যানজটে নাকাল রাজধানীবাসী

Daily Inqilab মাহির তাজোয়ার রাফিদ

১৩ অক্টোবর ২০২৪, ১২:০৫ এএম | আপডেট: ১৩ অক্টোবর ২০২৪, ১২:০৫ এএম

যানজটে নাকাল রাজধানীবাসী। ব্যস্ত এই শহরে জীবনের নানা তাগিদে প্রতিনিয়তই ছুটছে মানুষ। কিন্তু ঘর থেকে রাস্তায় বের হলেই যানজট পড়া যেন অবধারিত। এত যানজট হলে মানুষ কাজে বের হবে কীভাবে? সড়কজুড়েই ভয়ঙ্কর যানজট। যানজটের কবলে পড়ে চরম বিপাকে পড়ছেন রাজধানীবাসী। দীর্ঘক্ষণ অপেক্ষার পরও যানজট না কমায় বাস থেকে নেমে তারা পায়ে হেঁটে রওনা হন গন্তব্যে।

২০১৮ সালে ৩ এপ্রিল সড়ক দুর্ঘটনায় বিআরটিসির দুই বাসের মাঝে রাজীবের বিচ্ছিন্ন হাত আটকে থাকার ছবি দেশের মানুষকে কাঁদিয়েছিল। সেই বছরের ২৯ জুলাই শহীদ রমিজউদ্দিন ক্যান্টনমেন্ট কলেজের দুই শিক্ষার্থী জবালে নূর পরিবহনের বাসচাপায় নিহত হওয়ায় আন্দোলনে নেমেছিল শিক্ষার্থীরা। রাজীবের ঝুলে থাকা হাত আর দুই শিক্ষার্থীর মৃত্যু স্পষ্ট করে সড়কে অব্যবস্থাপনার চিত্র। সেসময় শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের কারণে সরকার সড়ক পরিবহন আইন-২০১৮ নামে একটি আইন পাশ করে। আইনটি আজও বাস্তবায়ন হয়নি। হাসিনা সরকারের পতনের দুই মাস পার হয়ে গেছে। স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন উঠেছে, পরিবহন সেক্টরে এখনও কেনো ফিরছে না শৃঙ্খলা?

কোনো কিছুরই যেন বালাই নেই। নগরীতে অটোরিকশার দৌরাত্ম্য, রাস্তায় দুই পাশে ভ্রাম্যমাণ দোকান, বর্ষাকালে রাস্তায় খানাখন্দের কারণে চলাচল দুষ্কর। রাস্তায় পর্যাপ্ত ট্রাফিক না থাকার ফলে যানজট লেগেই থাকে। বিশেষ করে সাইনবোর্ড, রায়েরবাগ, শনিরআখড়া, কাজলা, যাত্রাবাড়ি, সায়েদাবাদ, টিটিপাড়া, মেয়র হানিফ ফ্লাইওভার, ধানমন্ডি, ফার্মগেট, বিজয় সরণি, কারওয়ানবাজার সার্ক ফোয়ারা, বাংলামটর, তেজগাঁওসহ আরো বিভিন্ন এলাকায় যানজট চরম আকারে। যানজটের কারণে ঢাকা শহরে স্বাভাবিক ও স্বাচ্ছন্দ্যে যাতায়াত অসম্ভব হয়ে পড়েছে। যানজট শুধু আমাদের অমূল্য সময়ই কেড়ে নিচ্ছে না, নাগরিক জীবনেও ডেকে আনছে নানা দুর্ভোগ। সাধারণ মানুষ থেকে শুরু করে ছাত্র-শিক্ষক, কর্মকর্তা-কর্মচারী, শ্রমিক, পথচারী সবাই আজ যানজটের শিকার। এখন নির্ধারিত সময়ে গন্তব্যে পৌঁছানোর কোনো নিশ্চয়তা নেই।

বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের আমলে পরিবহন সেক্টর চাঁদামুক্ত, সন্ত্রাসমুক্ত, নিরাপদ, যাত্রীবান্ধব সড়ক পরিবহনে শৃঙ্খলা ফেরাতে নানামুখী উদ্যোগ নেয়ার ঘোষণা দিয়েছে ঢাকা সড়ক পরিবহন মালিক সমিতি। গত ৩ সেপ্টেম্বর জাতীয় প্রেস ক্লাবে আয়োজিত এক মতবিনিময় সভায় মালিক সমিতির নব গঠিত কমিটির আহ্বায়ক মো. সাইফুল আলম এই ঘোষণা দেন। কিন্তু তার সে ঘোষণা এক মাসেও বাস্তবায়ন শুরুই হয়নি। ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের ট্রাফিক বিভাগ মাঝেমধ্যে অভিযান চালাচ্ছে, জরিমানা করছে। কিন্তু অবৈধ যানের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিচ্ছে বলা হলেও বাস্তবে তা দৃশ্যমান নেই বললেই চলে। ৬ লাখ অবৈধ ব্যাটারি রিকশা ও ইজিবাইকের মধ্যে থেকে ২ থেকে ৩০০ আটক করেই পুলিশ কঠোরতার বার্তা দিচ্ছে, যা অনেকটাই হাস্যকর! বর্তমানে ধরি মাছ না ছুঁই পানি অবস্থায় ট্রাফিক ব্যবস্থা চলছে।

হাসিনার আমলে ডিএমপি কমিশনারের উপরি আয়ের সবচেয়ে বড় উৎস ছিল পরিবহন সেক্টর। প্রতি মাসে পরিবহনে চাঁদাবাজির কোটি টাকা যেতো ডিএমপি কমিশনারের পকেটে। এখন সেই উপরি আয় বন্ধ। ট্রাফিক পুলিশও উপরি আয় বন্ধের কারণে কাজে উৎসাহ পাচ্ছে না। যে কারণে তারা সক্রিয় হতে পারছে না। ট্রাফিক পুলিশ ইচ্ছা করলেই একদিনে পরিবহন সেক্টর তথা রাজধানীর রাজপথ যানজট মুক্ত করে ফিরিয়ে আনতে পারে স্বাভাবিক অবস্থায়। সেক্ষেত্রে অবৈধ রিকশা, ব্যাটারি রিকশা, ঢাকার বাইরের সিএনজি অটোরিকশাসহ কয়েক লাখ যান উচ্ছেদ করতে হবে। একই সাথে ফুটপাতও উচ্ছেদ করতে হবে। তাহলে শৃঙ্খলা ফিরতে বাধ্য।

বিশেষজ্ঞদের মতে, পরিবহন খাতের দায়িত্বপ্রাপ্ত সংস্থার লোকজন, পুলিশ, পরিবহন মালিক, শ্রমিকদের নিয়ে দুর্নীতির দুষ্ট চক্র গড়ে উঠেছে এক যুগের বেশি সময় ধরে। এই চক্র চায় না সড়ক যানজটমুক্ত হোক। এই প্রেক্ষাপটে সড়কে সুশাসন প্রতিষ্ঠা নতুন সরকারের বড় চ্যালেঞ্জ। সরকারের উচিত হবে এই দুষ্টচক্রকে ভেঙে দিতে আরো কঠোর হওয়া। এজন্য প্রয়োজনে সড়ক পরিবহন মন্ত্রণালয়ের অধীনে নতুন কমিটি গঠন করতে হবে। তা না হলে শাজাহান খানের অনুসারী শ্রমিকরাই নগরবাসীকে অতিষ্ঠ করে সরকারের অর্জনকে মøান করে। অন্তর্বর্তী সরাকরের উচিত এই ত্রাহি অবস্থা থেকে নাগরিক জীবনকে স্বাচ্ছন্দ্য, সাবলীল ও গতিশীল করে তুলতে যানজট সমস্যার সমাধান খুব দ্রুতই বের করা।

লেখক: সহ-সম্পাদক, দৈনিক ইনকিলাব
[email protected]


বিভাগ : সম্পাদকীয়


মন্তব্য করুন

HTML Comment Box is loading comments...

এই বিভাগের আরও

ট্রাম্প প্রশাসনের পররাষ্ট্রনীতি যুদ্ধ নাকি বন্ধুত্বের পক্ষে
মিথ্যা ন্যারেটিভ ভেঙ্গে দেয়া আমাদের ইতিহাসের দায়বদ্ধতার অংশ
বিনিয়োগ ও কর্মসংস্থানে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে
জাতীয়তাবাদী ও ইসলামী মূল্যবোধে বিশ্বাসী শক্তির মধ্যে দূরত্ব কাম্য নয়
সিন্ডিকেট ভাঙতে হবে
আরও

আরও পড়ুন

সচিবালয়ের গেটে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া-পুলিশের ফাঁকা গুলি

সচিবালয়ের গেটে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া-পুলিশের ফাঁকা গুলি

