পুরুষ নির্যাতন নিয়ে কিছু কথা
১২ জুন ২০২৩, ০৯:০১ পিএম | আপডেট: ১৩ জুন ২০২৩, ১২:০১ এএম
নির্যাতন কথাটি শুনলেই আমাদের চোখে ভেসে উঠে অবলা নারীর উপর শারীরিক কিংবা মানসিক নির্যাতনের ছবি। কারণ, আমাদের মনের ভেতর যে বিষয়টি গেঁথে গিয়েছে, তা হলো, যে কোনো ধরনের নির্যাতনের শিকার শুধুমাত্র মহিলারাই হবেন। কিন্তু কেউ কি ভেবে দেখেছেন, ঘটনাটি যদি উল্টো হয়, তখন ব্যাপারটি কী দাঁড়ায়? নির্যাতন যদি পুরুষের ওপর হয়? শুধু মহিলারই নন, পুরুষরাও নির্যাতিত হন ঘরে এমনকি বাইরেও। নারী নির্যাতনের ঘটনা যেমন প্রতিনিয়ত ঘটছে, ঠিক তেমনই পুরুষ নির্যাতনের মাত্রাও বেড়ে চলেছে দিনের পর দিন। নারী নির্যাতনের ঘটনাগুলো আমাদের কাছে পৌঁছাচ্ছে মিডিয়ার ব্যাপক প্রচারের কারণে। অন্যদিকে পুরুষ নির্যাতনের ঘটনা কিন্তু আড়ালেই রয়ে যাচ্ছে। আড়ালে থাকলেও পুরুষ নির্যাতনের ঘটনা কম ঘটছে না। দিন দিন তা বেড়েই চলছে।
নারী নির্যাতনের পাশাপাশি পুরুষরা ব্যাপকভাবে প্রতিনিয়ত ও প্রতি মুহূর্তে নির্যাতিত হচ্ছেন, যা আমরা অনেকে জানি না। সমাজের বিভিন্ন শ্রেণীর পুরুষ আজ কোনো না কোনো মহিলার দ্বারা নির্যাতন-নিপীড়নের শিকার হচ্ছেন। মানুষের জীবনে বিভিন্ন রকম নির্যাতনের ঘটনা ঘটতে পারে। কেউ শারীরিক, কেউ মানসিক, কেউ দৈহিক-আর্থিক, কেউ সামাজিকভাবে নির্যাতিত হচ্ছেন। পাশাপাশি হচ্ছেন শাসন-শোষণের শিকার। ঘরে-বাইরেও নির্যাতনের ঘটনা ঘটছে অহরহ। স্ত্রী কর্তৃক নির্যাতনের শিকার হলেও আইনের আশ্রয় নিতে পারছেন না স্বামী। অধিকাংশ ক্ষেত্রে সন্তানের ভবিষ্যৎ, সামাজিক মর্যাদা, চক্ষুলজ্জা, জেল-পুলিশ আর উল্টো মামলার ভয়ে বাধ্য হয়ে স্ত্রীর নির্যাতন নীরবে সহ্য করে মানিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করছেন। পুরুষ চাইলেও নির্যাতনের কথা বলতে পারছেন না। অন্যদিকে, একজন মহিলা আইনের অপব্যবহার করে ইচ্ছে করলেই ঘটনা সাজিয়ে পুরুষের বিরুদ্ধে থানা বা আদালতে সহজেই নির্যাতন বা যৌতুকের মামলা করতে পারছেন। অথচ, দিনের পর দিন ধরে শুধুমাত্র মানসিক, শারীরিক নির্যাতন মহিলাদের উপরই হচ্ছে না, পুরুষের উপরও হচ্ছে। কিন্তু মহিলাদের অভিযোগের ভিত্তিতে পুরুষসহ গোটা পরিবারকে জেলে ঢুকিয়ে দেওয়া হচ্ছে। এর সত্যিটা প্রকাশ করার জন্য নির্দিষ্ট কোনো আইনি ব্যবস্থা নেই। এদিকে নির্যাতনের শিকার হয়ে আত্মহত্যার সংখ্যা মহিলার তুলনায় পুরুষের বেশি। তবে নারী নির্যাতনের সংখ্যা নথিভুক্ত যেমন বেশি, তেমনই ভুয়া নির্যাতনের সংখ্যাও বেশি।
