সারবাহী জাহাজে ৭ খুন : দ্রুত তদন্ত ও বিচার নিশ্চিত করতে হবে
২৫ ডিসেম্বর ২০২৪, ১২:০৬ এএম | আপডেট: ২৫ ডিসেম্বর ২০২৪, ১২:০৬ এএম
চট্টগ্রাম থেকে সার বোঝাই হয়ে এমভি আল বাখেরা নামের জাহাজটি যাচ্ছিল সিরাজগঞ্জের বাঘাবাড়িতে। মেঘনায় চাঁদপুরের মাঝিরচর এলাকায় সংঘবদ্ধ ডাকাতদলের হামলায় জাহাজটির সারেঙ, সুকানিসহ অন্তত ৭জন কর্মী নৃশংস হত্যাকান্ডের শিকার হয়েছে। প্রাথমিকভাবে ডাকাতদলের নাশকতা বলে মনে করা হলেও, পুলিশ ও প্রত্যক্ষদর্শিরা একে পরিকল্পিত হত্যাকান্ড, ব্যবসায়িক দ্বন্দের জের কিংবা ভিন্ন কোনো মোটিফের আলামত বলে সন্দেহ করছেন। মাঝিরচরের পাড়ে জাহাজটিতে ডাকাতদলের হামলা এবং নোঙর করা দেখে স্থানীয়রা ট্রিপল নাইনে ফোন করলে চাঁদপুর নৌপুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে ৫ জনের গলাকাটা মৃতদেহ এবং ৩ জনকে গুরুতর আহত অবস্থায় উদ্ধার করে হাসপাতালে নেয়া হলে আরো ২ জনের মৃত্যু হয়। ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের পর আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে রাজনৈতিক কারণে গুম-খুন, মিথ্যা মামলায় ধর-পাকড়ের মত ঘটনা না ঘটলেও দেশকে অস্থিতিশীল করার নানামুখী অপতৎপরতা দেখা গেছে। সংখ্যালঘু নির্যাতনের মিথ্যা অভিযোগ, গার্মেন্ট কর্মীসহ বিভিন্ন সেক্টরের কর্মীদের নানান দাবি-দাওয়া নিয়ে মাঠে নেমে রাজপথ দখলের তৎপরতার নেপথ্যে পতিত স্বৈরাচারের দোসর ও নিষিদ্ধ ঘোষিত ছাত্রলীগ কর্মীদের সক্রিয় ভূমিকায় দেখা গেছে। ছাত্র-জনতা, সব রাজনৈতিক দল তথা সচেতন জনগণের ঐক্যবদ্ধ প্রতিরোধে সে সব প্রতিবিপ্লবের ছক ব্যর্থ হওয়ার পর হঠাৎ করেই গুপ্ত হত্যা, ডাকাতি,ছিনতাই-রাহাজানিসহ অপরাধ বেড়ে গেছে। মূলত আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর নিস্ক্রিয়তা এবং পতিত স্বৈরাচারের দোসরদের নৈরাজ্য সৃষ্টি পরিকল্পিত তৎপরতার কারণেই দেশে অপরাধ ও নিরাপত্তাহীনতা বেড়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
দেড় দশক ধরে দেশের পুলিশ বাহিনীকে ফ্যাসিবাদী সরকারের পেটোয়া বাহিনী হিসেবে ব্যবহার করা হয়েছে। ছাত্র-জনতার উপর গুযলি চালিয়ে গণহত্যার পরও শেখ হাসিনাকে রক্ষা করতে না পেরে পুলিশের দলদাস সদস্যদের মনোবল ভেঙ্গে যায়। হাজার হাজার পুলিশ সদস্য দীর্ঘদিন কাজে যোগদান থেকে বিরত থাকার পর শাস্তির ভয়ে কাজে যোগ দিলেও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে এখনো যথাযথ ভূমিকায় দেখা যাচ্ছে না। মূলত এরই সুযোগ নিয়ে একটি গোষ্ঠি পরিকল্পিত নৈরাজ্য সৃষ্টি করে দেশকে অস্থিতিশীল ও সরকারের ভাবমর্যাদা ক্ষুন্ন করার অপচেষ্টা চালাচ্ছে। ক্ষমতায় থাকতে ছাত্রলীগ-যুবলীগ কর্মীদের খুন-ধর্ষনসহ বেপরোয়া