সমাজ জীবনে বিশ্বাসের সংকট বাড়ছে
১৩ আগস্ট ২০২৩, ০৯:৩১ পিএম | আপডেট: ১৪ আগস্ট ২০২৩, ১২:০১ এএম
একটু মনোযোগ সহকারে লক্ষ করলে দেখা যাবে, হতাশার সাগরে মানুষ হাবুডুবু খাচ্ছে। কেউ কাউকে বিশ্বাস করতে পারছে না। ধর্মীয় জীবনে, রাষ্ট্রীয় জীবনে অথবা সমাজিক জীবনÑ প্রতিটি ক্ষেত্রেই এখন বিশ্বাসের অভাব। বিশ্বাস-অবিশ্বাসের ব্যাপারটি অতীতেও ছিল, এখনও আছে, ভবিষ্যতেও থাকবে। কিন্তু বর্তমানে বিশ্বাস যেন এ দেশে বসবাসের যৌক্তিকতা হারিয়ে ফেলেছে। অবিশ্বাসের কালো মেঘে দেশটা যেন আচ্ছন্ন হয়ে গেছে। নির্বাচনে ভোটার বিশ্বাস করতে পারছেনা প্রার্থীকে। প্রার্থী বিশ্বাস করতে পারছে না ভোটারকে। নৈতিক অবক্ষয়ের চরম সন্ধিক্ষণে পিতা বিশ্বাস করতে পারছেনা পুত্রকে, পুত্র বিশ্বাস করতে পারছে না পিতাকে। স^ার্থের প্রশ্নে ভাই বিশ্বাস করছে না বোনকে, বোন বিশ্বাস করছে না ভাইকে। এক মায়ের গর্ভের সন্তান এক ভাই অন্য ভাইকে অবিশ্বাসের চোখে দেখছে। কন্যাকে প্রগাঢ় ভালবেসে অন্ধভাবে বিশ্বাস করতে গিয়ে কন্যার ভুলত্রুটি পিতার চোখে ধরা পড়ে না। কন্যারা পিতার সে অন্ধ বিশ্বাসের মর্যাদা রাখতে পারছে না। মেয়ে মাকে বিশ্বাস করতে না পেরে অনেক কিছু গোপন করতে গিয়ে নিজের ক্ষতি করছে, মা মেয়েকে বিশ্বাস করতে গিয়ে পরিবারের সর্বনাশ ডেকে আনছে। অন্তরঙ্গ বন্ধু হিসাবে অনেকে নিজেদের পরিচয় দিলেও একটু তলিয়ে দেখলে দেখা যাবে, একে অপরের প্রতি বিন্দুমাত্র বিশ্বাস নেই। একান্নবর্তী পরিবার বলে অহংকার কেউ করলেও ভাবী বিশ্বাস করতে পারছে না দেবরকে, দেবর বিশ্বাস করে না ভাবীকে। দুলাভাই বিশ্বাস করে না শ্যালককে, শ্যালক বিশ্বাস করছে না দুলাভাইকে। চাচা বিশ্বাস করতে পারছে না ভ্রাতৃপুত্রকে, ভ্রাতৃপুত্র বিশ্বাস করছে না চাচাকে। মামা বিশ্বাস করছে না ভাগ্নেকে, ভাগ্নে বিশ্বাস করতে পারছে না মামাকে। এ দেশে এক সময় এসব স¤পর্ক ছিল কত মধুর! এ ঘনিষ্ট স¤পর্কের মধ্যে বিশ্বাসের এখন বড্ড অভাব। খাদ্যদ্রব্য ক্রয় করতে গিয়ে কেনো কোনো ক্রেতার মনে প্রশ্ন জাগে, আমি যা কিছু কিনতে যাচ্ছি তা ভেজালমিশ্রিত নয়তো? বর্তমানে প্রত্যেক জিনিসের মধ্যে যেভাবে ভেজালমিশ্রণ হচ্ছে, এ দোকান থেকে কি আমি ভেজালমুক্ত খাদ্য কিনতে পারবো? এ দোকানটি অথবা দোকানের মালিকের প্রতি কি আমি বিশ্বাস রাখতে পারি? বিশ্বাস-অবিশ্বাসের মধ্যে দোদুল্যমান হওয়ার পরেও ক্রেতা তার প্রয়োজনীয় দ্রব্য ক্রয় করে। একবার ক্রয় করে সে যখন বুঝতে পারে, এ দোকান থেকে ক্রয় করে সে ভুল করেনি তখন সে যে কোনো ক্রয় করতে গিয়ে এ দোকানকেই বিশ্বাস করে। মনিষী থিওডোর রুজভেল্টের ভাষায় ‘মৃত্যুর পূর্ব মুহূর্ত পর্যন্ত বিশ্বাসের অমর্যাদা করো না।’ যে বিক্রেতা ক্রেতাদের বিশ্বাসের মর্যাদা দেবে তার দোকানে ক্রেতার সংখ্যা বহুগুণ বেড়ে যাবে আর যারা অবিশ্বাসের কাজ করবে সেখানে ক্রেতার সংখ্যা ক্রমাগত কমে যাবে। একবার ভুল করে কোনো ক্রেতা গেলেও দ্বিতীয়বার সে এ দোকানে আর যাবে না। ক্রিস্টিনা রসেটি বলেন, ‘একবার যে বিশ্বাস ভঙ্গ করে তার চারদিকে বিশ্বাস আর সহজে দানা বেঁধে উঠে না।’
কিছু পণ্য সামগ্রী ক্রয় করার উদ্দেশ্যে একজন ক্রেতা তার একটা পরিচিত দোকানে গিয়ে বলেন, আমাকে এ জিনিসগুলো দিন, দেখবেন কোনো জিনিস যেন দু’নম্বর বা নকল না হয়। দোকানদার বলেন, কী যে বলেন, আপনি আমাদের নিয়মিত কাস্টমার, আজ আপনাকে দু’ নম্বর মাল দিলে কাল কি আপনি আসবেন আমাদের দোকানে? দোকানদারের কথায় পাশে দাঁড়ানো একজন অনিয়মিত ক্রেতার মনে সন্দেহের উদ্রেক হলো। তিনি ভাবলেন দোকানদার আমাকে নকল মাল তুলে দেবে নাতো? তিনি দোকানী দ্বারা অন্যকে মাল দেয়ার ব্যস্ততার মধ্যে আস্তে করে বের হয়ে গেলেন। মনিষী বেন জনসন বলেন, ‘এমন লোককেই বিশ্বাস করবে, যার হাতে প্রতারিত হওয়ার সম্ভাবনা নেই।’ টমাস হুড এর ভাষায়, ‘মানুষের বিশ্বাস সুকোমল কেকের মতো যে কোন মুহূর্তে সহজেই ভেঙ্গে যেতে পারে।’
ডাক্তারের প্রেসক্রিপশান নিয়ে ক্রেতা ঔষধের দোকানে গেলেন। কয়েকটা ঔষধের দাম শুনে ক্রেতার প্রশ্ন, কী ব্যাপার আপনার এখানে ঔষধের এত দাম কেন? অন্য ফার্মেসি থেকে কদিন আগে আমি এ ঔষধগুলো আরো একটু কম দামে কিনেছিলাম। বিক্রেতার উত্তর, আমার এখানে দু’ নাম্বার ঔষধ নেই। আমি নকল ঔষধ বিক্রি করি না। ক্রেতার পাল্টা প্রশ্ন, এ ধরনের কথাতো সবাই বলে, আমি কীভাবে বিশ্বাস করতে পারি যে, আপনার ঔষধগুলো আসল? বিক্রেতা আসল-নকলের রহস্যটা ক্রেতাকে বিভিন্নভাবে বুঝিয়ে বলার চেষ্টা করেন। ক্রেতা কোনো কিছু না বুঝেও অনেক কিছু বুঝার ভান করে ঔষধের দাম পরিশোধ করে। ইউ,ডি, মার্টিনের ভাষায়, ‘সন্দেহ করার চেয়ে বিশ্বাস করাটাই সহজ যদিও আমরা এর উল্টোটাই করে থাকি।’ মনিষী টলস্টয় বলেন, ‘বিশ্বাসই হচ্ছে জীবনের গতি।’
আমার এক পরিচিত ব্যবসায়ী ব্যাংক থেকে টাকা তুলে আনার পর একশত টাকার দু’টি জাল নোট দেখে ব্যাংক ম্যানেজারকে জানালে তিনি তা বিশ্বাস করতে পারলেন না। ম্যানেজারের বক্তব্য, আপনি যদি আমার ব্যাংকের কাউন্টার থেকে জাল টাকা উদ্ধার করতেন, তাহলে আমরা তা মেনে নিতাম। কিন্তু আপনার কর্মচারী আপনার প্রতিষ্ঠানে নিয়ে যাওয়ার পর জাল টাকা পেলে আমরা তা গ্রহণ করতে পারি