সংবিধান বিতর্ক : সংশোধন, নাকি পুনর্লিখন
২৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১২:০৩ এএম | আপডেট: ২৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১২:০৩ এএম
সংবিধান সংশোধন না পুনর্লিখন তা নিয়ে সাম্প্রতিক সময়ে নানা মুনির নানা মত দেখা যাচ্ছে। সংবিধান অপরিবর্তনীয় নয়। এটা সময়ের প্রয়োজনে, যুগের প্রয়োজনে পরিবর্তনের দাবি রাখে। সময়ের সাথে সংবিধান সংশোধন করতে হয়। Transitional justice system এর অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয় হলো Constitution building.তাই অন্তর্বর্তী সরকারের সংবিধান সংশোধন/পুনর্লিখনের authority আছে কি নেই, এ নিয়ে বিতর্ক চলছে। ফ্যাসিবাদমুক্ত বাংলাদেশে ছাত্র-জনতার একমাত্র দাবি বৈষম্যমুক্ত বাংলাদেশ গড়ে তোলা। সংবিধান সংশোধনের বিষয়ে বিতর্ক থাকলেও অন্তর্বর্তী সরকারকে constitution building এর পরিবেশ সৃষ্টি করে যেতে হবে। সে প্রেক্ষিতে জাতীয় সংকট উত্তরণে অন্তর্বর্তী সরকার গঠন করা হয়েছে। ইতিপূর্বে সংবিধানের ব্যাপক সংশোধনগুলো জনস্বার্থে হয়নি, দলীয় স্বার্থে হয়েছে। সংবিধানের অনুচ্ছেদ ৭ (খ) দুষ্পরিবর্তনীয়- এটা অযৌক্তিক। এটা সংশোধন সম্ভব এবং তা করতে হবে। এটা মানব রচিত, ভুল ত্রুটি থাকা স্বাভাবিক। এটা কোরান বা ঐশী কোনো গ্রন্থ নয় বিধায় তাকে যুগোপযোগী করতে হবে। জনস্বার্থে এ ব্যাপারে ছাত্র-জনতা ও সকল দলকে ঐকমত্যে পৌঁছাতে হবে। প্রয়োজনে রেফারেন্ডাম দিয়ে আহত, ক্ষতবিক্ষত, মুমূর্ষু সংবিধানে সংশোধন আনতে হবে। Right
To Basic Necessities, Environment, Health-কে মৌলিক অধিকারের অংশ করতে হবে। সংশোধন করে আবারো Caretaker Govt. এর বিধান আনতে হবে সুষ্ঠু নির্বাচনের স্বার্থে (যা পঞ্চদশ সংশোধনীতে বাতিল হয়)। রাষ্ট্রীয় মূলনীতিগুলো নিয়ে যথেষ্ট বিতর্ক রয়েছে। ‘গণতন্ত্র' আর —সমাজতন্ত্র' conflicting, ধর্মনিরপেক্ষতা আর রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম conflicting, সকল ধর্মের মানুষের ধর্ম চর্চার কথা বলা হলেও ধর্মের অচর্চা অর্থাৎ নাস্তিকদের বিষয়ে বলা হয়নি। President, prime minister-†K balanced powerকে নধষধহপবফ ঢ়ড়বিৎ দিতে হবে। কয়বার প্রেসিডেন্ট/ প্রধানমন্ত্রী হওয়া যাবে, তার বিধান নেই সংবিধানে। আমাদের দেশে প্রেসিডেন্ট কেবল Showpiece.
