হৃদয়ে তাঁর নাম লেখা হয়ে আছে
০৬ নভেম্বর ২০২৪, ১২:০৫ এএম | আপডেট: ০৬ নভেম্বর ২০২৪, ১২:০৫ এএম
একজন মানুষ, যাকে অনেকেই চিনতো না, জানতো না তাঁর নাম, তিনি ছিলেন অগোচরে। কিন্তু যখন দেশ আক্রান্ত হলো শত্রুর রক্তক্ষয়ী ধ্বংসযজ্ঞে, যখন জনগণের আকাক্সক্ষা ছিল স্বাধীনতার আহ্বান, তখন তিনি আবির্ভূত হলেন ত্রাণকর্তার ভূমিকায়। বজ্রকণ্ঠে ঘোষণা দিলেন ‘ডব ৎবাড়ষঃ’ এটা কোনো বিচ্ছিন্ন বাক্য নয়, এটি ছিল প্রতিবাদের এক মন্ত্র, একটি নতুন ভোরের সূচনা, বহুল আকাক্সিক্ষত স্বাধীনতার ঘোষণা। তাঁর চেহারায় ছিল সাহসের দীপ্তি, আর চোখে রক্তের বদলে সোনালি স্বাধীনতার স্বপ্ন। নিজের জীবনকে বিপন্ন করে, তিনি সম্মুখযুদ্ধে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন দেশের জন্য, জাতির জন্য। তাঁর এই সাহসিক দেশপ্রেমে যে সংকল্প ও দৃঢ়তা ছিল, তা আজও আমাদের জাগ্রত করে, সেদিন মেজর জিয়াউর রহমান পরিণত হন একজন ব্যক্তি থেকে ইতিহাসে, একটি জাতির আকাক্সক্ষার বাস্তবায়নে। সেদিন তাঁর ডাকে যদি মানুষ স্বাধীনতার যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে না পড়তো, দেশ যদি স্বাধীন না হতো, তাহলে কি কোনোভাবেই তিনি বাঁচতে পারতেন দেশদ্রোহিতার অভিযোগ থেকে?
মুক্তিযুদ্ধের দিনগুলোতে তিনি ছিলেন এক প্রতীক, এক আদর্শ, যিনি দেখিয়েছেন কীভাবে আত্মত্যাগে জাগতে পারে স্বাধীনতার আদর্শ। আজ যখন দেখি কতগুলো মুখ আমাদের স্বাধীনতা নিয়ে কথা বলছে, তখন প্রশ্ন জাগে, শহীদ জিয়ার আত্মত্যাগের প্রতীক কি তাঁদের অন্তরে বিদ্যমান? তিনি ছিলেন একজন যোদ্ধা, একজন নেতা, কিন্তু সবচেয়ে বেশি ছিলেন একজন মানবতাবাদী। তাঁর চিন্তাভাবনা ছিল গভীর ও সুদূরপ্রসারী। তিনি জানতেন, বাঙালি জাতির ঐক্য ও সংহতির ভিত্তিতে নতুন জাতীয়তাবাদ প্রতিষ্ঠার প্রয়োজনীয়তা। তাঁর আকাক্সক্ষা ছিল একটি সামাজিক ও রাজনৈতিক পরিবেশ তৈরি করা, যেখানে ভিন্নভিন্ন সংস্কৃতি ও বিশ্বাসের মানুষ একত্রিত হয়ে একটি শক্তিশালী জাতি গঠনে কাজ করবে।
শহীদ জিয়ার মুক্তিযুদ্ধে অবদান থেকে শুরু করে দেশ পরিচালনা, পুরোটাই ছিল এক অসাধারণ গল্পের ধারাবাহিক পরম্পরা। দেশের জন্য যুদ্ধ করেছেন, দেশ স্বাধীন করেছেন, দেশ পরিচালনা করেছেন, দেশে উন্নয়ন ও উৎপাদনের রাজনীতি সূচনাও হয়েছে তাঁর হাত ধরেই, এরপরে দেশকে দিয়েছেন বহুদলীয় গণতন্ত্রের স্বাদ, করেছেন বাংলাদেশী জাতীয়তাবাদে বিশ্বাসী সংগঠন, বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল- বিএনপি।
