সড়কে নৈরাজ্য-বিশৃঙ্খলার দায় মন্ত্রণালয় বিআরটিএ ও পুলিশ এড়াতে পারে না

Daily Inqilab ইনকিলাব

২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১২:১২ এএম | আপডেট: ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১২:১২ এএম


দেশের সড়ক-মহাসড়কে দীর্ঘদিন ধরে নৈরাজ্য চলছে। যদিও এ সংক্রান্ত মন্ত্রণালয় আছে, আছে বিভিন্ন কর্তৃপক্ষ। তারা যথাযথভাবে দায়িত্ব পালন না করায় এ নৈরাজ্যের অবসান ঘটছে না। দিনকে দিন বরং বাড়ছে। রাজধানী থেকে শুরু করে জেলা-উপজেলা পর্যন্ত কোথাও সড়কে শৃঙ্খলা নেই, নিয়ম-কানুনের বালাই নেই। বিভিন্ন সূত্র থেকে জানা গেছে, সারাদেশের সড়ক-মহাসড়কে মেয়াদ-উত্তীর্ণ, ফিটনেসবিহীন ৫ লাখের অধিক যানবাহন চলাচল করছে। রাজধানীর বিভিন্ন সড়কে চলাচল করে অন্তত সাড়ে ৩ হাজার যানবাহন। এর মধ্যে অর্ধেকই নাকি ফিটনেসবিহীন। রাজধানীতে যদি এমন হয়, তবে দেশের অন্যত্র কী হতে পারে, সহজেই অনুমেয়। যানবাহনের ফিটনেসসনদ প্রদান, মেয়াদ-উত্তীর্ণ যানবাহনের পরীক্ষা-নিরীক্ষা, চালকদের লাইসেন্স ইত্যাদির দায়িত্ব বিআরটিএ’র ওপর ন্যস্ত। সড়ক-মহাসড়কে যানবাহন নিয়ন্ত্রণসহ ফিটনেসসনদ দেখা ও চালকের লাইসেন্স পরীক্ষা করার দায়িত্ব ট্রাফিক পুলিশের। বলা হয়, বিআরটিএ ও পুলিশ যদি নিষ্ঠা, সততা ও আন্তরিকতার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করে তবে সড়ক-মহাসড়কে নৈরাজ্য ও বিশৃঙ্খলা দেখা দেয়া অসম্ভব। রাজধানীসহ দেশের সর্বত্র রংচটা, ফিটনেসবিহীন লক্কড়-ঝক্কড় যানবাহন দিব্যি চলাচল করছে। এ ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট কারোরই কোনো বিকার নেই। টাকার বিনিময়ে সবকিছু হয়ে যাচ্ছে। বিআরটিএ’র লোকজন ও পুলিশ উৎকোচ নিয়ে সব অবৈধকে বৈধ করে দিচ্ছে। মালিক-চালকরা এতে খুশি। বৈধতা পেয়ে অবৈধ যানবাহন দাপিয়ে বেড়াচ্ছে সড়ক-মহাসড়কে। রাজধানীসহ দেশের সড়ক-মহাসড়ক এখন মৃত্যু ফাঁদে পরিণত হয়েছে। গত মাসে ৫৬২টি দুর্ঘটনায় ৫৬৫ জন নিহত ও সহ¯্রাধিক আহত হয়েছে। এভাবে প্রায় প্রতি মাসেই শত শত মানুষ হতাহত হচ্ছে। এসব দুর্ঘটনার অধিকাংশের জন্য দায়ী ফিটনেসবিহীন যানবাহন, যানবাহনের যান্ত্রিক ত্রুটি এবং অদক্ষ চালক ও তাদের বেপরোয়া যানবাহন চালনা। যখন অধিক প্রাণহানিকর ও মর্মন্তুদ সড়ক দুর্ঘটনা ঘটে, তখন দেখা যায়, দুর্ঘটনাকবলিত যানবাহনটির ফিটনেস ছিল না কিংবা চালক ছিল অদক্ষ ও নবিশ।

