ঢাকা   বৃহস্পতিবার, ২৬ ডিসেম্বর ২০২৪ | ১২ পৌষ ১৪৩১

হেফাজতে নারীর মৃত্যু: র‌্যাবের প্রতি অনাস্থা বাড়াবে

Daily Inqilab ইনকিলাব

২৭ মার্চ ২০২৩, ০৭:৩৩ পিএম | আপডেট: ৩০ এপ্রিল ২০২৩, ০৯:৩৬ এএম

নওগাঁয় র‌্যাবের হেফাজতে সুলতানা জেসমিন নামে এক নারীর মৃত্যু হয়েছে। তিনি নওগাঁ সদর উপজেলার চন্ডীপুর ইউনিয়নের ভূমি কার্যালয়ের অফিস সহকারী। নওগাঁ শহর থেকে তাকে আটক করা হয়। র‌্যাবের দাবি, প্রতারণার অভিযোগের প্রেক্ষিতে তাকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য গ্রেফতার করা হয়। আটকের পর তিনি অসুস্থ হয়ে পড়েন এবং মারা যান। সুলতানা জেসমিনের আত্মীয়-স্বজনের অভিযোগ, আটকাবস্থায় নির্যাতনেই তার মৃত্যু হয়েছে। এ বিষয়ে র‌্যাব-৫-এর কোম্পানি কমান্ডার বলেছেন, তার বিরুদ্ধে আর্থিক প্রতারণার একটি অর্ভিযোগ পায় র‌্যাব। তার ব্যাংক হিসাবে অস্বাভাবিক লেনদেনের অভিযোগ ছিল। ব্যাংক স্টেটমেন্ট দেখে র‌্যাব অভিযোগের সত্যতা পায়। সেই অভিযোগের ভিত্তিতে তাকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটক করে হেফাজত নেয়া হয়। কিন্তু আটকের পরপরই তিনি অসুস্থ হয়ে পড়েন। দ্রুত তাকে নওগাঁ সদর হাসপাতালে নেয়া হয়। তারপর উন্নত চিকিৎসার রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নেয়া হয়। সেখানে স্ট্রোকে তার মৃত্যু হয়। তাকে নির্যাতন করা হয়েছে বলে যে অভিযোগ করা হচ্ছে, তা সঠিক নয়। এ সম্পর্কে রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ হাসতপাতালের পরিচালক জানিয়েছেন, তারা যতটুকু জানতে পেরেছেন, র‌্যাবের জিজ্ঞাসাবাদের সময় ওই নারী পড়ে গিয়ে মাথায় আঘাত পান। সিটিস্ক্যান করে তারা জানতে পারেন, মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণে তার মৃত্যু হয়েছে। তার মাথায় একটি ছোট্ট লাল দাগ ছিল। শরীরে আর কোথাও আঘাতের চিহ্ন ছিল না। লক্ষ করার বিষয়, র‌্যাবের বক্তব্য মতে, স্ট্রোকে সুলতানা জেসমিনের মৃত্যু হয়েছে। তার পড়ে যাওয়া ও মাথায় আঘাত পাওয়ার তথ্য এখানে নেই। ওদিকে রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের মতে, মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণজনিত কারণে তার মৃত্যু হয়েছে। তিনি পড়ে গিয়ে থাকতে পারেন এবং তার মাথায় আঘাতের চিহ্নও আছে। এতে বুঝা যায়, পড়ে যাওয়া ও মাথায় আঘাত পাওয়ার ব্যাপারটি হেফাজতে থাকাকালেই হয়ে থাকতে পারে। তাই সঙ্গত প্রশ্ন, সুলতানা জেসমিনের মৃত্যুর দায় র‌্যাবের পক্ষে এড়িয়ে যাওয়া কি সম্ভব?

