উগ্রপন্থা পরিহার ও নিয়ন্ত্রণ করতে হবে

Daily Inqilab ইনকিলাব

০৯ মার্চ ২০২৫, ১২:১৪ এএম | আপডেট: ০৯ মার্চ ২০২৫, ১২:১৪ এএম

গত কয়েক দিনে রাজধানীতে বেশ কিছু অনাকাক্সিক্ষত ঘটনাকে কেন্দ্র করে বিশৃঙ্খল পরিস্থিতি সৃষ্টির আলামত পরিলক্ষিত হয়েছে। বিশেষ করে লালমাটিয়ায় প্রকাশ্যে দুই নারীর প্রকাশ্যে ধুমপানকে কেন্দ্র করে তাদের ওপর হামলা ও শাহবাগে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নারী শিক্ষার্থীর সাথে অযাচিত আচরণ দেশের মানুষকে বিচলিত করেছে। অবাধে চলাফেরার ক্ষেত্রে নারীদের নিরাপত্তার বিষয়ে উদ্বেগ সৃষ্টি হয়েছে। এ নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম থেকে শুরু করে রাজপথে প্রতিবাদ মিছিল হয়েছে। এসব ঘটনা সরকারের জন্য অত্যন্ত বিব্রতকর। এর মধ্যে মাজার ভাঙা, ওরশ-মাহফিলে হামলার মতো ঘটনাও ঘটেছে। পরিসংখ্যান অনুযায়ী, গত ছয় মাসে ৮০টি মাজারে হামলার ঘটনা ঘটেছে। এর পাশাপাশি বাংলাদেশের চিরায়ত কৃষ্টি ও সংস্কৃতি বিষয়ক অনুষ্ঠানে বাধা, নারী ফুটবল দলকে খেলতে না দেয়া, শোবিজের তারকাদের শো রুম উদ্বোধনে বাধাসহ নানা অপ্রীতিকর ও অগ্রহণযোগ্য ঘটনা ঘটেছে। এর মধ্যে গত শুক্রবার জুমআর নামাজের পর বায়তুল মোকাররমের উত্তর গেটে নিষিদ্ধ হিজবুত তাহরীর সমাবেশ ও মিছিল করা নিয়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সাথে সংঘর্ষের ঘটনাও ঘটেছে।

