অর্থনীতিতে বহুমাত্রিক সঙ্কটের আশংকা

Daily Inqilab ইনকিলাব

২৯ মার্চ ২০২৩, ০৭:১৩ পিএম | আপডেট: ৩০ এপ্রিল ২০২৩, ০২:১৩ পিএম

দেশের অর্থনৈতিক সঙ্কট ক্রমে আরো ঘণীভূত হয়ে উঠছে। ডলার সঙ্কট উত্তরণে তৈরী পোশাক রফতানি খাত কিংবা বৈদেশিক কর্মসংস্থান কোথাও কোনো সুখবর নেই। আভ্যন্তরীণ বিনিয়োগ ও কর্মসংস্থানে স্থবিরতার পাশাপাশি বিশ্ব অর্থনীতিতে ইউক্রেন যুদ্ধের প্রতিক্রিয়ায় আক্রান্ত হচ্ছে বাংলাদেশ। গতকাল পত্রিকান্তরে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনে দেশের তৈরী পোশাক রফতানি খাতের ক্রয়াদেশ ২০ থেকে ৪০ শতাংশ কমে যাওয়ার উদ্বেগজনক খবর বেরিয়ে এসেছে। তৈরী পোশাক আমদানীকারক দেশগুলোতে অর্থনৈতিক মন্দা ও মূল্যস্ফীতির কারণে সাধারণ মানুষের ক্রয়ক্ষমতা কমে যাওয়ায় তৈরী পোশাক আমদানীকারকরা ক্রয়াদেশ কমিয়ে দিয়েছেন বলে রিপোর্টে উল্লেখ করা হয়েছে। দেশের বৈদেশি মূদ্রা আয় ও শিল্পখাতে আভ্যন্তরীণ কর্মসংস্থানের বৃহত্তম খাতটিতে এমন ধসের চিত্র দেশের আর্থ-সামাজিক অবস্থার উপর অশনি সংকেত বলে গণ্য করা হচ্ছে। তবে বিদ্যমান বৈশ্বিক বাস্তবতায় এ ধরণের পরিস্থিতিকে খুব আকষ্মিক বা অস্বাভাবিক বলা যাবে না। ডলার সঙ্কটের কারণে কাচামাল আমদানি থেকে শুরু করে রফতানি বাণিজ্যে স্থরিবতা ও অচলাবস্থার আশঙ্কা দীর্ঘদিন ধরেই চলছে। গত বছরের শেষ প্রান্তিকে তৈরী পোশাক রফতানি খাতে একমাসে ৫৮৪ মিলিয়ন ডলার বা ৫ হাজার কোটি টাকার বেশি রফতানি কমে যাওয়ার খবর পত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছিল। সরকার বা সংশ্লিষ্টদের পক্ষ থেকে কার্যকর উদ্যোগ না থাকায় এ খাতে ধস অব্যাহত রয়েছে।

বৈশ্বিক রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক বাস্তবতাকে অতিক্রম করে নিজেদের অবস্থান অটুট রাখতে যে ধরণের ব্যবস্থাপনা ও কর্মপন্থা গ্রহণ করা প্রয়োজন তার অনুপস্থিতির কারণেই অর্থনৈতিক মন্দা ক্রমে বিস্তৃতি লাভ করে চলেছে। দেশি-বিদেশি বিনিয়োগে খরা এবং বৈশ্বিক মন্দা কাটিয়ে অর্থনীতিতে গতি সঞ্চার করতে সরকারের বার্ষিক উন্নয়ন প্রকল্প(এডিপি) বাস্তবায়নে অধিক মনোযোগ নিবদ্ধ করা এবং কর্মসংস্থান বান্ধব প্রকল্পসমুহের প্রতি অগ্রাধিকার নিশ্চিত করার কথা বলা হয়েছিল। সরকারের পক্ষ থেকে সে ধরনের নীতি গ্রহণের কথা বলা হলেও বাস্তবে তার ফলাফল দেখা যাচ্ছে বিপরীত। এ সপ্তাহে পত্রিকায় প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে জানা যায়, চলতি অর্থবছরের প্রথম ৮ মাসে বার্ষিক উন্নয়ন প্রকল্পসমুহ বাস্তবায়নের হার গত ৫ বছরের মধ্যে সর্বনি¤œ। অর্থবছরের ৮ মাস পেরিয়ে গেলেও এডিপি বাস্তবায়ন হয়েছে মাত্র ৩২ শতাংশ। এডিপি বাস্তবায়নে এমন ব্যর্থতা সরকারি বিনিয়োগে অর্থনীতিতে প্রত্যাশিত গতি ও কর্মচাঞ্চল্য সৃষ্টির যে প্রত্যাশা করা হয়েছিল তা অধরাই রয়ে গেল। সেই সাথে অবকাঠামো ও মানবসম্পদ উন্নয়ন সংশ্লিষ্ট প্রকল্পগুলোর বাস্তবায়ন না হওয়ায় সামনের দিনগুলোতে অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা ও প্রত্যাশিত প্রবৃদ্ধি আরো কঠিন হয়ে পড়বে।

