সেনাপ্রধানের বক্তব্যে মিশ্র প্রতিক্রিয়া
২৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ১২:০১ এএম | আপডেট: ২৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ১২:০১ এএম

প্রথম বারের মত রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় ‘জাতীয় শহীদ সেনা দিবস’ পালন উপলক্ষে ২৫ ফেব্রুয়ারিতে রাওয়া কনভেনশন হলে আয়োজিত অনুষ্ঠানে সেনাপ্রধান ওয়াকার-উজ-জামানের দেয়া বক্তব্য নিয়ে দেশে মিশ্র প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়েছে। সেনাপ্রধান তাঁর বক্তব্যে যে সতর্ক বার্তা দিয়েছেন তা কাদের উদ্দেশ্যে দিয়েছেন স্পষ্ট না হলেও দেশের রাজনৈতিক দলগুলোর সাম্প্রতিক বিতন্ডা এবং বিভক্তির কথা স্মরণ রেখে বলা যায়, তা দেশের রাজনৈতিক দল, সরকার এবং সব অংশীজনদের উদ্দেশ্যেই বর্তায়। তবে দেশের চলমান বাস্তবতায় সেনা প্রধানও দায় এড়াতে পারেননা। বিশেষত আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নয়ন, নিরাপত্তাহীনতা এবং বিশৃঙ্খলা নিরসনে মেজিস্ট্রেসি পাওয়ারসহ সেনাবাহিনী মোতায়েন সত্ত্বেও পরিস্থিতির অবনতিতে সেনাবাহিনীর ভূমিকা ও আন্তরিকতা নিয়ে জনমনে এক ধরণের সংশয় সৃষ্টি হতেই পারে। এহেন বাস্তবতায় রাজনৈতিক দলগুলোর নিজেদের মধ্যে বিভক্তি ও দলাদলি পরিস্থিতির আরো অবনতি ঘটাতে পারে। সেনাপ্রধানের বক্তব্যে এ বিষয়টি বিশেষ গুরুত্বসহকারে উঠে এসেছে। তার এই সতর্ক বার্তা যথার্থ। তবে তার বক্তব্যের ভাব-ভঙ্গিম সম্বোধন ও শারিরি ভাষা বা বডি ল্যাঙ্গুয়েজ নিয়ে কেউ কেউ মিশ্র প্রতিক্রিয়াও জানিয়েছেন। পিলখানা হত্যাকান্ড নিয়ে সেনাপ্রধান এই হত্যাকান্ডের জন্য সাবেক বিডিআর সদস্যদেরই দায়ী করেছেন। এটুকু বলাই যথেষ্ট নয়। এই হত্যাকান্ডের সাথে প্রতিবেশি দেশের ষড়যন্ত্র, তৎকালীন সরকারের মন্ত্রী-এমপিসহ প্রধানমন্ত্রীর সংশ্লিষ্টতার যে সব অভিযোগ গত ১৫ বছর ধরে এসেছে তা’ অমূলক বা ভিত্তিহীন বলে উড়িয়ে দেয়ার সুযোগ নেই। ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে শেখ হাসিনা ভারতে পালিয়ে যাওয়ার পর ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অর্ন্তবর্তী সরকারের গঠিত স্বাধীন তদন্ত কমিশনগুলোর মধ্যে পিলখানা হত্যাকান্ড তদন্ত কমিশন অন্যতম গুরুত্ব বহন করছে। দেশের মানুষ আশা করে, পিলখানা হত্যাকান্ডে কারা জড়িত, কারা সহযোগী, বাইরের কোনো শক্তি জড়িত কিনা, তা খুঁজে বের করার দায়িত্ব তদন্ত কমিশনের। এমতাবস্থায় সেনাপ্রধানের বক্তব্য স্বাধীন তদন্ত কমিশনের কাজে প্রভাব সৃষ্টি করবে কিনা, কেউ কেউ এমন কথাও বলছেন।
এ কথা অনস্বীকার্য যে, ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের চুড়ান্ত বিজয় এবং পরবর্তী ক্রান্তিকালে সেনাপ্রধান ওয়াকার উজ-জামান গুরুত্বপূর্ণ ভ’মিকা রেখেছেন। শুরু থেকেই তিনি একাধিকবার নির্বাচনের রোডম্যাপ এবং গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় উত্তরণের মধ্য দিয়ে সেনাবাহিনীকে ব্যারাকে ফিরিয়ে নেয়ার অঙ্গিকার করেছেন। গণতন্ত্রের প্রতি তার কমিটমেন্ট, আইনশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণ, রাজনৈতিক-প্রশাসনিক সংস্কার, পিলখানা হত্যাকান্ডসহ স্বাধীন তদন্ত কমিশনের তদন্ত ও বিচার কার্যক্রম এগিয়ে নিতে অন্তর্বর্তী সরকারের সহায়ক শক্তি হিসেবে সেনাপ্রধানের ভূমিকা জাতি নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করছে। এসব ক্ষেত্রে যে কোনো শৈথিল্য কিংবা ব্যর্থতাকে সহজভাবে মেনে নেয়ার সুযোগ সংকীর্ণ। নির্বাচন প্রশ্নে কোনো কোনো রাজনৈতিক দলের তাড়াহুড়া যেমন জনমনে সংশয় সৃষ্টি করে, একইভাবে সেনাপ্রধানের