ছাত্র-জনতার আন্দোলনে ফ্যাসিস্ট হাসিনার পতনের পর দেশে অবাধ ও মুক্ত মতপ্রকাশের পরিবেশ সৃষ্টি হয়েছে। এই মুক্ত পরিবেশের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হিসেবে উল্লেখিত যেসব ঘটনা ঘটেছে, তা অতি উৎসাহী একশ্রেণীর মানুষের কাজ এবং এর পেছনে ষড়যন্ত্র রয়েছে। হাসিনার পতনের পর তার ও মোদির যৌথ প্রযোজনায় ষড়যন্ত্র সিরিজ চলেছে। ফ্যাসিবাদবিরোধী সকল দল ও শক্তির সাহায়তায় অন্তর্বর্তী সরকার সেগুলো মোকাবেলা করেছে। গত কিছুদিন ধরে ষড়যন্ত্র বিভিন্ন ফরমেটে ও ঢংয়ে প্রকাশিত হচ্ছে। তৌহিদী জনতার নাম দিয়ে একটি শ্রেণী এমনসব অপকর্ম ও অঘটন ঘটাচ্ছে, যা দেশের ভাবমর্যাদা চরমভাবে ক্ষুণœ হচ্ছে। তারা টার্গেট করে যেসব ঘটনা ঘটিয়েছে, তার মাধ্যমে বিশ্বে বাংলাদেশ সম্পর্কে ভুল বার্তা যাচ্ছে, যা ফ্যাসিস্ট হাসিনা মনেপ্রাণে চাচ্ছে। এর মাধ্যমে এ বার্তা যাচ্ছে যে, হাসিনার পতনের পর বাংলাদেশে মৌলবাদ বা জঙ্গীবাদ মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে। ক্ষমতায় থাকতে ঠিক এ কাজটিই হাসিনা করতেন। জঙ্গী দমনের নাটক করে এবং তা দমনের নামে হত্যাযজ্ঞ চালিয়ে বিশ্বে এই বয়ান প্রচার করতেন, বাংলাদেশে মৌলবাদ ও জঙ্গীদের উত্থান আমি কঠোর হস্তে দমন করছি। জঙ্গীবাদ ঠেকাতে হলে তাকেই ক্ষমতায় থাকতে হবে। দেখা যাচ্ছে, হাসিনা যে জঙ্গী কার্ড খেলে সাড়ে ১৫ বছর ধরে ক্ষমতাকে সুসংহত করেছে, সেই বিষয়টিকেই একটি শ্রেণী মঞ্চস্থ করার প্রক্রিয়া চালাচ্ছে। এতে কার লাভ হচ্ছে? লাভ হচ্ছে হাসিনার, ভারতের ও ইসলামফোবিয়ায় আক্রান্ত যুক্তরষ্ট্রাষ্ট্র ও পশ্চিমা দুনিয়ার। এটি যে, কোনো না কোনো পন্থায় সূক্ষ্ম ষড়যন্ত্র ও পরিকল্পনার মাধ্যমে করা হচ্ছে এবং কারা করছে, তা বুঝতে বাকি থাকে না। ইসলামের সহনশীলতা ও মধ্যপন্থা পরিহার করে কারা উগ্রবাদী এমন আচরণ করে, তা সচেতন মানুষ মাত্রই জানে। তৌহিদী জনতার নামে মব তৈরি করে যাকে তাকে যেখানে সেখানে হামলা করা সন্ত্রাসী কার্যক্রম ছাড়া কিছু নয়। ইতোমধ্যে এই তৌহিদী জনতার মধ্যে থেকে কারা এমন ন্যাক্কারজনক ঘটনা ঘটাচ্ছে, তাদের পরিচয় পত্রপত্রিকা ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রকাশিত হতে শুরু করেছে। তাদের প্রায় প্রত্যেকের ব্যাকগ্রাউন্ড হয় আওয়ামী লীগের না হয়, উগ্রবাদী কোনো সংগঠনের। ফলে তৌহিদী জনতা যে একটি মতলবি ব্যানার, তাতে সন্দোহ নেই। এ ধরনের ব্যানার বলে কিছু নেই। ২০০৯ সালে সন্ত্রাসবিরোধী আইনে নিষিদ্ধ হিযবুত তাহরী কিভাবে প্রাকাশ্যে সমাবেশ ও মিছিল করে, সেটাও এখন বড় প্রশ্ন হয়ে দেখা দিয়েছে। এক্ষেত্রে সরকারের গোয়েন্দা ব্যর্থতা যে সুস্পষ্ট, তাতে সন্দেহ নেই। কারণ, বেশ কিছুদিন ধরে সংগঠনটি রাজধানীর গুরুত্বপূর্ণ স্থানসহ সর্বত্র ৭ মার্চ সমাবেশ ও মিছিল করার কথা পোস্টার সাঁটিয়ে জানান দিয়েছে। তারপরও তারা কীভাবে সংগঠিত হয়ে সমাবেশ ও মিছিল করতে পারে, এ প্রশ্ন ওঠা স্বাভাবিক এবং এতে গোয়েন্দ ব্যর্থতা রয়েছে। পুলিশ যথেষ্ট ধৈর্যের পরিচয় দিয়ে তাদের মোকাবেলা করেছে। তবে ম্যাজেস্ট্রেসি ক্ষমতা থাকা সত্ত্বেও সেনাবাহিনী তেমন কোনো ভূমিকা পালন করেনি বলে পত্রপত্রিকার প্রতিবেদন থেকে জানা যায়। অভিযোগ রয়েছে, হিযবুত তাহরীর ভোবে ঘোষণা দিয়ে মাঠে নামার পেছনে ভারতের প্ররোচনা রয়েছে। সংগঠনটি দেশেই নয়, বিশ্বের বিভিন্ন দেশেও নিষিদ্ধ। এরকম নিষিদ্ধ একটি সংগঠন কীভাবে কর্মসূচী নিয়ে মাঠে নামে সেটাই প্রশ্ন।

