চট্টগ্রাম-সন্দ্বীপ ফেরি সার্ভিস : নব দিগন্তের উন্মোচন
২৫ মার্চ ২০২৫, ০১:০৬ এএম | আপডেট: ২৫ মার্চ ২০২৫, ০১:০৬ এএম

নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে বহুল প্রতীক্ষিত চট্টগ্রাম-সন্দ্বীপ সরাসরি ফেরি সার্ভিস চালু হয়েছে। গতকাল সকালে বাঁশবাড়িয়া-সীতাকু--সন্দ্বীপ নৌপথে এই ফেরি সার্ভিস উদ্বোধন করা হয়েছে। চট্টগ্রাম-সন্দ্বীপ যাতায়াতের ক্ষেত্রে এই ফেরি সার্ভিস চালু হওয়া একটা যুগান্তকারী ঘটনা হিসাবেই বিবেচিত হচ্ছে। সন্দ্বীপ মূল ভূখ- থেকে বিচ্ছিন্ন। এখানে রয়েছে চার লাখ মানুষের বসবাস। বিচ্ছিন্ন দ্বীপের বাসিন্দা হিসাবে তাদের বিড়ম্বনা-দুর্ভোগ, সমস্যা-সংকটের অবধি নেই। চট্টগ্রামের সঙ্গে যাতায়াতের উপায় নৌযান ও ট্রলার, যা ঝুঁকিপূর্ণ। সীতকু- থেকে সন্দ্বীপ যেতে হয় এই নৌযান ও ট্রলারে। অনেক সময় সন্দ্বীপ চ্যানেলে যাতায়াত করার সময় দুর্ঘটনা ও প্রাণহানি ঘটে। উভয় প্রান্তে নৌযান বা ট্রলারে ওঠাও কষ্টদায়ক ও বিপজ্জনক। অন্তত এক-দেড় কিলোমিটার কাঁদাপানি মাড়িয়ে তবে নৌযান ও ট্রলারে উঠতে হয়। সন্দ্বীপবাসীর একটি বড় চাওয়া ছিল চট্টগ্রাম-সন্দ্বীপ সরাসরি ফেরি সার্ভিস চালু হোক, যাতে তাদের যাতায়াত সহজ, মসৃণ ও নিরাপদ হয়। এতদিনে তাদের সে আশা পূরণ হয়েছে। অবশ্যই ফেরি সার্ভিস চালু হওয়ার দিনটি তাদের জন্য স্মরণীয় হয়ে থাকবে। নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়কে ধন্যবাদ, ফেরি সার্ভিস চালু করার জন্য। চট্টগ্রাম-সন্দ্বীপ সরাসরি ফেরি সার্ভিস চালু হওয়ায় বাস, ট্রাক, ট্যাংকলরি, মিনিবাস, প্রাইভেটকারসহ সব ধরনের যানবাহন চলাচলের ফলে সন্দ্বীপবাসীর জীবনযাত্রার মানে ব্যাপক পরিবর্তন আসবে। অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে প্রভূত পরিবর্তন ও উন্নয়ন ঘটবে। এ ফেরি সার্ভিস চালু হওয়ার ফলে শুধু চট্টগ্রামের সঙ্গে নয়, রাজধানীসহ সারাদেশের সঙ্গে সন্দ্বীপের সরাসরি যোগাযোগ ও যাতায়াত স্থাপিত হবে। ইতোমধ্যে ঢাকার সঙ্গে সন্দ্বীপের সরাসরি বাস সার্ভিস উদ্বোধন করা হয়েছে বিআরটিসির মাধ্যমে। যোগযোগ ও যাতায়াতের অপর্যাপ্ততা ও সংকটের কারণে সন্দ্বীপবাসীর অনেক কিছু থেকে বঞ্চিত থাকতে হয়েছে। অর্থনৈতিক কার্যক্রম বা ব্যবসা-বাণিজ্যের ক্ষেত্রে নানা রকম বিপাক ও অসুবিধায় পড়তে হয়েছে। এখন তার অবসানের সুযোগ তৈরি হলো। সন্দ্বীপ পর্যটনের জন্য একটি উত্তম স্থান। কিন্তু যাতায়াতের ব্যবস্থা উপযুক্ত না হওয়ার কারণে পর্যটকরা সন্দ্বীপ যাওয়ার আগ্রহ দেখাতো না। এখন এর পরিবর্তন হবে। পর্যটনের জন্য সন্দ্বীপকে প্রস্তুত করা হলে দলে দলে সেখানে মানুষ যাবে, সন্দ্বীপের অর্থনীতিতে যার ইতিবাচক প্রভাব পড়বে।
