ভারতের চোখরাঙানিতে বাংলাদেশের ছাত্র-জনতা ভয় পায় না
১১ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১২:০৭ এএম | আপডেট: ১১ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১২:০৭ এএম
ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে ভারতীয় আধিপত্যবাদের কবল থেকে মুক্তির একমাস পেরিয়ে এসে বাংলাদেশ ক্রমেই নতুন নতুন বাস্তবতার মুখোমুখী হচ্ছে। বিশেষত ভারতীয় হেজিমনি সম্পর্কে এতদিন চেপে রাখা হাইপোথেটিক্যাল ইস্যুগুলো দেশের মানুষের কাছে এখন বাস্তবরূপে ধরা পড়ছে। বিষয়গুলো এতদিন সাধারণ মানুষের কাছে, দেশের সৈনিকদের কাছে স্পষ্টভাবে ধরা পড়লেও দেশের সরকারের অবস্থান ছিল সম্পুর্ণ বিপরীত। জনপ্রত্যাশা, জনআকাক্সক্ষার বাইরে গিয়ে সরকারের পক্ষে সম্মিলিত কোনো জাতীয় লক্ষ্য অর্জন করা অসম্ভব। আমাদের রাষ্ট্রব্যবস্থার সামগ্রিক লক্ষ্য অর্জনের ক্ষেত্রে প্রধান অন্তরায় ও প্রতিবন্ধকগুলো দূর করার প্রথম ও সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ধাপ হচ্ছে সমস্যাগুলো চিহ্নিত করা। স্বাধীনতাত্তোর বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হচ্ছে ভারতীয় আধিপত্যবাদী ষড়যন্ত্র মোকাবেলা করা। জনগণের মধ্যে এ বিষয়ে একটি ধারণাগত ঐক্যমত্য থাকলেও বেশিরভাগ সময়ই ক্ষমতাসীনরা ভারতীয় আধিপত্যবাদের দ্বারা প্রভাবিত ও নিয়ন্ত্রিত হওয়ার কারণে বাংলাদেশ স্বাধীন সত্তায় রাজনৈতিক-অর্থনৈতিকভাবে বিকশিত হওয়ার সুযোগ পায়নি। প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের দেশপ্রেম, বিচক্ষণতা, দূরদৃষ্টি এবং রাষ্ট্রনায়কোচিত পদক্ষেপ স্বাধীনতার প্রথম দশকে মাত্র চার বছরের মধ্যে বাংলাদেশকে একটি নতুন সম্ভাবনার সোপানে নিয়ে গিয়েছিল। জাতীয় ঐক্য এবং সুযোগ্য নেতৃত্ব জাতিকে যে কোনো মাত্রার প্রতিবন্ধকতা মোকাবেলায় সক্ষম করে তুলতে পারে, জিয়াউর রহমান তা প্রমাণ করে দিয়েছিলেন। তিনিই প্রথম সমতার ভিত্তিতে ভারতের সাথে সম্পর্কোন্নয়ন ও দ্বিপাক্ষিক সমস্যা সমাধানের উদ্যোগে সফলতার কাছাকাছি পৌঁছেছিলেন। ১৯৭৭ সালে ভারতের সাথে গ্যারান্টি ক্লজসহ গঙ্গার পানি চুক্তি সম্পাদন করতে সক্ষম হয়েছিলেন। ১৯৮২ সালে সে চুক্তির মেয়াদ শেষ হওয়ার পর ভারতের বশংবদ এরশাদ তা নবায়নের কোনো উদ্যোগ নিতেই ব্যর্থ হয়েছিলেন। জিয়াউর রহমানই প্রথম রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নিতে বার্মিজ সরকারকে চাপ দেয়ার পাশাপাশি একটি প্রচ্ছন্ন হুমকি দিয়ে বলেছিলেন, ভালোয় ভালোয় তাদের ফেরত না নিলে বাংলাদেশ তাদেরকে ট্রেনিং দিয়ে অস্ত্রসহ রাখাইনে পাঠাতে বাধ্য হবে। এরপর সোয়া ২ লাখ রোহিঙ্গাকে ফেরত নিয়েছিল মিয়ানমার সরকার। ষাটের দশকে প্রতিষ্ঠিত দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার আঞ্চলিক