সরকারি কর্মকর্তাদের মধ্যে মাদকাসক্তির বিস্তার উদ্বেগজনক
১৩ আগস্ট ২০২৩, ০৯:৩২ পিএম | আপডেট: ১৪ আগস্ট ২০২৩, ১২:০১ এএম
টিআর, কাবিখা ও কাবিটা প্রকল্পের উপজেলা পর্যায়ের কর্মকর্তাদের একাংশের অনিয়ম-দুর্নীতি ও অর্থলোপাট ওপেন সিক্রেট। কাজের ভাগাভাগির ঘটনা ছাড়াও কাজ না করে টাকা তুলে নেয়ার অভিযোগ রয়েছে তাদের বিরুদ্ধে। দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ে প্রকল্প কর্মকর্তাদের অনিয়ম-দুর্নীতি ও অর্থলোপাটের শত শত অভিযোগ জমা পড়েছে। তাদের অনেকের বিরুদ্ধে মাদকাসক্তির গুরুতর অভিযোগও রয়েছে। পর্যবেক্ষকদের মতে, মাঠপর্যায়ের সরকারি কর্মকর্তাদের মাদকে আসক্ত হয়ে পড়ার ঘটনা ভয়ংকর বললেও কম বলা হয়। এটা সমাজে অপূরণীয় ক্ষতি ডেকে আনতে পারে। ইনকিলাবে প্রকাশিত এক খবরে উল্লেখ করা হয়েছে, সারাদেশের উপজেলা পর্যায়ের প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তাদের মধ্যে ২০৫ জনের বিরুদ্ধে অনিয়ম-দুর্নীতি ও অসদাচারণের অভিযোগ মন্ত্রণালয়ে ও অধিদফতরে জমা দিয়েছেন স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা। এই ২০৫ জনের মধ্যে ৪৭ জনের বিরুদ্ধে মাদক গ্রহণের অভিযোগ রয়েছে। দিনাজপুর, ঠাকুরগাঁও, পঞ্চগড়, লালমনিরহাট কুড়িগ্রাম, জয়পুরহাট, চাঁপাইনব্বাগঞ্জ, চুয়াডাঙ্গা, চট্টগ্রাম, কুমিল্লা, নোয়াখালী প্রভৃতি জেলার বিভিন্ন উপজেলার প্রকল্প কর্মকর্তারা মাদক মোচনের সঙ্গে জড়িত বলে খবরে জানানো হয়েছে। অনিয়ম-দুর্নীতি, অর্থআত্মসাৎ, অসদাচারণ ইত্যাদি অভিযোগে অভিযুক্ত কর্মকর্তাদের অনেকের বিরুদ্ধে লঘু ধরনের বিভাগীয় ব্যবস্থা নেয়া হলেও মাদকাসক্ত কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে এখনো কোনো ব্যবস্থা নেয়া হয়নি। এমনকি এ বিষয়ে কোনো তদন্তও হয়নি। দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী ইনকিলাবকে বলেছেন: বিভিন্ন উপজেলার প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে অনিয়ম-দুর্নীতি ও অসদাচারণের অভিযোগ আমার কাছে আসার সাথে সাথে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশনা দেয়া হয়। যারা জড়িত তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে। যারা মাদক সেবনকারী তাদের বিরুদ্ধে দ্রুত ব্যবস্থা নেয়া হবে।
