পানির নিচে ডাটা সেন্টার
১৭ জানুয়ারি ২০২৫, ১২:০৮ এএম | আপডেট: ১৭ জানুয়ারি ২০২৫, ১২:০৮ এএম
প্রতিটি ডাটা সেন্টার তথ্য ও উপাত্তের একটি বিশাল ভা-ার। সেখানে সব ধরনের পার্সোনাল ডাটাসহ সরকারি এবং রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ ডাটা থাকে। তাই এই ডাটাগুলো সুরক্ষিত রাখার জন্য অনলাইন সিকিউরিটির পাশাপাশি অফলাইন সিকিউরিটিরও ব্যবস্থা থাকে। বিশেষ করে, হ্যাকার গ্রুপ বা গোয়েন্দা সংস্থা থেকে এ সকল ডাটা রক্ষা করার জন্য অনেক কড়া সিকিউরিটির ব্যবস্থা রাখতে হয়। শুধু সার্ভার এবং ইন্টারনেট সংযোগ থাকলেই যে ডাটা সেন্টার হবে, তা কিন্তু নয়। ডাটা সেন্টার হওয়ার বেশ কয়েকটি শর্ত আছে, যা পূরণ করা অত্যন্ত অত্যাবশ্যকীয়। ডাটা সেন্টার এমন একটি জায়গায় হতে হবে, যেখানে কোনো প্রকার প্রাকৃতিক দুর্যোগ বা মানবসৃষ্ট দুর্যোগ হওয়ার আশঙ্কা থাকবে না। যদি তেমন কিছু হয় তবে তা একদম ৫% এরও কম হবে। তারপর কুলিং সিস্টেম হতে হবে সর্বোচ্চ পর্যায়ের উন্নত মানের। কারণ, সার্ভারগুলো দিনরাত চব্বিশ ঘণ্টা চলার কারণে যে তাপ তৈরি হবে তা সবসময় সহনীয় তাপমাত্রায় রাখতে হবে। তা না হলে পুরো কাঠামো নষ্ট হয়ে ডাটা সেন্টার অকেজো হয়ে যাবে।
সার্ভারসহ অন্যান্য অপারেশনাল যন্ত্রাংশ পরিচালনার জন্য নিরবিচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সংযোগ খুবই প্রয়োজনীয়। এই পাওয়ার ম্যানেজমেন্টের উপর নির্ভর করে গোটা অবকাঠামো সচল থাকে। তাই সার্ভারগুলো রাত দিন ২৪ ঘণ্টা সচল রাখার জন্য প্রধান পাওয়ার সিস্টেমের সাথে সাথে ব্যাকআপ পাওয়ার সিস্টেমের ব্যবস্থা রাখতে হবে। কিন্তু যে হারে তথ্যের সংখ্যা বেড়ে চলেছে সেক্ষেত্রে এগুলোকে রক্ষণাবেক্ষণ করাও কঠিন হয়ে পড়ছে। ডিজিটালাইজেশনের যুগে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ উপাদান হলো তথ্য অর্থাৎ ডেটা। যোগাযোগ, কর্মক্ষেত্র, পড়াশোনা, অবসরসহ নিত্যদিনের যেকোনো কাজের পুরোটাই নির্ভর করে আছে এই তথ্যের উপর। এজন্য ডেটা রক্ষণাবেক্ষণ প্রক্রিয়া সহজতর করে তুলতে মাইক্রোসফট ২০১৮ সালে এক অভিনব সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে। মাইক্রোসফটের এই পদক্ষেপটি ছিল ব্যতিক্রমধর্মী। তার এই ব্যতিক্রমধর্মী পদক্ষেপের সফলতা ডেটা সেন্টারের চিন্তাধারায় অপার সম্ভাবনার মাত্রা যুক্ত করেছে। তার এই সিদ্ধান্ত আজ এবং আগামীর ডেটা স্টোরেজ সিস্টেমই পাল্টে দেয়ার সক্ষমতা রাখছে। মাইক্রোসফটের এই প্রজেক্ট ন্যাটিক নামে পরিচিত, যা পৃথিবীর সর্বপ্রথম আন্ডারওয়াটার ডেটা সেন্টার। আগামী দিনে তথ্যপ্রযুক্তির অবাধ প্রবাহ বজায় রাখার জন্য প্রয়োজন পড়বে অধিক ধারণ ক্ষমতাসম্পন্ন ডাটা সেন্টারের। সেজন্যই এখন থেকে প্রয়োজনীয় অত্যাধুনিক প্রযুক্তির প্রস্তুতি নিতে শুরু করেছে বিশ্বের বড় বড় প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানগুলো।