দেশে ডলার সঙ্কট, বিনিয়োগে মন্দা, তৈরী পোশাক রফতানিতে ধসের আশঙ্কা এবং অস্বাভাবিক মূল্যস্ফীতির কারণে সাধারণ মানুষের জীবনযাত্রা নির্বিঘœ রাখতে যথাযথ পরিকল্পনায় সরকারি বিনিয়োগ তথা এডিপি বাস্তবায়ন বৃদ্ধির উপর যখন বেশি জোর দেয়া হচ্ছে তখনি দেখা যাচ্ছে এডিপি বাস্তবায়নের হার ৫ বছরের মধ্যে সর্বনি¤œ। এর মধ্য দিয়ে সরকারের প্রত্যাশিত জনবান্ধব উন্নয়ন প্রকল্পগুলো বাস্তবায়নে সংশ্লিষ্ট দফতর ও সংস্থাগুলোর কর্মকর্তাদের দুর্নীতি, অস্বচ্ছতা, অদক্ষতাকেই দায়ী করা যায়। এ ধরণের ব্যর্থতার জন্য সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের জবাবদিহিতার সংস্কৃতি গড়ে না ওঠায় পরিস্থিতির কোনো বাস্তব পরিবর্তন হচ্ছেনা। রফতানি বহুমুখীকরণ, নতুন নতুন বাজার সৃষ্টির উপর সরকারের তাগিদ থাকলেও বিদেশি মিশনগুলোর সক্ষমতা ও সদিচ্ছা নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে। এ ক্ষেত্রে প্রথমেই সরকারকে রফতানিখাত, বৈদেশিক কর্মসংস্থান খাতসহ সংশ্লিষ্ট সব পক্ষের কাজের মধ্যে অস্বচ্ছতা ও সমন্বয়হীনতা দূর করার কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে। চরম সঙ্কটের সময়ও দেশ থেকে অর্থপাচার বন্ধ হয়নি। ডলার সংকট উত্তরণে ব্যাংকিং সেক্টরের লাগামহীন দুর্নীতি, অস্বচ্ছতা, স্বেচ্ছাচারিতা বন্ধ করে অর্থ পাচার বন্ধের বাস্তব উদ্যোগ নিতে হবে। অর্থনৈতিক সংকটের পেছনে সামাজিক-রাজনৈতিক অনিশ্চয়তা ও আস্থাহীনতা দূর করার রাজনৈতিক পদক্ষেপ গ্রহণ জরুরি হয়ে পড়েছে। এই বিশ্বায়ণের যুগে দেশকে চরম অর্থনৈতিক সংকটের মুখে ঠেলে দিয়ে রাজনৈতিক ক্ষমতাকে নিরঙ্কুশ রাখার কোনো সুযোগ নেই। অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতার জন্য রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা, দক্ষ আমলাতন্ত্র, সুশাসন ও গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক সংস্কৃতির বিকাশকে অবারিত রাখার কোনো বিকল্প নেই।


বিভাগ : সম্পাদকীয়


মন্তব্য করুন

HTML Comment Box is loading comments...

এই বিভাগের আরও

মুসলিম শাসকরা কি ইহুদিদের দাসে পরিণত হয়েছেন?
হাসিনার পতনের পর বিএনপির আট মাস
ট্রান্সশিপমেন্ট বাতিল : বৈরিতার বহিঃপ্রকাশ
প্রতিবন্ধীবান্ধব অবকাঠামোর অপ্রতুলতা
ক্ষুদ্র ও মাঝারি খাতের বিকাশে জোর দিতে হবে
আরও
X

আরও পড়ুন

ভারতজুড়ে ওয়াকফ আইন নিয়ে তীব্র বিক্ষোভ ও আইনি লড়াই

ভারতজুড়ে ওয়াকফ আইন নিয়ে তীব্র বিক্ষোভ ও আইনি লড়াই

ভক্ত, দর্শনার্থীদের পদচারণায় মুখোরিত মোরেলগঞ্জের লক্ষীখালি বারুনী স্নানোৎসব ও ধর্মীয় মাতুয়া মেলা

