রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে প্রকল্প গ্রহণ কাম্য নয়

Daily Inqilab ইনকিলাব

১২ আগস্ট ২০২৩, ০৮:২২ পিএম | আপডেট: ১৩ আগস্ট ২০২৩, ১২:০১ এএম

আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে ছোট ছোট প্রকল্প, যা ৫০ কোটি টাকার নিচে বাস্তবায়নে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় ও বিভাগ উৎসাহ দেখাচ্ছে। বিভিন্ন এলাকার মন্ত্রী, এমপি ও জনপ্রতিনিধিদের চাহিদাকে প্রাধান্য দিয়ে প্রকল্প বাস্তবায়নের উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে। গত দুই-তিনটি একনেক বৈঠকের মাঝামাঝি সময়ে প্রায় ১০-১৫টি ছোট প্রকল্প অনুমোদন দিয়েছেন পরিকল্পনামন্ত্রী। গতকাল একটি দৈনিকের সংবাদে এ তথ্য জানা যায়। এ নিয়ে বিশেষজ্ঞরা ভিন্নমত পোষণ করেছেন। বিশ্বব্যাংকের ঢাকা অফিসের সাবেক প্রধান অর্থনীতিবিদ ড. জাহিদ হোসেন বলেছেন, যে এলাকায় সত্যিকার অর্থে প্রয়োজন, সেখানে ছোট প্রকল্প নিলে সমস্যা নেই। এক্ষেত্রে যেসব মন্ত্রণালয় ও সংস্থা প্রকল্পগুলো বাস্তবায়ন করবে, তাদের সক্ষমতার বিষয়টি বিবেচনায় নিতে হবে। যদি নির্বাচনের বিষয় মাথায় রেখে ছোট প্রকল্প নেয়া হয়, তাহলে উদ্বেগের বিষয় রয়েছে। এসব প্রকল্প এখন নেয়া হলে পরে কি হবে? চলমান থাকবে নাকি মাঝ পথে বন্ধ হয়ে যাবে? এসব প্রশ্ন বিবেচনায় নিয়ে সিদ্ধান্ত নিতে হবে। তা না করলে পরবর্তীতে এডিপিতে এগুলো বোঝা হয়ে দাঁড়াবে কিংবা অপচয়ের খাতায় চলে যাবে। বিশেষজ্ঞদের মতে, সরকারের শেষ সময়ে এলাকার মানুষকে তুষ্ট করতে জনপ্রতিনিধিরা নানাভাবে প্রকল্প অনুমোদন করিয়ে নেয়ার চেষ্টা করছেন। এসব প্রকল্প নির্বাচনের চিন্তা মাথায় রেখে করা হলে অপচয়ের আশঙ্কা রয়েছে।

জাতীয় নির্বাচনের আগে মন্ত্রী-এমপিদের এলাকায় উন্নয়ন কাজ করার এক ধরনের হিড়িক পড়ার অপসংস্কৃতি বহুবছর ধরেই চলছে। পুরো মেয়াদকালে তাদের তেমন উদ্যোগ না থাকলেও নির্বাচনের আগে তড়িঘড়ি করে বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়নে ব্যস্ত হতে দেখা যায়। এর ফলে, অনেক সময় নির্বাচনের আগে প্রকল্পের কাজ শেষ হয় না। তবে তারা দেখাতে চেষ্টা করে নির্বাচিত হলে এগুলো সম্পন্ন করা হবে। এটি জনগণের সঙ্গে একধরনের চালাকি ছাড়া কিছু নয়। তড়িঘড়ি করে প্রকল্পের কাজ হাতে নিলে এবং বাস্তবায়ন করলেও তার মানসম্পন্ন হওয়া নিয়ে প্রশ্ন থেকে যায়। যে প্রকল্প বাস্তবায়নে এক বা দুই বছর সময় লাগার কথা, তা চার-পাঁচ মাসে মানসম্পন্নভাবে করা এক প্রকার অসম্ভব। এতে অর্থের অপচয়ের শঙ্কা থেকে যায়। অন্যদিকে, রাজনৈতিক বিবেচনায় বিশেষ করে ক্ষমতাসীন দলের মন্ত্রী-এমপিদের এসব প্রকল্প দেয়ার ফলে মানসম্পন্ন হয়েছে কিনা, তা খতিয়ে দেখার সাহস সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় ও বিভাগের থাকে না। পর্যবেক্ষকরা মনে করছেন, বর্তমানে দেশে তীব্র অর্থনৈতিক সংকট চলছে। ডলার সংকট থেকে রিজার্ভের পরিমাণ শঙ্কাজনক পর্যায়ে রয়েছে। সরকার কৃচ্ছ্রসাধন ও কোনো কোনো ক্ষেত্রে আমদানি নিয়ন্ত্রণ করেও তা সমাল দিতে পারছে না। বড় বড় প্রকল্পের বরাদ্দ কাটছাঁট করতে হচ্ছে। দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতিতে মানুষের জীবনযাপন অত্যন্ত কষ্টসাধ্য হয়ে পড়েছে। এমতাবস্থায় নির্বাচনকে সামনে রেখে জনতুষ্টি ও রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে প্রকল্প বাস্তবায়নে অর্থ বরাদ্দ করা ঝুঁকিপূর্ণ। এসব প্রকল্প জনগণের ট্যাক্সের অর্থেই করা হবে বা হচ্ছে। এক্ষেত্রে প্রকল্প টেকসই ও মানসম্মত না হওয়া বা মাঝপথে থেমে যাওয়া নিয়ে যেমন প্রশ্ন উঠবে, তেমনি জনগণের অর্থের অপচয় হবে। তড়িঘড়ি করে প্রকল্প বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে দক্ষতা ও সক্ষমতার প্রশ্নও জড়িয়ে আছে। স্বাভাবিক সময়েই অনেক ক্ষেত্রে প্রকল্প বাস্তবায়নে যথাযথ পরিকল্পনার অভাব এবং যথাসময়ে বাস্তবায়ন না হওয়া নিয়ে অর্থ অপচয়ের অভিযোগ থাকে। নির্বাচনের আগে স্বল্প সময়ে প্রকল্প যথাযথভাবে বাস্তবায়ন করা কতটা সম্ভব হবে, তা নিয়ে সন্দেহের অবকাশ রয়েছে।