এরকম হেফাজতে মৃত্যু, কথিত বন্দুকযুদ্ধে মৃত্যু তথা বিচারবর্হিভূত হত্যাকা-ের অভিযোগ রয়েছে র‌্যাবের বিরুদ্ধে। কিছুদিন আগে নারায়ণগঞ্জে সোনারগাঁওয়ে র‌্যাবের অভিযানের সময় একজন বৃদ্ধ গুলিবিদ্ধ হয়ে নিহত ও অপর একজন আহত হয়। র‌্যাবের ভাষ্য মতে, র‌্যাব আত্মরক্ষার জন্য গুলি চালাতে বাধ্য হয়, যাতে ওই হতাহতর ঘটনা ঘটে। নিহত বৃদ্ধের আত্মীয়-স্বজনের বক্তব্য, তাকে র‌্যাব প্রথম মারধর ও পরে গুলি করে। এ সংক্রান্ত খবরে বলা হয়, র‌্যাবের দলটি সাদা পোশাকে এক হত্যা মামলার আসামী ধরতে যায়। এনিয়ে র‌্যাব ও গ্রামবাসীর মধ্যে তর্ক-বির্তক হয়। গ্রামবাসী তাদের ডাকাত বলে সন্দেহ করে। এমন কি সাহায্যের জন্য ৯৯৯ তে ফোন করে। এই তর্ক-বিতর্ক, হৈ চৈ ও হট্টগোলের মধ্যে র‌্যাব গুলি চালায়। পর্যবেক্ষকরা মনে করেন, দলটি র‌্যাবের পোশাকে গেলে এরকম ভুল বুঝাবুঝি ও দুঃখজনক ঘটনা হয়তো ঘটতো না। ছোটখাটো প্রতারণা, চুরিদারি বা অপরাধের অভিযোগে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে অভিযান কিংবা গ্রেফতারের দায়িত্ব এলিট ফোর্স র‌্যাবের ওপর কতটা বর্তায়, সেটা একটা বড় প্রশ্ন। মোটাদাগে যেসব অভিযোগ র‌্যাবের বিরুদ্ধে আছে, তাতে প্রতিষ্ঠান হিসেবে র‌্যাবের ভাবমর্যাদা একেবারে তলানিতে নেমে এসেছে। বিদেশে র‌্যাবের দুর্নামের শেষ নেই। দেশেও তার প্রতি মানুষের আস্থা ব্যাপকহারে কমে গেছে। স্মরণ করা যেতে পারে, বিচারবর্হিভূত হত্যাকা- ও মানবাধিকার লংঘনসহ বিভিন্ন অপরাধের অভিযোগে যুক্তরাষ্ট্র র‌্যাব ও তার শীর্ষস্থানীয় কয়েকজন কর্মকর্তার বিরুদ্ধে যে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছিল, তা এখনও বহাল আছে। নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে বারবার অনুরোধ করার পরও ইতিবাচক ফল পাওয়া যায়নি। যুক্তরাষ্ট্র র‌্যাবের কার্যক্রমের ওপর নজর রাখছে। তার কাছে তা সন্তোষজনক বলে প্রতীয়মান হলেই কেবল নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের সিদ্ধান্ত আসতে পারে। অনেকেরই মনে থাকতে পারে, নিষেধাজ্ঞা আরোপের পর র‌্যাবের আচরণ ও কার্যক্রমে প্রশংসাযোগ্য পরিবর্তন সাধিত হয়েছিল। বিচারবহির্ভূত হত্যাকা- ইত্যাদি প্রায় শূন্য নেমে এসেছিল। কিন্তু সাম্প্রতিককালে র‌্যাবের বিরুদ্ধে পূর্বতন অভিযোগের সংখ্যা বাড়ছে।
এলিটফোর্স হিসেবে র‌্যাব গঠিত হওয়ার পর সন্ত্রাসী ও জঙ্গী দমন ও মাদকবিরোধী অভিযানে তার ভূমিকা ও কৃতিত্ব ব্যাপকভাবে প্রশংসিত হয়। আরো অনেক ক্ষেত্রেই র‌্যাব আস্থার প্রতীকে পরিণত হয়। কিন্তু সে আস্থা র‌্যাব ধরে রাখতে পারেনি। নানারকম অপকর্ম ও অপরাধ তার ভাবমর্যাদাকে ভূমিতে নামিয়ে এনেছে। র‌্যাবের ভয়ে এখন মানুষ আতংকিত থাকে। দেশের আইনশৃংখলা রক্ষা ও শান্তি-নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য র‌্যাবের মতো প্রতিষ্ঠান থাকা উচিত। তবে তাকে অবশ্যই জনবান্ধব, হিতৈষি ও মানবিক হতে হবে। র‌্যাবের মধ্যে এমন কিছু কর্মকর্তা ও সদস্য থাকা অসম্ভব নয়, যারা অনৈতিক, দুর্নীতিগ্রস্ত, অপরাধপ্রবণ ও বেপরোয়া। তাদের কারণেই র‌্যাবের দুর্নাম ও অখ্যাতি হচ্ছে। প্রতিষ্ঠানের গৌরব ও খ্যাতি ফিরিয়ে আনতে হলে তাদের বিদায় করে দেওয়ার বিকল্প নেই। যে কেউ অপরাধ করলে আইন মোতাবেক তার শাস্তি হওয়া উচিত। র‌্যাবের যাদের বিরুদ্ধে এযাবৎ অভিযোগ উঠেছে, তাদের কতজনের বিচার ও শাস্তি হয়েছে, সে প্রশ্ন উঠতে পারে। দ্রুত বিচার ও শাস্তি হলে র‌্যাবের দেশ-বিদেশে দুর্নাম-অখ্যাতি দ্রুত দূর হবে বলে আশা করা যায়।


বিভাগ : সম্পাদকীয়


মন্তব্য করুন

HTML Comment Box is loading comments...