প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের নেতৃত্বে বাংলাদেশে কৃষি উন্নয়নে যে বিপ্লব ঘটেছিল, তা সত্যিই প্রশংসনীয়। তাঁর খালখনন কর্মসূচি গ্রামের কৃষকদের জন্য এক নতুন দিগন্ত খুলে দিয়েছিল। জলাধারের সৃষ্টি এবং সেচব্যবস্থার মাধ্যমে কৃষির উৎপাদন বৃদ্ধি পায়, যা দেশের অর্থনীতিতে নতুন প্রাণ সঞ্চার করে।
তাঁর চিন্তা ও দূরদর্শিতার কারণে কৃষকরা শুষ্ক মৌসুমেও নিজেদের উৎপাদন বৃদ্ধির সুযোগ পেয়েছিল। এই উদ্যোগগুলো শুধু অর্থনৈতিক উন্নতি নয়, বরং সমাজের নি¤œস্তরের মানুষের আত্মনির্ভরতা এবং জীবনযাত্রার মানও উন্নত করেছিল। এটি ছিল একটি সামাজিক-অর্থনৈতিক ন্যায়ের বাস্তবায়ন, যা দেশের উন্নয়নে মৌলিক ভূমিকা রেখেছিল।
আজ আমাদের খালগুলো যখন মরে গেছে, তখন প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের চিন্তা আমাদের জন্য এক নতুন প্রেরণা হতে পারে। তাঁর দেখানো পথে ফিরে গিয়ে, কৃষির উন্নয়ন ও পানিসম্পদের সঠিক ব্যবহারের মাধ্যমে আমরা নতুন করে দেশের উন্নতির পথে এগোতে পারি। এটি হবে আমাদের জন্য একটি চূড়ান্ত লক্ষ্য, যা হবে শহীদ জিয়ার ভাবনা ও দৃষ্টিভঙ্গির প্রতি যথাযথ শ্রদ্ধা প্রদর্শন।
শহীদ জিয়ার ১৯ দফা কর্মসূচি বাংলাদেশের রাজনৈতিক ও সামাজিক উন্নয়নের একটি মহৎ দৃষ্টিভঙ্গি হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে। এই কর্মসূচির মাধ্যমে তিনি দেশের স্বাধীনতা সংরক্ষণের সংকল্প করেছিলেন, যা জাতির আত্মমর্যাদা ও সার্বভৌমত্বের একটি শক্তিশালী ভিত্তি তৈরি করেছে। কৃষি ও খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতার দিকে তাঁর দৃষ্টি ছিল স্পষ্ট। তিনি জানতেন, খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করা নাহলে একটি জাতির উন্নতি সম্ভব নয়। গৃহহীনদের জন্য আশ্রয় নির্মাণের মাধ্যমে তিনি মানবিক চিন্তার পরিচয় দিয়েছেন, যেখানে প্রতিটি মানুষের মৌলিক অধিকার নিশ্চিত করা ছিল তাঁর লক্ষ্য। তাঁর নেতৃত্বে, দেশ একটি সুষ্ঠু এবং সমৃদ্ধ সমাজ গঠনের পথে অগ্রসর হয়েছিল।
নারীর অধিকার সংরক্ষণ এবং তরুণদের জাতিগঠনে অংশগ্রহণের সুযোগ প্রদান ছিল প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের ১৯ দফা কর্মসূচির একটি বিশেষ দিক। তিনি সামাজিক ন্যায়ের এবং সমতার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন, যা সমাজের বিভিন্ন শ্রেণীর মধ্যে একসাথে কাজ করার সুযোগ সৃষ্টি করে। নারীদের ক্ষমতায়ন, শিক্ষা ও স্বাস্থ্যসেবার উন্নয়ন, এবং তরুণদের উদ্দীপনা বৃদ্ধির মাধ্যমে তিনি একটি অন্তর্ভুক্তিমূলক সমাজ গঠনের প্রেরণা যুগিয়েছেন। তাঁর চিন্তা-ভাবনা আমাদের সমাজের উন্নয়ন ও সমৃদ্ধির জন্য একটি আদর্শ হয়ে উঠেছে, যা আজও আমাদের পথ প্রদর্শন করছে। প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের এই মহৎ উদ্যোগগুলো শুধুমাত্র রাজনৈতিক পরিবর্তনই নয়, বরং একটি নতুন সমাজ গঠনের আহ্বান।
