আলেম সমাজের অংশগ্রহণে রচিত হোক সম্প্রীতির বাংলাদেশ
২১ মার্চ ২০২৫, ১২:৫০ এএম | আপডেট: ২১ মার্চ ২০২৫, ১২:৫০ এএম

৫ আগস্টের পরে বাংলাদেশের রাজনীতিতে নতুন মেরুকরণের সৃষ্টি হয়েছে। আওয়ামী ফ্যাসিস্ট এবং তাদের সহযোগী ছাড়া অন্য রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে বিভেদ কমেছে। বেড়েছে পারস্পরিক যোগাযোগ। দীর্ঘ প্রায় ১৬ বছরে বাংলাদেশের রাজনৈতিক সংস্কৃতি হয়ে উঠেছিল প্রতিহিংসামূলক। নতুন বাংলাদেশে এই প্রতিহিংসামূলক রাজনীতির অবসান হোক সেটাই চাইছে এদেশে মেজরিটি মানুষ। রাজনৈতিক দলগুলোর নেতারা একে অন্যের কাছে যাচ্ছেন, আলাপ, আলোচনা এবং সৌহার্দ্যপূর্ণ পরিবেশে সৌজন্য সাক্ষাৎ করছেন। এটা বহুদলীয় রাজনীতি সৌন্দর্য। ক্ষমতায় যারাই যাক, তারা যেন অতীতের ন্যায় ফ্যাসিস্ট না হয়, সেটাই সবার প্রত্যাশা। আওয়ামী লীগের আমলে রাজনৈতিক দলগুলো তো নির্যাতিত ছিলো, সেই সাথে আলেম-ওলামা ছিলো অমানবিক নির্যাতনের শিকার। বিনা অপরাধে আলেম-ওলামা জেলে ভরেছে, অন্যায়ভাবে বছরের পর বছর কারাবন্দি করে রেখেছে, সেই নির্মম ইতিহাস যেন আর ফিরে না আসে। পবিত্র রমজান ঘিরে বাংলাদেশের রাজনীতিতে এক চমৎকার পরিবেশ বিরাজ করছে। রাজনৈতিক দলগুলোর ইফতার মাহফিলগুলো হয়ে উঠেছে এক চমৎকার মিলনমেলা। গেল ৭ মার্চ ঢাকার সোনারগাঁও হোটেলে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ-এর আয়োজনে একটি ইফতার মাহফিল অনুষ্ঠিত হয়। বিভিন্ন দেশের কূটনীতিক, রাজনৈতিক দলের নেতা, আলেম-ওলামা, সাংবাদিক ও বুদ্ধিজীবীদের সম্মানে এই ইফতার মাহফিলের আয়োজন করা হয়। সেখানে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান বরকত উল্লাহ বুলু, স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহ উদ্দীন আহমেদ, ড. মঈন খান উপস্থিত ছিলেন। উপস্থিত ছিলেন জামায়াতের আমির ডা. শফিকুর রহমানসহ প্রায় সব ইসলামী দলের শীর্ষ নেতা। এটা দিয়ে শুরু হয় রাজনৈতিক দলের ইফতারের চমৎকার মিলনমেলা। এরপর খেলাফত মজলিস, জামায়াত, জমিয়ত, খেলাফত আন্দোলন, এবি পার্টি, জাতীয় নাগরিক পার্টি, গণঅধিকার পরিষদের ইফতার মাহফিল। এসব ইফতার মাহফিলে রাজনৈতিক দলগুলোর শীর্ষ নেতাদের উপস্থিতি ছিলো চোখে পড়ার মত। এরপর বিএনপির ইফতার মাহফিলেও বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের শীর্ষ নেতা এবং আলেম-ওলামার উপস্থিতি ছিলো। ইফতার মাহফিল উপলক্ষে এক দলের নেতা অন্য দলের ইফতার মাহফিলে যাচ্ছে, এটি সম্প্রীতির বাংলাদেশ বিনির্মাণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।