পর্যবেক্ষকরা মনে করেন, মেয়াদ-উত্তীর্ণ ও ফিটনেসবিহীন যানবাহন চলাচল বন্ধ করতে পারলে সড়কে নৈরাজ্য, বিশৃঙ্খলা, প্রাণহানি অর্ধেকের বেশি কমে যাবে। এর আগে বিভিন্ন সময় রাজধানীসহ সারাদেশে ফিটনেসবিহীন যানবাহন চলাচল বন্ধ করার কর্তৃপক্ষীয় অঙ্গীকার ও সিদ্ধান্তের কথা আমরা বহুবার শুনেছি। কিন্তু সেই অঙ্গীকার ও সিদ্ধান্ত বাস্তবায়িত হতে দেখা যায়নি। অনেক ক্ষেত্রে এসব যানবাহনের বিরুদ্ধে অভিযান চালানোর তারিখ ঘোষণা করেও অজ্ঞাত কারণে পরে অভিযান স্থগিত করা হয়েছে। যখনই মেয়াদ-উত্তীর্ণ ও ফিটনেসবিহীন যানবাহনের বিরুদ্ধে অভিযান চালানোর কথা বলা হয় বা শোনা যায়, তার আগেই সড়কে যানবাহনের সংখ্যা কমে যায়। রাজধানীতেও এমনটা দেখা গেছে। যানবাহনের অভাবে যাত্রীদের অশেষ দুর্ভোগের সম্মুখীন হতে হয়েছে। পরে রংচং করে সেই পুরানো লক্কড়-ঝক্কড় যানবাহনই সড়কে নামানো হয়েছে। আমরা অনেক দিন ধরে এই ইঁদুর-বিড়াল খেলা দেখছি। এ খেলা বন্ধ হওয়া দরকার। সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের রাজধানীতে চলা ফিটনেসবিহীন লক্কড়-ঝক্কড় বাস দেশের উন্নয়ন অর্জনকে লজ্জা দেয় বলে যে মন্তব্য করেছেন, তার যথার্থতা প্রশ্নাতীত। এই লজ্জা নিবারণ করার প্রধান দায়িত্ব তো তারই। তিনি কী করছেন? মন্ত্রী সাক্ষ্য দিয়েছেন, এই রাজধানীতেই লক্কড়-ঝক্কড় যানবাহনের অনেক কারখানা আছে। তিনি স্বয়ং ভিজিট করেছেন। তিনি স্বচক্ষে দেখেছেন, রং লাগাতে। অতঃপর বলেছেন, রং দিয়ে লাভ নেই ফিটনেস না থাকলে। বলা বাহুল্য, তার এসব কথা স্বগতোক্তির মতো মনে হয়। ফিটনেসবিহীন যানবাহন সড়ক থেকে সরিয়ে নেয়ার ও অপকর্মে নিয়োজিতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার কাজ তো তার মন্ত্রণালয় ও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষগুলোরই, নাকি?