প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান বাংলাদেশের রাজনৈতিক ইতিহাসে এক নতুন অধ্যায় রচনা করেছিলেন, এক অভূতপূর্ব ফিনিক্স পাখির মতো। তিনি যে বহুদলীয় গণতন্ত্রের সূচনা করেছেন, তা আমাদের দেশে একটি উন্মুক্ত ও সমতা ভিত্তিক রাজনৈতিক পরিবেশ তৈরি করেছে। এই পরিবর্তনের ফলে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের জন্য মত প্রকাশের সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে, যা আমাদের নাগরিক জীবনে নতুন আশা ও উদ্যমের সঞ্চার করেছে। তাঁর নেতৃত্বে বাঙালির পরিচয় শুধু মাত্র সংস্কৃতি বা জাতির ভিত্তিতে নয়, বরং একটি সমন্বিত জাতীয় পরিচয়ে পরিণত হয়েছে। ‘আমরা বাংলাদেশী’ এই চেতনা আমাদের মধ্যে এক অভূতপূর্ব ঐক্যবোধ জাগিয়েছে, যা আজও আমাদের গর্বের উৎস।
শহীদ জিয়ার দেশ উন্নয়নের একটা বড় অংশ ছিল জনশক্তি রপ্তানি। তিনি মধ্যপ্রাচ্য ও অন্যান্য মুসলিম দেশের প্রতি জনশক্তি রপ্তানির ঐতিহাসিক উদ্যোগ নেন। শহীদ জিয়াউর রহমানের নেতৃত্ব বাংলাদেশে একটি পরিবর্তনশীল যুগের সূচনা করেন, বিশেষ করে আরব ও মুসলিম বিশ্বের সঙ্গে তার সম্পর্ক গভীর করার মাধ্যমে, বিশেষ করে সৌদি আরবের সঙ্গে। তার প্রচেষ্টাগুলি আন্তর্জাতিক শ্রমবাজারে একটি বাংলাদেশি শ্রমশক্তি প্রতিষ্ঠা করতে সাহায্য করে এবং দেশের অর্থনীতিতে বিপ্লব ঘটায়, যা আমাদের যুবক-যুবতীদের বিদেশে উপার্জন করতে সক্ষম করে, ফলে জাতির মর্যাদা ও পরিচয় বৃদ্ধি পায়।
‘সবুজ বিপ্লব’ আমাদের মনে করায় সেই সংগ্রামী মুহূর্তগুলো, যখন ১৯৭৪ সালে ৭ কোটি মানুষের খাবার উৎপাদন সম্ভব হয়নি। অথচ ১৯৮০ সালে, প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের দূরদর্শী নেতৃত্বে, বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ চাহিদা মিটিয়ে নেপালে চাল রফতানি করতে সক্ষম হয়েছিল। তিনি খাদ্য উৎপাদনের পাশাপাশি যুবকদের কর্মসংস্থানের জন্যও নিরলস চেষ্টা করেছেন, যুব মন্ত্রণালয় ও যুবউন্নয়ন কেন্দ্র প্রতিষ্ঠা করে। সেখানে আজকের যুবকেরা প্রশিক্ষণ নিয়ে দক্ষ জনশক্তিতে পরিণত হচ্ছে। নারী ও শিশুর উন্নয়নে তার অসাধারণ উদ্যোগগুলোও আমাদের বিস্মিত করে; নারী ও শিশুমন্ত্রণালয় ও শিশু একাডেমি প্রতিষ্ঠা করে তিনি উন্নয়নের পথে নতুন দিগন্ত উন্মোচন করেছেন। বাংলাদেশের অর্থনীতির প্রাণরসদ রেডিমেড গার্মেন্ট শিল্পের বিকাশেও তার অবদান অপরিসীম। কাঁচামাল ও যন্ত্রপাতির সহজ আমদানির জন্য ব্যাক-টু-ব্যাক এলসি ব্যবস্থা করে তিনি শিল্পকে নতুন প্রাণ দিয়েছেন।
