ঢাকা   বৃহস্পতিবার, ২৬ ডিসেম্বর ২০২৪ | ১২ পৌষ ১৪৩১

এসব বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রয়োজন আছে কি?

Daily Inqilab ইনকিলাব

০১ এপ্রিল ২০২৩, ০৮:০৩ পিএম | আপডেট: ৩০ এপ্রিল ২০২৩, ০২:১৩ পিএম

গতকাল একটি দৈনিকের প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, দেশের ৪১টি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়ার ব্যাপারে সতর্ক থাকতে শিক্ষার্থীদের পরামর্শ দেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি)। এসব বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে তিনটির অবৈধ ক্যা¤পাস আছে এবং কার্যক্রম চালাচ্ছে অননুমোদিত উপায়ে। প্রতিষ্ঠার একযুগ পার করার পরও স্থায়ী ক্যা¤পাসে না যাওয়া বিশ্ববিদ্যালয় আছে চারটি। অপর দুটিতে বোর্ড অব ট্রাস্টিজ (বিওটি) নিয়ে দ্বন্দ্বের পাশাপাশি আদালতে মামলা বিচারাধীন আছে। এছাড়া ৩২টি বিশ্ববিদ্যালয়ে রাষ্ট্রপতি তথা চ্যান্সেলর নিযুক্ত উপাচার্য নেই। বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের একাংশের কি বেহাল দশা এবং সেখানে শিক্ষার মান কতটুকু তা এ প্রতিবেদন থেকে বুঝতে অসুবিধা হয় না। বিস্ময়ের ব্যাপার হচ্ছে, ইউজিসি শিক্ষার্থীদের এসব বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়ার ক্ষেত্রে সতর্ক থাকতে বলেছে, অথচ এগুলো যে যথাযথভাবে পরিচালিত হচ্ছে না, সে ব্যাপারে কোনো ব্যবস্থা নিচ্ছে না। এ ধরনের দায়সারা ‘সর্তকতা’ জারির সিদ্ধান্ত নেয়ার অর্থ হচ্ছে, বিশ্ববিদ্যালয়গুলো চলবে এবং শিক্ষার্থীও ভর্তি হবে।

দেশের অনেক বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় নিয়ে অভিযোগের অন্ত নেই। এসব বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীদের জন্য পর্যাপ্ত শিক্ষক, ল্যাব, ক্যাম্পাস থেকে শুরু করে অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা নেই। একটি ভবনেই পুরো বিশ্ববিদ্যালয়ের অবস্থান। বিভিন্ন অলি-গলিতে একটি ভবন ভাড়া নিয়ে সাইনবোর্ড ঝুলিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় চালানো হচ্ছে। দেশের জেলা ও বিভাগীয় শহরগুলোতে এমন বহু বিশ্ববিদ্যালয় চোখে পড়ে। শিক্ষাকে পুঁজি করে শুধুমাত্র ব্যবসা করার জন্য এসব বিশ্ববিদ্যালয় খোলা হয়েছে। একটি বিশ্ববিদ্যালয় যেভাবে গড়ে উঠার কথা, তার কোনো কিছুই সেগুলোতে নেই। এসব বিশ্ববিদ্যালয়ের বেশিরভাগেরই মালিক প্রভাবশালী ব্যক্তি কিংবা সরকারসংশ্লিষ্ট। শিক্ষার মূল লক্ষ্য পাশ কাটিয়ে শুধু ব্যবসায়িক উদ্দেশ্যে এসব বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। এসব বিশ্ববিদ্যালয়ে উপাচার্য থাকে না, থাকলেও কারো নাম ব্যবহার করে দেখানো হয়। স্থায়ী শিক্ষক খুব কমই থাকে। বিভিন্ন সরকারি ও প্রতিষ্ঠিত বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা এসব বিশ্ববিদ্যালয়ে খ-কালীন হিসেবে ক্লাস নিয়ে থাকে। কখনো কখনো নিয়মিত ক্লাস নিতে পারে না। ফলে শিক্ষার্থীদের ধারাবাহিক পড়ালেখা বলতে কিছু থাকে না। এভাবে বছরের পর বছর ধরে অসম্পূর্ণ পড়ালেখা দিয়ে সার্টিফিকেট অর্জন করে। শিক্ষার্থী হয়ে উঠে সার্টিফিকেট সর্বস্ব। এতে শিক্ষার্থী বাস্তব জীবনে যে পরিস্থিতির মুখোমুখি হয়, তা অত্যন্ত হতাশার এবং কষ্টের। কারণ, সে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পাস করলেও চাকরি জীবনে প্রবেশের সময় প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষায় টিকতে পারে না। বেকারত্ব বহন করা ছাড়া আর কোনো উপায় থাকে না। সে না পারে কোনো অডজব করতে, না পায় কোনো কাক্সিক্ষত জব। কারণ, সার্টিফিকেট লাভ করায় তার ভেতর একধরনের আত্মসম্মান ও শিক্ষিত বোধ জন্মায়। অপরদিকে, একজন কমশিক্ষিত বা মূর্খ ব্যক্তি যেকোনো কাজ করতে পারে। নিজের বেকারত্ব ঘুচাতে পারে। সার্টিফিকেট সর্বস্ব শিক্ষার্থী তা করতে না পেরে হতাশায় নিমজ্জিত হয়। এ পরিস্থিতি অত্যন্ত ভয়ংকর। যেসব বিশ্ববিদ্যালয় শুধুমাত্র ব্যবসায়িক ফায়দা লাভ করার জন্য অসংখ্য শিক্ষার্থীর জীবন মূল্যহীন করে দিচ্ছে, তাদের বিরুদ্ধে যথাযথ কর্তৃপক্ষের কঠোর ব্যবস্থা নেয়ার কথা থাকলেও তা নিচ্ছে না। এর ফলে প্রতিবছরই শত শত সার্টিফিকেট সর্বস্ব শিক্ষার্থী বের হচ্ছে এবং বেকারত্বের বোঝাকে ভারি করে তুলছে।