হাসিনার পতনের পর নতুন বাংলাদেশ গড়ার যে সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে, যতই দিন যাচ্ছে, তাতে নানা ষড়যন্ত্র ও বাধাবিপত্তি গজিয়ে উঠছে। ইসলামের নামে উগ্রবাদী আচরণ এবং নানা অপকর্ম করে দেশকে বিশ্বে একটি ইসলামী মৌলবাদী বা জঙ্গী দেশ হিসেব উপস্থাপনের প্রেক্ষাপট সৃষ্টির পায়তারা করা হচ্ছে। এটি বন্ধ করা না হলে বিশ্বে দেশের ভাবমর্যাদা বিনষ্ট হবে। দেশের শৃঙ্খলা নষ্ট হবে। আইনশৃঙ্খলার অবনতি ও নিরাপত্তাহীনতা সৃষ্টি হবে। ইতোমধ্যে যুক্তরাষ্ট্র পররাষ্ট্রনীতিতে ব্যাপক পরিবর্তন এসেছে এবং আসছে। এর প্রভাব আমাদের উপরও অনিবার্যভাবে পড়বে যদি এসব উগ্রবাদী কর্মকা- বন্ধ করতে না পারি। ইসলামের নামে যারা অসহনশীল ও উগ্র আচরণ করছে, তারা মোটেও ভালো কাজ করছে না। বুঝে বা না বুঝে দেশের বিরুদ্ধে কাজ করছে। এ ব্যাপারে দেশের আলেম-ওলামা ও ইসলামী চিন্তাবিদরা তাদের সুচিন্তিত পরামর্শ ও উপদেশ দিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে সহায়তা করতে পারেন। হাজার বছর ধরে আমাদের দেশ সহনশীল, শান্তিপূর্ণ ও সহমর্মী দেশ হিসেবে পরিচিত। এখানে ধর্ম নিয়ে কোনো বাড়াবাড়ি নেই। প্রত্যেকেই নিজস্ব মূল্যবোধ ও নৈতিকতার মধ্যে স্বচ্ছন্দে বসবাস করে। এখানে ছন্দপতন ও ব্যাঘাত সৃষ্টির সুযোগ নেই। দেশে যাতে আর কোনো অনাকাক্সিক্ষত ও অনাহুত ঘটনা না ঘটে, এ ব্যাপারে অন্তর্বর্তী সরকারকে সচেতন ও তৎপর থাকতে হবে। যারাই কোনো উসিলা দিয়ে অপরাধমূলক কর্মকা- করবে, তাদের আইনের আওতায় আনতে হবে। বিশ্বে দেশের ভাবমর্যাদা ধরে রাখতে কঠোর অবস্থান নেয়ার বিকল্প নেই।

 


বিভাগ : সম্পাদকীয়


মন্তব্য করুন

HTML Comment Box is loading comments...

এই বিভাগের আরও

স্কাউট আন্দোলন জোরদার করতে হবে
ধর্মনিরপেক্ষতা ও সমাজতন্ত্র : শহীদ জিয়া ও বেগম জিয়ার বিএনপি এবং আজকের বিএনপি
গাজাবাসীর ডাকে নো ওয়ার্ক নো স্কুল কর্মসূচি
মিয়ানমারে ভূমিকম্প এবং আমাদের ভয়
ড. মুহাম্মদ ইউনূসের উচিৎ কথা
আরও
X