মাদকাসক্ত কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে দ্রুত ও কঠোর ব্যবস্থা নেয়া অত্যাবশ্যক ও জরুরি। বলা বাহুল্য, তাদের কারণে সরকারি অফিসে শৃংখলা বিঘিœত হচ্ছে এবং সেবা ব্যহত হচ্ছে। সকলেরই জানা, মাদক সুস্থ মস্তিষ্কে উন্মাদনা সৃষ্টি করে। আসক্ত ব্যক্তির হিতাহিত জ্ঞান বিলুপ্ত করে। এ জন্য মাদক নিষিদ্ধ। মাদকে আসক্তরা সমাজে নিন্দিত ও ধিকৃত। এটাও প্রমাণিত, মাদকাসক্ত ব্যক্তির পক্ষে চুরি, ডাকাতি, ছিনতাই, রাহাজানি, হত্যা, সন্ত্রাসসহ এহেন অনৈতিক ও অপরাধমূলক কাজ নেই, যা করা অসম্ভব। মাদকাসক্তরা সমাজে দুষ্টক্ষত তুল্য। দুঃখজনক হলেও বলতে হচ্ছে, আমাদের দেশে হাত বাড়ালেই মাদক পাওয়া যায়। ফলে মাদকাসক্তের সংখ্যা উদ্বেগজনকভাবে বাড়ছে। শুধু শহর নয়, প্রত্যন্ত গ্রামও মাদকে সয়লাব হয়ে গেছে। শিশু-কিশোর থেকে বৃদ্ধ পর্যন্ত সব বয়সী মানুষই মাদকাসক্ত হয়ে পড়েছে। মাদক দ্রব্য ও নেশা নিরোধ সংস্থার হিসাবে, দেশে মাদকাসক্তের সংখ্যা ৮৫ থেকে ৯০ লাখের মতো। অনেকের ধারণা, এ সংখ্যা আরো বেশি। মাদকাসক্তের মধ্যে তরুণের সংখ্যা তুলনামূলকভাবে বেশি। বিশেষজ্ঞদের মতে, তরুণরা বিভিন্ন মাদকে আসক্ত হয়ে পড়ছে, যা দেশের জন্য মারাত্মক ক্ষতির কারণ। তরুণ সমাজ যদি মাদকে নিঃশেষ হয়ে যায়, তবে দেশের ভবিষ্যত অনিশ্চত ও বিপর্যয়কর হতে বাধ্য। এমন কোনো শ্রেণী-পেশা নেই, যেখানে মাদকের অনুপ্রবেশ ঘটেনি। ছাত্র, শিক্ষক, ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার, কৃষিবিদ, সরকারি কর্মকর্তা, পুলিশ, শ্রমিক প্রভৃতি শ্রেণী-পেশার মানুষের মধ্যে মাদকাসক্তের সংখ্যা যেভাবে বাড়ছে তাতে আতঙ্কিত না হয়ে পারা যায় না। বিভিন্ন অপরাধের মূল কারণ মাদক। মাদকের অর্থ যোগাড় করতে গিয়ে ছিনতাই, রাহাজানি, চুরি, ডাকাতি, চাঁদাবাজি প্রভৃতি অপরাধ করতে দেখা গেছে অনেক আসক্তের। অর্থের দাবিতে পিতা, মাতা কিংবা স্ত্রীকে হত্যা করতেও দেখা গেছে কাউকে কাউকে। সমাজবেত্তাদের অনেকের মতে, ধর্ষণ বৃদ্ধির পেছনেও মাদকের ভূমিকা প্রধান। বলা হয়, মাদক সব অপরাধের মাতৃস্বরূপা। অপরাধ, দুর্নীতি, দুষ্কৃতি, অনাচার রোধে তাই মাদকের ব্যবহার রহিত করার বিকল্প নেই।
পুলিশের মধ্যে মাদকাসক্তির বিস্তার নিয়ে ইতোপূর্বে অনেক আলোচনা হয়েছে। পুলিশের এক শ্রেণীর সদস্য মাদকে আসক্ত, এমনকি মাদক কারবারের সঙ্গে জড়িত, এমন খবর ও প্রমাণ মজুদ আছে। এখন টিআর, কাবিখা ও কাবিটা প্রকল্পের উপজেলা পর্যায়ের কর্মকর্তাদের একাংশের বিরুদ্ধে মাদকাসক্তির অভিযোগ পাওয়া গেলো। খোঁজ নিলে অন্যান্য সরকারি বিভাগ ও অফিসের কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধেও হয়তো অনুরূপ অভিযোগ মিলবে। কাজেই, বিষয়টি নিয়ে হেলাফেলা করা যাবে না। প্রশাসনে ও পুলিশের মাদকসম্পর্কিত একটি বিস্তারিত তদন্ত অনুষ্ঠান প্রয়োজন। তদন্তে যারা দোষী সাব্যস্ত হবে, তাদের প্রথমে সতর্ক করা যেতে পারে। পরবর্তীতে একই অভিযোগ যাদের ক্ষেত্রে পাওয়া যাবে, তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিতে হবে। প্রয়োজনে চাকরি থেকে চ্যুৎ করতে হবে। ডোপ টেস্টের মাধ্যমে মাদকাসক্ত চিহ্নিত করা সহজ। তাই বাধ্যতামূলক ডোপ টেস্টের একটি আয়োজন করা যেতে পারে। এভাবে মাঝে মাঝে নির্দিষ্ট সময় অন্তর ডোপ টেস্ট হলে মাদকাসক্তদের সংখ্যা কমবে। অনেকে মাদক ছেড়ে দেবে, অন্যথায় চাকরির বাইরে চলে যাবে। সব নিয়োগের ক্ষেত্রে ডোপ টেস্ট বাধ্যতামূলক করলে এবং মাদকাসক্তের নিয়োগ বারিত বা নিষিদ্ধ করলে চাকরিজীবীদের মধ্যে মাদকাসক্তের অনুপ্রবেশ বন্ধ হবে। আমরা আশা করবো, সরকার এ ব্যাপারে অবিলম্বে কার্যকর ব্যবস্থা ও পদক্ষেপ গ্রহণ করবে।
বিভাগ : সম্পাদকীয়
মন্তব্য করুন
আরও পড়ুন
মুক্তিযুদ্ধের সঠিক ইতিহাস তুলে ধরতে হবে : তারেক রহমান
ঋণখেলাপিরা যাতে মনোনয়ন না পায় চেষ্টা করবো : মির্জা ফখরুল
অর্থনৈতিক বৈষম্য দূর না হলে রাজনৈতিক সংস্কার টেকসই হবে না : বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টি
টিসিবি’র এক কোটি ফ্যামিলি কার্ডধারীর মধ্যে ৩৭ লাখই ভুয়া: বাণিজ্য উপদেষ্টা
ভোজ্যতেলের সরবরাহ নিশ্চিতে কারখানা পরিদর্শন ভোক্তা অধিকারের
গণপরিবহনে শৃঙ্খলায় কাউন্টার স্থাপনের পরিকল্পনা
রাজধানীর তিন পার্কে ভেন্ডারের চুক্তি : শর্ত ভঙ্গের তদন্তে ডিএনসিসি
বাবা-মায়ের পুরোনো বাড়িতে যাই : শফিকুল আলম
জুলাই গণঅভ্যুত্থানে আহতদের চিকিৎসায় ১৫০ কোটি টাকা অনুদান
২০২৪ সালে ৩১০ শিক্ষার্থীর আত্মহত্যা
ভারতীয় ৭২ গণমাধ্যমে বাংলাদেশ নিয়ে অপতথ্য প্রচার
লেবানন থেকে দেশে ফিরলেন আরো ৪৭
প্লাটফর্ম বিষয়ক প্রশিক্ষণ অনুষ্ঠিত
শক্তিশালী অর্থনীতি ও গর্বিত জাতি গড়তে শহীদ জিয়ার দর্শন ধারণ করতে হবে : আমির খসরু
কী আছে তৌফিকার লকারে?
ঘটনার তিনদিন পর থানায় মামলা
অনিয়ম ঢাকতে তড়িঘড়ি করে নির্বাচনের পাঁয়তারা
শেবাচিম হাসপাতালের মেডিসিন বিভাগের দুরবস্থা
৯৬টি সিএনজি ভাঙ্গাড়ি হিসাবে সাড়ে ১১ লাখ টাকায় বিক্রি
৩১ দফা জনগণের কাছে পৌঁছে দিতে রূপগঞ্জে বিএনপির সমাবেশ