রাস্তা অবরোধ করে প্রতিবাদ কাম্য নয়
১২ মার্চ ২০২৫, ১২:৩২ এএম | আপডেট: ১২ মার্চ ২০২৫, ১২:৩২ এএম

রাজধানীর বনানীতে ট্রাকচাপায় ১ গার্মেন্ট কর্মীর মৃত্যুর প্রতিবাদে রাস্তা অবরোধের কারণে গত সোমবার সারাদিন লাখ লাখ মানুষকে অশেষ দুর্ভোগ পোহাতে হয়েছে। গতকাল পত্রপত্রিকায় প্রকাশিত খবরে জানা যায়, গত সোমবার সকালে বনানী চেয়ারম্যান বাড়ি এলাকায় রাস্তা পারাপারের সময় মিনি ট্রাকের চাপায় এক গার্মেন্টকর্মী নিহত এবং অপর একজন আহত হন। এ খবর ছড়িয়ে পড়লে বনানী এলাকার বেশ কয়েকটি গার্মেন্ট কারখানার শ্রমিকরা প্রতিবাদে রাস্তায় নেমে এসে সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করতে থাকে। শুধু গার্মেন্ট কর্মীরাই নয়, স্থানীয় কিছু সাধারণ মানুষ এবং করাইল বস্তি থেকেও শত শত মানুষ শ্রমিকদের বিক্ষোভে যোগ দিয়ে প্রায় ৮ ঘন্টা সড়ক অবরুদ্ধ করে রাখলে আশপাশের সব সড়ক যানজটে স্থবির হয়ে পড়ে। শহরের অন্যতম ব্যস্ততম এই সড়কের আশপাশে ডিপ্লোম্যাটিক জোন, বিমানবন্দর, ক্যান্টনমেন্টসহ গুরুত্বপূর্ণ বেশকিছু সংস্থা রয়েছে। এমন একটি ব্যস্ত সড়কে দুর্ঘটনার পর শ্রমিকদের রাস্তা অবরোধের পর আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও প্রশাসনের নিস্ক্রিয়তার কারণে প্রায় সারাদিন রাস্তাগুলোতে অচলাবস্থা দেখা দেয়। সকাল ৭টা থেকে শুরু হওয়া শ্রমিক বিক্ষোভের কারণে দিনব্যাপী অবরুদ্ধ রাস্তার যানজটে নাকাল হয় অসংখ্য মানুষ। অফিস যাত্রী, স্কুল-কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী, ব্যবসায়ী, বিমান যাত্রী ও হাসপাতালগামী রোগীদের সীমাহীন দুর্ভোগ পোহাতে হয়েছে।
ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনার পতন ও পালিয়ে যাওয়ার পর এক শ্রেণীর মানুষ নানা অভিযোগ ও দাবি-দাওয়া তুলে রাস্তা অবরোধসহ বিভিন্ন কর্মসূচি দিয়ে জনদুর্ভোগ সৃষ্টি এবং সরকারকে বিপাকে ফেলার অপচেষ্টা করেছে। সচতেন ছাত্র-জনতা ও সরকারের ত্বরিৎ পদক্ষেপে সেসব ঝামেলা অনেকটা কমে আসলেও অনেক ক্ষেত্রে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও প্রশাসনিক কর্মকা-ে শৈথিল্য ও নিস্ক্রিয়তার কারণে অনেক মানুষকে দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। সোমবার বনানী চেয়ারম্যান বাড়িতে দুর্ঘটনায় শ্রমিক মৃত্যুর তাৎক্ষণিকভাবে যথাযথ পদক্ষেপ নিলে দিনব্যাপী সড়কে এমন যানজট ও জনদুর্ভোগ সৃষ্টি হতো না। বনানী মূল সড়ক অবরোধের পর প্রতিবাদী শ্রমিকের সংখ্যা বাড়লে আশপাশের প্রায় সব রাস্তা এবং এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়েতেও যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। এমন আকস্মিক সড়ক অবরোধের কারণে বনানী, মহাখালী, কাকলী, সাতরাস্তা, বিমানবন্দর সড়ক, প্রগতি সরনিসহ আশপাশের সড়কগুলোতে কত মানুষকে যে কত রকমের ক্ষতি ও দুর্ভোগ পোহাতে হয়েছে, তার কোনো ইয়ত্তা নেই। হাসপাতালগামী রোগী, শিশুদের নিয়ে ঘন্টার পর ঘন্টা গাড়িতে আটকে থাকা, বিদেশগামী যাত্রীর ফ্লাইট মিস করাসহ অসহনীয় এক পরিস্থিতির মধ্যে মানুষ পড়ে। বিশ্বের কোথাও এমন পরিস্থিতি দেখা যায় না। সড়ক দুর্ঘটনা ঘটে এবং তা প্রায় নিয়মিতই ঘটছে। বেপরোয়া