না। ব্যবসায়ীর বক্তব্য, এতোগুলো টাকা ব্যাংকে গুণে দেখা এবং প্রতিটি টাকা জাল কিনা পরীক্ষা করে দেখা কি সম্ভব? তাছাড়া বর্তমানে দেশের যে পরিস্থিতি, এভাবে দেখে নির্দিষ্ট গন্তব্যে নিয়ে যাওয়া কি নিরাপদ? ম্যানেজার এসব কথার উত্তর এড়িয়ে গিয়ে ব্যবসায়ীকে বললেন, আমি আপনাকে বিশ্বাস করি কিন্তু আপনার কর্মচারীতো এ কাজ করতে পারে। ব্যবসায়ী মুহূর্ত বিলম্ব না করে বলেন, আমি আপনাকে একজন সৎলোক হিসাবে জানি কিন্তু আপনার স্টাফদের মধ্যে সবাই যে সৎ তা ভাবি কী করে? স্টাফদের কারো সাথে জাল টাকার ব্যবসায়ী লোকদের স¤পর্ক থাকতেও পারে। মনিষীজন বলছেন, ‘কী সংক্ষিপ্ত, আর ক্ষণভঙ্গুর মানুষের বিশ্বাস।’
সম্প্রতি স^ামীর স^াক্ষর জাল করে স্ত্রীর ব্যাংক থেকে টাকা তুলে নেয়ার কথা দৈনিক পত্রিকায় পড়েছি, যদিওবা পরে এর প্রতিবাদ এসেছে। কিন্তু পাঠক ও পাঠিকার এতটুকু বুঝতে কষ্ট হয়নি, স^ামী-স্ত্রীর সবচেয়ে বড় যে স¤পদ পরস্পরের প্রতি প্রগাঢ় বিশ্বাস, সে বিশ্বাস আর অবশিষ্ট নেই। দা¤পত্য জীবনে বিশ্বাসে ফাটল ধরার ঘটনা আমার দীর্ঘ জীবনে অনেক দেখেছি। এখনতো পত্রিকা পড়লেই বুঝতে পারি যে এগুলো অত্যন্ত সাধারণ ঘটনা। মনিষী মিল্টন বলছেন, ‘বিশ্বাস জীবনকে গতিময়তা দান করে আর অবিশ্বাস জীবনকে দুর্বিষহ করে তোলে।’ সর্বক্ষেত্রে বিশ্বাসের এ পরিণতি দেখে ফ্রাঙ্কলিনের একটি বাণী মনে পড়ে, তিনি বলেছেন, ‘তিনজন বিশ্বাসী বন্ধুর উপর নির্ভর করা যায়- যথা: অনেক দিনের বিয়ে করা স্ত্রী, পুরানো পোষা কুকুর ও নগদ জমানো টাকা।’
ইদানিং পত্রপত্রিকা পড়ে এবং জীবন চলার পথে বিভিন্ন ঘটনার মুখোমুখি হতে গিয়ে আমি লক্ষ করেছি, প্রেমের ক্ষেত্রে বিশ্বাস-অবিশ্বাসের ব্যাপারটি প্রকট হয়ে দেখা দিয়েছে। কিছু ঘটনায় দেখা যায়, একজন প্রেমিকের একাধিক প্রেমিকা রয়েছে। আবার একজন প্রেমিকার একাধিক প্রেমিক রয়েছে। এসব ঘটনা যে আগেও ছিল না তা নয় তবে এসব ঘটনা ক্রমাগত বৃদ্ধি পাচ্ছে, এটা কি জনসংখ্যা বৃদ্ধির কারণে না-কি অপসংস্কৃতির শিকার, ভেবে দেখার বিষয়। রোজটেরি কুক বলছেন, ‘যে নিজের প্রতি বিশ্বস্ত নেই, অন্যের বিশ্বাস সে সহজেই ভাঙ্গতে পারে।’ ইমারসন বলেছেন, ‘বিশ্বাস না থাকলে বন্ধুত্ব হয় না।’ মনিষী হুইটার বলেছেন, ‘বিশ্বাস যেখানে আছে সেখানে কোন কৌশল খাটানো উচিত নয়।’