এই বিভাগের আরও

বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন শিক্ষার্থীদের যত্ন নিতে হবে
সংবিধান সংশোধন-পুনর্লিখন প্রসঙ্গে
বিশ্ব পরিস্থিতি কেমন
পিলখানা ট্রাজেডির বিচারে আশার আলো
বই আত্মার মহৌষধ
আরও

আরও পড়ুন

গণমাধ্যমে বস্তুনিষ্ঠ সংবাদ প্রচারের ওপর গুরুত্বারোপ করলেন উপদেষ্টা

গণমাধ্যমে বস্তুনিষ্ঠ সংবাদ প্রচারের ওপর গুরুত্বারোপ করলেন উপদেষ্টা

বগুড়ার ধুনট পল্লীতে জয় বাংলা স্লোগান দিয়ে ব্যবসায়ীর ৩৫ হাজার টাকা ছিনতাই

বগুড়ার ধুনট পল্লীতে জয় বাংলা স্লোগান দিয়ে ব্যবসায়ীর ৩৫ হাজার টাকা ছিনতাই

দীর্ঘ ১৩ বছর পর দেশে ফিরছেন কায়কোবাদ

দীর্ঘ ১৩ বছর পর দেশে ফিরছেন কায়কোবাদ

সিদ্দিরগঞ্জে নির্মাণাধীন ভবনের ছাদ থেকে পড়ে বিদ্যুতায়িত, দুই  শ্রমিকের মৃত্যু

সিদ্দিরগঞ্জে নির্মাণাধীন ভবনের ছাদ থেকে পড়ে বিদ্যুতায়িত, দুই শ্রমিকের মৃত্যু

নাচোলে পিয়ারাবাগানে এক গৃহবধূ খুন

নাচোলে পিয়ারাবাগানে এক গৃহবধূ খুন

৫ জানুয়ারি থেকে ৪৪তম বিসিএসের মৌখিক পরীক্ষা শুরু

৫ জানুয়ারি থেকে ৪৪তম বিসিএসের মৌখিক পরীক্ষা শুরু

নোয়াখালীর সুবর্ণচরে মোটর থেকে বৈদ্যুতিক তার খুলতে প্রাণ গেল যুবকের

নোয়াখালীর সুবর্ণচরে মোটর থেকে বৈদ্যুতিক তার খুলতে প্রাণ গেল যুবকের

কারখানায় আগুন, পরিদর্শনে  হাতেম

কারখানায় আগুন, পরিদর্শনে হাতেম

নির্বাচনের তারিখ নিয়ে যা জানালেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার

নির্বাচনের তারিখ নিয়ে যা জানালেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার

কবি জসীমউদ্দিনের মেজ ছেলে ড. জামাল আনোয়ার আর নেই

কবি জসীমউদ্দিনের মেজ ছেলে ড. জামাল আনোয়ার আর নেই

ভাঙ্গায় দুই গ্রামবাসীর মধ্যে সংঘর্ষে নারী-পুরুষসহ আহত- ১০

ভাঙ্গায় দুই গ্রামবাসীর মধ্যে সংঘর্ষে নারী-পুরুষসহ আহত- ১০

আমাদের সংস্কৃতির অংশ হলো সব ধর্মের মাঝে সম্প্রীতি ও সহাবস্থান: পররাষ্ট্র উপদেষ্টা

আমাদের সংস্কৃতির অংশ হলো সব ধর্মের মাঝে সম্প্রীতি ও সহাবস্থান: পররাষ্ট্র উপদেষ্টা

রাতের আধারে অসহায় ব্যাক্তিদের বাড়ির দরজায় গিয়ে কম্বল দিলেন ইউএনও

রাতের আধারে অসহায় ব্যাক্তিদের বাড়ির দরজায় গিয়ে কম্বল দিলেন ইউএনও

জুলাই গণঅভ্যুত্থানের প্রশংসা করলেন রাহাত, জানালেন নিজ অনুভূতি

জুলাই গণঅভ্যুত্থানের প্রশংসা করলেন রাহাত, জানালেন নিজ অনুভূতি

সাবেক দুদক কমিশনার জহরুল হকের পাসপোর্ট বাতিল, দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা

সাবেক দুদক কমিশনার জহরুল হকের পাসপোর্ট বাতিল, দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা

শ্রীপুরে ভুয়া মেজর আটক

শ্রীপুরে ভুয়া মেজর আটক

প্রশ্ন: কিসব কারণে বিয়ের বরকত নষ্ট হয়ে যায়?

প্রশ্ন: কিসব কারণে বিয়ের বরকত নষ্ট হয়ে যায়?

মানবাধিকার প্রতিষ্ঠার অনুপম দৃষ্টান্ত মুহাম্মদুর রাসূলুল্লাহ (সা:)

মানবাধিকার প্রতিষ্ঠার অনুপম দৃষ্টান্ত মুহাম্মদুর রাসূলুল্লাহ (সা:)

আল-কুরআন তাজকেরায়ে মীলাদ নামায়ে আম্বিয়া (আ:)

আল-কুরআন তাজকেরায়ে মীলাদ নামায়ে আম্বিয়া (আ:)

ভারত উপমহাদেশে মুসলিম সভ্যতার জাগরণে আবুল হাসান আলী নদভির শিক্ষাচিন্তা

ভারত উপমহাদেশে মুসলিম সভ্যতার জাগরণে আবুল হাসান আলী নদভির শিক্ষাচিন্তা