জানা গেছে, বিআরটিএ মেয়াদ-উত্তীর্ণ ও ফিটনেসবিহীন যানবাহনের বিরুদ্ধে অভিযানে নামতে যাচ্ছে। ১ জুন থেকে এ অভিযান শুরু হবে বলে ইনকিলাবকে জানিয়েছেন বিআরটিএ’র চেয়ারম্যান নূর মোহাম্মদ মজুমদার। তিনি বলেছেন, সড়কে কোনো ফিটনেসবিহীন গাড়ি চলবে না। মেয়াদ-উত্তীর্ণ হলেই ধরে নেবো, আনফিট। আনফিট যানবাহন পেলেই ডাম্পিংয়ে দেয়া হবে। উল্লেখ নিষ্প্রয়োজন, মেয়াদ-উত্তীর্ণ ও আনফিট গাড়ির উপদ্রব ও ক্ষতি থেকে মুক্ত হতে হলে এ ধরনের যানবাহন পাওয়া মাত্র স্ক্র্যাপ করার বিকল্প নেই। সড়ক থেকে তুলে নিয়ে এসব যানবাহন কোথাও রেখে দেয়া বা ফেলে রাখা কোনোমতেই সমীচীন হবে না। আমরা রাজধানীসহ বিভিন্ন থানা এলাকায় পরিত্যাক্ত, দুর্ঘটনাকবলিত কিংবা মামলার সাক্ষ্য হিসেবে চিহ্নিত যানযাবহন পড়ে থাকতে দেখতে পাই। এসব যানবাহন পরিবেশ দূষণ ও যানবাহন চলাচলে বিঘœ সৃষ্টি করে থাকে। তাই মেয়াদ-উত্তীর্ণ ও ফিটনেসবিহীন যানবাহন সম্পূর্ণরূপে নিশ্চিহ্ন করে দিতে হবে, যাতে ফের তা সড়কে নামার সুযোগ না পায় অথবা পরিবেশ দূষণের কারণ না হয়। সড়কে নৈরাজ্য ও বিশৃঙ্খলার জন্য যানবাহনগুলোর যথেচ্ছাচারও কম দায়ী নয়। বাস-মিনিবাসগুলো ট্রাফিকবিধি লংঘন না করে যেন চলাচল করতেই পারে না। যত্রতত্র যাত্রী উঠানো-নামানো, ফ্লাইওভারের মুখে ও বিভিন্ন সংযোগস্থলে অনির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত যাত্রী নিতে অপেক্ষা করা ইত্যাদি সাধারণ ব্যাপারে পরিণত হয়েছে। এ কারণে রাজধানীতে অনেক সময় তীব্র যানজটের সৃষ্টি হয়। যানজটের কারণে মানুষের বহুমূল্য সময়েরই শুধু অপচয় হয় না, আর্থিক-মানসিক ক্ষতিও হয় অপূরণীয়। লক্ষ করা যায়, সড়কজুড়ে যানজট; অথচ, ট্রাফিক পুলিশ নির্বিকার। কখনো কখনো তাদের টুপাইস কামাতে ব্যস্ত থাকতে দেখা যায়। বিশেষজ্ঞদের মতে, সড়কে নৈরাজ্য, বিশৃঙ্খলা এবং গণপরিবহনগুলোর স্বেচ্ছাচার প্রতিরোধ করতে হলে সংশ্লিষ্ট সকল পক্ষের সম্মিলিত উদ্যোগ ও পদক্ষেপ প্রয়োজন। এই সঙ্গে যারাই দায়িত্বহীনতা, অনিয়ম-দুর্নীতি ও অপকর্মের সঙ্গে জড়িত ও যুক্ত থাকবে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে হবে।


বিভাগ : সম্পাদকীয়


মন্তব্য করুন

HTML Comment Box is loading comments...

আরও পড়ুন

বাংলাদেশ-জিম্বাবুয়ে ম্যাচে বৃষ্টির বাধা

বাংলাদেশ-জিম্বাবুয়ে ম্যাচে বৃষ্টির বাধা

দরকারী কাগজে নাপাকি লাগলে কী করণীয় প্রসঙ্গে।

দরকারী কাগজে নাপাকি লাগলে কী করণীয় প্রসঙ্গে।

দুই দিনে সোনার দাম বাড়ল ১৭৮৫ টাকা

দুই দিনে সোনার দাম বাড়ল ১৭৮৫ টাকা

স্ট্যান্ডার্ড ব্যাংক পিএলসি. এর শরি‘আহ্ সুপারভাইজরি কমিটির ৪৪তম সভা অনুষ্ঠিত

স্ট্যান্ডার্ড ব্যাংক পিএলসি. এর শরি‘আহ্ সুপারভাইজরি কমিটির ৪৪তম সভা অনুষ্ঠিত

‘বিশ্ব কর্মক্ষেত্রে নিরাপত্তা ও স্বাস্থ্য দিবস ২০২৪’ পালন করলো এনার্জিপ্যাক

‘বিশ্ব কর্মক্ষেত্রে নিরাপত্তা ও স্বাস্থ্য দিবস ২০২৪’ পালন করলো এনার্জিপ্যাক

মোদির মুসলিম বিদ্বেষী প্রচারণায় এবার উপজীব্য ভোট জিহাদ, তারপর কী?

