ঢাকা   শনিবার, ২৩ নভেম্বর ২০২৪ | ৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১

যানজটে নাকাল রাজধানীবাসী

Daily Inqilab মাহির তাজোয়ার রাফিদ

১৩ অক্টোবর ২০২৪, ১২:০৫ এএম | আপডেট: ১৩ অক্টোবর ২০২৪, ১২:০৫ এএম

যানজটে নাকাল রাজধানীবাসী। ব্যস্ত এই শহরে জীবনের নানা তাগিদে প্রতিনিয়তই ছুটছে মানুষ। কিন্তু ঘর থেকে রাস্তায় বের হলেই যানজট পড়া যেন অবধারিত। এত যানজট হলে মানুষ কাজে বের হবে কীভাবে? সড়কজুড়েই ভয়ঙ্কর যানজট। যানজটের কবলে পড়ে চরম বিপাকে পড়ছেন রাজধানীবাসী। দীর্ঘক্ষণ অপেক্ষার পরও যানজট না কমায় বাস থেকে নেমে তারা পায়ে হেঁটে রওনা হন গন্তব্যে।

২০১৮ সালে ৩ এপ্রিল সড়ক দুর্ঘটনায় বিআরটিসির দুই বাসের মাঝে রাজীবের বিচ্ছিন্ন হাত আটকে থাকার ছবি দেশের মানুষকে কাঁদিয়েছিল। সেই বছরের ২৯ জুলাই শহীদ রমিজউদ্দিন ক্যান্টনমেন্ট কলেজের দুই শিক্ষার্থী জবালে নূর পরিবহনের বাসচাপায় নিহত হওয়ায় আন্দোলনে নেমেছিল শিক্ষার্থীরা। রাজীবের ঝুলে থাকা হাত আর দুই শিক্ষার্থীর মৃত্যু স্পষ্ট করে সড়কে অব্যবস্থাপনার চিত্র। সেসময় শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের কারণে সরকার সড়ক পরিবহন আইন-২০১৮ নামে একটি আইন পাশ করে। আইনটি আজও বাস্তবায়ন হয়নি। হাসিনা সরকারের পতনের দুই মাস পার হয়ে গেছে। স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন উঠেছে, পরিবহন সেক্টরে এখনও কেনো ফিরছে না শৃঙ্খলা?

কোনো কিছুরই যেন বালাই নেই। নগরীতে অটোরিকশার দৌরাত্ম্য, রাস্তায় দুই পাশে ভ্রাম্যমাণ দোকান, বর্ষাকালে রাস্তায় খানাখন্দের কারণে চলাচল দুষ্কর। রাস্তায় পর্যাপ্ত ট্রাফিক না থাকার ফলে যানজট লেগেই থাকে। বিশেষ করে সাইনবোর্ড, রায়েরবাগ, শনিরআখড়া, কাজলা, যাত্রাবাড়ি, সায়েদাবাদ, টিটিপাড়া, মেয়র হানিফ ফ্লাইওভার, ধানমন্ডি, ফার্মগেট, বিজয় সরণি, কারওয়ানবাজার সার্ক ফোয়ারা, বাংলামটর, তেজগাঁওসহ আরো বিভিন্ন এলাকায় যানজট চরম আকারে। যানজটের কারণে ঢাকা শহরে স্বাভাবিক ও স্বাচ্ছন্দ্যে যাতায়াত অসম্ভব হয়ে পড়েছে। যানজট শুধু আমাদের অমূল্য সময়ই কেড়ে নিচ্ছে না, নাগরিক জীবনেও ডেকে আনছে নানা দুর্ভোগ। সাধারণ মানুষ থেকে শুরু করে ছাত্র-শিক্ষক, কর্মকর্তা-কর্মচারী, শ্রমিক, পথচারী সবাই আজ যানজটের শিকার। এখন নির্ধারিত সময়ে গন্তব্যে পৌঁছানোর কোনো নিশ্চয়তা নেই।

বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের আমলে পরিবহন সেক্টর চাঁদামুক্ত, সন্ত্রাসমুক্ত, নিরাপদ, যাত্রীবান্ধব সড়ক পরিবহনে শৃঙ্খলা ফেরাতে নানামুখী উদ্যোগ নেয়ার ঘোষণা দিয়েছে ঢাকা সড়ক পরিবহন মালিক সমিতি। গত ৩ সেপ্টেম্বর জাতীয় প্রেস ক্লাবে আয়োজিত এক মতবিনিময় সভায় মালিক সমিতির নব গঠিত কমিটির আহ্বায়ক মো. সাইফুল আলম এই ঘোষণা দেন। কিন্তু তার সে ঘোষণা এক মাসেও বাস্তবায়ন শুরুই হয়নি। ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের ট্রাফিক বিভাগ মাঝেমধ্যে অভিযান চালাচ্ছে, জরিমানা করছে। কিন্তু অবৈধ যানের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিচ্ছে বলা হলেও বাস্তবে তা দৃশ্যমান নেই বললেই চলে। ৬ লাখ অবৈধ ব্যাটারি রিকশা ও ইজিবাইকের মধ্যে থেকে ২ থেকে ৩০০ আটক করেই পুলিশ কঠোরতার বার্তা দিচ্ছে, যা অনেকটাই হাস্যকর! বর্তমানে ধরি মাছ না ছুঁই পানি অবস্থায় ট্রাফিক ব্যবস্থা চলছে।