অর্থনৈতিক জোট আসিয়ানের আদলে বাংলাদেশের নেতৃত্বে দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর জন্য একটি ব্যাপকভিত্তিক আঞ্চলিক জোট হিসেবে সার্ক গঠনের প্রথম পরিকল্পনা ও প্রস্তাবও জিয়াউর রহমানের। তাঁর আকস্মিক মৃত্যুতে সে উদ্যোগ থেমে গেলেও সেনাশাসক এরশাদ তা এগিয়ে আনলেও তা ছিল ভারতীয় গাইড লাইন ও প্রেসক্রিপশন অনুসারে। এ কারণেই ভারতের অসহযোগিতায় আঞ্চলিক সহযোগিতা সংস্থা হিসেবে সার্ক তার লক্ষ্য ও সাফল্যের কাছাকাছি পৌছতে পারেনি। ভারতীয় ষড়যন্ত্রে বাংলাদেশের পাটশিল্পের ধ্বংস্তুপের উপর ক্রম বর্ধমান বেকার জনসংখ্যার চাপ সামলাতে মধ্যপ্রাচ্যে জনশক্তি রফতানি এবং রফতানিমুখী তৈরী পোশাক শিল্পখাতের বিকাশে প্রাথমিক ভিত্তি জিয়াউর রহমানই সৃষ্টি করেছিলেন। রাজনৈতিক-অর্থনৈতিক ভগ্নস্তুপের উপর ঐক্য ও সমৃদ্ধির সৌধ নির্মাণ করতে হলে যে ধরণের নেতৃত্ব প্রয়োজন প্রেসিডেন্ট জিয়া তার প্রকৃষ্ট উদাহরণ। শুধুমাত্র নিজ দেশের আভ্যন্তরীণ বিষয়ে পুরোটা সময় নিমজ্জিত থেকে দেশকে বিশ্বসভায় সম্মানের আসনে উত্তীর্ণ করা যায়না। রাষ্ট্রনায়ককে আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক চ্যালেঞ্জগুলো সাহসের সাথে দৃঢ়তার সাথে মোকাবেলা করতে জানতে হয়। একই সময়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, চীন, সোভিয়েত ইউনিয়ন, মধ্যপ্রাচ্য, ইরান ও সউদি আরবের সাথে বাংলাদেশের সম্পর্কোন্নয়ন, অর্থনৈতিক-বাণিজ্যিক ও কূটনৈতিক সেতুবন্ধন রচনায় প্রেসিডেন্ট জিয়া যে দক্ষতা ও মুন্সিয়ানার পরিচয় দিয়েছিলেন, পরবর্তী সরকারগুলো তা ধরে রাখতে পারলে বাংলাদেশ আজ দক্ষিণ এশিয়ার অন্যতম রাজনৈতিক-অর্থনৈতিক শক্তি হিসেবে অনেক উচ্চ আসনে থাকতো।
আধিপত্যবাদী ভারতের বশংবদ হাসিনা রেজিমকে হটিয়ে একটি রাজনৈতিক শূন্যতার মধ্যে অর্ন্তবর্তী সরকারের প্রধান হিসেবে ড.মুহাম্মদ ইউনূসকে মনোনীত করে বাংলাদেশের ছাত্র-জনতা যে ভুল করেনি, ক্রমেই তা পরিষ্কার হচ্ছে। প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের পর সম্ভবত ইউনূসই একমাত্র ব্যক্তিত্ব যিনি অরাজনৈতিক পরিচয়ে বিশ্বসভায় অনন্য উচ্চতায় সমাসীন হয়েছেন। তাঁর পরিচয় একজন নোবেল বিজয়ীর চেয়েও অনেক বেশী ব্যাপ্ত ও সমোজ্জ্বল। বিশ্বের শতাধিক রাষ্ট্র ও প্রতিষ্ঠান তাকে নানা পদকে সম্মানিত করেছে। ভারতীয় বশংবদ হাসিনা রিজিম তাঁর এই আন্তর্জাতিক অর্জনকে ভালভাবে গ্রহণ করতে পারেনি। সম্ভবত এ দেশের প্রতিটি গৌরবময় অর্জনকে ম্লান করে জাতিকে বিভক্ত, বৈরীতা ও অস্থিতিশীলতার নিগড়ে নিক্ষেপ করাই ছিল ভারতীয় আধিপত্যবাদী স্বার্থের মূল এজেন্ডা। ৫ আগস্ট হাসিনা ভারতে পালিয়ে যাওয়ার পর থেকেই বাংলাদেশে একটা নৈরাজ্যকর পরিস্থিতি সৃষ্টি করতে একের পর এক নানা প্লট সৃষ্টির প্রচেষ্টা দেখা গেছে। গত ১৬ বছরে বাংলাদেশের পুলিশ বাহিনী, বিশেষ বাহিনী ও গোয়েন্দা সংস্থাগুলোতে প্রচুর সংখ্যক ভারতীয়র অনুপ্রবেশ ঘটানো হয়েছিল। বিরোধীদলগুলোকে নির্বাচনের বাইরে লেখে বাংলাদেশে ভোটারবিহিন নির্বাচন অনুষ্ঠানের যাবতীয় প্রতিবন্ধকতা দূর করতে আভ্যন্তরীণভাবে পুলিশ বাহিনী এবং আন্তর্জাতিকভাবে ভারতীয় প্রভাব সফলভাবে কাজ করেছে। ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানের মাত্রা ও চুড়ান্ত পরিনতি সম্পর্কে সরকার কিংবা ভারতীয় গোয়েন্দা অপারেটিভরা আগে থেকে কোনো ধারণাই করতে পারেনি। এ এক অভূতপূর্ব বাস্তবতা। রাস্তায় শত শত মানুষের লাশ ফেলে দেয়া পুলিশ বাহিনীর সাথে র্যাব, বিজিবি, সেনাবাহিনীর কার্ফিউ এবং ‘শ্যুট অ্যাট সাইট‘ নির্দেশনার মধ্যেই ঢাকার প্রতিটি প্রবেশপথে লাখ লাখ ছাত্র-জনতার ঢল! আওয়ামী পুলিশের উন্মত্ত গুলির মধ্যে হাজার হাজার হতাহত, শত শত সহপাঠী-সহযোদ্ধার লাশ ডিঙিয়ে গণভবন, সংসদভবনসহ পুরো ঢাকা শহর দখলে নেয়ার সেই মুহূর্তটি এ দেশের ইতিহাসের সবচেয়ে গৌরবজনক অধ্যায় হিসেবে চির অম্লান হয়ে থাকবে। ভারতীয় হিন্দুত্ববাদী রিজিম বাংলাদেশের এই গণবিপ্লবের মাত্রা ও তাৎপর্য অনুধাবন করতে না পারলেও দেড় দশকের স্বৈরাচারি শাসন শেষে গণমানুষের এই বিপ্লবকে পশ্চিমা বিশ্বও সাদর সম্ভাষণ জানিয়েছে। অন্যদিকে ৫ আগস্টের পর থেকেই ভারতীয় মিডিয়া এবং সরকার বাংলাদেশে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানকে ব্যর্থ করে দিয়ে বশংবদ হাসিনাকে পুনরায় রাজনৈতিকভাবে প্রতিষ্ঠিত করতে নানা রকম চালবাজি করে চলেছে। কিন্তু সাম্প্রদায়িক ক্ষীণ দৃষ্টির নরেন্দ্র মোদীর বিপরীতে বাংলাদেশের অর্ন্তবর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের প্রজ্ঞা, দূরদৃষ্টি এবং সাহসী উচ্চারণ বাংলাদেশের মুক্তিকামী মানুষকে সাধীনতা ও বৈষম্যহীন গণতান্ত্রিক লক্ষ্য অর্জনে দৃঢ়চিত্তে সামনে এগিয়ে যাওয়ার পথ দেখাচ্ছে।
আঞ্চলিক ভূরাজনীতিতে ভারতের আধিপত্যবাদী নীতি তার পতনের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। ভারতের বাইরে বিশ্বের একমাত্র হিন্দুপ্রধান রাষ্ট্র নেপালের উপরও এখন ভারতীয় প্রভাব কাজ করছে না। তামিল বিচ্ছিন্নতাবাদীদের নিয়ে দ্বিমুখী নীতির কারণে শ্রীলঙ্কার সাথে অনেক আগেই ভারতের সম্পর্কের দূরত্ব ঘটেছিল। চীন সামরিক-অর্থনৈতিক সহায়তার হাত বাড়িয়ে না দিলে শ্রীলঙ্কা হয়তো এখনো এলটিটিই গেরিলাদের যুদ্ধক্ষেত্রই থাকতো। চীনের সাথে ভারতের সীমান্ত সংঘাতের সময় প্রতিবেশী দেশ নেপাল, ভুটানকেও চীনের অনুকুলে অবস্থান নিতে দেখা গেছে। গত বছর মালদ্বীপের জাতীয় নির্বাচনে মেনিফেস্টোতে ভারত বিরোধী ঘোষণা দিয়ে চীনপন্থী মোহাম্মদ মইজ্জু প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হয়েছিলেন। দেশ থেকে ভারতীয় সেনাদের বের করে দেয়া ছিল মইজ্জুর অন্যতম নির্বাচনী ওয়াদা। ইতিমধ্যে মালদ্বীপ থেকে ভারতীয় সেনাদের বের করে দেয়া হয়েছে। ভারত সমর্থিত প্রেসিডেন্ট ইব্রাহিম সলিহ প্রতিদ্বন্দ্বিতায় পরাজয় মেনে নিয়ে নতুন প্রেসিডেন্ট মইজ্জুকে অভিনন্দন জানাতে দেরি করেননি। মালদ্বীপের গত তিনটি জাতীয় নির্বাচনে চীনপন্থী ও ভারতপন্থী প্রার্থীরা পালাক্রমে নির্বাচিত হয়েছেন। সেখানে শেখ হাসিনার মত ভারতপন্থী বশংবদ ব্যক্তি সৃষ্টি করা ভারতীয় গোয়েন্দাদের পক্ষে সম্ভব হয়নি। মালদ্বীপের মত একটি ক্ষুদ্র দ্বীপরাষ্ট্রও ভারতীয় আধিপত্যবাদের কাছে নতজানু নয়। গণতান্ত্রিক শাসন ও মূল্যবোধ দেশের শাসকদের জনগণের পক্ষে মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে শেখায়। ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানে ভারতীয় আধিপত্যবাদের পুতুল নিষ্ঠুর স্বৈরশাসক হাসিনার পতনের পর ভারতীয় শাসকদের বাংলাদেশে নতুন রাজনৈতিক বাস্তবতা মেনে নিয়ে নতুনভাবে পথচলার বদলে পতিত স্বৈরাচারের পুনর্বাসনের পক্ষেই সর্দারি-ওকালতি করতে দেখা যাচ্ছে। তারা একদিকে ড.ইউনূসকে অভিনন্দিত করলেও অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে বিব্রত ও ব্যতিব্যস্ত রাখতে এ দেশে তাদের এজেন্ট ও সফ্ট পাওয়ারকে কাজে লাগাচ্ছে। জুলাই-আগস্টে হাসিনা বিরোধী অভ্যুত্থান প্রসঙ্গে ভারতীয় গণমাধ্যমগুলোতে অনবরত ভ’য়া সংবাদ ও ভুল ন্যারেটিভের প্রচার চলছে। ভারতীয় প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিং সে দেশের প্রতিরক্ষা বাহিনীর প্রধানদের সাথে একটি গুরুত্বপূর্ণ বৈঠকে আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক ঘটনাবলীর প্রসঙ্গে গাজা যুদ্ধ, ইউক্রেন যুদ্ধ এবং বাংলাদেশের নাম উল্লেখ করে নজরদারিসহ যুদ্ধের জন্য প্রস্তুত থাকতে বলেছেন। ষোল বছর ধরে স্বৈরতান্ত্রিক পুতুল সরকার বসিয়ে বাংলাদেশের সব সাংবিধানিক রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান ধ্বংস, হাজার হাজার মানুষ হত্যা, গুম-খুনের নৈরাজ্য, দেশ থেকে লাখ লাখ কোটি টাকা পাচার করে দেশের অর্থনীতিকে হাজার হাজার কোটি ডলারের ঋণ ও দেউলিয়াত্বের দ্বারপ্রান্তে ঠেলে দেয়ার পর ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সেই সরকারের পতনের পর শেখ হাসিনাকে সাদরে দিল্লীতে আশ্রয় দেয়া এবং সেখানে বসে রাজনৈতিক বক্তব্য দিয়ে বাংলাদেশকে অশান্ত রাখার মাষ্টারপ্ল্যানের মধ্যেই ভারত সরকারের পক্ষ থেকে প্রচ্ছন্ন সামরিক হুমকি দেয়া হল। যদিও ড. ইউনূসের অন্তবর্তীকালীন সরকার এবং ছাত্র-জনতা ভারতীয় হুমকিকে সিরিয়াসলি গ্রহণ না করলেও দেশের ছাত্র-জনতা ও সেনাবাহিনীকে যে কোনো পরিস্থিতির জন্য প্রস্তুত থাকতে হবে।