অপরাধের কোনো জবাব দিহিতা ছিল না। শেখ হাসিনা পালিয়ে যাওয়ার পর আত্মগোপনে থেকেও নানা রকম নাশকতা ও অপরাধের সাথে তাদের সংশ্লিষ্টতা খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে। গতকাল মঙ্গলবারও ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়ায় এক তরুনিকে ধর্ষনের পর হত্যা করে আগুন দিয়ে লাশ পেড়ানোর সময় স্থানীয় যুবলীগ নেতার মাদকাসক্ত ছেলে জনতার হাতে ধরা পড়ে। প্রায় প্রতিটি জনপদে এমন নৃশংস ঘটনা ঘটিয়ে সারাদেশে একটি আতঙ্ক ও ভীতিজনক পরিবেশ সৃষ্টির পাঁয়তাড়া চলছে। গত সপ্তাহে ঢাকার পূর্বাংশে রাস্তায় বেশ কয়েকজন শিক্ষার্থীর মরদেহ উদ্ধার করা হয়। এরা ঢাকার বিভিন্ন প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজের শিক্ষার্থী এবং তারা প্রায় সবাই জুলাই-আগস্টের বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনে অংশগ্রহণ করেছিল। সে সব গুপ্ত হত্যার ঘটনার তদন্ত কতটা এগিয়েছে আমাদের জানা নেই। একটি নাশকতা ও পরিকল্পিত অপরাধের ঘটনা আরেকটি ঘটনার আড়ালে ধামাচাপা পড়ে যাচ্ছে। অপরাধীরা আরো বেপরোয়া হয়ে নৃসংশ ঘটনার জন্ম দিচ্ছে। মেঘনায় এমভি আল বাখেরা জাহাজে ৭ খুনের ঘটনা দেশে চলমান সিরিজ অপরাধে এক নতুন মাত্রা সৃষ্টি করেছে। দেশের আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর জন্য এটি একটি রেড এলার্ট।
আইনশৃঙ্খলার অবনতি ও নিরাপত্তাহীনতা দেশের বিনিয়োগ ও অর্থনৈতিক অগ্রগতিকে ব্যহত করে। বিগত সরকারের সময় দুর্নীতি-দু:শাসন ও নিরাপত্তাহীনতার কারণে দেশে প্রত্যাশিত বিনিয়োগ হয়নি। স্বৈরাচারের পতনের পর উন্নয়ন সহযোগিরা অর্ন্তবর্তী সরকারের পাশে দাঁড়িয়েছে। দেশে বিনিয়োগ ও কর্মসংস্থানের নতুন সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে। সেই সম্ভাবনাকে নস্যাৎ করতেই দেশে পরিকল্পিত নাশকতা ও নৃশংস গুপ্ত হত্যার ঘটনা বেড়ে চলেছে। এমনিতে দেশের সড়ক পরিবহন ব্যবস্থা ঝুঁকিপূর্ণ, দুর্ঘটনা প্রবণ এবং ব্যয়বহুল। মেঘনায় জাহাজে ৭ খুনের ঘটনায় অপেক্ষাকৃত নিরাপদ ও সাশ্রয়ী নৌপরিবহন রুটে এক ধরণের ভীতি ও আতঙ্ক সৃষ্টি করতে পারে। যত দ্রুত সম্ভব এ ঘটনার সাথে জড়িতদের আইনের আওতায় এনে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে। সেই সাথে চাঁদপুরের নৌরুটসহ চাঁদাবাজি, ডাকাতি ও অপরাধ প্রবণ নৌ-রুটগুলোতে গোয়েন্দা নজরদারিসহ নৌপুলিশ, কোস্টগার্ড ও র্যাবের নিরাপত্তা টহল জোরদার করতে হবে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কোনো সদস্য নৌপথে ডাকাতি ও চাঁদাবাজির সাথে জড়িত বা সংশ্লিষ্টতা থাকলে তাদেরকেও কঠোর শাস্তির আওতায় আনতে হবে। ইতিমধ্যে প্রশাসনের তরফ থেকে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। পুলিশের পক্ষ থেকেও একটি তদন্ত কমিটি গঠনের কথা বলা হয়েছে। প্রাথমিক বিচারে এটি কোনো সাধারণ ডাকাতির ঘটনা নয়। নৌপথকে অস্থিতিশীল ও অনিরাপদ করে তুলতেই এ ধরনের ঘটনা ঘটানো হয়েছে কিনা, তা খতিয়ে দেখতে হবে। এ ক্ষেত্রে অতীতের মতো নাম কা ওয়াস্তে তদন্ত কমিটি গঠন করে তা আর আলোর মুখ না দেখার বাস্তবতার পুনরাবৃত্তি দেশের মানুষ দেখতে চায় না। ঢাকার পূর্বাচলে শিক্ষার্থীদের সিরিজ গুপ্তহত্যার মত ঘটনার ক্লু এখনো খুঁজে বের করতে না পারার ব্যর্থতা মেনে নেয়া যায় না। মাদক, চাঁদাবাজি, ডাকাতির ঘটনা বেড়ে যাওয়ার নেপথ্যেল কুশীলবদের খুঁজে বের করতে না পারা দু:খজনক। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সংশ্লিষ্টদের নিস্ক্রিয়তা ও ব্যর্থতার জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে হবে। সিরিজ হত্যাকান্ড, ডাকাতি, ৭ খুনের মত ঘটনা দেশকে পিছিয়ে দেয়া, অস্থিতিশীল করা এবং অর্ন্তবর্তী সরকারকে ব্যর্থ প্রমাণের ধারাবাহিক প্রচেষ্টারই অংশ। ছাত্র-জনতার রক্তের বিনিময়ে নতুন সম্ভাবনাময় বাংলাদেশের স্বপ্ন বাস্তবায়নে প্রথমেই দ্রুততম সময়ে খুনি-অপরাধীদের বিচারের আওতায় নিয়ে আসতে হবে।
বিভাগ : সম্পাদকীয়
মন্তব্য করুন
আরও পড়ুন
শান্তি ও মানবতার জয়গানেই খুলনায় বড়দিন উদযাপন
চুয়াডাঙ্গায় সারাবাংলা ৮৮ ফাউন্ডেশনের উদ্যোগে সপ্তাহ ব্যাপী কম্বল বিতরণ কার্যক্রম শুরু
কালিগঞ্জে বিভিন্ন সড়ক মহাসড়ক দাপিয়ে বেড়াচ্ছে অবৈধ ডাম্পার
রাজনৈতিক মিথ্যা মামলার ভয় দেখিয়ে জামির আলী মার্কেট দখলের পাঁয়তারা
দক্ষিণ কোরিয়ায় রাজনৈতিক সংকট ,অভিশংসিত প্রেসিডেন্ট ইউন আদালতে হাজির হননি
সালথায় দু'গ্রুপের সংঘর্ষে আহত ১৫, বাড়ি-ঘর ভাঙচুর
শুধু নির্বাচনের জন্য মানুষ জীবন দেয়নি : আসিফ মাহমুদ
নোয়াখালীর কবিরহাটে ১৩ বান্ডেল জাল ডলার ও টাকা জব্দ, গ্রেপ্তার-১
জম্মু-কাশ্মীরে ৫ ভারতীয় সেনা নিহত
অ্যাবারক্রোম্বি সিইও যৌন পাচার মামলায় অভিযুক্ত
চাঁদপুরে সেভেন মার্ডার: নৃশংসতার বর্ণনা দিলো র্যাব
ধার্মিক জামাই পেলে শোবিজ ছাড়বেন প্রিয়াঙ্কা, শেষ ইচ্ছা হাফেজ হওয়া
আন্দোলনে নামলেন এবার ২৫ ক্যাডারের কর্মকর্তারা
রূপগঞ্জে বিএনপির দুই গ্রুপের সংঘর্ষ, পৌর ছাত্রদলের আহ্বায়ক নিহত
চাঁদপুরে জাহাজে সাতজনকে হত্যা: সেই ইরফান গ্রেপ্তার
নির্বাচন পরবর্তী সহিংসতায় মোজাম্বিকে নিহত ১০৩
সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি আমাদের দেশের গর্ব : সেনাপ্রধান
ব্যারিস্টার ফুয়াদের ছবি সম্পাদনা করে ভুয়া প্রতিবেদন প্রচার
সৈয়দপুরে তালাবন্ধ ঘর থেকে গৃহবধূর লাশ উদ্ধার
পাকিস্তান থেকে সরাসরি আসছে জাহাজ, আমদানি বেড়েছে ২১ শতাংশ