ভক্ত, দর্শনার্থীদের পদচারণায় মুখোরিত মোরেলগঞ্জের লক্ষীখালি বারুনী স্নানোৎসব ও ধর্মীয় মাতুয়া মেলা

ইসরায়েলি অবরোধে ত্রাণহীন গাজায় মানবিক বিপর্যয়

ইসরায়েলি অবরোধে ত্রাণহীন গাজায় মানবিক বিপর্যয়

ড. ইউনূসের নেতৃত্ব বাংলাদেশের সমৃদ্ধি আনবে, প্রত্যাশা আমিরাত প্রেসিডেন্টের

ড. ইউনূসের নেতৃত্ব বাংলাদেশের সমৃদ্ধি আনবে, প্রত্যাশা আমিরাত প্রেসিডেন্টের

নদীতে গোসল করতে নেমে প্রাণ গেল দুই বোনের

নদীতে গোসল করতে নেমে প্রাণ গেল দুই বোনের

জীবিত অভিবাসীদের ‘মৃত’ ঘোষণা করে তাড়াচ্ছে ট্রাম্প প্রশাসন

জীবিত অভিবাসীদের ‘মৃত’ ঘোষণা করে তাড়াচ্ছে ট্রাম্প প্রশাসন

বঙ্গোপসাগরে ৪ ট্রলারে ডাকাতি, গুলিবিদ্ধসহ আহত ৮

বঙ্গোপসাগরে ৪ ট্রলারে ডাকাতি, গুলিবিদ্ধসহ আহত ৮

এক সপ্তাহে যৌথ বাহিনীর অভিযানে গ্রেপ্তার ৬০৮

এক সপ্তাহে যৌথ বাহিনীর অভিযানে গ্রেপ্তার ৬০৮

নিউইয়র্কে নদীতে হেলিকপ্টার বিধ্বস্ত, শিশুসহ নিহত ৬

নিউইয়র্কে নদীতে হেলিকপ্টার বিধ্বস্ত, শিশুসহ নিহত ৬

ইসরায়েলি হামলায় গাজায় নিহত আরও ৪০ ফিলিস্তিনি

ইসরায়েলি হামলায় গাজায় নিহত আরও ৪০ ফিলিস্তিনি

রামগতিতে চাঁদা না দেয়ায় কিশোর গ্যাং সদস্যদের হামলায় দিনমজুর আহত, আটক ১

রামগতিতে চাঁদা না দেয়ায় কিশোর গ্যাং সদস্যদের হামলায় দিনমজুর আহত, আটক ১

দোয়ারাবাজার সীমান্তে ভারতীয় খাসিয়ার গুলিতে বাংলাদেশী নিহত

দোয়ারাবাজার সীমান্তে ভারতীয় খাসিয়ার গুলিতে বাংলাদেশী নিহত

ছাগলনাইয়ায় অস্ত্রসহ যুবক আটক

ছাগলনাইয়ায় অস্ত্রসহ যুবক আটক

এবার এসএসসিতে পরীক্ষার্থী কমেছে ময়মনসিংহ শিক্ষাবোর্ডে

এবার এসএসসিতে পরীক্ষার্থী কমেছে ময়মনসিংহ শিক্ষাবোর্ডে

যাত্রী বেশে সিএনজি অটোরিকশা ছিনতাই, গ্রেফতার ২

যাত্রী বেশে সিএনজি অটোরিকশা ছিনতাই, গ্রেফতার ২

নগরকান্দায় বৃষ্টিতে কাঁদায় পিচ্ছিল সড়কে মোটরসাইকেল আরোহী নিহত

নগরকান্দায় বৃষ্টিতে কাঁদায় পিচ্ছিল সড়কে মোটরসাইকেল আরোহী নিহত

সউদীতে পুতিনের সঙ্গে বৈঠক করতে পারেন ট্রাম্প

সউদীতে পুতিনের সঙ্গে বৈঠক করতে পারেন ট্রাম্প

ভারতের চেয়ে বেশি কেউ বাংলাদেশের মঙ্গল চায় না

ভারতের চেয়ে বেশি কেউ বাংলাদেশের মঙ্গল চায় না

জার্মানিতে গঠিত হচ্ছে নতুন জোট সরকার

জার্মানিতে গঠিত হচ্ছে নতুন জোট সরকার

সদরঘাটের ব্যবসায়ীকে হত্যা: স্বামী-স্ত্রীর যাবজ্জীবন কারাদণ্ড

সদরঘাটের ব্যবসায়ীকে হত্যা: স্বামী-স্ত্রীর যাবজ্জীবন কারাদণ্ড