সন্দ্বীপ যেমন বঙ্গোপসারে জেগে ওঠা দ্বীপ, তেমনি হাতিয়া, কুতুবদিয়া, সেন্টমার্টিন, মহেশখালি, ভোলা ইত্যাদিও অনুরূপ দ্বীপ। এদের মধ্যে কিছু দ্বীপ মূল ভূখ-ের সঙ্গে সংযুক্ত, কিছু দ্বীপ বিচ্ছিন্ন। অপর বিচ্ছিন্ন দ্বীপগুলোতেও যদি ফেরি সার্ভিস চালু করা যায়, তাহলে ওই দ্বীপগুলোও জেগে উঠবে। জনজীবনযাপন ও অর্থনীতিতে অভূতপূর্ব অগ্রগতি সাধিত হবে। ওয়াকিবহাল মহলের অজানা নেই, দেশের দক্ষিণে সাগরঘেঁষে প্রকৃতিক নিয়মে চর ও সাগরে দ্বীপ জেগে উঠছে আবহমান কাল ধরে। এরকম চর ও দ্বীপের সংখ্যা হাজার হাজার। ইতোপূর্বে ইনকিলাবে প্রকাশিত এক খবরে উল্লেখ করা হয়েছিল, গত অর্ধশতকে জেগে ওঠা চর ও দ্বীপের পরিধি ১০ হাজার বর্গ কিলোমিটারে দাঁড়িয়েছে, যা দেশের মূল আয়তনের ১০ ভাগের এক ভাগের সমান। বাংলাদেশ অতিরিক্ত জনসংখ্যার দেশ, যার প্রতি বর্গ কিলোমিটারে যত লোক বাস করে; অন্য কোনো দেশে তত লোক বাস করে না। এই বিপুল সংখ্যক মানুষের বসবাসের জন্য, খাদ্যসহ অন্যান্য প্রয়োজনীয় কৃষিপণ্যের আবাদ উৎপাদনের জন্য জমি দরকার। মহান আল্লাহ চর ও দ্বীপ জাগিয়ে সেই জমির ব্যবস্থা করে দিচ্ছেন। আল্লাহর মেহেরবানীর কোনো শেষ নেই। নতুন জেগে ওঠা চর ও দ্বীপের অনেকগুলোতে বসত গড়ে উঠেছে, আবাদ-উৎপাদনও হচ্ছে। বনায়ন-বৃক্ষায়ন, মৎস্য শিকার ইত্যাদি চলছে। ডুবোচর ও দ্বীপগুলো উদ্ধার করার দ্রুত ব্যবস্থা নিলে দেশের আয়তনই শুধু বাড়বে না, সম্পদ আহরণের নবদিগন্ত উন্মোচিত হবে। বিশেষজ্ঞদের মতে, চর ও দ্বীপাঞ্চলে মৎস্যসহ বিভিন্ন রকম প্রাকৃতিক সম্পদ যেমন প্রচুর পরিমাণে আছে, তেমনি আছে তেল-গ্যাসসহ অন্যন্য খনিজ সম্পদ। এই প্রাকৃতিক ও খনিজ সম্পদ আহরণ ও ব্যবহার করতে পারলে দেশের অর্থনীতিতে ও জনগণের জীবনযাত্রায় বৈপ্লবিক পরিবর্তন অর্জিত হতে পারে। সরকারের উচিত, সম্পদ অনুসন্ধান ও আহরণে জোরালো উদ্যোগ ও পদক্ষেপ নেয়া। জেগে ওঠা চর ও দ্বীপগুলোর সংরক্ষণ ও উন্নয়নে কার্যকর ব্যবস্থা নেয়া দরকার একদিকে, অন্যদিকে কোথায় কী প্রাকৃতিক ও খনিজ সম্পদ রয়েছে, তার জরিপ ও অনুসন্ধান করা অত্যাবশ্যক।
জেগে ওঠা চরে ও দ্বীপে জনস্থানান্তর বা লোকবসতি স্থাপন, উন্নয়ন, সম্পদের জরিপ-অনুসন্ধান ইত্যাদির জন্য সর্বাগ্রে প্রয়োজন যোগাযোগ ও যাতায়াত ব্যবস্থা বিনির্মাণ। উপকূলীয় এলাকাসহ চর ও দ্বীপে যাতায়াতের জন্য পর্যাপ্ত রাস্তাঘাট প্রয়োজন। একই সঙ্গে সহজ নৌযোগাযোগও প্রয়োজন। সম্পদ থাকলেই হয় না, সম্পদ কাজে লাগানোর অনুকূল পরিবেশ ও ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে হয়। উপকূলীয় এলাকাসহ চর ও দ্বীপাঞ্চলের জন্য যোগাযোগ ও যাতায়াত অবকাঠামো গড়ে তোলা জরুরি। এ জন্য এমন একটি মহাপরিকল্পনা প্রণয়ন করা যেতে পারে, যে মহাপরিকল্পনায় উপকূলীয় এলাকার সঙ্গে সকল বিচ্ছিন্ন চর ও দ্বীপ সংযুক্ত হবে। চট্টগ্রাম-সন্দ্বীপ ফেরি সার্ভিস চালুর মাধ্যমে এই দু’অংশের মধ্যে কানেক্টিভিটির উন্নয়ন ও প্রসারণ ঘটানো হয়েছে। অনুরূপভাবে সম্ভাব্য সকল উপায় কাজে লাগিয়ে গোটা উপকূলীয় ও চর-দ্বীপে কানেকটিভিটি গড়ে তোলার বিকল্প নেই। আমরা আশা করবো, সরকার এ ব্যাপারে প্রয়োজনীয় কার্যব্যবস্থা গ্রহণ করবে।
বিভাগ : সম্পাদকীয়
মন্তব্য করুন
আরও পড়ুন