আজকাল বিপদে বা কোন সমস্যায় পড়ে কোন অচেনা ব্যক্তি যদি সাহায্য চায় তখন মনে হয়, লোকটি মিথ্যা বলছে বা অভিনয় করছে অথবা এভাবে সাহায্য চাওয়া তার স^ভাব। লোকটির কথাকে কেউ বিশ্বাস করতে চায় না। জীবন চলার পথে আমরা প্রতিনিয়ত এসব ঘটনার মুখোমুখি হচ্ছি। হ্যাঁ, আমি মনে করি, কেউ কেউ হয়তো মিথ্যা বলছে বা অভিনয় করছে অথবা কারো হয়তো এটা স^ভাবে পরিণত হয়ে গেছে। তাই বলে সব বিপদ ও সমস্যা অচেনা মানুষ হলেই কি অভিনয় হয়ে যায়? এভাবে অবিশ্বাস করতে গিয়ে হয়তো দেখা যাবে, আমরা চেনা মানুষকে, আপন মানুষকেও বিশ্বাস করতে পারছিনা। শেষ পর্যন্ত আমাদেরকে মনিষী ভার্জিলের বাণীটিকেই অনুসরণ করতে হবে। তিনি বলেছেন, ‘যে প্রমাণ করতে পারবে তাকেই শুধু বিশ্বাস করবে।’ এ বিশ্বাসের উপর রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর একটি সুন্দর কথা বলেছেন, ‘যারা নিজে বিশ্বাস নষ্ট করে না তারাই অন্যকে বিশ্বাস করে।’
এভাবে আমরা যদি বিশ্বাস নিয়ে একটু চিন্তা করি, তাহলে দেখতে পাবো অবিশ্বাসের সাগরে আমরা সাঁতার কাটছি। জীবন সমরাঙ্গণে সত্যিকার অর্থে আমরা যেন কেউ কাউকে বিশ্বাস করতে পারছি না। দ্রব্যমূল্য ঊর্ধ্বগতির বাজারে ওজনে বা পরিমাপে কম দিয়ে যেভাবে ঠকানো হচ্ছে, দেশে ভেজাল এবং নকলের যে সয়লাব চলছে, একে অপরের সাথে প্রতিশ্রুতি ভঙ্গের হার যেভাবে বৃদ্ধি পাচ্ছে, অত্যন্ত সুকৌশলে যেভাবে হত্যা ও অপহরণ করা হচ্ছে, স¤মুখে প্রশংসা আবার পেছনে গিয়ে মানুষ যেভাবে পরনিন্দা করছে, হিংসা, বিদ্বেষকে মানুষ প্রতিনিয়ত হƒদয়ে যেভাবে লালন করছে, আইন শৃংখলা পরিস্থিতির যেভাবে অবনতি আমরা দেখতে পাচ্ছি, মানুষ যেভাবে লোভকে সংবরণ করতে পারছে না, মিথ্যার আশ্রয় নিচ্ছে, অহংকার যেভাবে মানুষের মনুষ্যত্বকে নষ্ট করে দিচ্ছে, শঠতা-প্রবঞ্চনা, স^ার্থপরতা-মোনাফেকী-প্রতারণা অন্যায়-অবিচার, জুলুম যেভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে তাতে বিশ্বাস নির্বাসনে যেতে বাধ্য। জীবনের অভিধান থেকে বিশ্বাস শব্দটি মুছে যাওয়াই স^াভাবিক।
এতো কিছুর পরেও আমাদেরকে বিশ্বাস করতে হবে, বিশ্বাসের উপর আমাদেরকে নির্ভর করতে হবে। ধর্মীয়ভাবে আমরা যদি চিন্তা করতে যাই, ঈমান হলো ইসলামের প্রধান অঙ্গ। ঈমান শব্দের অর্থ বিশ্বাস বা আস্থা স্থাপন করা। এ ঈমান বা বিশ্বাসের উপর আমাদের শেষ ও শ্রেষ্ঠ নবী হযরত মোহা¤মদ মোস্তফা (সা.) এর অনেক স্মরণীয় বাণী রয়েছে, যেগুলোকে আমরা হাদীস হিসাবে জানি। একজন মুসলমান হিসাবে আমাদের কাছে মূলত বিশ্বাস কি, কারা বিশ্বাসী, বিশ্বাসীরা কেমন চরিত্রের, সত্যিকার বিশ্বাসীদের গুণ কী ইত্যাদি স¤পর্কে জানতে পারি। একটি হাদীস হচ্ছে, হযরত সুফিয়ান বিন আবদুল্লাহ সাকাফী (রা.) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, একবার আমি রাসুলুল্লাহ (সা.) এর কাছে আরয করলাম, আমাকে ইসলাম স¤পর্কে এমন একটি কথা বলে দিন, যা আপনার পর বা আপনি ছাড়া আমার আর কাউকে যেন জিজ্ঞেস করতে না হয়। হযরত (সা.) বললেন, আল্লাহর প্রতি বিশ্বাস করেছি, এ কথা বল এবং মজবুত থাক। (মুসলিম)। হযরত আবু হোরাইরা (রা.) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসুল (সা.) বলেছেন, যখন কোনো মানুষ ব্যভিচার করে, ‘তখন তার অন্তর থেকে ঈমান বা বিশ্বাস বের হয়ে যায় এবং তার মাথার উপরে ছায়ার ন্যায় ঈমান দোদুল্যমান থাকে। ব্যভিচার কাজ শেষ হলে আবার ঈমান ফিরে আসে’ (তিরমিজী, আবু দাউদ)। হযরত আবু হোরায়রা (রা.) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসুল (সা.) বলেছেন, মানব কেবল অনুসন্ধানে ব্যস্ত থাকবে। এমন কি সে বলবে আল্লাহ সৃষ্টকে সৃষ্টি করেছেন কিন্তু আল্লাহকে কে সৃষ্টি করছেন? যার অন্তরে এভাবের উদয় হয়, সে যেন বলে, আল্লাহ ও তাঁর রাসুলের প্রতি ঈমান এনেছি, (বোখারী, মুসলিম)। হযরত আবু হোরায়রা (রা.) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসুল (সা.) বলেছেন, যাঁর হাতে আমার জীবন তাঁর শপথ! কোনো লোক বিশ্বাসী হতে পারে না, যে পর্যন্ত সে নিজের জন্য যা ভালো মনে করে তাঁর ভাইয়ের জন্যও তা ভালো মনে করে। হযরত আবু হোরায়রা (রা.) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসুল (সা.) বলেছেন, যে স^ভাব-চরিত্রে সর্বোত্তম, সে বিশ্বাসীদের মধ্যে শ্রেষ্ঠ (আবু দাউদ)। হযরত আবু সাঈদ খুদরী (রা.) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসুল (সা.) বলেছেন, যার অন্তরে এক দানা পরিমাণও ঈমান বা বিশ্বাস থাকবে, তাকে জাহান্নাম হতে বের করা হবে (তিরমিজী)। হযরত আবু উমামাহ (রা.) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) কে জিজ্ঞাস করা হলো, ঈমান কী? তিনি বলেন, যখন তোমার সৎ কাজ তোমাকে আনন্দ দান করে এবং অসৎ কাজ পীড়া দেয় তখন তুমি মুমিন। পুনরায় জিজ্ঞেস করা হলো, অসৎ কাজ কী? তিনি বললেন, যখন কোনো কাজ করতে তোমার অন্তরে আটকায় তখন তা ত্যাগ করবে (আহমদ)। হযরত আনাস (রা.) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসুল (সা.) বলেছেন: নিশ্চয়ই আল্লাহ বিশ্বাসীর পুণ্য বিনষ্ট করেন না। এ দুনিয়াতে তাকে সওয়াব দেয়া হয় এবং আখিরাতেও তাকে সওয়াব দেয়া হবে। (মুসলিম)। হযরত আনাস (রা.) হতে বর্ণিত, রাসুল (সা.) বলেছেন, মৃত দেহকে তিনটি বিষয় অনুসরণ করে, তার মধ্যে দুটি ফিরে আসে এবং একটি মৃতদেহের সাথে থাকে, তা হলো আমল (বোখারী)।