জামায়াতের সাথে চরমোনাই তথা ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ-এর কিছুটা দূরত্ব ছিলো। সকল মনোমালিন্য ভুলে জামায়াত আমির চরমোনাইর পীর সাহেবের দরবারে যাওয়া এবং বিএনপির মহাসচিব ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ-এর সেন্ট্রাল অফিসে যাওয়া রাজনীতিতে সম্প্রীতির বার্তা দিয়েছে। রাজনৈতিক মতপার্থক্য থাকা সত্ত্বেও রাজনৈতিক দলগুলো একে অন্যের কাছাকাছি আসা, আলাপ-আলোচনা করা পজিটিভ দেশ গঠনে অগ্রণী ভূমিকা রাখবে। বাংলাদেশ একটি মুসলিম দেশ। সে হিসেবে আলেম-ওলামার বিরুদ্ধে গিয়ে যে কারো পক্ষে দেশ পরিচালনা করা শুধু কঠিন না, বরং বেশ কঠিন হবে। আওয়ামী লীগের আমলে সবচেয়ে বেশি নির্যাতনের শিকার হয়েছে আলেম সমাজ। মাওলানা মামুনুল হককে দীর্ঘ সময় জেলেবন্দি করে রাখা, বরিশালে মুফতি ফয়জুল করিমের উপর আওয়ামী লীগের বর্বর হামলা, বিনা অপরাধে রাজনৈতিক নেতাদের ফাঁসি ছিলো আওয়ামী লীগের ১৬ বছরের আমলনামা। একটা কুচক্রীমহল সবসময় আলেম সমাজকে রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে দাঁড় করাতে চায়। ১৯৭১ সালে মহান মুক্তিযুদ্ধে আলেম-ওলামার অবদান থাকা সত্ত্বেও তাদের স্বাধীনতার বিরুদ্ধে দাঁড় করিয়েছে একটি কুচক্রীমহল। অপরদিকে বামপন্থীদের তেমন কোনো অবদান না থাকলেও মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে তারা চেতনার ব্যবসা করে গেছে যুগের পর যুগ। মুক্তিযুদ্ধের চেতনার ব্যবসার অন্যতম ধারকবাহক ছিলো আওয়ামী লীগ। এই চেতনা ব্যবসা দিয়েই এদেশের মানুষের উপর জগদ্দল পাথরের মতো চেপে বসেছিল হাসিনা। চব্বিশের ছাত্র জনতার গণঅভ্যুত্থানে ফ্যাসিস্ট হাসিনা পালিয়ে যেতে বাধ্য হয়েছে।
হাসিনা পালিয়ে গেলেও বামপন্থীরা হাসিনার হয়ে দেশে ষড়যন্ত্র করছে। ২০১৩ সালের ন্যায় ফের গণজাগরণ মঞ্চের মতো নৈরাজ্য সৃষ্টির পাঁয়তারা করছে। গণজাগরণ মঞ্চের বিপরীতে শাপলা সৃষ্টি হয়েছিল। ২০১৩ সালে হাজারো ঈমানদার আলেম-ওলামা ও মাদরাসার শিক্ষার্থীর রক্তে রঞ্জিত হয়েছিল শাপলা চত্বর। আবারো সেই গণজাগরণ মঞ্চ হলে, ফিরে আসবে শাপলাও। শাপলা আর গণজাগরণ মঞ্চ বিপরীত শব্দই বলা যায়। ইতিহাস পর্যালোচনা করলে দেখা যায় যাবে, সব আন্দোলন-সংগ্রামে আলেম সমাজের সরব অংশগ্রহণ ছিলো। ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলন তথা আজাদী আন্দোলন থেকে ৭১-এর মুক্তিযুদ্ধ এবং চব্বিশের ছাত্র জনতার বিপ্লবে আলেম-ওলামার সরব উপস্থিতি ছিলো। আলেম ওলামা তথা ইসলামপন্থীদের অগ্রণী ভূমিকা থাকা সত্ত্বেও তাদের পক্ষে শক্তিশালী ন্যারেটিভ বা বয়ান দাঁড় করাতে না পারায় তাদের ইতিহাস ছিনতাই হয়েছে বারংবার। চব্বিশের ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানে আলেম সমাজ তথা ইসলামপন্থীদের যথেষ্ট অবদান রয়েছে। চব্বিশে আন্দোলনে আলেম হিসেবে সবার আগে রাজপথে ছিলেন চরমোনাইর পীর সাহেব। তিনিই একমাত্র আলেম যিনি একাধারে রাজনৈতিক নেতা এবং পীর হিসেবে রাজপথে শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত ছিলেন। চরমোনাই পীরের দল রাজনৈতিক ব্যানারেই