বিদ্যুতের সাশ্রয়ী ব্যবহার কীভাবে করা যায়
১০ জুন ২০২৪, ১২:০৩ এএম | আপডেট: ১০ জুন ২০২৪, ১২:০৩ এএম
নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ এখন সময়ের দাবি। এক সেকেন্ডের জন্যও যদি বিদ্যুৎ না থাকে অস্বস্তি থেকে অসন্তোষ শুরু হয়ে যায়। সরকারের প্রতি ইউনিট বিদ্যুতের উৎপাদন খরচ ১২.১৩ টাকা এবং বাল্কে বিক্রয় করে ৭.০৪ টাকা। বছরে প্রায় ৯ হাজার কোটি ইউনিট বিদ্যুৎ উৎপাদন করলে বছরে যে বিশাল পরিমাণ অর্থের ঘাটতি থাকে তা চিন্তার বিষয়। এই ঘাটতি কমানোর লক্ষ্যে সরকারের সাথে সাথে আপনার-আমারও দায়িত্বশীল অবদান রাখার সুযোগ রয়েছে। আমরা সচেতন হলেই নিজের বিদ্যুৎ বিল নিজেই নির্ধারণ করতে পারি অর্থাৎ বিদ্যুতের সাশ্রয়ী ব্যবহার করে আমরা বিদ্যুৎ বিল কমিয়ে আনতে পারি।
একটু সচেতনভাবে বিদ্যুৎ ব্যবহার করলে বিদ্যুৎ বিল কম আসবে। এতে একদিকে যেমন ব্যক্তি উপকৃত হবে, তেমনি এখাতে যে বিপুল পরিমাণ অর্থ ভুর্তিকী দিতে হয় তা হোক না। আমরা বাসা-বাড়িতে যে সকল বৈদ্যুতিক যন্ত্রপাতি ব্যবহার করি তাতে যে পরিমাণ বিদ্যুৎ ব্যবহার হয়। সে বিষয়ে আমাদের ধারণা থাকা দরকার। বাসা বাড়িতে সকলেই লাইট-ফ্যান ব্যবহার করি। সাধারণ হিসাব হলো, একটি লাইট (সিএফএল, ২৩ ওয়াট) প্রায় ৪৩ ঘণ্টা চালু রাখলে ১ ইউনিট বিদ্যুৎ খরচ হয় এবং একটি টিউব লাইট (৪০ ওয়াট) প্রায় ২৫ ঘণ্টা চালু রাখলে ১ ইউনিট বিদ্যুৎ খরচ হয়। ঠিক একইভাবে একটি সিলিং ফ্যান (৭৫ ওয়াট) প্রায় ১৩ ঘণ্টা ব্যবহার করলে ১ ইউনিট বিদ্যুৎ খরচ হবে। আমরা যদি বিনা কারণে লাইট-ফ্যান না ব্যবহার করি তাহলে অনায়াসেই বিদ্যুৎ সাশ্রয় করে খরচ কমাতে পারি।
এখন অনেকেই ফ্রিজ ব্যবহার করে। ফ্রিজ কিংবা ওয়াশিং মেশিন, আয়রন, ইন্ডাকশন কুকার, রাইস কুকারÑ এগুলো আর এখন বিলাস সামগ্রী নয়। দুইশ ওয়াটের একটি ফ্রিজ প্রায় পাঁচ ঘণ্টা ব্যবহার করলে ১ ইউনিট এবং এক হাজার ওয়াটের একটি ওয়াশিং মেশিন এক ঘণ্টা ব্যবহার করলে ১ ইউনিট বিদ্যুৎ খরচ হয়। আয়রন, গিজার এবং ইন্ডাকশন কুকারে বিদ্যুৎ খরচ তুলনামূলক অনেক বেশি। তাই এগুলো ব্যবহারে বেশি সচেতন হতে হবে। এক ঘণ্টা একটি আয়রন, আধা ঘণ্টা একটি গিজার এবং একটি ইন্ডাকশন কুকার প্রায় আধা ঘণ্টা ব্যবহার করলে ১ ইউনিট বিদ্যুৎ খরচ হয়। গ্রীষ্মে দাবদাহে মানুষের জীবনকে অসহনীয় করে তুলেছে। দিনের তাপমাত্রা কম-বেশি ৪০ ডিগ্রির আশেপাশেই থাকছে। এ গরম থেকে সাময়িক রেহাই পেতে কেউ যদি পঁচিশ মিনিট দুই টনের একটি এসি ব্যবহার করে তাহলে বিদ্যুৎ খরচ হবে এক ইউনিট। টেলিভিশন, ল্যাপটপ, মোবাইল ছাড়া কী জীবন চলে? এগুলো ব্যবহার করলেও বিদ্যুৎ খরচ হবে, তবে সচেতনভাবে করলে খরচ অনেক কম হবে।
