রমজানে দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি অন্যায়
০৮ এপ্রিল ২০২৩, ০৮:০৩ পিএম | আপডেট: ৩০ এপ্রিল ২০২৩, ০৯:২৭ এএম
রমজান যখন আসে তখন আমাদের মধ্যে দুই শ্রেণির মানুষ খুব খুশি হয়। এক. মুমিন মুসলমান, যারা আল্লাহর কিতাবের জ্ঞানের অধিকারী, প্রকৃত সত্য সম্পর্কে অবহিত, যারা আল্লাহর বিশেষ রহমত দ্বারা নিজেদের সিক্ত করার জন্য রমজানের জন্য অপেক্ষা করেন। দুই. অবৈধ মজুতদার, মুনাফাখোর ও কালোবাজারি। প্রথম শ্রেণির আল্লাহর বান্দারা এ মাসে মানবতার প্রতি আরো বেশি করে দায়িত্বশীলতার ভূমিকায় অবতীর্ণ হন। তারা ভুল কর্মনীতি পরিহার করে সঠিক কর্মনীতি অবলম্বন করেন। রমজানের অবারিত রহমতের বারিধারায় নিজেদের সিক্ত করতে কোনো ভুল করেন না। তারা নিজেদের এ মাসে মানবতার উচ্চতর পর্যায়ে উন্নীত করেন। প্রতিটি ক্ষেত্রে তারা সংযম প্রদর্শনের অনুশীলনে লিপ্ত হন। আর দ্বিতীয় শ্রেণির মানবরূপী পশুগুলোর লোভের জিভটি এ মাসে এসে আরো লম্বা হয়। তারা দুনিয়ার স্বার্থ, স্বাদ ও আরাম-আয়েশের কারণে রমজানকে এক বিরাট সুযোগ হিসেবে গ্রহণ করে। মাত্রাতিরিক্ত মুনাফা লুণ্ঠনের জন্য কালোবাজারি ও খাদ্যে ভেজাল মিশ্রিত করে। প্রবৃত্তির লালসার মোকাবেলা করার পরিবর্তে এরা তার সামনে নতজানু হয়। পার্থিব লোভ-লালসার জন্য আল্লাহর দেয়া অপার রহমতের সুযোগ-সুবিধাকে পরিত্যাগ করে দুনিয়ার লালসাকে চরিতার্থ করার জন্য রোজাদারদের কষ্ট দেয়। এ ধরনের লোভ-লালসার অধিকারী ব্যক্তিদের আল্লাহ তায়ালা অত্যন্ত ঘৃণিত প্রাণীর সাথে তুলনা করেছেন। আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘আমি চাইলে ওই আয়াতগুলোর সাহায্যে তাকে উচ্চ মর্যাদা দান করতাম কিন্তু সে তো দুনিয়ার প্রতিই ঝুঁকে রইল এবং নিজের প্রবৃত্তির অনুসরণ করল। কাজেই তার অবস্থা হয়ে গেল কুকুরের মতো, তার ওপর আক্রমণ করলেও সে জিভ ঝুলিয়ে রাখে আর আক্রমণ না করলেও জিভ ঝুলিয়ে রাখে। যারা আমার আয়াতকে মিথ্যা সাব্যস্ত করে তাদের দৃষ্টান্ত এটাই। তুমি এ কাহিনী তাদেরকে শুনাতে থাকো, হয়তো তারা কিছু চিন্তা-ভাবনা করবে’ (সূরা আরাফ-১৭৬)।
আমাদের দেশে প্রতি বছর রমজান এলে বেশ কিছু নিত্যপণ্য বিশেষ করে সেহরি ও ইফতারসামগ্রীর দাম কয়েক গুণ বেড়ে যায়। রমজান সামনে রেখে ব্যবসায়ীরা তাদের ব্যবসায়িক ফাঁদ পেতে থাকেন। কিন্তু দাম নিয়ন্ত্রণে সরকারের নজরদারি থাকে খুব দুর্বল। এতে সাধারণ মানুষের দুর্ভোগ বেড়ে যায়। এ বছর রমজানের আগেই নিত্যপণ্যের দাম অসহনীয় হয়ে পড়েছে। ডলার সঙ্কটে যথাসময়ে এলসি খুলতে না পারায় আমদানিনির্ভর ভোগ্যপণ্যের দাম তাই লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে। রমজানে ইফতারসাগ্রী তৈরিতে সাধারণত ছোলা, অ্যাঙ্কর ডাল ও বেসন বেশি ব্যবহার হয়। আগেই এসবের দাম বেড়ে গেছে। ছোলার দাম বেড়েছে কেজিতে ১০-১৫ টাকা। অ্যাঙ্কর ডাল কেজিতে ১০ টাকার মতো বেড়েছে। পাকিস্তানি কাবলি বুট গত বছর বিক্রি হয়েছিল ১৪০-১৬০ টাকা কেজি দরে। এবার এর কেজি ২৪০-২৫০ টাকা। টিসিবির তথ্য মতে, এক মাসে ছোলার দাম প্রায় ছয় গুণ এবং এক বছরে ২৩ শতাংশ বেড়েছে। অ্যাঙ্কর ডাল এক বছরে কেজিতে বেড়েছে প্রায় ৪৮ শতাংশ। বছরে ছোলার চাহিদা দুই থেকে আড়াই লাখ টন। রমজানে প্রয়োজন হয় ৭০-৮০ হাজার টন। দেশে বছরে ৬০-৭০ হাজার টন খেজুরের চাহিদা রয়েছে। পুরোটা আমদানিনির্ভর। সারা বছর যে খেজুর প্রয়োজন হয়, এর চেয়ে তিন থেকে চার গুণ চাহিদা বাড়ে রমজানে। দরকার হয় ৪০-৫০ হাজার টন। তবে ডলার সঙ্কটে আমদানিকারকরা দেরিতে এলসি খোলায় এবার রমজানে খেজুরের দাম ২৫-৩০ শতাংশ পর্যন্ত বেড়েছে। টিসিবির বাজারদর বলছে, খেজুরের দাম এক বছরে বেড়েছে ২০ শতাংশ। করোনার পর থেকে ভোজ্যতেলের বাজারে শুরু হয় অস্থিরতা। এখনো সেই ধারাবাহিকতা অব্যাহত। বেশির ভাগ সময় সরকারের বেঁধে দেয়া দাম উপেক্ষিত হয়েছে। ১৫-২০ দিন ধরে পাইকারি বাজারে খোলা সয়াবিন ও পামঅয়েলের দর দুই-এক টাকা করে বাড়ছে। খুচরা বাজারেও একই প্রবণতা।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্য, দেশে ১৮-২০ লাখ টন ভোজ্যতেলের চাহিদা রয়েছে। এর মধ্যে তিন থেকে চার লাখ টন তেলের দরকার হয় রমজানে। রমজানে ভোজ্যতেলের চাহিদা বাড়ে। গত ছয় মাসে চারবার দাম বাড়ানোর পরও চিনির বাজারের হইচই থামেনি। গত ২৬ ফেব্রুয়ারি চিনি আমদানিতে নিয়ন্ত্রণমূলক শুল্ক ৩০ থেকে কমিয়ে ২৫ শতাংশে নামিয়েছে এনবিআর। তবে এখনো খুচরা পর্যায়ে প্রতি কেজি খোলা চিনি ১১৫- ১২০ এবং প্যাকেটজাত চিনি ১১২-১২০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। সরকারি হিসাবে গত এক বছরে চিনির দাম প্রায় ৪৯ শতাংশ বেড়েছে। এক সপ্তাহের ব্যবধানে পাঁচ টাকা বেড়ে প্রতি কেজি দেশি পেঁয়াজ ৩০-৪০ এবং আমদানি করা পেঁয়াজ ৩৫-৪৫ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। মাছ-গোশত এখন অনেকটা স্বল্প আয়ের মানুষের নাগালের বাইরে। মধ্যবিত্তরাও কিনতে দ্বিধায় পড়ছে। মুরগির বাজার দেড় মাস ধরে অস্থির। ডিমের বাজারও বেশি। টিসিবির তথ্য বলছে, এক বছরে ব্রয়লারের দাম ৮৫, ডিম ১৬ এবং রুই মাছের দাম প্রায় ৩৫ শতাংশ বেড়েছে। লেবু আমদানি করতে হয় না। তবু হঠাৎ করে অস্থির লেবুর বাজার। দাম অস্বাভাবিক বেড়ে এক হালি লেবু আকার ভেদে বিক্রি হচ্ছে ৫০-৮০ টাকা। প্রতিটি লেবুর দাম পড়ছে ১৩-২০ টাকা। বছরের অন্য সময়ের চেয়ে রমজানে বেগুনের চাহিদা বাড়ে কয়েক গুণ।