হাজার হাজার কম্পিউটার সার্ভার থাকে ডাটা সেন্টারে। এই সার্ভারগুলো নিরলসভাবে চলতেই থাকে। এতে যে প্রচুর রিমাণ তাপ উৎপন্ন হয়, তা নিয়ন্ত্রণে রাখতে ডেটা সেন্টারগুলোতে ভালো রক্ষণাবেক্ষণের প্রয়োজন পড়ে। এসব সার্ভারের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ করাটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। অতিরিক্ত তাপমাত্রায় সার্ভারগুলো নষ্ট হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা থাকে। সে ক্ষেত্রে সমুদ্রের নিচে ডাটা সেন্টারের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখা অনেক সহজ। টারবাইন বা পানিবিদ্যুতের মাধ্যমে এই ডাটা সেন্টারে বিদ্যুৎ সরবরাহ করা সম্ভব। সমুদ্রের নিচের ডাটা সেন্টারের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ অনেক সুবিধাজনক। এর ফলে আলাদা শীতাতপ নিয়ন্ত্রণ পদ্ধতির দরকার হয় না। ফলে বিদ্যুৎ খরচ অনেকটাই কমে আসে। এছাড়াও বায়ুতে থাকা অক্সিজেন, ধূলিকণা ইত্যাদিও সার্ভারের জন্য ক্ষতিকর। তাই সার্ভারগুলোকে যদি বদ্ধ পরিবেশে রেখে পানিতে রাখা যায় তাহলে শীতলীকরণের দায়িত্ব পানির উপরেই ছেড়ে দেয়া যায়। এটি অনেকেটা নিউক্লিয়ার সাবমেরিনের মতো সমুদ্রকে তাপশোষক হিসেবে ব্যবহার করার মত বিষয়।
ইদানীং বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান তাদের ডাটা সেন্টারগুলোর জন্য বিভিন্ন সব অদ্ভুত জায়গা ব্যবহার করতে শুরু করেছে। পানির নিচে ডাটা সেন্টার স্থাপন করলে এটি যে শুধুমাত্র সেন্টারের কনটেন্টগুলোকেই ঠান্ডা রাখবে তা কিন্তু নয়, বরং এর আরও কিছু সুবিধা রয়েছে। প্রাকৃতিক এই কুলিং সিস্টেম ব্যবহারের মাধ্যমে বিভিন্ন ডাটা প্রতিষ্ঠানের কুলিং সিস্টেমের পেছনে যে অর্থ ব্যয় হয় তা অনেকটাই কমানো সম্ভব হবে। এদিকে বিশ্বের প্রায় অর্ধেক জনসংখ্যার বসবাস উপকূল থেকে ১২০ মাইলের মাঝেই। তাই এসব উপকূলের কাছাকাছি সহজেই এই সাব-সি ডাটা সেন্টারগুলোর মাধ্যমে অনেক সংখ্যক মানুষকে সেবা প্রদান করা সম্ভব হবে। এছাড়াও প্রয়োজনমত এই ডাটা সেন্টারগুলোর ক্যাপাসিটিও বৃদ্ধি করা যাবে। যদি ডেটা সেন্টারগুলো সমুদ্রে স্থাপন করা যায় তাহলে ডেটা ট্রাভেল টাইম অনেক কমে আসবে। ফলে এসব স্থানে গেমিং, ব্রাউজিং আরো ভালভাবে করা সম্ভব। মাইক্রোসফটের এই ডেটা সেন্টারগুলো এক নাগাড়ে ৫ বছর ফুল-চেকাপ ছাড়াই চলতে সক্ষম। ডেটা সেন্টারের ভেতরে অক্সিজেনের বদলে নাইট্রোজেন ব্যবহার করা হয়, যা ইলেক্ট্রনিক সরঞ্জামকে দীর্ঘায়ু প্রদানে সহায়তা করবে। অপরদিকে সমুদ্রের নিচে ডাটা সেন্টার স্থাপনে সময়ও লাগে কম। ভূপৃষ্ঠে ডাটা সেন্টার তৈরি করতে যেখানে দুই বছর সময় লাগে সেখানে সমুদ্রের নিচে মাত্র ৯০ দিনে ডাটা সেন্টার বানানো সম্ভব। তার লাইফস্প্যান হবে প্রায় ২০ বছরেরও বেশি সময়। ডেটা সেন্টারগুলি সূক্ষ্ম এবং অত্যন্ত পরিশীলিত উপাদানে ভরা, যা তাপমাত্রার পরিবর্তনের সাথে সম্পর্কযুক্ত। সমুদ্রের তলদেশের ডেটা সেন্টারগুলি নিরাপদ এবং আরও স্থিতিশীল। এছাড়াও পানিতে ডেটা সেন্টারের ব্যর্থতার হার স্থলভাগের এক-অষ্টমাংশ।