এখানে উল্লেখ্য যে, বাসা-বাড়িতে ব্যবহৃত বৈদ্যুতিক যন্ত্রপাতির ব্র্যান্ড ও প্রযুক্তি অনুযায়ী পাওয়ার রেটিং কম-বেশি হয়ে থাকে। তাছাড়া বৈদ্যুতিক যন্ত্রপাতি কত ইউনিট বিদ্যুৎ ব্যবহার করতে পারে সেটি উক্ত যন্ত্রের পাওয়ার রেটিং এবং ব্যবহৃত সময়ের উপর নির্ভর করে। পাওয়ার রেটিং (ওয়াট)কে বিদ্যুৎ ব্যবহারের সময় (ঘণ্টা) দিয়ে গুণ করে এক হাজার দিয়ে ভাগ করলে বিদ্যুৎ ব্যবহারের পরিমাণ বা ইউনিট (কিলোওয়াট-ঘণ্টা) পাওয়া যায়।
ধরা যাক, একটি উচ্চ মধ্যবিত্ত পরিবারে দু’টি এসি, চারটি ফ্যান, পাঁচটি লাইট ও ১টি টিভি চালু রয়েছে। তাহলে ঐ পরিবারের বিদ্যুৎ খরচ কেমন হতে পারে? বিস্তারিত হিসাব বিবরণ উল্লেখ না করে সংক্ষেপে বলতে পারি, প্রতি মাসে ওই গ্রাহকের ৭৯৮ ইউনিটের এনার্জি চার্জ বাবদ প্রায় ৮২৪২.২৮ টাকা ব্যয় হবে। এনার্জি চার্জের সাথে ডিমান্ড চার্জ (প্রতি কিলোওয়াট ৪২ টাকা হারে, ৫ কিলোওয়াট অনুমোদিত লোডের বিপরীতে ২১০ টাকা প্রায়), মিটার রেন্ট (সিঙ্গেল ফেজ ৪০ টাকা, থ্রি-ফেজ ২৫০ টাকা) এবং ভ্যাট (৫% হারে যা প্রায় ৩০০ টাকার ঊর্ধ্বে) যুক্ত হবে। অর্থাৎ এসির ব্যবহার না হলে বা আরও সীমিত হলে ঐ গ্রাহকের বিদ্যুৎ বিল অনেক কম হবে।
প্রিপেইড মিটার প্রতি মাসে ১ম বার রিচার্জ করার সময় ৩ ধরনের চার্জ কেটে রাখা হয়, যথা: ডিমান্ড চার্জ, মিটার রেন্ট এবং ভ্যাট। একই মাসে ২য় বার রিচার্জের ক্ষেত্রে শুধুমাত্র ভ্যাট কেটে রাখা হয়। তথাপি, গ্রাহক রিবেট হিসেবে ০.৫% হারে টাকা ফেরত পান। বাকি সম্পূর্ণ টাকা মিটারের এনার্জি ব্যালেন্স হিসেবে মিটারে যুক্ত হয়। শুধু এনার্জি চার্জ প্রি-পেইড মিটার দ্বারা বিদ্যুৎ ব্যবহারের ফলে মিটার থেকে ধীরে ধীরে কেটে নেওয়া হয়। মাসের শুরুতে, মধ্যবর্তী সময়ে বা মাসের শেষদিকে বিদ্যুৎ ব্যবহারের ক্ষেত্রে সরকার কর্তৃক নির্ধারিত ট্যারিফ অনুযায়ীই মিটার থেকে টাকা কাটা হয়ে থাকে। শুধু গ্রাহকের বিদ্যুৎ ব্যবহারের পরিমাণের সাথেই মিটার থেকে টাকা কাটার সম্পর্ক রয়েছে। বিদ্যুৎ উৎপাদন খরচ বিক্রয়ের চেয়ে অনেক বেশি। সরকারকে এখাতে ভর্তুকী ও প্রণোদনা দিতে হয়। এই প্রণোদনা থেকে সরকার বেরিয়ে আসলে বিদ্যুৎ উৎপাদন খরচ গ্রাহকদেরকেই বহন করতে হবে। তাই প্রতি মুহূর্তে বিদ্যুৎ ব্যবহারে সচেতনতা ও সাশ্রয়ী হওয়া বাঞ্ছনীয়।