এবার রমজানের আগে বেগুনের দাম অস্বাভাবিক বেড়ে গেছে। শসার টান নেই; অথচ দাম তুলনামূলক বেশি। কাঁচামরিচের দামও চড়া। যদিও ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআইর মতবিনিময় সভা এবং জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতরের একাধিক বৈঠকে ব্যবসায়ীরা ‘আশ্বাস’ দিয়েছিল, রমজান ঘিরে নিত্যপণ্যের দাম বাড়বে না; সেই ‘আশ্বাস’ আশ্বাসেই সীমাবদ্ধ। বাস্তবে রমজানে কোনো পণ্যের দামই কমেনি। উল্টো কয়েকটির দাম এতটাই বেড়েছে যে, অনেকের নাগালের বাইরে চলে গেছে। বলা হয়, সততা উন্নতির চাবিকাঠি। কিন্তু আজ সৎ লোকের বড় অভাব। মনে রাখা প্রয়োজন, তাকওয়াই হলো সব উন্নয়নের মূল চাবিকাঠি। তাকওয়া ছাড়া আর যত কর্মসূচি গ্রহণ করা হোক না কেন, সমাজ পরিবর্তন হবে না। পরিবর্তন হবে না কালোবাজারিসহ অন্যান্য সামাজিক অপরাধ।
লেখক: গবেষক ও কলামিস্ট
বিভাগ : সম্পাদকীয়
মন্তব্য করুন
আরও পড়ুন
বাংলাদেশের বিপক্ষে যে একাদশ দিয়ে মাঠে নামছে ওয়েস্ট ইন্ডিজ
কিশোরগঞ্জের আওয়ামী লীগ নেতা আনোয়ার কামালসহ তিনজন গ্রেফতার
প্রেসিডেন্টের সঙ্গে তিন বাহিনীর প্রধানের সাক্ষাৎ
বেইজিং সংস্কৃতি ও পর্যটন ব্যুরো ও আটাবের মধ্যে চুক্তি স্বাক্ষরিত
উইন্ডিজের বিপক্ষে মাঠে নামছে বাংলাদেশ
গাজায় যুদ্ধবিরতি ছাড়া বন্দী বিনিময় হবে না : হামাস
শান্তিরক্ষা মিশন মোতায়েন করতে চায় জাতিসংঘ হাইতিতে
চকরিয়ার বিএনপি নেতা আবু তাহের চৌধুরীর মৃত্যুতে সালাহউদ্দিন আহমদ ও হাসিনা আহমদের শোক
পুতিন পারমাণবিক অস্ত্র ব্যবহার করতে দ্বিধা করবেন না : সার্বিয়া
ক্লাইমেট অর্থায়ন ইস্যুতে দেশগুলোর মধ্যে দ্বন্দ্ব
লালমোহনে দুই গ্রুপের সংঘর্ষে আহত যুবদল নেতা চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যু
ট্রাম্পের অ্যাটর্নির বিরুদ্ধে তদন্ত প্রতিবেদন আটকে গেল
‘ফিলিস্তিনের পর ইরান, সউদী ও তুরস্ক হবে পরবর্তী টার্গেট’
প্রতি বছর ৩ লাখ নথিবিহীন অভিবাসীকে বৈধতা দানের ঘোষণা স্পেনের
প্রেম-ভালোবাসা নিয়ে সবচেয়ে অসুখী দেশ জাপান-কোরিয়া
মুসলিম চিকিৎসক
শীর্ষে দিল্লি
সৈয়দ মোসাদ্দেক বিল্লাহ আল মাদানীকে জমিয়াতুল মোদার্রেসীন ও দারুননাজাত মাদরাসা’র সংবর্ধনা
ইসলামিক ফাউন্ডেশন এর বোর্ড অব গভর্নর সৈয়দ মোসাদ্দেক বিল্লাহ আল মাদানীকে জমিয়াতুল মোদার্রেসীন ও দারুননাজাত মাদরাসা’র সম্বর্ধনা
বাংলাদেশ, নেপাল ও ভুটানের মধ্যে আঞ্চলিক সহযোগিতার আহ্বান