এসব বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রয়োজন আছে কি?
০১ এপ্রিল ২০২৩, ০৮:০৩ পিএম | আপডেট: ৩০ এপ্রিল ২০২৩, ০২:১৩ পিএম
গতকাল একটি দৈনিকের প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, দেশের ৪১টি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়ার ব্যাপারে সতর্ক থাকতে শিক্ষার্থীদের পরামর্শ দেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি)। এসব বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে তিনটির অবৈধ ক্যা¤পাস আছে এবং কার্যক্রম চালাচ্ছে অননুমোদিত উপায়ে। প্রতিষ্ঠার একযুগ পার করার পরও স্থায়ী ক্যা¤পাসে না যাওয়া বিশ্ববিদ্যালয় আছে চারটি। অপর দুটিতে বোর্ড অব ট্রাস্টিজ (বিওটি) নিয়ে দ্বন্দ্বের পাশাপাশি আদালতে মামলা বিচারাধীন আছে। এছাড়া ৩২টি বিশ্ববিদ্যালয়ে রাষ্ট্রপতি তথা চ্যান্সেলর নিযুক্ত উপাচার্য নেই। বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের একাংশের কি বেহাল দশা এবং সেখানে শিক্ষার মান কতটুকু তা এ প্রতিবেদন থেকে বুঝতে অসুবিধা হয় না। বিস্ময়ের ব্যাপার হচ্ছে, ইউজিসি শিক্ষার্থীদের এসব বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়ার ক্ষেত্রে সতর্ক থাকতে বলেছে, অথচ এগুলো যে যথাযথভাবে পরিচালিত হচ্ছে না, সে ব্যাপারে কোনো ব্যবস্থা নিচ্ছে না। এ ধরনের দায়সারা ‘সর্তকতা’ জারির সিদ্ধান্ত নেয়ার অর্থ হচ্ছে, বিশ্ববিদ্যালয়গুলো চলবে এবং শিক্ষার্থীও ভর্তি হবে।
দেশের অনেক বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় নিয়ে অভিযোগের অন্ত নেই। এসব বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীদের জন্য পর্যাপ্ত শিক্ষক, ল্যাব, ক্যাম্পাস থেকে শুরু করে অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা নেই। একটি ভবনেই পুরো বিশ্ববিদ্যালয়ের অবস্থান। বিভিন্ন অলি-গলিতে একটি ভবন ভাড়া নিয়ে সাইনবোর্ড ঝুলিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় চালানো হচ্ছে। দেশের জেলা ও বিভাগীয় শহরগুলোতে এমন বহু বিশ্ববিদ্যালয় চোখে পড়ে। শিক্ষাকে পুঁজি করে শুধুমাত্র ব্যবসা করার জন্য এসব বিশ্ববিদ্যালয় খোলা হয়েছে। একটি বিশ্ববিদ্যালয় যেভাবে গড়ে উঠার কথা, তার কোনো কিছুই সেগুলোতে নেই। এসব বিশ্ববিদ্যালয়ের বেশিরভাগেরই মালিক প্রভাবশালী ব্যক্তি কিংবা সরকারসংশ্লিষ্ট। শিক্ষার মূল লক্ষ্য পাশ কাটিয়ে শুধু ব্যবসায়িক উদ্দেশ্যে এসব বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। এসব বিশ্ববিদ্যালয়ে উপাচার্য থাকে না, থাকলেও কারো নাম ব্যবহার করে দেখানো হয়। স্থায়ী শিক্ষক খুব কমই থাকে। বিভিন্ন সরকারি ও প্রতিষ্ঠিত বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা এসব বিশ্ববিদ্যালয়ে খ-কালীন হিসেবে ক্লাস নিয়ে থাকে। কখনো কখনো নিয়মিত ক্লাস নিতে পারে না। ফলে শিক্ষার্থীদের ধারাবাহিক পড়ালেখা বলতে কিছু থাকে না। এভাবে বছরের পর বছর ধরে অসম্পূর্ণ পড়ালেখা দিয়ে সার্টিফিকেট অর্জন করে। শিক্ষার্থী হয়ে উঠে সার্টিফিকেট সর্বস্ব। এতে শিক্ষার্থী বাস্তব জীবনে যে পরিস্থিতির মুখোমুখি হয়, তা অত্যন্ত হতাশার এবং কষ্টের। কারণ, সে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পাস করলেও চাকরি জীবনে প্রবেশের সময় প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষায় টিকতে পারে না। বেকারত্ব বহন করা ছাড়া আর কোনো উপায় থাকে না। সে না পারে কোনো অডজব করতে, না পায় কোনো