রোডম্যাপ ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের বার্তাও মিশ্র বার্তা প্রদান করছে। বাংলাদেশে স্বৈরশাসন হটিয়ে ক্ষমতার শান্তিপূর্ণ পালাবদল ও গণতন্ত্রে পদার্পণে সেনাবাহিনীর প্রশংসনীয় ভূমিকার প্রশ্নে জেনারেল ওয়াকার উজ-জামানই প্রথম নন। জেনারেল জিয়াউর রহমানের কথা বাদ দিলেও, নব্বইয়ের গণআন্দোলনে সামরিক শাসক জেনারেল এরশাদের পদত্যাগ এবং সুষ্ঠু ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন বাস্তবায়নে তৎকালীন সেনাপ্রধান জেনারেল নুরুদ্দিন খানের ভ’মিকা অবিস্মরণীয়। জাতির ক্রান্তিকালে জেনারেল নুরুদ্দিন জনসমক্ষে না এসেই পর্দার অন্তরালে থেকে জনগণের পক্ষে দাঁড়িয়ে দেশকে গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় উত্তরণে গুরুত্বপূর্ণ ভ’মিকা রেখে দেশপ্রেমের অনন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছিলেন । শেখ হাসিনার দীর্ঘ স্বৈরশাসনের বিরুদ্ধে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থান, হাজার হাজার মানুষের রক্তদান জাতিকে এক অভ’তপূর্ব বাস্তবতার মুখোমুখি দাঁড় করিয়েছে। বিশেষ আইনশৃঙ্খলা ও নিরাপত্তা পরিস্থিতি, দেশি-বিদেশি চক্রান্ত, ষড়যন্ত্র ও হুমকির মুখে সেনাবাহিনীর প্রতিশ্রুতি জাতিকে নতুন সম্ভাবনার পথে এগিয়ে দিতে পারে। সেনাপ্রধান ওয়াকার উজ-জামানের কাছে দেশের মানুষের প্রত্যাশা অনেক বেশি।
নির্বাচনের রোডম্যাপ ও টাইমলাইন নিয়ে বড় ধরণের কোনো ডিভাইড না থাকলেও স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনে দেড় দশক ধরে জোটবদ্ধ ও রাজপথে ঐক্যবদ্ধ থাকা প্রধান রাজনৈতিক দলগুলোর সাম্প্রতিক অবস্থান জনমনে কিছুটা বিভ্রান্তির সৃষ্টি করছে। সেনাপ্রধানের বক্তব্যে তারই প্রতিফলন ঘটেছে। তিনি বলেছেন, নিজেরা কাঁদা ছোঁড়াছুড়ি, মারামারি, কাটাকাটি করলে দেশ ও জাতির স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব বিপন্ন হবে। সন্দেহ নেই, বিষয়টি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। সেনাপ্রধানের কাছ থেকে স্বাধীন-সার্বভৌমত্ব সুরক্ষঅয় দৃঢ় অঙ্গিকারের কথাই শুনতে চায় মানুষ। তারা স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্বের অতন্দ্র প্রহরী সেনাবাহিনীকে সব রাজনৈতিক বিতর্কের ঊর্দ্ধে দেখতে চায়। আভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক বিভক্তির প্রশ্নে সেনাপ্রধানের কাছ থেকে এমন নেতিবাচক বক্তব্য প্রত্যাশিত নয়। বিশেষ রাজনৈতিক বাস্তবতায় নানাবিধ সংস্কার ও নির্বাচন সামনে রেখে দেশে কেউ যদি অস্বাভাবিক পরিস্থিতি সৃষ্টি করে ঘোলা পানিতে মাছ শিকার করতে চায়, কিংবা গুম-খুন, গণহত্যা ও লাখ লাখ কোটি টাকা লুণ্ঠনের বিচার প্রক্রিয়া নিশ্চিত হওয়ার আগেই পতিত স্বৈরাচারের দোসরদের রাজনীতিতে পুনর্বাসিত করার এজেন্ডা বাস্তবায়িত করতে চায়, ছাত্র-জনতা ও ফ্যাসিবাদ বিরোধী জনগণ তা মেনে নেবে না। সেনাবাহিনীকে এ ক্ষেত্রে অবশ্যই তার দৃঢ় অবস্থান ও অঙ্গিকার সুরক্ষা করতে হবে। সেনাবাহিনী কোনো বিচ্ছিন্ন বা বাইরের শক্তি নয়। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি উত্তরণে সেনাবাহিনী অর্ন্তবর্তী সরকারের সহায়তায় কাজ করছে। পিলখানা হত্যার বিচার থেকে শুরু করে সামগ্রিক অবস্থার উত্তরণ ও আগামি নির্বাচনের উপর জাতির ভবিষ্যত অনেকাংশে নির্ভরশীল। এসব ক্ষেত্রে কোনো পক্ষকে সতর্কবার্তা দিয়েই সেনাপ্রধানের দায়িত্ব শেষ হয়ে যায় না। বিদ্যমান পরিস্থিতি উত্তরণে দেশের মানুষ সেনাপ্রধানসহ সংশ্লিষ্ট সকলের সদিচ্ছা ও আন্তরিক প্রচেষ্টার প্রতিফলন দেখতে চায়।
বিভাগ : সম্পাদকীয়
মন্তব্য করুন
আরও পড়ুন