রাজপথে ছিল। দলটির নায়েবে আমির মুফতি ফয়জুল করিম জীবনের ঝুঁকি নিয়ে শুরু থেকে রাজপথে ছিলেন। এমনকি ৫ আগস্ট তিনি লক্ষাধিক নেতাকর্মীর সাথে নিয়ে সর্বপ্রথম কারফিউ ভেঙেছেন। এছাড়াও হেফাজতে ইসলাম, কওমী আলেম-ওলামা, কওমী মাদরাসার ছাত্ররা চব্বিশের আন্দোলনে স্বশরীরে রাজপথে ছিল। জুলাই বিপ্লবে হটস্পট ছিলো যাত্রাবাড়ি এলাকা। যাত্রাবাড়ি পুরো এলাকায় ছিলো ঐতিহ্যবাহী কওমী মাদরাসা যাত্রাবাড়ি মাদরাসার শিক্ষার্থীরা। জুলাই বিপ্লবে ৭৩ জন আলেম শহিদ হয়েছেন। তা সত্ত্বেও এখনো আলেম সমাজ উপেক্ষিত। আলেম সমাজকে উপেক্ষা করে কোনো দল রাষ্ট্র ক্ষমতায় বেশি দিন টিকতে পারবে না।
বাংলাদেশের রাজনৈতিক বাস্তবতা বিচারে আলেম সমাজের বিরুদ্ধে গিয়ে কেউ বাংলাদেশের রাজনীতিতে যে টিকতে পারে না, সেটা হাসিনার পালিয়ে যাওয়ার মধ্য দিয়ে প্রমাণ হয়েছে। আগামীতে যারা ক্ষমতায় যাবে তাদের সেই শিক্ষা গ্রহণ করা দরকার। তাদের উচিত পীর মাশায়েখ, আলেম-ওলামার সাথে সুসম্পর্ক গড়ে তোলা। সেই সাথে তাদের যথাযথ মূল্যায়ন করা উচিত। গত ১৭ মার্চ ঢাকার এক ইফতার মাহফিলে চমৎকার কিছু কথা বলেছেন জমিয়তুল মোদার্রেছীনের সম্মানিত সভাপতি ও জনপ্রিয় জাতীয় পত্রিকা দৈনিক ইনকিলাবের সম্পাদক এ এম এম বাহাউদ্দীন সাহেব। বাংলাদেশ জমিয়াতুল মোদার্রেছীন কর্তৃক আয়োজিত শিক্ষক, কর্মচারী, রাজনীতিবিদ, শিক্ষাবিদ এবং ওলামা মাশায়েখদের সম্মানে এই ইফতার মাহফিলের আয়োজন করা হয়েছিল। ইনকিলাব সম্পাদক বলেন, রাষ্ট্র ক্ষমতায় যেতে হলে আলেম সমাজকে নিয়ে ভাবতে হবে। আলেম সমাজকে অবজ্ঞা করে রাষ্ট্র ক্ষমতায় যাওয়া এবং টিকে থাকা আদৌ সম্ভব নয়। বাংলাদেশের আলেম সমাজ শৃঙ্খলা মেনে চলে। তাই তাদের সমর্থন পেতে হলে তাদের গুরুত্বপূর্ণ হিসেবে ভাবতে হবে। ইফতার মাহফিলে অংশ নেন অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের ধর্ম উপদেষ্টা ডক্টর আ ফ ম খালিদ হোসেন, বিএনপি, জামায়াত, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ, জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম, খেলাফত আন্দোলন, খেলাফত মজলিসসহ প্রায় সব ইসলামী দলের শীর্ষ নেতারা উপস্থিত ছিলেন। বলতে গেলে আলেম ওলামাদের মিলনমেলায় পরিণত হয়েছে উক্ত ইফতার মাহফিল। এছাড়াও উপস্থিত ছিলেন ছারছীনার দরবার শরীফের সম্মানিত পীর মাওলানা শাহ্ আবু নছর নেছার উদ্দীন আহমদ হোসাইন হাফিজাহুল্লাহ। সুতরাং আগামীতে যারা রাষ্ট্র ক্ষমতায় যেতে চায় আলেম সমাজ কে তাদের যথাযথ গুরুত্ব দেওয়া প্রয়োজন।একটি সুখী, সমৃদ্ধ ও কল্যাণ রাষ্ট্র গঠন আলেম সমাজকে সম্পৃক্ত করা ব্যতীত সম্ভব নয়।সর্বশেষ প্রত্যাশা থাকবে, সবার অংশগ্রহণে রচিত হোক বৈষম্যহীন সম্প্রীতির বাংলাদেশ।
লেখক: সাংবাদিক ও সমাজকর্মী
nurahmadsdk@gmail
বিভাগ : সম্পাদকীয়
মন্তব্য করুন
আরও পড়ুন