মোদির মুসলিম বিদ্বেষী প্রচারণায় এবার উপজীব্য ভোট জিহাদ, তারপর কী?

সুদহার শিগগিরই বাজারের ওপর ছেড়ে দেয়া হবে: গভর্নর

সুদহার শিগগিরই বাজারের ওপর ছেড়ে দেয়া হবে: গভর্নর

মুস্তাফিজকে ছাড়াই চেন্নাইয়ের বড় জয়

মুস্তাফিজকে ছাড়াই চেন্নাইয়ের বড় জয়

শাহজালালে তিনদিন ৩ ঘণ্টা করে ফ্লাইট ওঠানামা বন্ধ

শাহজালালে তিনদিন ৩ ঘণ্টা করে ফ্লাইট ওঠানামা বন্ধ

ইসলামবিরোধী হিন্দুত্ববাদী কারিকুলাম প্রত্যাখ্যান করুন

ইসলামবিরোধী হিন্দুত্ববাদী কারিকুলাম প্রত্যাখ্যান করুন

উখিয়া ক্যাম্পে এক রোহিঙ্গা যুবককে জবাই করে হত্যা

উখিয়া ক্যাম্পে এক রোহিঙ্গা যুবককে জবাই করে হত্যা

জনসমর্থন না থাকায় বিএনপি নির্বাচন থেকে দূরে থাকছে: কুষ্টিয়ায় হানিফ

জনসমর্থন না থাকায় বিএনপি নির্বাচন থেকে দূরে থাকছে: কুষ্টিয়ায় হানিফ

ইসলামী শিক্ষা নিয়ে যে কোন দূরভিসন্ধি রুখে দিতে হবে পীর সাহেব চরমোনাই

ইসলামী শিক্ষা নিয়ে যে কোন দূরভিসন্ধি রুখে দিতে হবে পীর সাহেব চরমোনাই

লক্ষ্যটা নাগালেই রাখল বাংলাদেশ

লক্ষ্যটা নাগালেই রাখল বাংলাদেশ

ডিবি কার্যালয়ে মিল্টন সমাদ্দারের স্ত্রী

ডিবি কার্যালয়ে মিল্টন সমাদ্দারের স্ত্রী

অনিয়ন্ত্রিত মুদ্রাস্ফীতি, ঋণের ঝুঁকি ও প্রবৃদ্ধির শ্লথগতি

অনিয়ন্ত্রিত মুদ্রাস্ফীতি, ঋণের ঝুঁকি ও প্রবৃদ্ধির শ্লথগতি

সামুদ্রিক মৎস্য সম্পদ উন্নয়নের স্বার্থে অবৈধ জালের বিস্তার অবশ্যই রোধ করতে হবে: মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রী

সামুদ্রিক মৎস্য সম্পদ উন্নয়নের স্বার্থে অবৈধ জালের বিস্তার অবশ্যই রোধ করতে হবে: মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রী

রিয়াল ম্যাচের আগে বায়ার্ন শিবিরে চোটের আঘাত

রিয়াল ম্যাচের আগে বায়ার্ন শিবিরে চোটের আঘাত

নিজের নির্বাচনী কেন্দ্রেই যৌন হেনস্তার শিকার অজি মন্ত্রী।

নিজের নির্বাচনী কেন্দ্রেই যৌন হেনস্তার শিকার অজি মন্ত্রী।

এবার মানবপাচার মামলায় ৪ দিনের রিমান্ডে মিল্টন সমাদ্দার

এবার মানবপাচার মামলায় ৪ দিনের রিমান্ডে মিল্টন সমাদ্দার