ইউজিসি যে ৪১ বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তিতে শিক্ষার্থীদের সতর্ক থাকতে বলেছে তা না করে যেসব সমস্যা ও ত্রুটি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে রয়েছে সেগুলো দূর করার নির্দেশনা দিতে পারে এবং এটাই করা উচিৎ। এ ধরনের সতর্কতা জারি করে শিক্ষার্থী ভর্তি কোনোভাবেই ঠেকানো যাবে না। সার্টিফিকেট সর্বস্ব শিক্ষার্থী এসব বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বের হতেই থাকবে। ইউজিসি’র কাজ সতর্কতা জারি করা নয়, যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণ করা। শুধু উল্লেখিত বিশ্ববিদ্যালয়ই নয়, পুরো বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় খাতে পরীক্ষা-নিরীক্ষা চালিয়ে সংস্কার করা প্রয়োজন। প্রয়োজনে গ্রেড সিস্টেমে বিশ্ববিদ্যালয়কে শ্রেণীভুক্ত করা হোক। যেসব বিশ্ববিদ্যালয় শর্ত পূরণ করতে পারছে না, সেগুলো বন্ধ করে দেয়া উচিৎ। নামকাওয়াস্তে বিশ্ববিদ্যালয় থাকবে, অথচ তার কোনো উপাচার্য, পর্যাপ্ত শিক্ষক, ল্যাব, ক্যাম্পাসসহ অন্যান্য সুবিধা থাকবে না, সেটা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য হতে পারে না। ইউজিসিকে ভাবতে হবে এ ধরনের বিশ্ববিদ্যালয় আদৌ প্রয়োজন রয়েছে কিনা।


বিভাগ : সম্পাদকীয়


মন্তব্য করুন

HTML Comment Box is loading comments...

এই বিভাগের আরও

বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন শিক্ষার্থীদের যত্ন নিতে হবে
সংবিধান সংশোধন-পুনর্লিখন প্রসঙ্গে
বিশ্ব পরিস্থিতি কেমন
পিলখানা ট্রাজেডির বিচারে আশার আলো
বই আত্মার মহৌষধ
আরও