পুরুষরা নির্যাতিত হচ্ছেন, কিন্তু তা লজ্জায় প্রকাশ্যে আনছেন না। এর ফলে বহু পুরুষ আত্মহত্যা করছেন। এমনকি পুরুষরা শারীরিক নির্যাতনের শিকারও হচ্ছেন। কিন্তু প্রতিবাদের জন্য আলাদা করে কোনো আইনি ব্যবস্থা তৈরি হয়নি। একাংশ মহিলা প্যাঁচে ফেলে উল্টো পুরুষদের হাজতবাস করাচ্ছেন। আর প্রশাসন সঠিক সত্য তদন্ত না করে পুরুষদেরই বন্দি করে রাখছে। বিভিন্ন ধারায় পুরুষদেরই বিচার-বিবেচনা না করে জেলে বন্দি করে রাখা হয়। অথচ, যে মূল কারণ মহিলা, তারা বাইরে নির্দ্বিধায় ঘুরে বেড়ান। আমি নারীবিদ্বেষী বা পুরুষবিদ্বেষী নই। আমি চাই দেশের প্রত্যেক নাগরিক যেন সমান অধিকার, সমান বিচার পান। তার মধ্যে যেন কোনো লিঙ্গবৈষম্য না আসে। কোনো কোনো মহিলা চোখের পানি বা নিজের বস্ত্র নিজে ছিড়ে তা পুরুষ করেছে বলে দোষ দিয়ে জেলে বন্দি করে দেন। এই মিথ্যা অভিযোগের যেন সঠিক বিচার হয়। পুরুষরা যদি নির্দোষ থাকেন, তা হলে প্রতিবাদ করার জন্য যেন তাদের সুযোগ দেওয়া হয়। তাদের প্রতিবাদের জন্য আইনি ব্যবস্থাও যেন কঠোর করা হয়।
মানসিক, শারীরিক নির্যাতন শুধু মহিলাদের ওপরই হচ্ছে তা না, পুরুষের উপরও হচ্ছে। তবে সেটা প্রকাশ্যে আনছে না প্রশাসন। আর এই নির্যাতন আজ থেকে নয়, বহুকাল ধরেই চলে আসছে। পুরুষরা এত কিছু সহ্য করছেন। কারণ, তাদের ছোট থেকে শেখানো হয়েছে ছেলেরা কাঁদে না, সহ্য করে। কিন্তু এজন্য এখন পর্যন্ত কোনো আইন তৈরি হয়নি। পুরুষের অধিকার কেন নেই সমাজে? পুরুষরা নির্যাতিত হলেও কেন তা লোকসমাজে আসে না? কথায় আছে পিতৃতান্ত্রিক সমাজ ব্যবস্থা। কিন্তু তা কি সত্যিই পিতৃতান্ত্রিক? যদি শুধু পিতৃতান্ত্রিক সমাজই হয়, তা হলে সব সুযোগ-সুবিধা, আইন-কানুন শুধুমাত্র মহিলাদের জন্যই কেন? মহিলাদের ওপর নির্যাতন হয় তা শোনা যায়, পুরুষের ওপর নির্যাতন হয় তা প্রকাশ্যে আসে না কেন? অনেক মহিলা আছেন এই সমাজে, যাদের দ্বারা পুরুষরা নির্যাতিত হন। প্রশ্ন জাগতে পারে, একজন মহিলা থেকে