এদিকে সবচেয়ে চমকপ্রদ বিষয় হচ্ছে, এই ডেটা সেন্টারগুলো নবায়নযোগ্য। এই ডেটা সেন্টারের কন্টেইনার ও অভ্যন্তরীণ সরঞ্জাম সবই তৈরি করা হয় পুনর্ব্যবহারযোগ্য উপাদান দিয়ে। সমুদ্রের তলদেশের ডেটা সেন্টারগুলো পরিবেশবান্ধবও। মাইক্রোসফটের প্রজেক্ট শুধু প্রযুক্তিগত উপকারই নয় করছে পৃথিবীর উপকারও। এই ডেটা সেন্টারগুলো কোনো গ্রিন হাউজ ইফেক্ট তৈরি করে না, যা ভবিষ্যত জলবায়ুর জন্য এক বড় আশার বাণী। এছাড়াও সামুদ্রিক প্রাণী ডেটা সেন্টারটির আশেপাশে নিজেদের আবাসস্থল তৈরি করতে পারবে। ল্যান্ড-বেজড ডেটা সেন্টারের তুলোনায় আন্ডারওয়াটার ডেটা সেন্টারগুলো প্রযুক্তিগত, আর্থিক ও পরিবেশগত দিক থেকে নিঃসন্দেহে আদর্শ এবং ভবিষ্যতে এর সংখ্যা অবশ্যই বৃদ্ধি পাবে। কিন্তু এরই সাথে যে ল্যান্ড-বেজড ডেটা সেন্টারগুলোও উধাও হয়ে যাবে এমনটি নয়। বিশ্বের প্রায় ৫০ শতাংশ জনসংখ্যার বসবাস উপকূলের ১২০ মাইলের আশেপাশে হলেও বাকি ৫০ শতাংশের নির্বিঘœ সেবা নিশ্চিত করার জন্য ল্যান্ড-বেজড ডেটা সেন্টারের প্রয়োজন।
লেখক: নেটওয়ার্ক টেকনিশিয়ান (আইসিটি সেল), জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা।
বিভাগ : সম্পাদকীয়
মন্তব্য করুন
আরও পড়ুন
রাজধানীতে সবজির দামে জনমনে স্বস্তি
বরিশালের ডা. আরিফুর রহমান আর নেই
আইসিইউ থেকে সাইফকে বের করে আনা হয়েছে
শান্তদের সহকারী কোচ পোথাসের পদত্যাগ
হাজারীবাগে ট্যানারি গোডাউনে আগুন, নিয়ন্ত্রণে ১০টি ইউনিট
মুক্তিযুদ্ধে আওয়ামী লীগের অংশগ্রহণ কম ছিল: রিজভী
সমালোচনার মুখে বড় সিদ্ধান্ত, অ্যাপলের এআই সংবাদ সেবা সাময়িক বন্ধ
কাপ্তাইয়ের হাট-বাজারে মিলছে বল সুন্দরী বরই
লাভ জিহাদের প্রেক্ষিতে উগ্র-হিন্দুত্ববাদীদের হামলার শিকার অভিনেতা সাইফ আলি খান
দৌলতপুরে ট্রাকের ধাক্কায় যুবক নিহত
শেখ পরিবারের রক্ত থাকায় দুর্নীতিতে জড়িয়েছেন টিউলিপ সিদ্দিকী:রিজভী
পিরোজপুরে বাসচাপায় শ্যালক-দুলাভাই নিহত
লন্ডনে দারুল হাদীস লাতিফিয়ায় শামসুল উলামা হযরত আল্লামা ফুলতলী ছাহেব কিবলাহ রাহমাতুল্লাহি আলাইহির ঈসালে সাওয়াব মাহফিল অনুষ্ঠিত
আগা খাঁন গোল্ড কাপ গলফ টুর্নামেন্ট শুরু
কলকাতায় আর জি কর ধর্ষণ-হত্যা : মামলার রায় শনিবার
লিবিয়ার স্থিতিশীলতার লক্ষ্যে জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের নতুন সিদ্ধান্ত
"৩১ দফার ২৬ তম দফা "সবার জন্য স্বাস্থ্য" বাস্তবায়নের মধ্য দিয়েই স্বাস্থ্য বিপ্লব ঘটাবেন জনাব তারেক রহমান"- ডাঃ আউয়াল
হাজারীবাগে ট্যানারি গুদামে আগুন, নিয়ন্ত্রণে ৬ ইউনিট
লেবানন সফরে ম্যাক্রোঁ, নতুন সরকারকে সহায়তার প্রতিশ্রুতি
হালুয়াঘাট ধোবাউরা সীমান্তে ৮১ বোতল ভারতীয় মদ আটক করেছে বিজিবি