প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের নেতৃত্বে বাংলাদেশের রাজনৈতিক পরিবর্তন ছিল জাতিগত আত্মবিশ্বাসের পুনর্জাগরণের এক আন্দোলন। তিনি আমাদের দেখিয়েছিলেন কীভাবে একটি স্বাধীন ও উন্নত বাংলাদেশ গড়া সম্ভব, যেখানে প্রতিটি নাগরিকের স্বপ্ন বাস্তবায়িত হবে। আজ যখন আমরা তাঁর অবদান স্মরণকরি, তখন হৃদয়ে বেঁচে থাকে তাঁর স্বপ্ন একটি উন্নত, সাম্যবাদী ও সমৃদ্ধ বাংলাদেশ। তাঁর আত্মত্যাগ ও নেতৃত্বের জন্য আমরা চিরকাল কৃতজ্ঞ; শহীদ জিয়ার অসামান্য কাজগুলো আমাদের অনুপ্রেরণা দেয় এবং জাতির শক্তি ও দৃঢ়তার ইতিহাস চিরকাল জিঁইয়ে রাখবে।
তাঁর স্মৃতির প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জানিয়ে বলি, আজকে এই দিনে শহীদ জিয়া আমাদের মাঝে না থাকলেও রয়ে গেছে তাঁর আদর্শ, রয়ে গেছে তাঁর হাতে গড়া দল বিএনপি, যা মানুষের মণিকোঠায় জড়িয়ে আছে স্বাধীনতার ধারক ও সার্বভৌমত্বের বাহক হয়ে। শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের নাম আমাদের হৃদয়ে চিরকাল অমর হয়ে থাকবে, তাঁর স্বপ্ন আমাদের পথ দেখাবে।
লেখক: রাজনৈতিক বিশ্লেষক
বিভাগ : সম্পাদকীয়
মন্তব্য করুন
আরও পড়ুন
নিষেধাজ্ঞা কাটিয়ে আর্জেন্টিনা দলে ফিরলেন মার্টিনেজ
ইসরায়েলি প্রতিরক্ষামন্ত্রী গ্যালান্টকে বরখাস্ত করলেন নেতানিয়াহু
শমী কায়সার গ্রেপ্তার
শের এ বাংলা মেডিকেল কলেজের ৫৬তম প্রতিষ্ঠঅ বাষির্কী উপলক্ষে মিলনমেলা ২০ নভেম্বর
বাংলাদেশ-আফগানিস্তান সিরিজের স্পন্সর ওয়ালটন
সাভারে অভিযানের পর বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে ভেজাল শিশু খাদ্য তৈরী কারখানা
সম্মান বজায় রেখে কাজ করুক সেনাবাহিনী প্রত্যাশা সাধারন মানুষের
যশোরবাসীর দুর্ভোগ আর প্রতারণার নাম পদ্মাসেতু রেলপ্রকল্প!
আপনার প্রেমিকা খুব দামি গিফট চান! তাঁকে কী ভাবে সামলে নেবেন?
টেকনাফে ৫০হাজার ইয়াবাসহ মিয়ানমারের নাগরিক আটক।
ফ্যাসিবাদের বিচার এবং পাচারকৃত টাকা ফিরিয়ে আনতে হবে
কোনো পরাশক্তি নয়, জনগণের ঐক্যই বাংলাদেশের মূল শক্তি
শিল্প প্রতিষ্ঠান চালু রাখার পদক্ষেপ নিতে হবে
প্রত্যেক বন্দীর জন্য মিলিয়ন ডলার দিতে প্রস্তুত নেতানিয়াহু
অন্তর্বাস পরে হাঁটা সেই ইরানি তরুণী মানসিকভাবে অসুস্থ
মৃত প্রতিদ্বন্দ্বীর বিরুদ্ধে লড়েছিলেন প্রেসিডেন্ট
মণিপুরে এবার নাগাদের সাথে সংঘাত মৈতৈদের
যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে এবার বাংলা ব্যালট পেপার সংযুক্ত
আগাম ভোট দিয়েছেন ৮ কোটির বেশি মানুষ
মার্কিন নির্বাচনের আগে উত্তর কোরিয়ার প্রচুর মিসাইল পরীক্ষা