কাক্সিক্ষত জব। কারণ, সার্টিফিকেট লাভ করায় তার ভেতর একধরনের আত্মসম্মান ও শিক্ষিত বোধ জন্মায়। অপরদিকে, একজন কমশিক্ষিত বা মূর্খ ব্যক্তি যেকোনো কাজ করতে পারে। নিজের বেকারত্ব ঘুচাতে পারে। সার্টিফিকেট সর্বস্ব শিক্ষার্থী তা করতে না পেরে হতাশায় নিমজ্জিত হয়। এ পরিস্থিতি অত্যন্ত ভয়ংকর। যেসব বিশ্ববিদ্যালয় শুধুমাত্র ব্যবসায়িক ফায়দা লাভ করার জন্য অসংখ্য শিক্ষার্থীর জীবন মূল্যহীন করে দিচ্ছে, তাদের বিরুদ্ধে যথাযথ কর্তৃপক্ষের কঠোর ব্যবস্থা নেয়ার কথা থাকলেও তা নিচ্ছে না। এর ফলে প্রতিবছরই শত শত সার্টিফিকেট সর্বস্ব শিক্ষার্থী বের হচ্ছে এবং বেকারত্বের বোঝাকে ভারি করে তুলছে।
ইউজিসি যে ৪১ বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তিতে শিক্ষার্থীদের সতর্ক থাকতে বলেছে তা না করে যেসব সমস্যা ও ত্রুটি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে রয়েছে সেগুলো দূর করার নির্দেশনা দিতে পারে এবং এটাই করা উচিৎ। এ ধরনের সতর্কতা জারি করে শিক্ষার্থী ভর্তি কোনোভাবেই ঠেকানো যাবে না। সার্টিফিকেট সর্বস্ব শিক্ষার্থী এসব বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বের হতেই থাকবে। ইউজিসি’র কাজ সতর্কতা জারি করা নয়, যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণ করা। শুধু উল্লেখিত বিশ্ববিদ্যালয়ই নয়, পুরো বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় খাতে পরীক্ষা-নিরীক্ষা চালিয়ে সংস্কার করা প্রয়োজন। প্রয়োজনে গ্রেড সিস্টেমে বিশ্ববিদ্যালয়কে শ্রেণীভুক্ত করা হোক। যেসব বিশ্ববিদ্যালয় শর্ত পূরণ করতে পারছে না, সেগুলো বন্ধ করে দেয়া উচিৎ। নামকাওয়াস্তে বিশ্ববিদ্যালয় থাকবে, অথচ তার কোনো উপাচার্য, পর্যাপ্ত শিক্ষক, ল্যাব, ক্যাম্পাসসহ অন্যান্য সুবিধা থাকবে না, সেটা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য হতে পারে না। ইউজিসিকে ভাবতে হবে এ ধরনের বিশ্ববিদ্যালয় আদৌ প্রয়োজন রয়েছে কিনা।
বিভাগ : সম্পাদকীয়
মন্তব্য করুন
আরও পড়ুন
বাংলাদেশের বিপক্ষে যে একাদশ দিয়ে মাঠে নামছে ওয়েস্ট ইন্ডিজ
কিশোরগঞ্জের আওয়ামী লীগ নেতা আনোয়ার কামালসহ তিনজন গ্রেফতার
প্রেসিডেন্টের সঙ্গে তিন বাহিনীর প্রধানের সাক্ষাৎ
বেইজিং সংস্কৃতি ও পর্যটন ব্যুরো ও আটাবের মধ্যে চুক্তি স্বাক্ষরিত
উইন্ডিজের বিপক্ষে মাঠে নামছে বাংলাদেশ
গাজায় যুদ্ধবিরতি ছাড়া বন্দী বিনিময় হবে না : হামাস
শান্তিরক্ষা মিশন মোতায়েন করতে চায় জাতিসংঘ হাইতিতে
চকরিয়ার বিএনপি নেতা আবু তাহের চৌধুরীর মৃত্যুতে সালাহউদ্দিন আহমদ ও হাসিনা আহমদের শোক
পুতিন পারমাণবিক অস্ত্র ব্যবহার করতে দ্বিধা করবেন না : সার্বিয়া
ক্লাইমেট অর্থায়ন ইস্যুতে দেশগুলোর মধ্যে দ্বন্দ্ব
লালমোহনে দুই গ্রুপের সংঘর্ষে আহত যুবদল নেতা চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যু
ট্রাম্পের অ্যাটর্নির বিরুদ্ধে তদন্ত প্রতিবেদন আটকে গেল
‘ফিলিস্তিনের পর ইরান, সউদী ও তুরস্ক হবে পরবর্তী টার্গেট’
প্রতি বছর ৩ লাখ নথিবিহীন অভিবাসীকে বৈধতা দানের ঘোষণা স্পেনের
প্রেম-ভালোবাসা নিয়ে সবচেয়ে অসুখী দেশ জাপান-কোরিয়া
মুসলিম চিকিৎসক
শীর্ষে দিল্লি
সৈয়দ মোসাদ্দেক বিল্লাহ আল মাদানীকে জমিয়াতুল মোদার্রেসীন ও দারুননাজাত মাদরাসা’র সংবর্ধনা
ইসলামিক ফাউন্ডেশন এর বোর্ড অব গভর্নর সৈয়দ মোসাদ্দেক বিল্লাহ আল মাদানীকে জমিয়াতুল মোদার্রেসীন ও দারুননাজাত মাদরাসা’র সম্বর্ধনা
বাংলাদেশ, নেপাল ও ভুটানের মধ্যে আঞ্চলিক সহযোগিতার আহ্বান