অর্থনীতি ও উন্নয়ন কর্মকাণ্ড গতিশীল করতে হবে
১৮ মার্চ ২০২৫, ১২:০১ এএম | আপডেট: ১৮ মার্চ ২০২৫, ১২:০১ এএম

দেশের অর্থনীতি উদ্বেগজনক স্থবিরতায় আক্রান্ত। দেশি-বিদেশি বিনিয়োগ নেই। উন্নয়ন কার্যক্রমে গতি নেই। প্রকল্প বাস্তবায়ন থমকে আছে। ব্যবসা-বাণিজ্যে মন্দা বিরাজমান। কর্মসংস্থানে সুখবর নেই। বেকারের মিছিল দীর্ঘ হচ্ছে। ড. মুহাম্মদ ইউনূসের অন্তর্বর্তী সরকার ক্ষমতায় আসার পর বিশ্বের বিভিন্ন দেশ ও উন্নয়ন সহযোগী সংস্থা বাংলাদেশকে সহযোগিতা করার ক্ষেত্রে যে ইতিবাচক অভিপ্রায় ও প্রতিশ্রুতি জ্ঞাপন করেছিল, বাস্তবে তার কিছুমাত্র প্রতিফলন দেখা যায়নি। প্রতিশ্রুত সহায়তা আসেনি। বিনিয়োগও আসেনি। আসবে এমন সম্ভাবনাও দেখা যাচ্ছে না। বিভিন্ন দেশ ও সংস্থার নির্বাচিত রাজনৈতিক সরকারের ওপর সঙ্গতকারণেই আস্থা বেশি। সহায়তা হোক, আর বিনিয়োগই হোক, তারা ওই সরকারের সময়ই করতে অধিকতর আগ্রহী হয়। অন্তর্বর্তী অনির্বাচিত ও অরাজনৈতিক সরকারের প্রতি তাদের আস্থা ততটা দৃঢ় হয় না সরকারের আয়ুষ্কাল স্বল্প হওয়ার কারণে। অন্তর্বর্তী সরকার তুলনামূলকভাবে দুর্বল সরকারও বটে। এমতাবস্থায়, একটি নির্বাচিত রাজনৈতিক সরকার প্রতিষ্ঠাকেই অগ্রধিকার দিতে হবে। অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের মাধ্যমে সেই সরকার আসতে পারে। সুতরাং, নির্বাচানকে মুখ্য করতে হবে। পর্যবেক্ষকদের অজানা নেই, পতিত ও বিতাড়িত স্বৈরাচার দেশের বিভিন্ন ব্যবস্থা ও প্রতিষ্ঠান ভেঙ্গেচুরে শেষ করে দিয়ে গেছে। একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন সম্ভব করে তুলতে হলে এসব ব্যবস্থা ও প্রতিষ্ঠানের প্রয়োজনীয় সংস্কার দরকার। সরকার ও রাজনৈতিক দলসমূহ এই সংস্কারে রাজি ও প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। সংস্কার ছোট, না বড় আকারে হবে, এ নিয়ে অবশ্য বিতর্ক আছে। তবে অধিকাংশের অভিমত, নির্বাচনের ক্ষেত্রে যতটা প্রয়োজন, ততটুকু সংস্কার করেই যত দ্রুত সম্ভব নির্বচান দেয়া আবশ্যক। নির্বাচিত সরকার ক্ষমতায় আসলে বিনিয়োগ, উন্নয়ন, কর্মসংস্থান, ব্যবসা-বাণিজ্যে যেমন গতি আসবে তেমনি আইনশৃঙ্খলার উন্নতি হবে, শান্তি ও নিরাপত্তার নিশ্চয়তা বাড়বে। সবচেয়ে বড় কথা: পতিত স্বৈরাচার ও তার প্রভূ ভারতের মোদি সরকার দেশে অস্থিরতা ও অস্থিতিশীলতা সৃষ্টির মাধ্যমে অন্তর্বর্তী সরকারকে ব্যর্থ করে দেয়ার জন্য যে লাগাতার ষড়যন্ত্র চালিয়ে যাচ্ছে, তার অবসান ঘটবে। তাই অন্তর্বর্তী সরকারের উচিত নির্বাচনের সুনির্দিষ্ট সময়রেখা জানানো এবং কাক্সিক্ষত নির্বাচন শেষে নির্বাচিত সরকারের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করা। আমরা যতদূর জানি, ড. ইউনূস সরকারের কোনো রাজনৈতিক অভিলাস নেই। নেই যখন, তখন নির্বচানে অহেতুক দেরি কেন?