পুরুষের শক্তি বেশি। তাহলে কীভাবে এই পুরুষরা নির্যাতিত হচ্ছেন? হ্যাঁ, মহিলার শারীরিক দিক হতে পুরুষের থেকে দুর্বল কিন্তু নির্যাতন করার মানে এই নয় যে, একজন মহিলা তার স্বামীকে শুধুমাত্র শারীরিক আঘাত করছেন; নির্যাতনটি মানসিকভাবেও করতে পারেন। অনেক মহিলা আছেন, যারা তার স্বামীকে নানাভাবে মানসিক নির্যাতন করে থাকেন। সংসারে প্রতিদিন কলহ, অযথা দোষারোপ বা অবিশ্বাস কিংবা অর্থের জন্য প্রতিনিয়ত হেয় প্রতিপন্ন করাও এক প্রকার মানসিক নির্যাতন, যা অনেক মহিলা করে থাকেন। এছাড়া স্বামীকে বাবা-মায়ের কাছ থেকে আলাদা করে ফেলা ও সন্তানদের থেকে দূরে রাখাও কিন্তু নির্যাতন। এখানেই শেষ নয়, পুরুষের মা-বাবা, আত্মীয়-পরিজন বাড়িতে এলে তাদের প্রতি আদর-যতœ না করে অবহেলা করা, এটাও নির্যাতন। কারণ, পুরুষ তার মা- বাবা বা পরিজনদের সেবা বা সাহায্য করতে না পারা এক ধরনের মানসিক নির্যাতন। এভাবে মানসিক নির্যাতিত হওয়ার পাশাপাশি অনেক পুরুষ শারীরিকভাবেও নির্যাতিত হচ্ছেন। অনেক পুরুষ আছেন, যারা তাদের স্ত্রীর দ্বারা শারীরিকভাবে আঘাতপ্রাপ্ত হন। একজন পুরুষ যে মহিলার দ্বারা শারীরিক ও মানসিকভাবে নির্যাতিত হচ্ছেন, এ ঘটনা কোনো পুরুষ নিজে মুখে বলতে লজ্জাবোধ করেন আমাদের সমাজব্যবস্থার কারণে। পুরুষরা ভাবেন, মহিলার দ্বারা শারীকিক ও মানসিকভাবে নির্যাতিত হচ্ছেন এটি প্রকাশ পাওয়া তার জন্য অত্যন্ত লজ্জাজনক। শুধুমাত্র এ কারণে পুরুষ নির্যাতনের ঘটনা ধামাচাপা দেওয়া হয়। একজন পুরুষ যখন কোনো মহিলার ওপর নির্যাতন চালিয়ে সেটা জাহির করেন, তখন কেউ তাকে নিয়ে ঠাট্টা না করলেও যে পুরুষটির উপর নির্যাতন চালানো হচ্ছে তাকে নিয়ে বিদ্রুপ করতে কেউ ছাড়ে না।
মিথ্যা মামলা ও সন্তান হারানোর ভয়ে অনেক পুরুষই নিজের স্ত্রীর দ্বারা নির্যাতন সহ্য করে নেন। নির্যাতন সহ্য করতে না পেরে যদি কেউ তার স্ত্রীর সঙ্গে সম্পর্কচ্ছেদ করতে চান, সেক্ষেত্রে অন্যভাবে নির্যাতনের শিকার হতে হয় পুুরুষদের। একজন মহিলা যখন তার স্বামীর বিরুদ্ধে নির্যাতনের মামলা দায়ের করেন এবং সম্পর্কচ্ছেদ করতে চান, তখন নিয়ম অনুযায়ী সব ব্যবস্থা নেওয়া হয়। কিন্তু স্ত্রীর বিরুদ্ধে পুরুষের মামলা নেওয়া হয় না। যদি সম্পর্কচ্ছেদ করতে