নারীর সম্ভ্রম রক্ষায় আইনগুলো কাজে আসছে না
৩০ মার্চ ২০২৩, ০৮:২৩ পিএম | আপডেট: ৩০ এপ্রিল ২০২৩, ০৩:০৮ পিএম
ফাতেমা খাতুন (ছদ্মনাম)। বিয়ের পর ফাতেমার আপত্তি সত্ত্বেও নেশাগ্রস্থ স্বামী অন্তরঙ্গ মুহূর্তের ছবি ভিডিও ধারণ করে। এক পর্যায়ে অত্যাচার সহ্য করতে না পেরে ফাতেমা তার স্বামীকে তালাক প্রদান করে নতুন করে পড়াশুনায় মনোযোগী হয়। নেশাখোর স্বামী অন্তরঙ্গ মুহূর্তের ধারণকৃত ভিডিও ফাতেমার কলেজ গেটে কম্পিউটারের মাধ্যমে ভিডিওটি ইন্টারনেটে ছড়িয়ে দেয়। ফাতেমা বাধ্য হয়ে সম্ভ্রম রক্ষায় থানায় এজাহার দায়ের করেন। পরে মামলাটি সেসন কোর্টে বিচার হয়। মামলার তিনটি বিচার্য বিষয় সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণিত হওয়ায় পর্ণোগ্রাফী নিয়ন্ত্রণ আইন ২০১২ এর ৮(২) ও (৩) ধারায় চার বছর সশ্রম কারাদ- ও ২৫ হাজার টাকা করে শাস্তি প্রদান করে আদালত। এ আইনের অধীনে মামলা বিচার করতে গিয়ে সংশ্লিষ্ট আইনজীবী, তদন্ত কর্মকর্তা ও বিচারককেও বিব্রতকর অবস্থায় পড়তে হয়। কারণ এ মামলার সত্যতা প্রমাণ করতে গিয়ে তদন্ত কর্মকর্তা থেকে শুরু করে বিজ্ঞ আইজনীবী, মাননীয় আদালতকে একবারের জন্য হলেও ভিডিওটি অবলোকন করতে হয়েছে, যা তাদের জন্য ছিল রীতিরকম বিব্রতকর পরিস্থিতি।
এভাবে দেনমোহর মামলা থেকে শুরু করে ধর্ষণ, পর্ণোগ্রাফী অথবা যৌন হয়রানিতেও নারীকে সম্ভ্রম হারিয়ে বিচার চাইতে এসে কয়েকবার ধর্ষণের শিকার হতে হয়। প্রথমে শারীরিকভাবে, এরপর মেডিকেল রিপোর্ট তৈরিতে, তদন্তের সময়, চার্জশিট তৈরিতে, শুনানির সময়, জবানবন্দিতে, জেরার সময় ইত্যাদি। নারীর এই বার বার ধর্ষণের শিকার হওয়ার একমাত্র কারণ প্রায় সব কাজেই পুরুষের উপস্থিতি। অথচ, আমাদের সংবিধানের ২৭ অনুচ্ছেদে নারী ও পুরুষের অধিকার চর্চার বিষয়ে সমতার নিশ্চয়তা দেয়া হয়েছে। আবার অনুচ্ছেদ ১৯(৩) বলেছে, জাতীয় জীবনের সর্বস্তরে নারীদের অংশগ্রহণ ও সুযোগের সমতা রাষ্ট্র নিশ্চিত করবে। অন্যদিকে অনুচ্ছেদ ২৮(২) নিশ্চয়তা দিয়েছে যে, রাষ্ট্র ও গণজীবনের সর্বস্তরে নারী-পুরুষ সমান অধিকার লাভ করবে।
আমাদের সংবিধান কেবল সমতার নিশ্চয়তাই বিধান করেনি, ন্যায়পরায়ণতার নিশ্চয়তাও দিয়েছে বেশ কিছু অনুচ্ছেদে। তার মধ্যে অনুচ্ছেদ ২৮(৪) এবং ২৯(৩) বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। অনুচ্ছেদ ২৮(৪) নিশ্চয়তা দিয়েছে যে, সরকার নারী ও শিশুদের অনুকূলে কিংবা নাগরিকদের যে কোনো অনগ্রসর অংশের অগ্রগতির জন্য বিশেষ বিধান প্রণয়ন করতে পারবে যেখানে ২৮ অনুচ্ছেদ বাঁধা হবে না। অন্যদিকে অনুচ্ছেদ ২৯(৩) বলেছে, যে শ্রেণির কর্মের বিশেষ প্রকৃতির জন্য তা নারী বা পুরুষের পক্ষে অনুপযোগী বিবেচিত হয়, সেরকম যে কোনো শ্রেণির নিয়োগ বা পদ যথাক্রমে পুরুষ বা নারীর জন্য সংরক্ষণ করা থেকে রাষ্ট্রকে নিবৃত্ত করবে না। সুতরাং একটা বিষয় স্পষ্ট যে, ন্যায়পরায়ণতার বিষয়টিকে অন্যান্য বিষয়ের উপর প্রাধান্য দেয়া হয়েছে।