আরও পড়ুন

গণমাধ্যমে বস্তুনিষ্ঠ সংবাদ প্রচারের ওপর গুরুত্বারোপ করলেন উপদেষ্টা

গণমাধ্যমে বস্তুনিষ্ঠ সংবাদ প্রচারের ওপর গুরুত্বারোপ করলেন উপদেষ্টা

বগুড়ার ধুনট পল্লীতে জয় বাংলা স্লোগান দিয়ে ব্যবসায়ীর ৩৫ হাজার টাকা ছিনতাই

বগুড়ার ধুনট পল্লীতে জয় বাংলা স্লোগান দিয়ে ব্যবসায়ীর ৩৫ হাজার টাকা ছিনতাই

দীর্ঘ ১৩ বছর পর দেশে ফিরছেন কায়কোবাদ

দীর্ঘ ১৩ বছর পর দেশে ফিরছেন কায়কোবাদ

সিদ্দিরগঞ্জে নির্মাণাধীন ভবনের ছাদ থেকে পড়ে বিদ্যুতায়িত, দুই  শ্রমিকের মৃত্যু

সিদ্দিরগঞ্জে নির্মাণাধীন ভবনের ছাদ থেকে পড়ে বিদ্যুতায়িত, দুই শ্রমিকের মৃত্যু

নাচোলে পিয়ারাবাগানে এক গৃহবধূ খুন

নাচোলে পিয়ারাবাগানে এক গৃহবধূ খুন

৫ জানুয়ারি থেকে ৪৪তম বিসিএসের মৌখিক পরীক্ষা শুরু

৫ জানুয়ারি থেকে ৪৪তম বিসিএসের মৌখিক পরীক্ষা শুরু

নোয়াখালীর সুবর্ণচরে মোটর থেকে বৈদ্যুতিক তার খুলতে প্রাণ গেল যুবকের

নোয়াখালীর সুবর্ণচরে মোটর থেকে বৈদ্যুতিক তার খুলতে প্রাণ গেল যুবকের

কারখানায় আগুন, পরিদর্শনে  হাতেম

কারখানায় আগুন, পরিদর্শনে হাতেম

নির্বাচনের তারিখ নিয়ে যা জানালেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার

নির্বাচনের তারিখ নিয়ে যা জানালেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার

কবি জসীমউদ্দিনের মেজ ছেলে ড. জামাল আনোয়ার আর নেই

কবি জসীমউদ্দিনের মেজ ছেলে ড. জামাল আনোয়ার আর নেই

ভাঙ্গায় দুই গ্রামবাসীর মধ্যে সংঘর্ষে নারী-পুরুষসহ আহত- ১০

ভাঙ্গায় দুই গ্রামবাসীর মধ্যে সংঘর্ষে নারী-পুরুষসহ আহত- ১০

আমাদের সংস্কৃতির অংশ হলো সব ধর্মের মাঝে সম্প্রীতি ও সহাবস্থান: পররাষ্ট্র উপদেষ্টা

আমাদের সংস্কৃতির অংশ হলো সব ধর্মের মাঝে সম্প্রীতি ও সহাবস্থান: পররাষ্ট্র উপদেষ্টা

রাতের আধারে অসহায় ব্যাক্তিদের বাড়ির দরজায় গিয়ে কম্বল দিলেন ইউএনও

রাতের আধারে অসহায় ব্যাক্তিদের বাড়ির দরজায় গিয়ে কম্বল দিলেন ইউএনও

জুলাই গণঅভ্যুত্থানের প্রশংসা করলেন রাহাত, জানালেন নিজ অনুভূতি

জুলাই গণঅভ্যুত্থানের প্রশংসা করলেন রাহাত, জানালেন নিজ অনুভূতি

সাবেক দুদক কমিশনার জহরুল হকের পাসপোর্ট বাতিল, দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা

সাবেক দুদক কমিশনার জহরুল হকের পাসপোর্ট বাতিল, দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা

শ্রীপুরে ভুয়া মেজর আটক

শ্রীপুরে ভুয়া মেজর আটক

প্রশ্ন: কিসব কারণে বিয়ের বরকত নষ্ট হয়ে যায়?

প্রশ্ন: কিসব কারণে বিয়ের বরকত নষ্ট হয়ে যায়?

মানবাধিকার প্রতিষ্ঠার অনুপম দৃষ্টান্ত মুহাম্মদুর রাসূলুল্লাহ (সা:)

মানবাধিকার প্রতিষ্ঠার অনুপম দৃষ্টান্ত মুহাম্মদুর রাসূলুল্লাহ (সা:)

আল-কুরআন তাজকেরায়ে মীলাদ নামায়ে আম্বিয়া (আ:)

আল-কুরআন তাজকেরায়ে মীলাদ নামায়ে আম্বিয়া (আ:)

ভারত উপমহাদেশে মুসলিম সভ্যতার জাগরণে আবুল হাসান আলী নদভির শিক্ষাচিন্তা

ভারত উপমহাদেশে মুসলিম সভ্যতার জাগরণে আবুল হাসান আলী নদভির শিক্ষাচিন্তা