আরও পড়ুন

ইসরায়েলের হামলা বন্ধে জাতিসংঘকে কার্যকর ভূমিকা নিতে হবে-কাজী শিপন

ইসরায়েলের হামলা বন্ধে জাতিসংঘকে কার্যকর ভূমিকা নিতে হবে-কাজী শিপন

সিরিয়া ইস্যুতে যুক্তরাষ্ট্র, ইসরাইল ও তুরস্ক চুক্তি করবে, আশাবাদ ট্রাম্পের

সিরিয়া ইস্যুতে যুক্তরাষ্ট্র, ইসরাইল ও তুরস্ক চুক্তি করবে, আশাবাদ ট্রাম্পের

বনফুল শোরুমে ইসরায়েলি পণ্য বিক্রি না করার সিদ্ধান্ত

বনফুল শোরুমে ইসরায়েলি পণ্য বিক্রি না করার সিদ্ধান্ত

৪৬তম বিসিএস লিখিত পরীক্ষা পেছাতে পিএসসিতে পরীক্ষার্থীদের অবস্থান

৪৬তম বিসিএস লিখিত পরীক্ষা পেছাতে পিএসসিতে পরীক্ষার্থীদের অবস্থান

নাসার সঙ্গে আর্টেমিস চুক্তি সাক্ষর করল বাংলাদেশ

নাসার সঙ্গে আর্টেমিস চুক্তি সাক্ষর করল বাংলাদেশ

রাজশাহীর চারঘাটে মদপানে দু’জনের মৃত্যু

রাজশাহীর চারঘাটে মদপানে দু’জনের মৃত্যু

১১ জেলেকে ট্রলারসহ অপহরণ আরাকান আর্মির

১১ জেলেকে ট্রলারসহ অপহরণ আরাকান আর্মির

ইসরায়েলবিরোধী বিক্ষোভে ভাঙচুর-লুটপাটে চার মামলা, গ্রেপ্তার ৫৬

ইসরায়েলবিরোধী বিক্ষোভে ভাঙচুর-লুটপাটে চার মামলা, গ্রেপ্তার ৫৬

আনফিল্ডেই থাকছেন ফন ডাইক

আনফিল্ডেই থাকছেন ফন ডাইক

সব সরকারি হাসপাতালে চালু হবে ফার্মেসি, স্বল্পমূল্যে মিলবে ওষুধ

সব সরকারি হাসপাতালে চালু হবে ফার্মেসি, স্বল্পমূল্যে মিলবে ওষুধ

স্যাট ফুটসাল চ্যাম্পিয়নশিপে উজবেকিস্তানকে হারাল ইরান

স্যাট ফুটসাল চ্যাম্পিয়নশিপে উজবেকিস্তানকে হারাল ইরান

ফিলিস্তিনে গণহত্যার প্রতিবাদে নোবিপ্রবিতে সংহতি সমাবেশ ও মানববন্ধন

ফিলিস্তিনে গণহত্যার প্রতিবাদে নোবিপ্রবিতে সংহতি সমাবেশ ও মানববন্ধন

বান্দরবানে গভীর রাতে বিএনপির অফিস ভাংচুর করেছে সন্ত্রাসারী

বান্দরবানে গভীর রাতে বিএনপির অফিস ভাংচুর করেছে সন্ত্রাসারী

শিশু গুলিবিদ্ধের ঘটনা আইয়্যামে জাহেলিয়াতের বর্বরতাকে হার মানিয়েছে: রেজাউল করিম

শিশু গুলিবিদ্ধের ঘটনা আইয়্যামে জাহেলিয়াতের বর্বরতাকে হার মানিয়েছে: রেজাউল করিম

‘গাজার মুসলিমরা আজ অভিভাবক শূন্য, মুসলিম নেতারা ইসরায়েলের হাতে জিম্মি’

‘গাজার মুসলিমরা আজ অভিভাবক শূন্য, মুসলিম নেতারা ইসরায়েলের হাতে জিম্মি’

বৈষম্য বিরোধী কর্মচারী ঐক্য ফোরামের কার্য-নিবাহী কমিটি ঘোষণা

বৈষম্য বিরোধী কর্মচারী ঐক্য ফোরামের কার্য-নিবাহী কমিটি ঘোষণা

দাউদকান্দিতে বসতঘর ও রান্নাঘর দুর্বৃত্তদের আগুনে পুড়ে ছাই

দাউদকান্দিতে বসতঘর ও রান্নাঘর দুর্বৃত্তদের আগুনে পুড়ে ছাই

নগরকান্দায় যৌথ বাহিনীর অভিযানে অস্ত্র সহ গ্রেফতার-৪

নগরকান্দায় যৌথ বাহিনীর অভিযানে অস্ত্র সহ গ্রেফতার-৪

১১ দিন পর কড়ইতলী-গোবরাকুড়া স্থলবন্দরে আমদানি-রপ্তানি শুরু

১১ দিন পর কড়ইতলী-গোবরাকুড়া স্থলবন্দরে আমদানি-রপ্তানি শুরু

পাঁচবিবিতে ফিলিস্থিনে ইসরাইলী হামলার প্রতিবাদে ছাত্রদলের বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ

পাঁচবিবিতে ফিলিস্থিনে ইসরাইলী হামলার প্রতিবাদে ছাত্রদলের বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