Constitution Reform Commission সংবিধান সংশোধন করে ফৎধভঃ করে সেখানে রাজনৈতিক দল ও নাগরিক সমাজের অঙ্গীকার বা স্বাক্ষর নিতে পারে। পরবর্তী সরকার প্রথম অধিবেশনে সংবিধান সংশোধন নিয়ে প্রস্তাবনা দিতে পারে। সংবিধানকে জনআকাক্সক্ষা ধারণ করতে হবে। আমাদের সংবিধান সব শ্রেণী-পেশার মানুষকে ধারণ করেনি। এ মুহূর্তে সংবিধানকে একেবারে ছুঁড়ে না ফেলে তাকে সংস্কারের মাধ্যমে যুগোপযোগী করা যায়। এমনকি সম্পূর্ণ সংবিধান বাতিল হয়ে নতুন সংবিধানও গৃহীত হতে পারে যেমনটি ফ্রান্সে হয়েছে। তবে এর নজির খুব বেশি নেই। যুক্তরাজ্যে (গ্রেট ব্রিটেন) সাধারণ আইন তৈরির নিয়মে পার্লামেন্ট সংবিধানের লিখিত অংশের কোথাও সংশোধন বা নতুন কোনো বিষয় অন্তর্ভুক্ত করতে পারে। অন্যদিকে যুক্তরাষ্ট্রে এ পদ্ধতি কিছুটা জটিল ও ভারসাম্য নীতি নির্ভর। সেখানে হয় কংগ্রেসের উচ্চ কক্ষের দুই-তৃতীয়াংশ সদস্য অথবা অঙ্গরাজ্যসমূহের দুই-তৃতীয়াংশ সদস্য প্রথমে সংবিধান সংশোধনী প্রস্তাব আনবে। এরপর বিশেষ কনভেনশনের মাধ্যমে বা অন্য উপায়ে অঙ্গরাজ্যসমূহের আইনসভার তিন-চতুর্থাংশের অনুসমর্থনে সংশোধনী পাস ও কার্যকর হবে। কোনো কোনো দেশে এ জন্য জনমত যাচাই বা রেফারেন্ডামের বিধান আছে। বাংলাদেশে সংবিধানের সংশোধন পদ্ধতি জেনে নেওয়া যাক।
বাংলাদেশ সংবিধানের ১৪২ নং অনুচ্ছেদে সংবিধান সংশোধনের সুনির্দিষ্ট নিয়ম বা পদ্ধতি উল্লেখিত রয়েছে। সে মতে জাতীয় সংসদকেই এর উদ্যোগ নিতে হয়। এরপর যেসব শর্ত বা নিয়ম অনুসরণ করতে হয়, সংক্ষেপে তা তুলে ধরা হলো- ক) বিলের সম্পূর্ণ শিরোনাম- সংশোধনীর জন্য আনীত বিলের সম্পূর্ণ শিরোনাম এবং সে শিরোনামে সংবিধানের কোন বিধান সংশোধন করা হবে, তা স্পষ্টরূপে উল্লেখ থাকতে হবে। অন্যথায় বিলটি বিবেচনার জন্য গ্রহণ করা যাবে না। খ) দুই-তৃতীয়াংশ ভোটে গৃহীত বিলটি সংসদের মোট সদস্য সংখ্যার কমপক্ষে দুই-তৃতীয়াংশ ভোটে গৃহীত হতে হবে। গ) রাষ্ট্রপতির সম্মতি- উপরিউক্ত উপায়ে কোনো বিল গৃহীত হওয়ার পর সম্মতির জন্য রাষ্ট্রপতির নিকট তা উপস্থাপিত হবে। উপস্থাপনের সাত দিনের মধ্যে তিনি বিলটিতে সম্মতিদান করবেন এবং কোনো কারণে তিনি তা করতে অসমর্থ হলে উক্ত মেয়াদের অবসানে তিনি বিলটিতে সম্মতিদান করেছেন বলে গণ্য হবে। ঘ) গণভোটের (Referendum) বিধান- সংবিধানের প্রস্তাবনা অথবা অনুচ্ছেদ ৮ (রাষ্ট্রীয় মূলনীতি), ৪৮ (প্রেসিডেন্ট নির্বাচন, তাঁর ক্ষমতা ও