হাসিনা ভারতে পালিয়ে যাওয়ার পর অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান হিসেবে ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে বেছে নিয়েছিল ছাত্র-জনতা। তিনি প্যারিস থেকে ঢাকা পৌঁছানোর আগেই বাংলাদেশ প্রেক্ষিতে ভারত সরকার ও ভারতীয় গণমাধ্যমের ভূমিকা বোঝা যাচ্ছিল। এ প্রসঙ্গে প্রথম প্রতিক্রিয়ায় ড.ইউনূস বলেছিলেন, বাংলাদেশ অস্থিতিশীল হলে ভারতের সেভেন সিস্টার্স এবং মিয়ানমারেও তা ছড়িয়ে পড়তে পারে। সে আশঙ্কা ইতিমধ্যে ক্রমে পরিষ্ফুট হতে শুরু করেছে। ভারত সরকার যখন পতিত স্বৈরশাসক হাসিনার ঋণ শোধ করতে গিয়ে বাংলাদেশের ১৮ কোটি মানুষের আকাঙ্খাকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে নানা রকম কলকাঠি নাড়ছে, তখন বিচ্ছিন্নতাবাদী মণিপুর রাজ্যে স্বাধীনতার দামামা বেজে উঠেছে। অন্যদিকে, অরুণাচলের ৬০ কিলোমিটার এলাকা দখলে নিয়ে চীনা সামরিক বাহিনী ঘাঁটি গড়েছে বলে খবর বেরিয়েছে। স্বৈরাচার হাসিনা সরকারের হাতে একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধের পক্ষ-বিপক্ষ বয়ানকে পুঁজি করে ১৬ বছর ধরে যে প্রোপাগান্ডা ও গুম-খুনের লাইসেন্স দেয়া হয়েছিল তার প্রতিক্রিয়ায় ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে ভারতের সেবাদাস সরকারের পতন ঘটেছে। ভারতের শাসকদের বুঝতে হবে, বাংলাদেশ আর কখনোই আগের অবস্থানে ফিরে যাবে না। বাংলাদেশে গণতন্ত্র, সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি, জাতীয় ঐক্য ও বৈষম্যহীন সামাজিক-রাজনৈতিক আকাঙ্খার বিপরীত শব্দ হচ্ছে ভারতীয় হেজিমনি। ভারতের সাথে বাংলাদেশের সম্পর্ক হতে হবে গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ, সার্বভৌমত্বের সমতা এবং ভারসাম্যপূর্ণ পারস্পরিক স্বার্থের ভিত্তিতে। ভারতের চারপাশে চিরবৈরী চীন-পাকিস্তানসহ ৫-৬টি দেশের সীমান্ত রয়েছে। চীনা সেনাবাহিনী ভারতের সীমান্তে ঢুকে স্থাপনা নির্মাণ করলেও সেখানে গোলাগুলির কোনো ঘটনা না ঘটলেও বাংলাদেশ সীমান্তে প্রতিদিনই বিএসএফ’র গুলিতে নিরীহ-নিরস্ত্র মানুষকে হত্যা করা হচ্ছে। কাঁটাতারে ঝুঁলে থাকা কিশোরী ফেলানির লাশ বাংলাদেশ-ভারত সীমান্তের ভয়াবহতার প্রতীক হয়ে আছে। একযুগেও ফেলানি হত্যার বিচার হয়নি। গত ১ সেপ্টেম্বর মৌলভিবাজারের কুলাউড়া সীমান্তে বিএসএফ’র গুলিতে কিশোরী স্বর্ণা দাসের মৃত্যু যেন ফেলানি হত্যাকান্ডের পুনরাবৃত্তি। এর এক সপ্তাহের মাথায় ৯ সেপ্টেম্বর ঠাকুরগাঁও সীমান্তে বিএসএফ’র গুলিতে জয়ন্ত কুমার শীল নামের এক কিশোরের মৃত্যু হয়। এসব হত্যাকান্ড এমন সময়ে ঘটছে, যখন ভারতের প্রতিরক্ষামন্ত্রী বাংলাদেশ পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করে সামরিক বাহিনীকে যুদ্ধের জন্য প্রস্তুত থাকতে বলেছেন। বিএসএফ’র গুলিতে শিশু-কিশোরদের হত্যার ঘটনাগুলোকে উস্কানিমূলক হিসেবে ধরে নিলে কি ভুল হবে? ভারতীয় কর্তৃপক্ষ কি ইচ্ছাকৃতভাবে সীমান্তকে অশান্ত করতে চাইছে? সামরিক বিশ্লেষকদের মত কি? তবে বাংলাদেশ সে ফাঁদে পা না দিলেও ভারতকে তার অবস্থান পরিষ্কার করতে বাধ্য করতে হবে। এ দেশের ছাত্র-জনতা কিংবা ড.