বিদ্যুৎ গ্রাহকগণ বিদ্যুৎ পরিবারের একেকজন সদস্য। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে গ্রাহকের বিভিন্ন অভিযোগ বা মতামত কিংবা কল সেন্টার (১৬৯৯৯)-এর মাধ্যমে প্রাপ্ত যেকোনো অভিযোগ বা মতামত পাওয়ার সাথে সাথেই দ্রুততম সময়ের মধ্যে উক্ত সমস্যা সমাধানের বিষয়ে কর্তৃপক্ষ অত্যন্ত সচেষ্ট। সচেতন গ্রাহকের সুচিন্তিত মতামত ও পরামর্শে ভবিষ্যতে বিদ্যুৎ বিতরণ কোম্পানিগুলো একটি গ্রাহক বান্ধব স্মার্ট ইউটিলিটিতে পরিণত হবে এটাই প্রত্যাশিত।
বিদুতের সাথে উন্নয়নের সম্পর্ক রয়েছে। ২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত সমৃদ্ধ স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মানে বিদুৎ খাত প্রধান চালিকাশক্তি হিসেবে কাজ করবে। যৌক্তিক ও সহনীয় মূল্যে সবার জন্য এবং শিল্প, সেবাসহ সকল খাতে নিরেবিচ্ছিন্ন বিদুৎ সরবরাহের ব্যবস্থা নিশ্চিত করার জন্য সকলকে বিদ্যুৎ ব্যবহারে সাশ্রয়ী হতে হবে। এতে ব্যক্তি, সমাজ এবং দেশ উপকৃত হবে।
লেখক: উপ-প্রধান তথ্য অফিসার ও জনসংযোগ কর্মকর্তা বিদ্যুৎ জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়
বিভাগ : সম্পাদকীয়
মন্তব্য করুন
আরও পড়ুন
বগুড়ায় কলেজ শিক্ষার্থী হত্যা মামলায় গ্রেফতার ৪
মতিঝিলে শিক্ষার্থীদের দুই গ্রুপের সংঘর্ষে আহত ১৫
সাভারে ডিবি পুলিশ পরিচয়ে ২৫ লাখ টাকার তেলসহ পিকআপ ছিনতাই
ডাকসু নিয়ে ৩৭৭ সংস্কার প্রস্তাব ঢাবি ছাত্রদলের
গাজীপুরে থানায় ব্যবসায়ীকে আটক করে ২ লাখ টাকা ঘুষ নিলো ওসি
রূপপুর পারমানবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র অফিস অবরোধের ঘোষণা চাকরি বঞ্চিতদের
শামীম ওসমান-নানক পরিবারের বিরুদ্ধে দুই মামলা
বায়ু দূষণে আবারও শীর্ষে ঢাকা
এক মাসের মধ্যে সংস্কারের রোডম্যাপ দিবে সরকার: পরিবেশ উপদেষ্টা
দেশে ফিরেই ছিনতাইয়ের শিকার মালয়েশিয়া প্রবাসী ডালিম
বিপিএল শেষ কর্নওয়ালের
ওয়াটসাপ, টেলিগ্রাম বা বিভিন্ন সোশ্যাল মাধ্যমে মেসেজ দিয়ে দেওয়া সালামের জওয়াব দেওয়া প্রসঙ্গে?
আরচ্যারী ফেডারেশনের তারুণ্যের উৎসব কর্মসূচি শুরু
বেনাপোলে আড়াই বছর পর কবর থেকে তোলা হলো বিএনপি নেতা আলিমের লাশ
রাষ্ট্রের কল্যাণে উপসচিব পদে কাকে প্রয়োজন: নীতি ও ন্যায্যতা কী
ধূমপানকে না বলুন
জালিমের পরিণতি ভালো হয় না
অখণ্ড ভারতের নীলনকশা এবং মুখোশপরা গণশত্রুদের দাস্যবৃত্তি
মাজারে হামলা ও উগ্রপন্থা কাম্য নয়
১২ কোটি জনসংখ্যার ৭ কোটি আক্রান্ত