মর্যাদা) বা অনুচ্ছেদ ৫৬ (প্রধানমন্ত্রী ও তাঁর মন্ত্রিসভার সদস্যদের নিয়োগদান) সংক্রান্ত কোনো সংশোধনী বিল নিয়ম অনুযায়ী গৃহীত হওয়ার পর সম্মতির জন্য রাষ্ট্রপতির নিকট উপস্থাপনের সাত দিনের মধ্যে তিনি বিলটিতে সম্মতিদান করবেন কি করবেন না, এ প্রশ্নটি গণভোটে প্রেরণের ব্যবস্থা করবেন। সংসদ নির্বাচনের জন্য প্রস্তুতকৃত ভোটার তালিকা অনুযায়ী নির্বাচন কমিশন আইনের দ্বারা নির্ধারিত মেয়াদের মধ্যে গণভোট পরিচালনা করবে। সংখ্যাগরিষ্ঠ ভোট উক্ত বিলে সম্মতিদানের পক্ষে পড়লে রাষ্ট্রপতি বিলটিতে সম্মতিদান করেছেন বলে গণ্য হবে। আর বিপক্ষে পড়লে রাষ্ট্রপতি বিলটিতে সম্মতিদানে বিরত রয়েছেন বলে স্থির হবে। শেষের ক্ষেত্রে বিলটি আর কার্যকর হবে না। ১৯৭৮ সালে এক আদেশ বলে প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান গণভোটের এ নিয়ম করেন, যা পরবর্তীকালে পঞ্চম সংশোধনীর অন্তর্ভুক্ত হয়।
বাংলাদেশের সংবিধান সংশোধনের প্রধানত চারটি দিক রয়েছে। এর প্রথম তিনটি সংবিধানের সাধারণ কোনো বিষয় সংশোধনীর জন্য অনুসরণ করতে হয়। আর প্রস্তাবনার মতো মৌলিক বিষয় সংশোধনীর জন্য এর সঙ্গে গণভোটের শর্ত পূরণ অত্যাবশ্যক হয়ে পড়ে। সংবিধান সংস্কার রাষ্ট্র সংস্কারের যেসব দাবি উঠছে সেগুলোর মধ্যে অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ। সেই বিষয়ে কিছুদিন আগে ড. শাহদীন মালিক সংবিধান সংস্কার ইস্যুতে বিবিসি বাংলার সঙ্গে কথা বলেছিলেন। তিনি বলেন, ‘বৈষম্যহীন রাষ্ট্র গঠনে যা যা দরকার তা বর্তমান সংবিধানেই আছে। বিদ্যমান সংবিধান দিয়েই চাইলেই সংকটের সমাধান সম্ভব। বাংলাদেশের সংবিধানে ১৫৩টি অনুচ্ছেদ আছে। এখন অনেকে সংস্কারের কথা বলে। কিন্তু আমার প্রশ্ন, এই সংবিধানের যে ধারাগুলো আছে সেটাতে আসলে অসুবিধা কোথায়, সেটা তো জানতে হবে।' যারা সংস্কারের কথা বলছে তারা কোনটা সংস্কার চায় সেটা স্পষ্ট করে বলেনি তবে কেন বলেনি তার কোনো সদুত্তর নাই। সংবিধানে পুনর্লিখন না করে সংশোধন বা রাষ্ট্রের আইনের সংস্কার করে এটি সম্ভব কিনা, অনেকে এমন প্রশ্নে উদাহরণ টানছেন ২০০৭ সালে সেনা সমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময়ের সংস্কারের। কেউ কেউ মনে করছেন, জোড়াতালি দিয়ে সংবিধান সংশোধন বা আইনের সংস্কার করা হলে স্বৈরতন্ত্র রোধ করা সম্ভব না। তবে এর বিপরীতে ভিন্ন যুক্তিও আছে। যেমন- গত ৫ আগস্ট গণঅভ্যুত্থানের মাধ্যমে সরকার ক্ষমতাচ্যুত হয়েছে, নতুন দেশ গঠিত হয়নি। তাই সংবিধান পুনর্লিখনের কোনো প্রয়োজন আছে বলে তারা মনে করেন না।