দেশের সার্বিক আর্থিক সংকট বিবেচনায় নিয়ে নির্বাচনের আগে লোকদেখানো প্রকল্প হাতে নেয়া সমীচিন হতে পারে না। অর্থনীতিবিদরা অনেক আগেই শঙ্কা প্রকাশ করে বলেছেন, যত দিন যাবে আর্থিক সংকট তীব্র হয়ে উঠবে। এমতাবস্থায়, অর্থনীতির স্বার্থে ও অপচয়ের শঙ্কা রোধে শুধুমাত্র জনতুষ্টি অর্জনের জন্য প্রকল্পের অনুমোদন দেয়া উচিৎ হবে না। এ মুহূর্তে কম গুরুত্বপূর্ণ এবং তা যত ছোট প্রকল্পই হোক না কেন তাতে অর্থ বরাদ্দ দেয়া হলে অর্থনীতি আরও চাপে পড়বে। এ প্রেক্ষিতে, নির্বাচনকে সামনে রেখে ছোট প্রকল্প হাতে নেয়া মোটেই সংগত ও গ্রহণযোগ্য নয়।


বিভাগ : সম্পাদকীয়


মন্তব্য করুন

HTML Comment Box is loading comments...

এই বিভাগের আরও

স্মার্টফোনের দাসত্ব থেকে মুক্তির উপায়
দারিদ্র্য বিমোচনে যাকাত : প্রেক্ষিত বাংলাদেশ
চালের মূল্য কমাতে হবে
মেট্রোরেলের নিচের জায়গা অবৈধ দখলমুক্ত করতে হবে
পানির নিচে ডাটা সেন্টার
আরও

আরও পড়ুন

আশুলিয়ায় কৃষক দলের কম্বল বিতরণ

আশুলিয়ায় কৃষক দলের কম্বল বিতরণ

পশ্চিমাদের উদ্বেগ বাড়িয়ে ২০ বছরের প্রতিরক্ষা চুক্তি সই ইরান-রাশিয়ার

পশ্চিমাদের উদ্বেগ বাড়িয়ে ২০ বছরের প্রতিরক্ষা চুক্তি সই ইরান-রাশিয়ার

আ.লীগের আমলে উন্নয়নের গালগপ্প শোনালেও ভেতরে ছিল ফাঁপা : উমামা ফাতেমা

আ.লীগের আমলে উন্নয়নের গালগপ্প শোনালেও ভেতরে ছিল ফাঁপা : উমামা ফাতেমা

লঞ্চ ব্যবসায়ী ছেলের বিরুদ্ধে ‘মিথ্যা’ মামলা প্রত্যাহারের দাবিতে মায়ের সংবাদ সম্মেলন

লঞ্চ ব্যবসায়ী ছেলের বিরুদ্ধে ‘মিথ্যা’ মামলা প্রত্যাহারের দাবিতে মায়ের সংবাদ সম্মেলন