চালকদের যেমন এক্ষেত্রে দায় রয়েছে, তেমনি পথচারিদেরও দায় রয়েছে। আমরা দেখেছি, ফুটওভার ব্রিজ থাকা সত্ত্বেও বেশিরভাগ পথচারি বেপরোয়াভাবে শৃঙ্খলাবিহীনভাবে সড়ক পারাপার ও চলাচল করে। এমতাবস্থায় দুর্ঘটনা ঘটলেও পথচারিরও এতে দায় রয়েছে। গত সোমবার যে দুর্ঘটনা ঘটেছে, তার প্রতিবাদ শ্রমিকরা অবশ্যই করবে। তবে সবকিছু অচল করে দিয়ে, প্রতিবাদ করা কাম্য হতে পারে না। ঘটনার সাথে সাথে প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনী কার্যকর উদ্যোগ নিয়ে, আন্দোলনরত শ্রমিকদের প্রতিনিধিসহ গার্মেন্ট মালিকদের সাথে আলাপ-আলোচনা করে সড়ক থেকে শ্রমিকদের সরিয়ে দিতে পারলে এত দীর্ঘ সময় ধরে রাস্তায় অচলাবস্থা থাকতো না।
রাজধানীতে যানজটের দুর্ভোগ নিত্যকার বিষয়। প্রায় দুই কোটির বেশি মানুষের শহরে অপ্রতুল সড়ক, অবৈধ দখল, অপরিকল্পিত অবকাঠামো উন্নয়নের কারণে সড়কের বেহাল দশা এবং ট্র্যাফিক আইন না মানার কারণে দুর্ঘটনা ও যানজট সৃষ্টি হয়। সড়ক দুর্ঘটনা কিংবা যে কোনো অপঘাত মৃত্যু অপ্রত্যাশিত ও দু:খজনক। তবে একটি দুর্ঘটনার জেরে রাস্তায় প্রতিবাদ বিক্ষোভ ও প্রতিবন্ধক সৃষ্টি করে লাখ লাখ মানুষকে ৭-৮ ঘন্টা ধরে অবরুদ্ধ করে রাখার ঘটনা মেনে নেয়া যায় না। দুর্ঘটনার প্রতিবাদে যদি যেখানে সেখানে সড়ক অবরোধের ঘটনা অব্যাহত থাকে, তাহলে দেশের অর্থনীতি ও মানুষের স্বাভাবিক চলাচল ব্যহত হতে বাধ্য। অর্ন্তবর্তী সরকারকে বেকায়দায় ফেলতে নানা অজুহাতে রাজধানীতে অবস্থান-অবরোধ কর্মসূচি দিতে দেখা গেছে। সোমবার বনানীর রাস্তায় পোশাক শ্রমিক নিহত হওয়ার ঘটনাকে পুঁজি করে স্থানীয় সব গার্মেন্ট শ্রমিকদের রাস্তায় নামালো কারা? করাইল বস্তি থেকেও নাকি লোকজন অবরোধ-বিক্ষোভে যোগ দিয়েছে। এই করাইল বস্তি এমন এক জায়গায় অবস্থিত যেখানে ডিপ্লোমেটিক জোন থেকে শুরু করে গুরুত্বপূর্ণ এলাকা রয়েছে। এ বস্তিতে অপরাধীদের ব্যাপক আনাগোনা সবসময়ই থাকে। এটা ভাবা যায় না, এমন গুরুত্বপূর্ণ এলাকার মধ্যে একটি বস্তি থাকবে এবং তা অপরাধীদের অভয়ারণ্যে পরিণত হবে। গত সোমবার দুর্ঘটনায় যে সড়ক অবরোধ হয়েছে, করাইল বস্তির লোকজনের সংশ্লিষ্টতা এবং স্বার্থান্বেষী মহলের হাত থাকতে পারে। যেকোনো সমাবেশ বা ইস্যুভিত্তিক মিছিলে পতিত আওয়ামী লীগের লোকজন ঢুকে পরিস্থিতি ঘোলাটে করার পায়তারার খবর ইতোমধ্যে প্রকাশিত হয়েছে। গত সোমবার দুর্ঘটনাকে কেন্দ্র করে যে অবরোধের ঘটনা ঘটেছে, তাতে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের ইন্ধন থাকা অস্বাভাবিক নয়। এ ব্যাপারে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সতর্ক থাকা জরুরি। গার্মেন্ট কর্মীর নিহতের ঘটনায় অভিযুক্ত ট্রাক ড্রাইভারকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী আটক করেছে। আমরা আশা করি, সড়কে চলাচলের ক্ষেত্রে চালক, যাত্রী ও পথচারিদের সতর্ক ও সচেতন থাকা অবশ্যক। বেপরোয়া চালকদের যেমন নিবৃত্ত করা প্রয়োজন, তেমনি বেপরোয়াভাবে সড়ক পার হওয়া পথচারিদেরও নিবৃত্ত করতে হবে। তবে দুর্ঘটনাকে কেন্দ্র করে ঘন্টার পর ঘন্টা সড়ক অবরোধ করে অসহনীয় জনদুর্ভোগ সৃষ্টি কোনোভাবেই কাম্য হতে পারে না।
বিভাগ : সম্পাদকীয়
মন্তব্য করুন
আরও পড়ুন