বিগত ৫০ বছরে ১৭ বার সংবিধানে কাটাছেঁড়া করা হয়েছে। সংবিধান সংশোধনীর মাধ্যমে সংসদীয় ব্যবস্থা পাল্টে দিয়ে একদলীয় শাসন ব্যবস্থা যেমন প্রবর্তন করা হয়েছিল, অন্যদিকে দু’বার সামরিক শাসনকে বৈধতা দেয়া হয়েছিল। সংবিধান সংশোধন করে ইসলামকে রাষ্ট্রধর্ম হিসাবে ঘোষণা করা হয়েছিল ১৯৮৮ সালে সামরিক শাসকের ছাতার তলায় ‘নির্বাচিত’ সংসদে। পরে রাজনৈতিক সরকারগুলো বিভিন্ন সংশোধনী আনলেও রাষ্ট্রধর্মের জায়গায় আর হাত দেয়নি। সংবিধানের পুনর্লিখন করার ইতিহাস পৃথিবীতে আছে। ২০০৮ সালে আইসল্যান্ডে অর্থনৈতিক সংস্কারের জন্য সংবিধানকে পুনর্লিখন করা হয়েছিল, যদিও পরবর্তী সময়ে কাজে দেয়নি। ২০১২ সালে বিপ্লবের পর মিশরের সংবিধানকে পুনর্লিখন করা হয়েছিল। চিলিতে ২০১৯ সালে ব্যাপক গোলযোগের পর সংবিধান পুনর্লিখন করা হয়েছিল। ২০১১ সালে আরব বসন্তের পর ২০১৪ সালে তিউনিসিয়া সংবিধানকে পুনর্লিখন করেছিল। ১৯৯৬ সালে দক্ষিণ আফ্রিকা সংবিধান পুনর্লিখন করেছিল, যা প্রগতিশীল সংবিধান হিসেবে বিবেচিত হয়। তাই সংবিধানের পুনর্লিখন যদি বাংলাদেশে হয় তা নতুন কোনো নজির হবে না বরং নজিরে নতুন একটা দেশ যুক্ত হবে। সংবিধানের সংশোধন বা পুনর্লিখনের প্রশ্ন আসে তখন যখন জনআকাক্সক্ষা সংবিধান ধারণ করতে পারে না, বা ছলচাতুরির মাধ্যমে জন আকাক্সক্ষাকে সংবিধানে উপেক্ষা করা হয়। বাংলাদেশের প্রতিটি রাজনৈতিক দল তাদের ক্ষমতাকে কুক্ষিগত করার জন্য বারবার সংবিধানকে সংশোধনের নামে কাটাছেঁড়া করেছে।
সংবিধানের এমন এমন সংশোধনী এনেছে যা সময়ের প্রয়োজনে ও জনআকাক্সক্ষার প্রতিফলন ঘটানোর জন্য যে সংস্কার দরকার, সেই সংস্কার যেন না করতে পারে তার বন্দোবস্ত করে রেখেছে। উদাহরণস্বরূপ বলা যায়, সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনীর মাধ্যমে সংবিধানের ৭ (খ) অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, সংবিধানের প্রস্তাবনা, প্রথম ভাগের সব অনুচ্ছেদ, দ্বিতীয় ভাগের সব অনুচ্ছেদ, নবম-ক ভাগে বর্ণিত অনুচ্ছেদগুলোর বিধানাবলি সাপেক্ষে তৃতীয় ভাগের সব অনুচ্ছেদ এবং একাদশ ভাগের ১৫০ অনুচ্ছেদসহ সংবিধানের অন্যান্য মৌলিক কাঠামো সংক্রান্ত অনুচ্ছেদগুলোর বিধানাবলি সংযোজন, পরিবর্তন, প্রতিস্থাপন, রহিতকরণ কিংবা অন্য কোনো পন্থায় সংশোধনের অযোগ্য হবে অর্থাৎ কোনভাবেই উক্ত বিষয়গুলো পরিবর্তন করা যাবে না। পঞ্চম সংশোধনীতে ওই বিষয়গুলো পরিবর্তনের জন্য রাখা হলেও পঞ্চদশ সংশোধনীর মাধ্যমে তা বাতিল করা হয়। কার্যত এখানে সংবিধানকে একপাক্ষিক করে দেয়া হয়েছে এবং জনআকাক্সক্ষা উপেক্ষিত করা হয়েছে। কাজেই সংবিধানের পুনর্লিখন কোনো রাজনৈতিক সরকার নয় বরং বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের করা উচিত। সংবিধানে যে পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে এটি পুনর্লিখন ছাড়া আর কোনো উপায় নেই বলে মন্তব্য করেছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষক ও যুক্তরাষ্ট্রের ইলিনয় স্টেট ইউনিভার্সিটির ডিস্টিংগুইশড প্রফেসর ড. আলী রিয়াজ। একইসঙ্গে বিদ্যমান অবস্থায় যদি কোনো দল নির্বাচনে ৩০০ আসনও পায় তারাও এই সংবিধান পরিবর্তন করতে পারবে না বলেছেন তিনি।
তার ভাষ্য, গত তিনটি নির্বাচনের মধ্য দিয়ে এক ধরনের একদলীয় ব্যবস্থা তৈরা করা হয়েছে, এখানে প্রশ্ন করার কোনো সুযোগ রাখা হয়নি। রাখার সুযোগ থাকলেও বিগত সরকার সেটা করেনি। সংবিধান সংশোধনের পক্ষে আমি না। এটি সংশোধন কোনো কাজে আসবে না। এটি পুনর্লিখন ছাড়া কোনো উপায় নেই। কারণ, সংবিধানের ৭ অনুচ্ছেদে ‘ক' ধারায় এমন কিছু জিনিস আনা হয়েছে যেটি সংশোধন করার কোনো উপায় নেই। সাংবিধানিকভাবে একনায়কতন্ত্রের প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। এ কারণে প্রধানমন্ত্রীর হাতে অভাবনীয় ক্ষমতা। নির্বাচনী সার্চ কমিটি অস্বচ্ছ ছিল। পতিত সরকার তাদের নিজের লোকদের কমিশনে বসিয়েছিল। ঐকমত্যের জায়গাকে গণতন্ত্র মনে করি না। সহনশীলভাবে মতপ্রকাশ এবং মতপ্রকাশে সংখ্যালঘুর নিশ্চয়তা বিধানই হচ্ছে গণতন্ত্র। আমাদের সেই গণতন্ত্র পুনর্গঠন করতে হবে। তাই সংবিধানে হাত দেয়া ছাড়া আর কোনো বিকল্প পথ নেই। নির্বাচন ব্যবস্থা, বিচার বিভাগ, স্থানীয় সরকার বিভাগসহ এমন বেশকিছু জায়গায় পরিবর্তন যদি আনা যায় তাহলে এর মাধ্যমে ভবিষ্যতে স্বৈরতান্ত্রিক কাঠামো থেকে বের হয়ে আসা সম্ভব। তবে এটা সংবিধান সংশোধনের মাধ্যমেই করা সম্ভব।