ফ্রান্সের উগ্র ডানপন্থী রাজনীতিবিদ মারি লা পেনের মৃত্যু

ফ্রান্সের উগ্র ডানপন্থী রাজনীতিবিদ মারি লা পেনের মৃত্যু

দুদক কার্যালয় থেকে গ্রেপ্তার তিন ভুয়া কর্মকর্তা রিমান্ডে, হত্যা মামলায় যুবলীগ নেতা সোহাগ রিমান্ডে,

দুদক কার্যালয় থেকে গ্রেপ্তার তিন ভুয়া কর্মকর্তা রিমান্ডে, হত্যা মামলায় যুবলীগ নেতা সোহাগ রিমান্ডে,

শিগগিরই চালের দাম কমে আসবে : বাণিজ্য উপদেষ্টা

শিগগিরই চালের দাম কমে আসবে : বাণিজ্য উপদেষ্টা

কুরস্কে ২৪ ঘন্টায় ইউক্রেনের ৪৮৫ সেনা নিহত

কুরস্কে ২৪ ঘন্টায় ইউক্রেনের ৪৮৫ সেনা নিহত

পশ্চিম তীরে বন্দুক হামলায় ৩ ইসরাইলি নিহত

পশ্চিম তীরে বন্দুক হামলায় ৩ ইসরাইলি নিহত

ঢাবিতে হাসিনার ‘ডামি নির্বাচন’ প্রদর্শনী

ঢাবিতে হাসিনার ‘ডামি নির্বাচন’ প্রদর্শনী

জুলাই গণহত্যা: হাসিনাসহ ৯৭ জনের পাসপোর্ট বাতিল

জুলাই গণহত্যা: হাসিনাসহ ৯৭ জনের পাসপোর্ট বাতিল

শিগগিরই চালের দাম কমে আসবে: বাণিজ্য উপদেষ্টা

শিগগিরই চালের দাম কমে আসবে: বাণিজ্য উপদেষ্টা

গাজায় ফিলিস্তিনিদের ত্রাণ সহযোগিতা দিচ্ছে হাফেজ্জী চ্যারিটেবল সোসাইটি

গাজায় ফিলিস্তিনিদের ত্রাণ সহযোগিতা দিচ্ছে হাফেজ্জী চ্যারিটেবল সোসাইটি

ট্রাম্প প্রশাসনের পররাষ্ট্রনীতি যুদ্ধ নাকি বন্ধুত্বের পক্ষে

ট্রাম্প প্রশাসনের পররাষ্ট্রনীতি যুদ্ধ নাকি বন্ধুত্বের পক্ষে

মিথ্যা ন্যারেটিভ ভেঙ্গে দেয়া আমাদের ইতিহাসের দায়বদ্ধতার অংশ

মিথ্যা ন্যারেটিভ ভেঙ্গে দেয়া আমাদের ইতিহাসের দায়বদ্ধতার অংশ

বিনিয়োগ ও কর্মসংস্থানে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে

বিনিয়োগ ও কর্মসংস্থানে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে

এক-পঞ্চমাংশ এইচ-১বি ভিসাই ভারতীয় সংস্থাগুলোর কাছে

এক-পঞ্চমাংশ এইচ-১বি ভিসাই ভারতীয় সংস্থাগুলোর কাছে

গ্রীনল্যান্ড সফরে যাচ্ছেন ট্রাম্প জুনিয়র

গ্রীনল্যান্ড সফরে যাচ্ছেন ট্রাম্প জুনিয়র

মক্কা-মদিনায় ভারী বৃষ্টিতে বন্যা

মক্কা-মদিনায় ভারী বৃষ্টিতে বন্যা

ভারতে চীনের পরিবর্তে বাড়ছে জাপানি বিনিয়োগ

ভারতে চীনের পরিবর্তে বাড়ছে জাপানি বিনিয়োগ

পশ্চিম তীরে ৩ ইসরাইলি নিহত

পশ্চিম তীরে ৩ ইসরাইলি নিহত

যুক্তরাষ্ট্র-কানাডা একীভূত করার প্রস্তাব ট্রাম্পের

যুক্তরাষ্ট্র-কানাডা একীভূত করার প্রস্তাব ট্রাম্পের

অস্ট্রিয়ায় সরকার গঠন করছেন অতি ডানপন্থি নেতা কিকল

অস্ট্রিয়ায় সরকার গঠন করছেন অতি ডানপন্থি নেতা কিকল