়, জনগণই দেশের মালিক, ক্ষমতার উৎস, অথচ বাস্তবতা হলো, জনগণের মালিকানা এখন জনগণের হাতে নেই। তারা আর এখন ক্ষমতার উৎস নয়। দেশে একতরফা ও জোর-জবরদস্তিমূলক নির্বাচন ব্যবস্থার অপসংস্কৃতি বিদ্যমান। এহেন গণতন্ত্র ও নির্বাচন ব্যবস্থায় দেশের উন্নয়ন-অগ্রগতির কাক্সিক্ষত গতি ও জনগণের প্রত্যাশা পূরণ সম্ভব নয়। স্বাধীনতার অর্ধশতক পেরিয়ে এসে আমরা দেখছি, যে লক্ষ্যসমূহ সামনে রেখে জাতির জনকের ডাকে আমরা স্বাধীনতা সংগ্রামে ঝাঁপিয়ে পড়েছিলাম সে লক্ষ্য অর্জনে এখনো আমাদের বহুদূর যেতে হবে। মানুষের অর্থনৈতিক মুক্তি, সামাজিক ন্যায়বিচার, মানবিক মর্যাদা ও বৈষম্যহীন সমাজ প্রতিষ্ঠার সেই স্বপ্ন এখনো অধরা।
গত ৫০ বছরে অর্থনৈতিকভাবে বাংলাদেশ যথেষ্ট অগ্রগতি অর্জন করতে সক্ষম হয়েছে। অনেক ক্ষেত্রেই বাংলাদেশ রোল মডেলে পরিণত হয়েছে। স্থাপত্যগত ও পরিসংখ্যানগত উন্নয়ন হয়েছে, এটা ঠিক। তবে এর বাইরেও মানুষের জীবনমান এবং মানবিকতার উন্নয়ন ঘটানো জরুরি। তীব্র অর্থনৈতিক সংকটে বেকারত্বের হার বেড়েছে, মানুষের আয় কমে গেছে। এর মধ্যে নিত্যপণ্যসহ অন্যান্য পণ্যের ঊর্ধ্বগতিতে নি¤œ ও মধ্যবিত্ত পরিবারগুলো নিদারুণ দুর্ভোগে পড়েছে। সাধারণ মানুষের এই দুর্ভোগ কমানোর জন্য জরুরি উদ্যোগ প্রয়োজন। আমাদের স্বাধীনতার অন্যতম লক্ষ্য ছিল রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক মুক্তি। আমরা এখনো অর্থনৈতিক মুক্তি লাভ করতে পারিনি। রাজনীতিতে অনৈক্য, দ্বিধাবিভক্তি, হানাহানি ও দোষারোপ আমাদের গণতান্ত্রিক ব্যবস্থাকে প্রশ্নবিদ্ধ করেছে। আমাদের জাতীয় লক্ষ্য, অর্জন ও অগ্রগতির জন্য একদিকে যেমন দেশের সব মানুষের শান্তিপূর্ণ সহাবস্থান ও ঐক্য গড়ে তোলা প্রয়োজন, অন্যদিকে আঞ্চলিক রাজনৈতিক বিরোধের ইস্যুগুলোকেও অগ্রাহ্য করা যায় না। স্বাধীনতার ৫০ বছর পেরিয়ে এখন আর পেছনে ফিরে তাকানোর সুযোগ নেই। অতীত চর্চা না করে আমাদের সামনে তাকাতে হবে। ’৪১ সালের মধ্যে উন্নত দেশে পরিণত হওয়ার যে লক্ষ্য, সে লক্ষ্য পূরণে ঐক্যবদ্ধ হয়ে এগিয়ে যেতে হবে। নিরাপদ ও শান্তিপূর্ণ জীবন নিশ্চিত করতে হবে। আঞ্চলিক ঐক্য প্রক্রিয়া এগিয়ে নিতে যেমন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারেন, তেমনি দেশে জাতীয় ঐক্য ও গণতান্ত্রিক-রাজনৈতিক পুনর্গঠনে তার ভূমিকার কোনো বিকল্প নেই। অর্থনৈতিক ও অবকাঠামোগত উন্নয়নে তিনি যে দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন, দেশের স্বাধীনতার স্বপ্ন শোষণ ও বৈষম্যমুক্ত গণতান্ত্রিক বাংলাদেশ গড়তেও তিনি অনুরূপ ভূমিকা রাখতে সক্ষম হোন, এটাই আমাদের প্রত্যাশা।
বিভাগ : সম্পাদকীয়
মন্তব্য করুন
আরও পড়ুন
গণমাধ্যমে বস্তুনিষ্ঠ সংবাদ প্রচারের ওপর গুরুত্বারোপ করলেন উপদেষ্টা
বগুড়ার ধুনট পল্লীতে জয় বাংলা স্লোগান দিয়ে ব্যবসায়ীর ৩৫ হাজার টাকা ছিনতাই
দীর্ঘ ১৩ বছর পর দেশে ফিরছেন কায়কোবাদ
সিদ্দিরগঞ্জে নির্মাণাধীন ভবনের ছাদ থেকে পড়ে বিদ্যুতায়িত, দুই শ্রমিকের মৃত্যু
নাচোলে পিয়ারাবাগানে এক গৃহবধূ খুন
৫ জানুয়ারি থেকে ৪৪তম বিসিএসের মৌখিক পরীক্ষা শুরু
নোয়াখালীর সুবর্ণচরে মোটর থেকে বৈদ্যুতিক তার খুলতে প্রাণ গেল যুবকের
কারখানায় আগুন, পরিদর্শনে হাতেম
নির্বাচনের তারিখ নিয়ে যা জানালেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার
কবি জসীমউদ্দিনের মেজ ছেলে ড. জামাল আনোয়ার আর নেই
ভাঙ্গায় দুই গ্রামবাসীর মধ্যে সংঘর্ষে নারী-পুরুষসহ আহত- ১০
আমাদের সংস্কৃতির অংশ হলো সব ধর্মের মাঝে সম্প্রীতি ও সহাবস্থান: পররাষ্ট্র উপদেষ্টা
রাতের আধারে অসহায় ব্যাক্তিদের বাড়ির দরজায় গিয়ে কম্বল দিলেন ইউএনও
জুলাই গণঅভ্যুত্থানের প্রশংসা করলেন রাহাত, জানালেন নিজ অনুভূতি
সাবেক দুদক কমিশনার জহরুল হকের পাসপোর্ট বাতিল, দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা
শ্রীপুরে ভুয়া মেজর আটক
প্রশ্ন: কিসব কারণে বিয়ের বরকত নষ্ট হয়ে যায়?
মানবাধিকার প্রতিষ্ঠার অনুপম দৃষ্টান্ত মুহাম্মদুর রাসূলুল্লাহ (সা:)
আল-কুরআন তাজকেরায়ে মীলাদ নামায়ে আম্বিয়া (আ:)
ভারত উপমহাদেশে মুসলিম সভ্যতার জাগরণে আবুল হাসান আলী নদভির শিক্ষাচিন্তা