আইনজীবী মি. কাইয়ুম বলছেন, ‘এই মুহূর্তে সংবিধান পুনর্লিখন বা সংশোধন করতে হলে সব রাজনৈতিক দল, নাগরিক সমাজের প্রতিনিধি বা দেশের মানুষের ঐকমত্য দরকার। বিভিন্ন শ্রেণী-পেশার মানুষের মত যদি থাকে তাহলে প্রশ্ন উঠলেও পরবর্তীতে এ নিয়ে সংকট তৈরি হবে না'। অধ্যাপক আলী রিয়াজ অবশ্য সংবিধান সংশোধন বা পুনর্লিখনে গণপরিষদ গঠনসহ তিনটি পদ্ধতিকে গুরুত্ব দিচ্ছেন। প্রথমত, গণপরিষদ বা সংবিধান সভা করে সংবিধান প্রণয়ন, দ্বিতীয়ত রাজনৈতিক দল বা সব পক্ষের সাথে আলোচনা করে খসড়া সংবিধান প্রস্তুত করে গণভোট আয়োজন করা, তৃতীয়ত গণ শুনানির মাধ্যমে সংবিধান প্রস্তুত করা। সেক্ষেত্রে তার পরামর্শ হচ্ছে, যখন সবার মতামতের ভিত্তিতে নতুন সংবিধান চূড়ান্ত হবে তখন একটি নির্দিষ্ট তারিখে বিদ্যমান সংবিধান স্থগিত করে নতুন সংবিধান চালু করতে হবে। ২০২৪ এর গণঅভ্যুত্থানের পর ছাত্র-জনতার যে রাষ্ট্র সংস্কারের চাহিদা তা পূরণ করতে হলে আগে সব ক্ষেত্রে সংস্কার এনেই তারপর আয়োজন করতে হবে সংসদ নির্বাচন। সেটি না হলে এই অভ্যুত্থানের পর নতুন করে আবারও স্বৈরতন্ত্রের পথে হাঁটতে পারে ভবিষ্যতের যে কোনো রাজনৈতিক সরকার। ইতোমধ্যে সরকার সংবিধান ও আইন সংস্কারের জন্য একটি কমিশন গঠন করেছে। প্রফেসর সলিমুল্লাহ বলেন, সংবিধানে সর্বক্ষমতা হতে হবে জনগণ কর্তৃক নির্বাচিত আইনসভার ওপর। বর্তমান সংবিধান আইনসভাকে রেখেছে পঞ্চম ভাগে, নির্বাহী বিভাগকে চতুর্থ ভাগে রাখা হয়েছে। এমনভাবে অনেকটা অজ্ঞানেই। আমাদের গঠনতন্ত্র সে জন্য নির্বাহী বিভাগকেন্দ্রিক হয়ে উঠেছে। যুক্তরাষ্ট্রের সংবিধানের শুরুতে রয়েছে কংগ্রেস বা আইন বা আইনসভা, তারপর নির্বাহী, পরে বিচার বিভাগ। সেখানে রাষ্ট্রপতির চেয়েও আইনসভা (সিনেট ও হাউজ অব কমন্স) উপরে। আমাদের এখানে আইনসভার এ গুরুত্ব প্রতিষ্ঠিত হয়নি। সবার আগে আইনসভার কর্তৃত্ব তৈরি করতে হবে। আর তা করতে হলে আইনসভার সদস্যদের সত্যি সত্যি নির্বাচিত হতে হবে।
সংবিধান সংশোধন অথবা পুনর্লিখনের মাধ্যমে যে পরিবর্তনের সূচনা করা হোক না কেন, বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের জন্য দু’টি পথ খোলা রয়েছে। এর একটি হলো- রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান এবং এইচ এম এরশাদ যে পথে অগ্রসর হয়ে সংবিধানের পঞ্চম ও সপ্তম সংশোধনীর মাধ্যমে তাদের শাসনকালকে বৈধতা দিয়েছিলেন তার অনুসরণ, যদিও তা সামরিক আইন জারি ছাড়াই সম্ভব। অন্যটি হলো- সংবিধান পুনর্লিখনের মাধ্যমে। শেষেটির ক্ষেত্রে গণপরিষদ গঠনের আবশ্যকতা দেখা দেবে এবং সে ক্ষেত্রে কাদের নিয়ে বা কীভাবে গণপরিষদ গঠিত হবে সেটি একটি জটিল প্রশ্ন। জটিল প্রশ্নটি সুরাহার ক্ষেত্রে আইন কমিশনে