জনতা ব্যাংকের নতুন ডিএমডি মো. নজরুল ইসলাম

চাকরি হারানোর ভয় পাচ্ছেন না আনচেলত্তি

আল-আরাফাহ্ ইসলামী ব্যাংক চেয়ারম্যান’স অ্যাওয়ার্ড প্রদান

ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংকের পরিচালনা পরিষদের সভা অনুষ্ঠিত

বাংলাদেশীদের জন্য মক্কা ও মদিনায় চালু হচ্ছে ‘হজ ম্যানেজমেন্ট সেন্টার’

লোহাগাড়া উপজেলা আওয়ামী লীগ নেতা আটক

নিবন্ধন আবেদনের সময় বাড়াতে ইসিকে চিঠি দিলো এনসিপি

আমদানি বন্ধের অজুহাতে হিলিতে বেড়েছে চালের দাম,বিপাকে পাইকাররা

হাজীগঞ্জে বজ্রপাতে কৃষকের মৃত্যু

যুদ্ধবিধ্বস্ত সুদানের করুণ চিত্র তুলে ধরলেন বাসিন্দারা

শর্ত পূরণে জুনে মিলতে পারে আইএমএফ এর ঋণের দুই কিস্তি

গ্রামীণ ব্যাংক থেকে কমানো হয়েছে সরকারের মালিকানা: পরিবেশ উপদেষ্টা

দেশে তামাক ব্যবহারে প।রতি বছর ১ লক্ষ ৬১ হাজার মানুষ মৃত্যুবরণ করে

আলোচনা ফলপ্রসূ, বার্তা দিলেন পাকিস্তানের পররাষ্ট্রসচিব

বন্যহাতির অত্যাচারে অতিষ্ঠ পাহাড়িবাসী

মাদক সেবনের ভিডিও ধারণ করায় যুবককে কুপিয়ে যখম

চীনের সব পণ্যের উপর ২৪৫ শতাংশ শুল্ক আরোপের খবর ‘বিভ্রান্তিকর’: হোয়াইট হাউস

টঙ্গীবাড়ীত বজ্রপাতে ১ কিশোর নিহত, আহত ৩

খুলনায় অপহৃত স্কুল ছাত্রী উদ্ধার

চীনের বিরল মৃত্তিকা রপ্তানি বিধি-নিষেধ কেন যুক্তরাষ্ট্রের জন্য ধাক্কা?