চান তবে উল্টো মামলায় জড়িয়ে যাওয়ার ঘটনাও কম নয়। অনেক সময় নির্যাতিত স্বামী স্ত্রীর সঙ্গে সম্পর্কচ্ছেদ করতে চাইলে স্ত্রী তার বিরুদ্ধে মিথ্যা নির্যাতনের মামলা দায়ের করে বিবাহ বিচ্ছেদের টাকা দাবি করেন। এজন্যই অনেক পুরুষ স্ত্রীর যন্ত্রণায় নীরবে কাঁদেন বিষয়টি শুনতে হয়তো হাস্যরসের সৃষ্টি করছে। কিন্তু নির্যাতনের শিকার অনেক পুরুষ চক্ষু লজ্জায় বিষয়টি গোপন রাখেন। নারীকে সামান্য কিছু বললেই যৌতুক ও নির্যাতনের মামলা করে দেন। পুরুষ নির্যাতিত হয়েও কিছু বলতে পারেন না। পুরুষ নির্যাতন রোধে কোনে আইন না থাকায় পুরুষ অসহায়। তাই যত দ্রুত সম্ভব পুরুষ নির্যাতন রোধে আইন পাস করা জরুরি বলে অভিমত সমাজ বিশ্লেষকদের।
লেখক: সাংবাদিক ও কলামিস্ট।
বিভাগ : সম্পাদকীয়
মন্তব্য করুন
আরও পড়ুন
অতিসত্বর নির্বাচন হওয়ার দরকার : আমীর খসরু
দুর্নীতিগ্রস্ত লুটেরা মাফিয়াদল যাতে বাংলাদেশে আর ফেরত না আসতে পারে : মেজর হাফিজ
বঞ্চিত ৭৬৪ কর্মকর্তাকে ভূতাপেক্ষ পদোন্নতি দিচ্ছে সরকার
ক্যাডার বর্হিভূত রাখার সুপারিশ প্রত্যাখ্যান শিক্ষা ক্যাডারের
শেখ হাসিনাসহ ৬৩ জনের নামে মামলা
অভিযানের খবরে পালাল শ্রাবণধারা কারখানার পরিচালক-ম্যানেজার
সর্বজনীন পেনশন স্কিমে নেই আশানুরূপ সাড়া
একতাই পারবে দেশের সার্বভৌমত্ব রক্ষা করতে
তিতাস গ্যাস টি.এন্ড ডি. পিএলসি’র ৫% নগদ লভ্যাংশ অনুমোদিত
ভারপ্রাপ্ত সভাপতি আল্লামা সাজিদুর নির্বাহী সভাপতি মাওলানা জুনায়েদ
‘আপনারা আমার খালেদকে ফেরত এনে দেন’ : নিখোঁজ সহ-সমন্বয়কের বাবা লুৎফর
২৮ ডিসেম্বর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে খেলাফত মজলিসের অধিবেশন প্রেস ব্রিফিংয়ে নেতৃবৃন্দ
ইসলামী ছাত্র আন্দোলন বাংলাদেশের পূর্ণাঙ্গ কমিটি ঘোষণা
ইনসেপ্টার বিক্রয় প্রতিনিধির ২২টি ব্যাংক হিসাব অবরুদ্ধ
পিকে হালদারের পাঁচ সহযোগীর ব্যাংক হিসাব ফ্রিজের নির্দেশ
ভূমধ্যসাগরে ৮ বাংলাদেশি নিহত
মুক্তি পেলেন ভারতের সমুদ্রসীমায় গ্রেফতার ১২ বাংলাদেশি
আ.লীগকে পুনর্বাসনকারীদের বিরুদ্ধে গণপ্রতিরোধ গড়বে গণঅধিকার পরিষদ
অন্তর্বর্তী এ সরকারের মধ্যে দুটি সরকার রয়েছে : মাহমুদুর রহমান মান্না
হাসিনার নভোথিয়েটার দুর্নীতি মামলার পুনঃতদন্ত শুরু