সংবিধান বিষয়ে বিশেষজ্ঞদের অন্তর্ভুক্তির মাধ্যমে এর পরিধি বিস্তৃত করে সংবিধানের সংশোধন বা পুনর্লিখনের প্রাথমিক কাজটি করা যেতে পারে; তবে উভয় ক্ষেত্রে দেশের রাজনৈতিক দলগুলোর সাথে সংলাপে উপনীত হয়ে জাতীয় সংসদ বা গণপরিষদ নির্বাচন পরবর্তী সংসদের দুই-তৃতীয়াংশ সংখ্যাগরিষ্ঠতায় সাংবিধানিক অনুমোদন বা সংবিধান গৃহীত হওয়ার কাজটি সম্পন্ন করতে হবে। সুতরাং বর্তমানে অন্তর্বর্তী সরকার হিসেবে যারা রাষ্ট্রক্ষমতায় অধিষ্ঠিত তারা সংবিধান স্থগিত করে ফরমান বা ঘোষণাপত্রের মাধ্যমে নাকি বহাল রেখে রাষ্ট্রের শাসনকাজ পরিচালনা করবেন একান্তভাবে এটি তাদের নীতিনির্ধারণী সিদ্ধান্ত। এ ক্ষেত্রে ছাত্র-জনতার বিপ্লব থেকে উদ্ভূত জনআকাক্সক্ষা তাদের সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষমতার উৎস হতে পারে।
লেখক : আইনবিদ, কলামিস্ট, মানবাধিকার ও সুশাসন কর্মী। মহাসচিব, বাংলাদেশ হিউম্যান রাইটস ফাউন্ডেশন বিএইচআরএফ।
বিভাগ : সম্পাদকীয়
মন্তব্য করুন
আরও পড়ুন
'দুর্বল' দলের বিপক্ষে পয়েন্ট হারাল ইউনাইটেড
সালাহর জোড়া গোলে লিভারপুলের জয়
গুমের দায়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ২২ সদস্য চাকরিচ্যুত
কুরস্ক অঞ্চলের ৪০ ভাগ খোয়ানোর স্বীকারোক্তি ইউক্রেনের
মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি নিয়ে বাংলাদেশ চীনের সাথে কাজ করতে আগ্রহী: বাণিজ্য উপদেষ্টা
হাজীদের সর্বোত্তম স্বার্থ রক্ষায় সরকার প্রতিশ্রুতিবদ্ধ ধর্ম উপদেষ্টা ড. খালিদ হোসেন
শরীয়তপুরে যুবদল, স্বেচ্ছাসেবক দল ও ছাত্রদলের যৌথ কর্মী সভা
মানিকগঞ্জে সড়ক দুর্ঘটনায় সিকিউরিটি গার্ড নিহত
পাকিস্তানকে উড়িয়ে দিল জিম্বাবুয়ে
১৫ দিন রিমান্ড শেষে কারাগারে আব্দুর রাজ্জাক
লক্ষ্মীপুরে ১২০ টাকায় পুলিশে চাকরি পেলেন ৫০ জন
নির্বাচিত সরকারই দেশকে পুনর্গঠন করতে পারে : তারেক রহমান
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন জেলা কমিটিতে অচেনা ৭ জন
মৌলভীবাজারে কৃষি ও প্রযুক্তি মেলা শুরু
দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণের মডেল উদ্ভাবন
ব্রহ্মপুত্রে অবৈধ ড্রেজার বসিয়ে চলছে বালু ব্যবসা
বাঘায় কৃষি শ্রমিককে গলা কেটে হত্যা
কেশবপুরে অবৈধ ইটভাটা বন্ধে বিভিন্ন দফতরে অভিযোগ
হামলার শিকার হয়েও মুখ খুলতে পারছে না বোয়ালমারীর বহু পরিবার
ইসলামী আন্দোলনের গণসমাবেশে আ.লীগ নিষিদ্ধের দাবি