আইকনিক লিডার তারেক রহমান ও বাংলাদেশের রাজনীতি
১৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১২:০৫ এএম | আপডেট: ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১২:০৫ এএম
(পূর্বে প্রকাশিতের পর)
শেখ হাসিনার আমলে সাধারণ মানুষের প্রকৃত মজুরি হ্রাস পেয়েছে। পরিসংখ্যান ব্যুরো কৃষি, শিল্প ও সেবা খাতের কর্মীদের প্রকৃত আয়ের যে সূচক প্রকাশ করেছে তাতে দেখা যায়, অনানুষ্ঠানিক খাতের শ্রমিকদের মজুরি ২০১০-১১ থেকে ২০১৪-১৫ সময়ে বেড়েছে ২৪.৭ শতাংশ। কিন্তু এ সময়ে ভোক্তামূল্য সূচক বেড়েছে ৩২.৬ শতাংশ। অর্থাৎ ২০১০-১১-এর তুলনায় শ্রমিকদের প্রকৃত আয় কমেছে ৭.৯ শতাংশ। এ থেকে প্রতীয়মান যে, উচ্চ প্রবৃদ্ধির হার দাবি করা সত্ত্বেও সাধারণ মানুষ তাদের আয়-বৃদ্ধি থেকে শুধু বঞ্চিত হয়নি, বরং তাদের আয়ও হারিয়ে গেছে। দ্বিতীয়ত, স¤পদ জমা হয়েছে এক ছোট গোষ্ঠীর হাতে। আয় ও ব্যয় জরিপ-২০১৬ অনুযায়ী, দেশের সব মানুষের যত আয়, এর মাত্র ১ দশমিক শূন্য ১ শতাংশ আয় করেন সবচেয়ে গরিব ১০ শতাংশ মানুষ। ছয় বছর আগেও মোট আয়ের ২ শতাংশ এই শ্রেণির মানুষের দখলে ছিল। অন্যদিকে সবচেয়ে ধনী ১০ শতাংশ মানুষের আয় বেড়ে মোট আয়ের ৩৮ দশমিক ১৬ শতাংশ হয়েছে। ছয় বছর আগে এর পরিমাণ ছিল ৩৫ দশমিক ৮৪ শতাংশ। জরিপে দেখা যাচ্ছে, দেশের মোট আয়ের দুই-তৃতীয়াংশের মালিক ওপরের দিকে থাকা ৩০ শতাংশ মানুষ।
বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর ২০১৬-১৭ অর্থবছরের শ্রমশক্তি জরিপ অনুযায়ী, প্রকৃত বেকার মোট কর্মক্ষম জনগোষ্ঠীর ৪৪ দশমিক ২৫ শতাংশ। ব্যুরোর আরেক জরিপ অনুযায়ী, ২০১৩-১৪ ও ২০১৪-১৫ দুই বছরে বেকারের সংখ্যা বেড়েছে ৪৮ লাখ। দেশের সব তরুণের স্বপ্ন যে বিসিএস পরীক্ষায় সফল হওয়া তাঁর কারণ হচ্ছে, তাঁরা অন্যত্র আর কোনো সুযোগ দেখতে পান না। অতীতে উন্নয়নের ধারার নেতিবাচক দিকের সবচেয়ে বড় প্রকাশ দেখতে পাওয়া যায় ব্যাংকিং খাতে; ব্যাংকিং খাতের অবস্থাকে জনগণের অর্থে ফুটো চৌবাচ্চা ভরার এক প্রতিযোগিতা ছাড়া আর কিছুই বলার অবকাশ নেই। দেশের ব্যাংকিং খাতের খেলাপি ঋণের পরিমাণ ১ লাখ ৪৩ হাজার ৯০০ কোটি টাকা ছাড়িয়েছে। বাংলাদেশে অতীতে মধ্যবিত্তের ভেতরে গণতান্ত্রিক আকাক্সক্ষা এবং অংশগ্রহণমূলক সমাজের স্বপ্ন ছিল, এখন তা প্রায় অবসিত। গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া, স্বাধীন গণমাধ্যম, স্বাধীন বিচারব্যবস্থা, রাষ্ট্রীয় প্রকল্প ও অর্থ বরাদ্দে স্বচ্ছতা, জবাবদিহি, স্বাধীন নির্বাচনব্যবস্থা, স্বাধীন বিদ্যাচর্চা-সংস্কৃতিচর্চা তিরোহিত।