হাসিনার আমলে ডিএমপি কমিশনারের উপরি আয়ের সবচেয়ে বড় উৎস ছিল পরিবহন সেক্টর। প্রতি মাসে পরিবহনে চাঁদাবাজির কোটি টাকা যেতো ডিএমপি কমিশনারের পকেটে। এখন সেই উপরি আয় বন্ধ। ট্রাফিক পুলিশও উপরি আয় বন্ধের কারণে কাজে উৎসাহ পাচ্ছে না। যে কারণে তারা সক্রিয় হতে পারছে না। ট্রাফিক পুলিশ ইচ্ছা করলেই একদিনে পরিবহন সেক্টর তথা রাজধানীর রাজপথ যানজট মুক্ত করে ফিরিয়ে আনতে পারে স্বাভাবিক অবস্থায়। সেক্ষেত্রে অবৈধ রিকশা, ব্যাটারি রিকশা, ঢাকার বাইরের সিএনজি অটোরিকশাসহ কয়েক লাখ যান উচ্ছেদ করতে হবে। একই সাথে ফুটপাতও উচ্ছেদ করতে হবে। তাহলে শৃঙ্খলা ফিরতে বাধ্য।

বিশেষজ্ঞদের মতে, পরিবহন খাতের দায়িত্বপ্রাপ্ত সংস্থার লোকজন, পুলিশ, পরিবহন মালিক, শ্রমিকদের নিয়ে দুর্নীতির দুষ্ট চক্র গড়ে উঠেছে এক যুগের বেশি সময় ধরে। এই চক্র চায় না সড়ক যানজটমুক্ত হোক। এই প্রেক্ষাপটে সড়কে সুশাসন প্রতিষ্ঠা নতুন সরকারের বড় চ্যালেঞ্জ। সরকারের উচিত হবে এই দুষ্টচক্রকে ভেঙে দিতে আরো কঠোর হওয়া। এজন্য প্রয়োজনে সড়ক পরিবহন মন্ত্রণালয়ের অধীনে নতুন কমিটি গঠন করতে হবে। তা না হলে শাজাহান খানের অনুসারী শ্রমিকরাই নগরবাসীকে অতিষ্ঠ করে সরকারের অর্জনকে মøান করে। অন্তর্বর্তী সরাকরের উচিত এই ত্রাহি অবস্থা থেকে নাগরিক জীবনকে স্বাচ্ছন্দ্য, সাবলীল ও গতিশীল করে তুলতে যানজট সমস্যার সমাধান খুব দ্রুতই বের করা।

লেখক: সহ-সম্পাদক, দৈনিক ইনকিলাব
[email protected]


বিভাগ : সম্পাদকীয়


মন্তব্য করুন

HTML Comment Box is loading comments...

এই বিভাগের আরও

দেশনেত্রীর প্রতি অপরিসীম শ্রদ্ধা ও সম্মান
বিচার, সংস্কার ও নির্বাচনসহ সরকারের কাজের পরিধি বিশাল
অদক্ষ ফার্মাসিস্ট দ্বারাই চলছে ফার্মেসি
নির্বাচন কমিশন গঠন : গণতন্ত্রের পথে যাত্রা শুরু
মানসিক সুস্থতায় কর্মবিরতি
আরও

আরও পড়ুন

দানে পাওয়া কাপড়ের মনোরম ডিজাইনে ভাইরাল ভারতীয় একদল ডিজাইনার

দানে পাওয়া কাপড়ের মনোরম ডিজাইনে ভাইরাল ভারতীয় একদল ডিজাইনার

কেমন হল ভিভো ভি৪০ লাইটের অভিজ্ঞতা!

কেমন হল ভিভো ভি৪০ লাইটের অভিজ্ঞতা!