আমরা বিশ্বাস নিয়ে যতই প্রশ্ন তুলিনা কেন, অবিশ্বাস যতই আমাদের আকড়ে ধরুক না কেন, বিশ্বাসঘাতকতার যতই দৃষ্টান্ত স্থাপন হোক না কেন, বিশ্বাস করতে গিয়ে মানুষের যতই শিক্ষা হোকনা কেন, তারপরও একটু বিশ্লেষণ করলে আমরা দেখতে পাই, বিশ্বাস নিয়েই আমরা বেঁচে আছি। জীবনযুদ্ধে বিশ্বাসকেই প্রতিনিয়ত লালন করছি। একটা বিশ্বাস নিয়ে আমি ঘর থেকে বের হচ্ছি যে, আমি আবার ঘরে ফিরে আসব। একটা বিশ্বাস নিয়ে যানবাহনে উঠছি যে, কোনো দুর্ঘটনা ঘটবে না। ব্যবসা, চাকরি, লেন-দেন প্রতিটি কাজেই আমরা বিশ্বাসকে প্রাধান্য দিচ্ছি। একটা বিশ্বাসের উপর মানুষ বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হচ্ছে। একটা বিশ্বাসের উপর মানুষ সংসার করে যাচ্ছে। একটা বিশ্বাস নিয়েই পিতা তার সন্তানকে মানুষ করার চেষ্টা করছে। একটা বিশ্বাস নিয়েই মানুষ ব্যর্থ হবার পরেও আবার সফল হবার চেষ্টা করে। শেক্সপিয়ার বলেছেন, ‘আত্মবিশ্বাসহীন পাখায় ভর করে আকাঙ্খা চরিতার্থ করা যায় না।’ মনিষী পি.জে. বেইলির ভাষায়, ‘পাখি যখন উড়তে শিখে বিশ্বাসই তখন তার একমাত্র অবলম্বন থাকে।’ এ কথাটাকে আরো সহজভাবে মনিষী ডরথি বেরি বলেছেন, ‘পাখি যখন উড়ে তখন তার ডানার উপর বিশ্বাস রেখেই উড়ে।’
লেখক: সাংবাদিক ও কলামিস্ট।
বিভাগ : সম্পাদকীয়
মন্তব্য করুন
আরও পড়ুন
মুক্তিযুদ্ধের সঠিক ইতিহাস তুলে ধরতে হবে : তারেক রহমান
ঋণখেলাপিরা যাতে মনোনয়ন না পায় চেষ্টা করবো : মির্জা ফখরুল
অর্থনৈতিক বৈষম্য দূর না হলে রাজনৈতিক সংস্কার টেকসই হবে না : বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টি
টিসিবি’র এক কোটি ফ্যামিলি কার্ডধারীর মধ্যে ৩৭ লাখই ভুয়া: বাণিজ্য উপদেষ্টা
ভোজ্যতেলের সরবরাহ নিশ্চিতে কারখানা পরিদর্শন ভোক্তা অধিকারের
গণপরিবহনে শৃঙ্খলায় কাউন্টার স্থাপনের পরিকল্পনা
রাজধানীর তিন পার্কে ভেন্ডারের চুক্তি : শর্ত ভঙ্গের তদন্তে ডিএনসিসি
বাবা-মায়ের পুরোনো বাড়িতে যাই : শফিকুল আলম
জুলাই গণঅভ্যুত্থানে আহতদের চিকিৎসায় ১৫০ কোটি টাকা অনুদান
২০২৪ সালে ৩১০ শিক্ষার্থীর আত্মহত্যা
ভারতীয় ৭২ গণমাধ্যমে বাংলাদেশ নিয়ে অপতথ্য প্রচার
লেবানন থেকে দেশে ফিরলেন আরো ৪৭
প্লাটফর্ম বিষয়ক প্রশিক্ষণ অনুষ্ঠিত
শক্তিশালী অর্থনীতি ও গর্বিত জাতি গড়তে শহীদ জিয়ার দর্শন ধারণ করতে হবে : আমির খসরু
কী আছে তৌফিকার লকারে?
ঘটনার তিনদিন পর থানায় মামলা
অনিয়ম ঢাকতে তড়িঘড়ি করে নির্বাচনের পাঁয়তারা
শেবাচিম হাসপাতালের মেডিসিন বিভাগের দুরবস্থা
৯৬টি সিএনজি ভাঙ্গাড়ি হিসাবে সাড়ে ১১ লাখ টাকায় বিক্রি
৩১ দফা জনগণের কাছে পৌঁছে দিতে রূপগঞ্জে বিএনপির সমাবেশ