ফিলিস্তিনে গণহত্যার প্রতিবাদে নোবিপ্রবিতে সংহতি সমাবেশ ও মানববন্ধন

বান্দরবানে গভীর রাতে বিএনপির অফিস ভাংচুর করেছে সন্ত্রাসারী

শিশু গুলীবিদ্ধের ঘটনা আইয়্যামে জাহেলিয়াতের বর্বরতাকে হার মানিয়েছে: রেজাউল করিম

‘গাজার মুসলিমরা আজ অভিভাবক শূন্য, মুসলিম নেতারা ইসরায়েলের হাতে জিম্মি’

বৈষম্য বিরোধী কর্মচারী ঐক্য ফোরামের কার্য-নিবাহী কমিটি ঘোষণা

দাউদকান্দিতে বসতঘর ও রান্নাঘর দুর্বৃত্তদের আগুনে পুড়ে ছাই

নগরকান্দায় যৌথ বাহিনীর অভিযানে অস্ত্র সহ গ্রেফতার-৪

১১ দিন পর কড়ইতলী-গোবরাকুড়া স্থলবন্দরে আমদানি-রপ্তানি শুরু

পাঁচবিবিতে ফিলিস্থিনে ইসরাইলী হামলার প্রতিবাদে ছাত্রদলের বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ

বিরলে একটি রাস্তা নির্মাণকে কেন্দ্র করে দু’পক্ষের বিরোধ চরমে যে কোন মহুর্তে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষের আশংকা

প্রশিক্ষণ সঠিক ভাবে গ্রহন করলে দক্ষ গ্রাম পুলিশ গড়া সম্ভব- সিলেটে মহাপরিচালক আব্দুল কাইয়ূম

মালয়েশিয়া এয়ারলাইন্সের বাংলাদেশ কান্ট্রি ম্যানেজার হিসেবে যোগ দিলেন স্বর্ণা দাস

ঝিনাইদহে ভ্রাম্যমাণ আদালতের বিচারককে অবরুদ্ধ করে যাত্রীকে মারধর ১০ শ্রমিক বহিস্কার

বন্দরে অস্ত্র ঠেকিয়ে সাংবাদিক ব্যবসায়ীকে অপহরনের ঘটনায় সংবাদ সম্মেলন

জকিগঞ্জে যুবদলের উদ্যোগে ফিলিস্তিনের গাজায় গণহত্যা বন্ধের দাবীতে বিক্ষোভ

বরগুনায় পুলিশ কনস্টেবল চাকরিতে ঘুষ বাণিজ্য, ২ প্রতারক কারাগারে

কুলাউড়ায় পুলিশের উপর হামলা ও আসামী ছিনিয়ে নেয়ার অভিযোগ,আটক ৪

প্রতিবেশীকে বাঁচাতে গিয়ে হামলার শিকার-থানায় অভিযোগ

নাগেশ্বরী উপজেলা ও পৌর বিএনপির আহ্বায়ক কমিটি অনুমোদন

জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে নেই তাসকিন, নতুন মুখ তানজিম