ওয়াকিবহাল মহলের অবিদিত নেই, পতিত স্বৈরাচার দেশের অর্থনীতিকে সম্পূর্ণ ধ্বংস করে দিয়ে গেছে। ব্যাংকিং ব্যবস্থাকে শেষ করে দিয়েছে। দুর্নীতিকে প্রতিষ্ঠানিক রূপ দিয়েছে। রাষ্ট্রীয় সম্পদ লুণ্ঠন ও অর্থপাচারকে অবাধ করে দিয়েছে। এসব করে অর্থনীতিকে ফোকলা করে দিয়েছে। বিভিন্ন মেগা প্রকল্পের ফানুস উড়িয়ে প্রচার করেছে বাংলাদেশ বিশ্বের উন্নতির রোল মডেলে পরিণত হয়েছে। স্বৈরাচারের পতনের পর দেখা যাচ্ছে, অর্থনীতি ও উন্নয়নের অবস্থা শোচনীয় ও ভয়াবহ। এ দুই ক্ষেত্রে যেসব পরিসংখ্যান ও বিবরণ দেয়া হয়েছে, তা ভুয়া ও অতিরঞ্জন দোষে দুষ্ট। মাঝখান থেকে দেশের মানুষের ঘাড়ে ঋণের বিশাল বোঝা চেপেছে। অন্তর্বর্তী সরকারকে এর জন্য কম ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে না। মাসে মাসে ঋণ পরিশোধ করতে হচ্ছে। স্বৈরাচার ক্ষমতায় থাকার সময়ই অর্থনীতি ও উন্নয়ন কর্মকা- চরম অবস্থায় পৌঁছায়। ঋণ নিয়ে, টাকা ছাপিয়ে পরিস্থিতি সামাল দেয়ার চেষ্টা করা হয়। উন্নয়ন প্রকল্প টাকার অভাবে স্থবির হয়ে পড়ে। প্রতিশ্রুত বিদেশি বিনিয়োগ থেমে যায়। চলমান প্রকল্পসমূহে অর্থছাড়ও কমে যায়। অন্তর্বর্তী সরকারের সাত-আট মাসেও এ অবস্থার কোনো ইতিবাচক পরিবর্তন ঘটেনি। ইনকিলাবে প্রকাশিত এক রিপোর্টে উল্লেখ করা হয়েছে। পতিত সরকারের অন্যতম অগ্রধিকার ছিল ৮৮২২ কোটি টাকার মাতারবাড়ি সমুদ্র বন্দর উন্নয়ন প্রকল্প। ২০২৩-২৪ অর্থবছরে এ প্রকল্পে ৫৮৬ কোটি টাকা বরাদ্দের এক টাকাও ব্যয় করতে পারেনি সড়ক ও জনপথ বিভাগ। শুধু তাই নয়, ওই অর্থবছরের বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির ৮৯টি প্রকল্পের জন্য বরাদ্দকৃত ২৬২৩ কোটি টাকাও ব্যয় হয়নি। এছাড়া গত অর্থবছরের ১২১টি প্রকল্পেরও বাস্তবায়নেও কোনো অগ্রগতি নেই। রিপোর্টে আরো উল্লেখ করা হয়েছে, পতিত সরকারের সময় ৮টি মেগা প্রকল্পকে ফার্স্টট্রাক প্রকল্প হিসাবে তালিকাভুক্ত করা হয়। অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে প্রকল্পগুলো সম গুরুত্ব পায়নি। ফলে প্রকল্পগুলোর বাকী কাজ প্রায় স্থবির হয়ে পড়েছে। ৮টি প্রকল্পের মধ্যে পদ্মাসেতুর কাজ শেষ হয়েছে। বাকী ৭টির কয়েকটির কাজ সমাপ্তির পথে। অবশিষ্টগুলোর কাজও শেষ পর্যায়ে। বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, জাতীয় গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্পগুলোর বাস্তবায়নে অন্তর্বর্তী সরকারের উদ্যেগ নেয়া উচিত। এতে প্রকল্পগুলো শেষ হবে এবং তাদের সুফল ভোগ সম্ভবপর হবে। রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে নেয়া প্রকল্পগুলোর ব্যাপারে নেতিবাচক সিদ্ধান্ত নিতে পারে সরকার। প্রকল্প ঝুলে থাকা, অসমাপ্ত থাকা কিংবা পরিত্যক্ত হওয়া দেশের জন্য ক্ষতিকর। এ ব্যাপারে তাই সরকারকে সতর্ক থাকতে হবে। এখানে বিশেষভাবে মনে রাখতে হবে, উন্নয়ন প্রকল্প দেশের উন্নয়নকেই তরান্বিত করে না, একইসঙ্গে কর্মসংস্থানেরও ব্যবস্থা করে। যখন বেকারের সংখ্যা ক্রমবর্ধমান এবং অন্তর্বর্তী সরকারের সময়ও বহু শিল্পকারখানা বন্ধ হয়ে যাওয়ায় হাজার হাজার মানুষ বেকারের খাতায় নাম লিখিয়েছে, তখন বিভিন্ন ক্ষেত্রে কর্মসৃজন ও রক্ষণ অপরিহার্য। কর্মসংস্থান সৃষ্টি করে বেকারত্ব কমাতে না পারলে আইনশৃঙ্খলার উন্নয়ন ও শান্তি-নিরাপত্তা নিশ্চিত করা দুরূহ হতে বাধ্য।