তাদের রাজনীতি করতে দেবে কি-না তা দেশের মানুষই সিদ্ধান্ত নেবে: জামায়াতে সেক্রেটারি

তাদের রাজনীতি করতে দেবে কি-না তা দেশের মানুষই সিদ্ধান্ত নেবে: জামায়াতে সেক্রেটারি

উত্তরায় হাসপাতালে সন্ত্রাসী হামলাও লুটপাটের ঘটনায় থানায় মামলা

উত্তরায় হাসপাতালে সন্ত্রাসী হামলাও লুটপাটের ঘটনায় থানায় মামলা

পাকিস্তানে সাম্প্রদায়িক সহিংসতায় নিহত ৩২

পাকিস্তানে সাম্প্রদায়িক সহিংসতায় নিহত ৩২

আল্লাহকে পেতে হলে রাসুলের পথ অনুসরণ অপরিহার্য: মাওলানা রুহুল আমিন খান

আল্লাহকে পেতে হলে রাসুলের পথ অনুসরণ অপরিহার্য: মাওলানা রুহুল আমিন খান

ঢাকাবাসীকে নিরাপদ রাখতে হবে : ডিএমপি কমিশনার

ঢাকাবাসীকে নিরাপদ রাখতে হবে : ডিএমপি কমিশনার

ভোটের মাধ্যমে জনগনের সরকার প্রতিষ্ঠা না হওয়া পর্যন্ত আমাদের ঐক্যবন্ধ থাকতে হবে-লুৎফর রহমান আজাদ

ভোটের মাধ্যমে জনগনের সরকার প্রতিষ্ঠা না হওয়া পর্যন্ত আমাদের ঐক্যবন্ধ থাকতে হবে-লুৎফর রহমান আজাদ

গফরগাঁওয়ের বীরমুক্তিযোদ্ধা মোঃ আবদুছ ছালামের ইন্তেকাল

গফরগাঁওয়ের বীরমুক্তিযোদ্ধা মোঃ আবদুছ ছালামের ইন্তেকাল

আওয়ামী দোসররা মানুষের ওপর পাশবিক নির্যাতন চালিয়েছে: তানভীর হুদা

আওয়ামী দোসররা মানুষের ওপর পাশবিক নির্যাতন চালিয়েছে: তানভীর হুদা

ফিলিস্তিনিদের জন্য কোটি টাকার সহায়তা নিয়ে মিশরে পৌঁছেছে হাফেজ্জী চ্যারিটেবল

ফিলিস্তিনিদের জন্য কোটি টাকার সহায়তা নিয়ে মিশরে পৌঁছেছে হাফেজ্জী চ্যারিটেবল

১৭টি বছর শ্রমিকদলের নেতাকর্মীদের উপর নির্যাতন করেছে স্বৈরাচারী শেখ হাসিনা- কেন্দ্রীয় সভাপতি

১৭টি বছর শ্রমিকদলের নেতাকর্মীদের উপর নির্যাতন করেছে স্বৈরাচারী শেখ হাসিনা- কেন্দ্রীয় সভাপতি

বিএনপি যতই চাপ দিক, সংস্কারের ওপর ভিত্তি করেই নির্বাচন: উপদেষ্টা নাহিদ

বিএনপি যতই চাপ দিক, সংস্কারের ওপর ভিত্তি করেই নির্বাচন: উপদেষ্টা নাহিদ

ছয় বছর পর স্বাগতিক জিম্বাবুয়ের মুখোমুখি পাকিস্তান

ছয় বছর পর স্বাগতিক জিম্বাবুয়ের মুখোমুখি পাকিস্তান

তারেক রহমান ও কায়কোবাদের মামলা প্রত্যাহার না করলে অনশনসহ কঠোর কর্মসূচির হুশিয়ার হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের

তারেক রহমান ও কায়কোবাদের মামলা প্রত্যাহার না করলে অনশনসহ কঠোর কর্মসূচির হুশিয়ার হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের

টানা তিন সেঞ্চুরিতে তিলাকের বিশ্ব রেকর্ড

টানা তিন সেঞ্চুরিতে তিলাকের বিশ্ব রেকর্ড

সাময়িক বন্ধের পর খুললো যমুনা ফিউচার পার্ক

সাময়িক বন্ধের পর খুললো যমুনা ফিউচার পার্ক

জ্বালানি খাতে সাশ্রয় হয়েছে ৩৭০ কোটি টাকা: জ্বালানি উপদেষ্টা

জ্বালানি খাতে সাশ্রয় হয়েছে ৩৭০ কোটি টাকা: জ্বালানি উপদেষ্টা

গৌরনদীতে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে দোকান ঘরে বাস নিহত-১ আহত-৬

গৌরনদীতে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে দোকান ঘরে বাস নিহত-১ আহত-৬

কুড়িগ্রামের উলিপু‌রে ২ আ'লীগ নেতা গ্রেপ্তার

কুড়িগ্রামের উলিপু‌রে ২ আ'লীগ নেতা গ্রেপ্তার