বাংলাদেশে পুরুষদের জন্য বিশেষ কোনো আইন নেই, কেবল নারীদের সম্ভ্রম রক্ষার জন্যই রয়েছে হরেক রকম আইন। যেমন- বাল্যবিবাহ নিরোধ আইন ১৯২৯ (সংশোধিত ২০১৭), যৌতুক নিরোধ আইন ১৯৮০, (সংশোধিত ২০১৮), নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন, ২০০০ (সংশোধিত-২০০৩), এসিড অপরাধ দমন আইন ২০০২, পারিবারিক সহিংসতা (প্রতিরোধ ও সুরক্ষা) আইন ২০১০, পর্নোগ্রাফি নিয়ন্ত্রণ আইন ২০১২, মানব পাচার প্রতিরোধ ও দমন আইন ২০১২ বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। এছাড়াও রয়েছে নারী উন্নয়ন নীতি ২০১১। নারীর সম্ভ্রম রক্ষার্থে এত আইন তৈরি হলেও বাংলাদেশের বিচারব্যবস্থা নারীর সম্ভ্রম রক্ষা করতে রীতিরকম ব্যর্থ হচ্ছে। বিচার চাইতে এসে নারীকে প্রতিনিয়ত চোখের পানি ফেলতে হচ্ছে, অপমানিত হতে হচ্ছে প্রতি পদে পদে।
পৃথিবীতে এমন কোন সভ্যতা খুঁজে পাওয়া যাবে না যেখানে আইনের বিকাশ হয়নি। সভ্যতা বিকাশের সাথে সাথে ‘আইন’ ধারণাটিরও ব্যাপক পরিবর্তন হয়েছে। পরিবর্তিত সময়ের সাথে তাল মিলিয়ে চলতে না পারলে আইন তার কার্যকারিতা হারায়। প্রয়োজন হয় সে আইনকে সময় উপযোগী করে তোলা। গঠনমূলক সমালোচনার মধ্যেই আইন তার অস্তিত্বের সন্ধান পায়। যাই হোক, আমাদের সংবিধানের অনুচ্ছেদ ২৮(৪) অনুযায়ী নারী অধিকার প্রতিষ্ঠায় নারী বান্ধব বিচারব্যবস্থা বা আদালত প্রতিষ্ঠা এখন সময়ের ব্যাপার মাত্র।
লেখক: বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ও আইনগ্রন্থ প্রণেতা।
বিভাগ : সম্পাদকীয়
মন্তব্য করুন
আরও পড়ুন
বাংলাদেশের বিপক্ষে যে একাদশ দিয়ে মাঠে নামছে ওয়েস্ট ইন্ডিজ
কিশোরগঞ্জের আওয়ামী লীগ নেতা আনোয়ার কামালসহ তিনজন গ্রেফতার
প্রেসিডেন্টের সঙ্গে তিন বাহিনীর প্রধানের সাক্ষাৎ
বেইজিং সংস্কৃতি ও পর্যটন ব্যুরো ও আটাবের মধ্যে চুক্তি স্বাক্ষরিত
উইন্ডিজের বিপক্ষে মাঠে নামছে বাংলাদেশ
গাজায় যুদ্ধবিরতি ছাড়া বন্দী বিনিময় হবে না : হামাস
শান্তিরক্ষা মিশন মোতায়েন করতে চায় জাতিসংঘ হাইতিতে
চকরিয়ার বিএনপি নেতা আবু তাহের চৌধুরীর মৃত্যুতে সালাহউদ্দিন আহমদ ও হাসিনা আহমদের শোক
পুতিন পারমাণবিক অস্ত্র ব্যবহার করতে দ্বিধা করবেন না : সার্বিয়া
ক্লাইমেট অর্থায়ন ইস্যুতে দেশগুলোর মধ্যে দ্বন্দ্ব
লালমোহনে দুই গ্রুপের সংঘর্ষে আহত যুবদল নেতা চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যু
ট্রাম্পের অ্যাটর্নির বিরুদ্ধে তদন্ত প্রতিবেদন আটকে গেল
‘ফিলিস্তিনের পর ইরান, সউদী ও তুরস্ক হবে পরবর্তী টার্গেট’
প্রতি বছর ৩ লাখ নথিবিহীন অভিবাসীকে বৈধতা দানের ঘোষণা স্পেনের
প্রেম-ভালোবাসা নিয়ে সবচেয়ে অসুখী দেশ জাপান-কোরিয়া
মুসলিম চিকিৎসক
শীর্ষে দিল্লি
সৈয়দ মোসাদ্দেক বিল্লাহ আল মাদানীকে জমিয়াতুল মোদার্রেসীন ও দারুননাজাত মাদরাসা’র সংবর্ধনা
ইসলামিক ফাউন্ডেশন এর বোর্ড অব গভর্নর সৈয়দ মোসাদ্দেক বিল্লাহ আল মাদানীকে জমিয়াতুল মোদার্রেসীন ও দারুননাজাত মাদরাসা’র সম্বর্ধনা
বাংলাদেশ, নেপাল ও ভুটানের মধ্যে আঞ্চলিক সহযোগিতার আহ্বান