আমরা জানি, চীন আমাদের পরীক্ষিত বন্ধুই নয়, গুরুত্বপূর্ণ উন্নয়ন সহযোগীও। তার অর্থায়ন ও কারিগরি সহায়তার বহু বড় ও গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্প গৃহীত হয়েছে এবং সে সবের বাস্তবায়ন চলমান রয়েছে। অনেক ক্ষেত্রে চীনের প্রস্তাব ও অর্থের প্রতিশ্রুতি আছে। এ প্রস্তাব ও প্রতিশ্রুতি কার্যকর হলে দেশের উন্নয়নের বিকাশ ও কর্মসংস্থানের পরিধির আরো প্রসারণ ঘটতে পারে। প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস আগামী ২৮ মার্চ চীন সফরে যাচ্ছেন। তার এ সফরকে দু’দেশের সম্পর্কোন্নয়ন ও সহযোগিতা বৃদ্ধির ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ হিসাবে দেখা হচ্ছে। আশা করা হচ্ছে, সব ধরনের সহযোগিতা চীনের কাছ থেকে পাওয়া যাবে। এ প্রসঙ্গে স্মরণ রাখা দরকার, চীন অতীতে অনেক প্রতিশ্রুতি দিয়েছে; কিন্তু পতিত স্বৈরাচার ভারতের প্ররোচনায় সেসব প্রতিশ্রুতির বাস্তবায়নে অনেক ক্ষেত্রে অনীহা প্রদর্শন করেছে। শেষ দিকে চীন সহায়তায় টান দেয়ার নীতিও নিয়েছিল। গত বছর শেখ হাসিনার চীন সফরের সময় চীনের কাছ থেকে ২০ বিলিয়ন ডলারের ঋণ সহায়তার আশাবাদ ব্যক্ত করা হলেও চীন দিয়েছিল মাত্র ১৪ কোটি ডলারের আশ্বাস। অন্তর্বর্তী সরকারের পক্ষ থেকে চীনের কাছ থেকে ৭ বিলিয়ন ডলার সহায়তার আশ্বাস পাওয়া গেছে। কিন্তু এ ব্যাপারে আনুষ্ঠানিক কোনো চুক্তি হয়নি। এ সহায়াতাও দূরঅস্ত। বাস্তবতার এই প্রেক্ষাপটেও ড. মুহাম্মদ ইউনূসের চীন সফরকে গুরুত্ববহ হিসাবেই দেখা হচ্ছে। চীনের আর্থিক ও কারিগরি সহায়তার পরিচালিত প্রকল্পগুলো অগ্রাধিকার ভিত্তিতে বাস্তবায়ন করতে হবে। এতে চীন আরো সহায়তার তাকিদ অনুভব করবে। পর্যবেক্ষকরা মনে করেন, বিভঙ্গ অর্থনীতি সংগঠন ও স্থবির উন্নয়ন কর্মকা- গতিশীল করার ক্ষেত্রে চীন সবচেয়ে কার্যকর ভূমিকা ও অবদান রাখতে পারে। রাখবে বলেই আমাদেরও দৃঢ় বিশ্বাস। প্রসঙ্গত বলা আবশ্যক, আমরা ভবিষ্যতের জন্য একটা বিশেষ শংকাও অনুভব করছি। ২০২৬ সালে আমাদের এলডিসি থেকে উত্তরণ। এই উত্তরণের বিবিধ চ্যালেঞ্জ রয়েছে। সিপিডির নির্বাহী পরিচালক ড. ফাহমিদা খাতুন বলেছেন, এলডিসি উত্তরণের পর দেশের রফতানি খাতে ৮ বিলিয়ন ডলার ক্ষতি হতে পারে। এটা অর্থনীতির ওপর বিরাট আঘাত। এই ক্ষতি মোকাবিলায় আমাদের উন্নয়নযাত্রা যেমন জোরদার করতে হবে, তেমনি চীনের মতো বন্ধু দেশের উদার ও অকৃত্রিম সহযোগিতাও আবশ্যক হবে।
বিভাগ : সম্পাদকীয়
মন্তব্য করুন
আরও পড়ুন