ফিলিস্তিনে গণহত্যার প্রতিবাদে নোবিপ্রবিতে সংহতি সমাবেশ ও মানববন্ধন

বান্দরবানে গভীর রাতে বিএনপির অফিস ভাংচুর করেছে সন্ত্রাসারী

শিশু গুলীবিদ্ধের ঘটনা আইয়্যামে জাহেলিয়াতের বর্বরতাকে হার মানিয়েছে: রেজাউল করিম

‘গাজার মুসলিমরা আজ অভিভাবক শূন্য, মুসলিম নেতারা ইসরায়েলের হাতে জিম্মি’

বৈষম্য বিরোধী কর্মচারী ঐক্য ফোরামের কার্য-নিবাহী কমিটি ঘোষণা

দাউদকান্দিতে বসতঘর ও রান্নাঘর দুর্বৃত্তদের আগুনে পুড়ে ছাই

নগরকান্দায় যৌথ বাহিনীর অভিযানে অস্ত্র সহ গ্রেফতার-৪

১১ দিন পর কড়ইতলী-গোবরাকুড়া স্থলবন্দরে আমদানি-রপ্তানি শুরু

পাঁচবিবিতে ফিলিস্থিনে ইসরাইলী হামলার প্রতিবাদে ছাত্রদলের বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ

বিরলে একটি রাস্তা নির্মাণকে কেন্দ্র করে দু’পক্ষের বিরোধ চরমে যে কোন মহুর্তে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষের আশংকা

প্রশিক্ষণ সঠিক ভাবে গ্রহন করলে দক্ষ গ্রাম পুলিশ গড়া সম্ভব- সিলেটে মহাপরিচালক আব্দুল কাইয়ূম

মালয়েশিয়া এয়ারলাইন্সের বাংলাদেশ কান্ট্রি ম্যানেজার হিসেবে যোগ দিলেন স্বর্ণা দাস

ঝিনাইদহে ভ্রাম্যমাণ আদালতের বিচারককে অবরুদ্ধ করে যাত্রীকে মারধর ১০ শ্রমিক বহিস্কার

বন্দরে অস্ত্র ঠেকিয়ে সাংবাদিক ব্যবসায়ীকে অপহরনের ঘটনায় সংবাদ সম্মেলন

জকিগঞ্জে যুবদলের উদ্যোগে ফিলিস্তিনের গাজায় গণহত্যা বন্ধের দাবীতে বিক্ষোভ

বরগুনায় পুলিশ কনস্টেবল চাকরিতে ঘুষ বাণিজ্য, ২ প্রতারক কারাগারে

কুলাউড়ায় পুলিশের উপর হামলা ও আসামী ছিনিয়ে নেয়ার অভিযোগ,আটক ৪

প্রতিবেশীকে বাঁচাতে গিয়ে হামলার শিকার-থানায় অভিযোগ

নাগেশ্বরী উপজেলা ও পৌর বিএনপির আহ্বায়ক কমিটি অনুমোদন

জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে নেই তাসকিন, নতুন মুখ তানজিম