১৯৯১ সালে খালেদা জিয়া ক্ষমতায় আসীন হওয়ার পর পুনরায় ভারত বাংলাদেশের রাজনীতিতে ভিন্নভাবে সক্রিয় হতে থাকে। তবে বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ রাজনীতিতে ভারত প্রসঙ্গ উপস্থিত থেকেছে আলাপ-আলোচনায়, রাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বিতায়। অযৌক্তিক ও উগ্র ভারত-বিরোধী এবং ভারতের প্রতি অতিমাত্রায় সহানুভূতিশীল ও ভারত বিষয়ে ¯পর্শকাতর জনগোষ্ঠী বাংলাদেশে সব সময়ই ছিল। কিন্তু বাংলাদেশ-ভারত স¤পর্ককে ভূ-রাজনৈতিক বাস্তবতার আলোকে বিবেচনা করার প্রবণতাই প্রধান ধারা। বিএনপির রাজনীতির একটি অন্যতম উপাদান হচ্ছে, ভারতের কাছে নতজানু না হয়ে থাকা। অন্যদিকে, ভারতের জাতীয় নিরাপত্তার জন্যে হুমকি হতে পারে এমন যেকোনো কিছুকেই ভারত মোকাবেলা করার ক্ষেত্রে তৎপর। ফলে বাংলাদেশের রাজনীতির ব্যাপারে ভারতের উৎসাহ কেবল উৎসাহের মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকেনি। অতীতে ভারতের আঞ্চলিক ও বৈশ্বিক প্রভাব সীমিত থাকার কারণে এবং বাংলাদেশের রাজনীতি বিষয়ে পশ্চিমা দেশগুলোর আগ্রহ ও নির্বাচনের সঙ্গে প্রত্যক্ষ-পরোক্ষ সংশ্লিষ্টতার ফলে ভারত প্রত্যক্ষভাবে প্রভাব বিস্তারের চেষ্টা থেকে বিরত থেকেছে। কিন্তু ২০০৭-২০০৮ সালের তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে পর্দার আড়ালে ভারতের নীতি-নির্ধারকরা তাঁদের প্রভাব বৃদ্ধি করে এবং ২০১৪ সালের নির্বাচনের সময়ে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের অনুকূলে প্রত্যক্ষভাবে ভূমিকা নেয়, তৎকালীন পররাষ্ট্র সচিব সুজাতা সিংয়ের বাংলাদেশ সফরই কেবল তাঁর প্রমাণ নয়, এই একপাক্ষিক নির্বাচনের পরে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে সমালোচনার বিরুদ্ধে ভারত শেখ হাসিনা সরকারের বর্ম হিসেবেই কাজ করেছে। গত কয়েক বছরে ভারত বাংলাদেশের সরকারের কাছ থেকে যা পেয়েছে তা স্বৈরাচারী শেখ হাসিনার ভাষায় সারাজীবন মনে রাখবার মতো (বাংলা ট্রিবিউন ২০১৮)। কিন্তু বিনিময়ে রাষ্ট্র হিসেবে বাংলাদেশ যে তার প্রাপ্যও পায়নি সেটা এমনকি ভারতীয় বিশেষজ্ঞরাও খোলাখুলিভাবেই স্বীকার করেন।
৩.