ইসরায়েলের হামলা বন্ধে জাতিসংঘকে কার্যকর ভূমিকা নিতে হবে-কাজী শিপন

সিরিয়া ইস্যুতে যুক্তরাষ্ট্র, ইসরাইল ও তুরস্ক চুক্তি করবে, আশাবাদ ট্রাম্পের

বনফুল শোরুমে ইসরায়েলি পণ্য বিক্রি না করার সিদ্ধান্ত

৪৬তম বিসিএস লিখিত পরীক্ষা পেছাতে পিএসসিতে পরীক্ষার্থীদের অবস্থান

নাসার সঙ্গে আর্টেমিস চুক্তি সাক্ষর করল বাংলাদেশ

রাজশাহীর চারঘাটে মদপানে দু’জনের মৃত্যু

১১ জেলেকে ট্রলারসহ অপহরণ আরাকান আর্মির

ইসরায়েলবিরোধী বিক্ষোভে ভাঙচুর-লুটপাটে চার মামলা, গ্রেপ্তার ৫৬

আনফিল্ডেই থাকছেন ফন ডাইক

সব সরকারি হাসপাতালে চালু হবে ফার্মেসি, স্বল্পমূল্যে মিলবে ওষুধ

স্যাট ফুটসাল চ্যাম্পিয়নশিপে উজবেকিস্তানকে হারাল ইরান

ফিলিস্তিনে গণহত্যার প্রতিবাদে নোবিপ্রবিতে সংহতি সমাবেশ ও মানববন্ধন

বান্দরবানে গভীর রাতে বিএনপির অফিস ভাংচুর করেছে সন্ত্রাসারী

শিশু গুলিবিদ্ধের ঘটনা আইয়্যামে জাহেলিয়াতের বর্বরতাকে হার মানিয়েছে: রেজাউল করিম

‘গাজার মুসলিমরা আজ অভিভাবক শূন্য, মুসলিম নেতারা ইসরায়েলের হাতে জিম্মি’

বৈষম্য বিরোধী কর্মচারী ঐক্য ফোরামের কার্য-নিবাহী কমিটি ঘোষণা

দাউদকান্দিতে বসতঘর ও রান্নাঘর দুর্বৃত্তদের আগুনে পুড়ে ছাই

নগরকান্দায় যৌথ বাহিনীর অভিযানে অস্ত্র সহ গ্রেফতার-৪

১১ দিন পর কড়ইতলী-গোবরাকুড়া স্থলবন্দরে আমদানি-রপ্তানি শুরু

পাঁচবিবিতে ফিলিস্থিনে ইসরাইলী হামলার প্রতিবাদে ছাত্রদলের বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