সাঈদীকে জুডিসিয়াল ও মেডিকেল কিলিং করা হয়েছে - মাসুদ সাঈদী

ফ্যাসিস্ট হাসিনার আমলে হিন্দু নিপীড়ন নিয়ে যা বলেছিলেন তুলসী গ্যাবার্ড

মুসলমানদের উপরে হিন্দুদের হামলায় উস্কানি দিলেন মহারাষ্ট্রের উপমুখ্যমন্ত্রী

এনামুলের ব্যাটে মোহামেডানকে থামিয়ে গাজী গ্রুপের টানা পঞ্চম জয়

গাজায় ইসরাইলি হামলায় নিহত বেড়ে ৪১৩, বিভিন্ন দেশের নিন্দা

রামগড়ে এক শিক্ষার্থীকে অপহরণের দায়ে ২জনকে গ্রেফতার

ট্রাম্পের হুঁশিয়ারি উপেক্ষা, লোহিত সাগরে প্রত্যাঘাত হুথিদের

ট্রেনিংয়ে না থেকেও ভাতা নেন সহকারী শিক্ষা অফিসার

নীলফামারীতে পলিথিন মজুদ, ব্যবসায়ীর দশ হাজার টাকা জরিমানা

তুলসী গ্যাবার্ডের মন্তব্য গুরুতর: পররাষ্ট্র উপদেষ্টা

রূপালী ব্যাংকের ব্যবসায়িক পর্যালোচনা সভা অনুষ্ঠিত

সুনামগঞ্জ পৌর শহরে তালা ভেঙ্গে দুই বিপণী বিতানে চুরি

নারায়ণগঞ্জে গৃহবধূ ফিজা হত্যায় জড়িতদের গ্রেফতার ও বিচারের দাবিতে মানববন্ধন

কক্সবাজার শহরে সড়ক অবরোধ করে মানব বন্ধনে উচ্ছেদ আতঙ্কগ্রস্থ হাজারো নারী পুরুষ

আনোয়ারায় বেড়াতে গিয়ে পানিতে ডুবে শিশুর মৃত্যু

চাল সংগ্রহ না করে ডব্লিউকেসি দিলেন গুদাম কর্মকর্তা

শেখ হাসিনা ও রেহানা পরিবারের ৩৯৪ কোটি টাকা ফ্রিজ

মায়ের সাথে দূর্ব্যবহারের জেরে চাচাকে ছুরিকাঘাত ভাইপোর

গোয়ালন্দে ডাকাতির প্রস্তুতিকালে দেশীয় অস্ত্রসহ তিন যুবক গ্রেপ্তার

আশুলিয়ায় স্বর্ণের দোকানে ডাকাতির ঘটনায় গ্রেপ্তার ৬, স্বর্ণ-টাকা উদ্ধার