উপরের আলোচনার সূত্রে পুনরায় বলা যায়, ১৯৮২ সাল থেকেই বেগম খালেদা জিয়া হয়ে উঠেন বিএনপির অবিচ্ছেদ্য অংশ। কারণ, ১৯৮১ সালের মে মাসে বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা এবং প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানকে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়। সেসময় বেগম খালেদা জিয়া নিতান্তই একজন গৃহবধূ। রাজনীতি নিয়ে চিন্তা কিংবা রাজনৈতিক কোন অনুষ্ঠানের সঙ্গে তাঁর যোগাযোগ সেভাবে গড়ে উঠেনি। প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান শহীদ হওয়ার পর বিচারপতি আব্দুস সাত্তার প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন। এক পর্যায়ে সাত্তারকে অপসারণ করে ক্ষমতা দখল করেন তৎকালীন সেনাপ্রধান জেনারেল হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদ। একদিকে দলীয় কোন্দল, অন্যদিকে বিএনপির অনেক নেতার এরশাদের মন্ত্রিসভায় যোগদান- এই দুই পরিস্থিতিতে বিএনপি তখন অনেকটা ছত্রভঙ্গ, বিপর্যস্ত এবং দিশেহারা। দল টিকিয়ে রাখার প্রয়োজনে তৎকালীন বিএনপির সিনিয়র কিছু নেতার পরামর্শ এবং অনুরোধে ১৯৮২ সালের জানুয়ারি মাসে রাজনীতিতে আসেন খালেদা জিয়া।
গবেষকদের মতে, জিয়াউর রহমান ক্ষমতার বলয়ের ভেতরে থেকে দল তৈরি করেছিলেন। কিন্তু পরবর্তীতে খালেদা জিয়া সে দলকে রাজনৈতিকভাবে এগিয়ে নেন। মহিউদ্দিন আহমদ লিখেছেন, সেভাবে এটি রাজনৈতিক দল ছিল না, যেভাবে রাজনৈতিক দল তৈরি হয় আমাদের দেশে। বিএনপির রাজনৈতিক দল হিসেবে গড়ে উঠা এরশাদবিরোধী আন্দোলনের সময় খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে। আজকে আমরা যে বিএনপি দেখি, যদিও সেটার আইকন জিয়াউর রহমান, কিন্তু দলটাকে এ পর্যায়ে এনেছেন খালেদা জিয়া। সামরিক শাসক জেনারেল এরশাদ-বিরোধী আন্দোলনের সময় রাস্তায় সক্রিয় ছিলেন খালেদা জিয়া। ওই আন্দোলন দেশব্যাপী তাঁর ব্যাপক পরিচিতিও গড়ে তুলেছিল। এরশাদের পতনের পর ১৯৯১ সালে যে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছিল, তাতে বিএনপি জয়লাভ করে। রাজনীতিতে আসার ১০ বছরের মধ্যেই প্রধানমন্ত্রী হন খালেদা জিয়া। এরশাদবিরোধী আন্দোলনের সময় তাঁকে কয়েকবার আটক করা হলেও আন্দোলন থেকে সরে যাননি বিএনপি চেয়ারপারসন। ওই সময় খালেদা জিয়াকে বেশ কাছ থেকে দেখেছেন বিএনপির বর্তমান ভাইস চেয়ারম্যান সেলিমা রহমান। তিনি বলেছেন, ম্যাডাম সবসময় যেটা বলতেন, সেটা করতেন ... কখনো ওনাকে মানসিকভাবে ভেঙ্গে পড়তে দেখিনি। বেগম খালেদা জিয়া পূর্ণ মেয়াদে সরকার পরিচালনা করেছেন দুইবার। প্রথমবার যখন প্রধানমন্ত্রী হন, তখন দেশ পরিচালনায় তিনি ছিলেন একেবারেই অনভিজ্ঞ। এমনকি সংসদেও তিনি ছিলেন নতুন। কিন্তু জীবনের প্রথম নির্বাচনেই খালেদা জিয়া পাঁচটি আসনেই জয়লাভ করেন। তাঁর রাজনৈতিক জীবনে যতগুলো নির্বাচনে অংশ নিয়েছেন, তার কোনটিতেই পরাজিত হননি তিনি। খালেদা জিয়ার শাসন আমল, ১৯৯১-৯৬ এবং ২০০১-২০০৬, এই দুইভাগে ভাগ করেন অনেক রাজনৈতিক পর্যবেক্ষক। খালেদা জিয়ার প্রথম শাসনামল থেকেই দুর্নীতিমুক্ত প্রশাসন ছিল। ওই সময় তিনি নারী অধিকার প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছিলেন। প্রকৃতপক্ষে বাংলাদেশের নারীর অগ্রযাত্রায় তাঁর একটা বড় ভূমিকা রয়েছে। ২০০১ সালে বিএনপি ক্ষমতাসীন হবার পর খালেদা জিয়া নতুন করে জিয়াউর রহমানের স্বপ্নকে বাস্তবায়নে আত্মনিয়োগ করেন। ২০০১ সালের সংসদ নির্বাচনে বিএনপি দুই তৃতীয়াংশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে নির্বাচনে জয়লাভ করেছিল এবং নির্বাচনের পর জোটসঙ্গী জামায়াতে ইসলামীকে সঙ্গে নিয়েই সরকার গঠন করে। ২০০১ থেকে ২০০৬ সাল পর্যন্ত বিএনপির শাসনামলে বাংলাদেশের অগ্রযাত্রা ত্বরান্বিত হয়। গণতন্ত্রের প্রতি খালেদা জিয়ার অবিচল আস্থা ছিল এবং রাজনৈতিক ব্যক্তি হিসেবে তাঁর ক্যারিশমা রয়েছে। এজন্য দেশকে এগিয়ে নিতে তিনি সক্ষম হন। সেসময় তিনি একক চেষ্টায় সরকারকে দৃঢ়তার সঙ্গে সুশাসনের পথে আনেন। দেশনায়ক তারেক জিয়াকে দলের শীর্ষ পর্যায়ে নিয়ে এসে নেতৃত্বে অভিষিক্ত করেন তিনি নিজে। ২০০৭ সালে সেনা-সমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকার ক্ষমতায় আসার পর খালেদা জিয়া গ্রেফতার হন। খালেদা জিয়া যখন রাজনৈতিকভাবে নানান চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করছিলেন, ওই একই সময়ে তাঁর পারিবারিক র্ট্যাজেডিও ঘটে ২০১৫ সালে ছোট ছেলে আরাফাত রহমানের মৃত্যুর মধ্য দিয়ে। ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি নির্বাচন বর্জনের পর বিএনপি রাজনৈতিকভাবে অনেকটা চাপে পড়ে যায়। খালেদা জিয়ার সামনে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ এসে হাজির হয় তাঁর বিরুদ্ধে করা দুর্নীতির মামলা। মিথ্যা মামলাগুলো ২০২৪ সালের আগস্ট মাসে প্রত্যাহার করা হয়। খালেদা জিয়াকে কারাগারে রেখেই ২০১৮ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ নিয়েছিল বিএনপি। সেসময় খালেদা জিয়া এবং তারেক রহমান প্রকাশ্যে অনুপস্থিত ছিলেন। কিন্তু স্বৈরাচারী হাসিনা বিএনপিতে ভাঙ্গন সৃষ্টি করতে পারেননি। বরং লন্ডন থেকে দেশনায়ক তারেক রহমান বিএনপিকে সংঘবদ্ধ করেছেন। রাজনৈতিক দল হিসেবে সংগঠিত হয়ে শেখ হাসিনা সরকারের উপর চাপও তৈরি করতে সক্ষম হন তিনি।
তারেক রহমানের বক্তব্য-বিবৃতিতে বিএনপি শক্তিশালী বিরোধীদলে পরিণত হয়। অত্যাচারী সরকার জবাবদিহি করতে বাধ্য হয়। দেশ-বিদেশে তাদের স্বেচ্ছাচারী, দুর্নীতি-অনিয়ম প্রকাশ পেলে জনগণের মধ্যে ক্ষোভ দানা বাঁধতে থাকে। শেখ হাসিনার ১৬ বছরে দুর্নীতি হয়ে উঠেছিল দুর্দমনীয়। তৃণমূলে অধিকাংশ এলাকায় আওয়ামী লীগের নেতারা হয়ে উঠেছিল স্বেচ্ছাচারী। ফলে সামগ্রিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে রাষ্ট্র। এমনকি একতরফা নির্বাচনে বিএনপি অংশগ্রহণ না করায় দুঃখজনকভাবে গত সাড়ে পনেরো বছর বাংলাদেশে সংসদীয় গণতন্ত্রের চর্চা ছিল অনেকটাই দুর্বল। অবশ্য ২০০৯ থেকে ২০১৩ সাল পর্যন্ত সংসদে বিএনপি তাদের বিরোধী দলের দায়িত্ব সঠিকভাবে পালন করে। সেসময় সংসদীয় কার্যক্রমে সক্রিয় অংশগ্রহণ করার কারণে বিএনপি ক্ষমতাসীন দলকে চ্যালেঞ্জের মুখে ফেলেছিল। বিএনপির ওয়ান ইলেভেনের