কিশোরগঞ্জে ‘তারুণ্যের মেলা’র উদ্বোধন

কিশোরগঞ্জে ‘তারুণ্যের মেলা’র উদ্বোধন

সুন্দরগঞ্জে গণমাধ্যম কর্মীর বিরুদ্ধে দায়েরকৃত মিথ্যা মামলা প্রত্যাহারের দাবিতে মানববন্ধন

সুন্দরগঞ্জে গণমাধ্যম কর্মীর বিরুদ্ধে দায়েরকৃত মিথ্যা মামলা প্রত্যাহারের দাবিতে মানববন্ধন

মানবাধিকার লঙ্ঘন বন্ধে প্রয়োজন স্থায়ী সংস্কার: এইচআরডব্লিউ'র প্রতিবেদন

মানবাধিকার লঙ্ঘন বন্ধে প্রয়োজন স্থায়ী সংস্কার: এইচআরডব্লিউ'র প্রতিবেদন

কক্সবাজারে ছাগলনাইয়া সিএনজি শো-রুম মালিক সমিতির নেতৃবৃন্দের সংবর্ধনা

কক্সবাজারে ছাগলনাইয়া সিএনজি শো-রুম মালিক সমিতির নেতৃবৃন্দের সংবর্ধনা

ওপারে ভালো থাকবেন ডেভিড লিঞ্চ

ওপারে ভালো থাকবেন ডেভিড লিঞ্চ

হাজারীবাগে ছাত্রী হোস্টেল থেকে শিক্ষার্থীর ঝুলন্ত লাশ উদ্ধার

হাজারীবাগে ছাত্রী হোস্টেল থেকে শিক্ষার্থীর ঝুলন্ত লাশ উদ্ধার

গুপ্ত হত্যা, গুম ও ক্রসফায়ার ছিলো শেখ হাসিনার অত্যন্ত প্রিয়: রিজভী

গুপ্ত হত্যা, গুম ও ক্রসফায়ার ছিলো শেখ হাসিনার অত্যন্ত প্রিয়: রিজভী

জনতার বাজার মনোপলি সিন্ডিকেটের ঊর্ধ্বে থাকবে: ঢাকা জেলা প্রশাসক

জনতার বাজার মনোপলি সিন্ডিকেটের ঊর্ধ্বে থাকবে: ঢাকা জেলা প্রশাসক

ভ্যাট না বাড়িয়ে সরকারকে খরচ কমানোর পরামর্শ বিএনপির

ভ্যাট না বাড়িয়ে সরকারকে খরচ কমানোর পরামর্শ বিএনপির

গারো পাহাড় সীমান্তাঞ্চলের কৃষকের স্বপ্ন এখন ইরি-বোরোয়

গারো পাহাড় সীমান্তাঞ্চলের কৃষকের স্বপ্ন এখন ইরি-বোরোয়

রাশিয়ার সঙ্গে ইরানের ২০ বছরের প্রতিরক্ষা চুক্তি স্বাক্ষর

রাশিয়ার সঙ্গে ইরানের ২০ বছরের প্রতিরক্ষা চুক্তি স্বাক্ষর

জাতীয় কবির নাতি দগ্ধ, আইসিইউতে ভর্তি

জাতীয় কবির নাতি দগ্ধ, আইসিইউতে ভর্তি

উখিয়ায় অবৈধভাবে মাটি কাটার দায়ে ১ জনকে ১০ দিনের সাজা, ট্রাক ও এক্সেভেটর মেশিন জব্দ

উখিয়ায় অবৈধভাবে মাটি কাটার দায়ে ১ জনকে ১০ দিনের সাজা, ট্রাক ও এক্সেভেটর মেশিন জব্দ

নগরকান্দায় ২ গ্রামবাসীর সংঘর্ষে পুলিশ সাংবাদিক নারীসহ আহত অর্ধশত

নগরকান্দায় ২ গ্রামবাসীর সংঘর্ষে পুলিশ সাংবাদিক নারীসহ আহত অর্ধশত

দুষ্ট লোকেরা বলে, আ’লীগকে প্রধান বিরোধীদল হিসেবে দেখতে চায় বিএনপি: শহীদুজ্জামান

দুষ্ট লোকেরা বলে, আ’লীগকে প্রধান বিরোধীদল হিসেবে দেখতে চায় বিএনপি: শহীদুজ্জামান

কটিয়াদীতে তারুণ্যের উৎসব ফুটবল টুর্নামেন্টের ফাইনাল খেলা অনুষ্ঠিত

কটিয়াদীতে তারুণ্যের উৎসব ফুটবল টুর্নামেন্টের ফাইনাল খেলা অনুষ্ঠিত