মুহাম্মদ ইউনূসের অর্ন্তবর্তীকালীন সরকার ভারতের কিংবা কোনো পরাশক্তির বশংবদ বা ক্রীড়নক নয়। এ দেশের রাজনীতি, অর্থনীতি, উন্নয়ন ভাবনা, পানি ও নদী ব্যবস্থাপনা নিজেদের স্বার্থ ও আন্তর্জাতিক রীতিনীতি অনুসারেই বাস্তবায়িত হবে। বাংলাদেশের মানুষের মধ্যে যে ঐক্য ও গণজাগরণের সৃষ্টি হয়েছে আঞ্চলিক-আর্ন্তজাতিক কোনো পরাশক্তি তা আর নস্যাৎ করতে পারবে না। তবে দেশের গণতন্ত্রকামী রাজনৈতিক দল ও ছাত্র-জনতাকে ক্ষমতাকেন্দ্রিক হিসাব নিকাশ ও খন্ডিত চিন্তা থেকে মুক্ত হয়ে বৃহত্তর ঐক্য ও সংহতি বজায় রাখতে হবে। একাত্তরে এদেশের মানুষ লাখো প্রাণের বিনিময়ে যে স্বাধীনতা অর্জন করেছিল, ভারতীয় আধিপত্যবাদী থাবায় তা রুদ্ধ হয়ে পড়েছিল। তেপ্পান্ন বছর পেরিয়ে এসে দেশের ছাত্র-জনতা রাজপথে বুকের তাজা রক্ত ঢেলে দিল্লীর সেবাদাসদের উচ্ছেদ করে সত্যিকারের স্বাধীনতা ফিরিয়ে এনেছে। আধিপত্যবাদীদের সব ষড়যন্ত্র নস্যাৎ করে দেশের মানুষ এবার স্বাধীনতা ও গণতন্ত্রের পূর্ণ বাস্তবায়ন দেখতে চায়।
বিভাগ : সম্পাদকীয়
মন্তব্য করুন
আরও পড়ুন
সার্বিয়ার রেলওয়ে স্টেশন দুর্ঘটনা,দুর্নীতির অভিযোগে প্রতিবাদ
রিকশা লীগ হয়ে ফিরে আসতে চায় স্বৈরাচার হাসিনা
"অভিষেক-ঐশ্বরিয়ার বিবাহ বিচ্ছেদের বিষয়ে মিডিয়ার গুজব নিয়ে অমিতাভ বচ্চন প্রতিক্রিয়া"
জীবিত স্বামীকে মৃত দেখিয়ে মামলার পেছনের কারিগর শফিক-রুহুল গ্রেফতার
আন্দোলনের মোড় ঘুরিয়েছিলেন বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা : শফিকুল আলম
শেরপুরে অগ্নিকাণ্ডের কোটি টাকার ক্ষতি : অল্পের জন্যে প্রাণে বাচঁলো ৪০ ছাত্র শিক্ষক
আন্তর্জাতিক জলবায়ু সম্মেলন ও বিশ্বব্যাপী বাস্তুচ্যুতি, এক ভয়াবহ বাস্তবতা
রাশিয়া উ.কোরিয়াকে এক মিলিয়ন ব্যারেল তেল সরবরাহ করেছে
শরীয়তপুরের জাজিরায় ব্রিজের নিচ থেকে অজ্ঞাত পরিচয়ে এক ব্যক্তির লাশ উদ্ধার
ইমরান খানের সরকার পতনে সউদীর হাত ছিল : দাবি স্ত্রী বুশরার
'ভারতের গোয়ায় জয়া আহসানের বিশেষ প্রদর্শনী'
ওমানে সড়ক দুর্ঘটনায় ২ জনের মৃত্যু, ২২ জন আহত
লেবানন থেকে ফিরলেন আরো ৮২ বাংলাদেশি
"পিটিআই" প্রধান ইমরান খানকে নতুন মামলায় ৫ দিনের রিমান্ড
রবিবার নতুন নির্বাচন কমিশনের শপথ
প্রশংসায় ভাসছে পাকিস্তান
কেশবপুরে গাছ থেকে পড়ে একজনের মৃত্যু
২৪ নভেম্বরের ‘পিটিআই’র বিক্ষোভ নিয়ে বুশরা বিবির বার্তা ও সরকারের প্রতিক্রিয়া
লাঞ্চের আগেই ৪ উইকেট নেই ভারতের
মাইলফলকের টেস্ট স্মরণীয় করে রাখতে চান মিরাজ