সময় সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। খালেদা জিয়া বন্দি হলে এবং তারেক রহমানকে জেলে পাঠানো হলে রাজনৈতিকভাবে বিএনপি ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা করে। দেশের প্রধান বিরোধী দলের আসনে থেকে হত্যা, গুম, নিপীড়নের বিরুদ্ধে একটানা প্রতিবাদ অব্যাহত রাখেন দলটির নেতাকর্মীরা। সারাদেশে সমাবেশ-মহাসমাবেশ করা হয়। সরকারকে চ্যালেঞ্জ করে পল্টনে সমাবেশ করার চেষ্টা চলে। তারেক রহমানের নিরন্তর অনুপ্রেরণায় ঢাকার বাইরে বিশাল শোডাউনে বিএনপি নেতারা আত্মবিশ্বাসী হয়ে উঠেন। নির্বাচন ঘনিয়ে এলে বিএনপি ২০২৩ সালের ২৮ অক্টোবর মহাসমাবেশ আহবান করে রাজধানীতে। বিশাল সমাবেশে তারা ঐক্যবদ্ধ হয়। ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের হত্যা, অত্যাচার ও মিথ্যা মামলায় বিএনপি দিশেহারা হলেও গণসংযোগের মাধ্যমে নিজেদের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখে।
বিএনপির রাজনীতিতে অন্যতম ব্যতিক্রমী চরিত্র বেগম খালেদা জিয়া। তিনি কখনো শেখ হাসিনার মতো অশ্লীল ভাষায় কথা বলেননি। সংসদে কথা বলার সময় শেখ মুজিবসহ সকল জাতীয় নেতাকে সম্মান রেখে কথা বলেছেন। পক্ষান্তরে শেখ হাসিনা সংসদে দাঁড়িয়ে শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানকে খুনি বলেছেন। আচার-আচরণে, রুচিতে অনন্য খালেদা জিয়া এজন্য আজো তৃণমূল মানুষের প্রিয় নেত্রী।
৪.
ক্ষমতার পরিবর্তন মানে শুধু রাষ্ট্র ক্ষমতার হাত বদল নয় বরং রাষ্ট্র এবং রাজনীতির গুণগত পরিবর্তন। (তারেক রহমান, ২০ আগস্ট ২০২৪) দেশনায়কের এই কথার সূত্র নিহিত রয়েছে, ‘টেক ব্যাক বাংলাদেশ’ শব্দগুচ্ছের ভেতর। যে দেশের জন্য জিয়াউর রহমান যুদ্ধ করেছেন, স্বাধীনতার ডাক দিয়েছেন সেই দেশে শেখ হাসিনা সরকার ইতিহাসকে বিকৃত করেছিল। তাঁর ভারতে পলায়নে ইতিহাস এখন আগের জায়গায় পৌঁছাবে। টেকব্যাক বাংলাদেশ মানে- এই বাংলাদেশের জন্য এ দেশের মুক্তিযোদ্ধারা যুদ্ধ করেছেন ও শহীদ হয়েছেন। গুটিকয়েক লোক ছাড়া এ দেশের মুক্তিযুদ্ধকে এ দেশের মানুষ সমর্থন করেছেন; মা-বোনরা নির্যাতিত হয়েছেন। সেই মুক্তিযুদ্ধের বাংলাদেশ আমরা ফিরে পেতে চাই। গত ১৬ বছর বাংলাদেশে গণতন্ত্র ছিল না। মানুষের মধ্যে অর্থনৈতিক বৈষম্য যতটুকু কম রাখা যায়, সেটা রাখা হয় নি। আজকে পৃথিবীর মধ্যে সবচেয়ে বেশি অর্থনৈতিক বৈষম্য বাংলাদেশে। দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতিতে মানুষ নাজেহাল। বিদেশে টাকা পাচার হয়েছে প্রভূত পরিমাণ। এসব জায়গায় দেশনায়ক বাংলাদেশকে টেক ব্যাক করতে চান ইতিবাচকতায়। মুক্তিযুদ্ধ দেশের মানুষ যে কারণে করেছেন, সেই বাংলাদেশকে ফিরিয়ে আনতে চান। শেখ হাসিনা এ দেশে গণতন্ত্রকে ধ্বংস করেছিলেন। এখানে তারা জনগণের সাংবিধানিক ও মৌলিক অধিকারকে গায়েব করে দিয়ে ক্ষমতায় থাকার পথ প্রশস্ত করতে চেয়েছিল। পারেনি। হত্যা, গুম, খুনের সরকারকে বিদায় জানাতে সক্ষম হয়েছেন ছাত্র-জনতা। এজন্যই টেক ব্যাক বাংলাদেশ মানে একটি সার্বভৌম মর্যাদাস¤পন্ন ন্যায়ভিত্তিক বাংলাদেশের অঙ্গীকার। সেই অঙ্গীকার পূরণে সকলকে আহ্বান জানিয়েছেন দেশনায়ক তারেক রহমান।
৫.
শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান যেমন জনস¤পৃক্ত মানুষ ছিলেন, তৃণমূলে প্রবল জনপ্রিয়তায় অসাধারণ হয়ে উঠেছিলেন তেমনি সাধারণ মানুষের রাজনৈতিক মঞ্চ বা ময়দানে বেগম খালেদা জিয়া দেশ ও বিশ্বের পরিবর্তিত বাস্তবতায় নিজেকে মহিমান্বিত করে তুলতে সক্ষম হয়েছেন। অন্যদিকে দেশনায়ক তারেক রহমান ২০২৪ সালে রাজনীতির গুণগত পরিবর্তনের আকাক্সক্ষায় ব্রতী বলেই গ্রিক বীর অ্যাগামেননের মতো সকল প্রতিকূল পরিস্থিতি মাড়িয়ে মানুষের স্বপ্ন-জাগরণে সমৃদ্ধ দেশ গড়ার প্রত্যয়ে স্বদেশে ফিরে আসবেন। (সমাপ্ত)
লেখক : সাবেক চেয়ারম্যান এবং অধ্যাপক, থিয়েটার অ্যান্ড পারফরমেন্স স্টাডিজ বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।
বিভাগ : সম্পাদকীয়
মন্তব্য করুন
আরও পড়ুন
আদানির বিরুদ্ধে এবার ভারতের সুপ্রিম কোর্টে মামলা
নেতানিয়াহুর বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করলেন যে ৩ বিচারক
ইসরায়েলে হামলা চালানোর সব প্রস্তুতি নিচ্ছে ইরান
বড় জয়ে বার্সার সঙ্গে ব্যবধান কমাল রিয়াল
ইসরায়েলে একদিনে ৩৪০ মিসাইল হামলা হিজবুল্লাহর, ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি
ইসরায়েলি বর্বর হামলায় নিহত আরও ৩৫ ফিলিস্তিনি
কষ্টে ফলো-অন এড়ালো বাংলাদেশ
এবার তেল আবিবে হিজবুল্লাহর ২৫০ ড্রোন ও ক্ষেপণাস্ত্র হামলা
পিটিআইয়ের বিক্ষোভের ডাক,লকডাউন ইসলামাবাদে
জাবিতে অটোরিকশার ধাক্কায় শিক্ষার্থী নিহতের ঘটনায় সন্দেহভাজন রিকশা চালক আটক
আজ কিশোরগঞ্জের দানবীর, শিক্ষানুরাগী ওয়ালী নেওয়াজ খান এর ৩৮তম মৃত্যুবার্ষিকী
'দুর্বল' দলের বিপক্ষে পয়েন্ট হারাল ইউনাইটেড
সালাহর জোড়া গোলে লিভারপুলের জয়
গুমের দায়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ২২ সদস্য চাকরিচ্যুত
কুরস্ক অঞ্চলের ৪০ ভাগ খোয়ানোর স্বীকারোক্তি ইউক্রেনের
মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি নিয়ে বাংলাদেশ চীনের সাথে কাজ করতে আগ্রহী: বাণিজ্য উপদেষ্টা
হাজীদের সর্বোত্তম স্বার্থ রক্ষায় সরকার প্রতিশ্রুতিবদ্ধ ধর্ম উপদেষ্টা ড. খালিদ হোসেন
শরীয়তপুরে যুবদল, স্বেচ্ছাসেবক দল ও ছাত্রদলের যৌথ কর্মী সভা
মানিকগঞ্জে সড়ক দুর্ঘটনায় সিকিউরিটি গার্ড নিহত
পাকিস্তানকে উড়িয়ে দিল জিম্বাবুয়ে