ট্রাম্পের শুল্ক নীতি : বাংলাদেশকে যথাযথ উদ্যোগ নিতে হবে
০৪ এপ্রিল ২০২৫, ১২:২৩ এএম | আপডেট: ০৪ এপ্রিল ২০২৫, ১২:২৩ এএম

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প দ্বিতীয়বারের নির্বাচনী ক্যাম্পেইনের সময় বাণিজ্যিক অংশীদারদের উপর অন্তত ১০ শতাংশ শুল্ক বৃদ্ধির ঘোষণা দিয়েছিলেন। তিনি নির্বাচিত হওয়ার পর সে ধারায় নতুন মাত্রা যুক্ত করেছেন। চীনের মত দেশের সাথে যা’ ইতিমধ্যে বাণিজ্য যুদ্ধ হিসেবে গণ্য হচ্ছে। শেষ পর্যন্ত ঘোষিত নীতি অনুসারে ২০ শতাংশের উপরে, যা চীনা পণ্যের উপর ৬০ শতাংশ পর্যন্ত হতে পারে বলে প্রথমে জানা গেলেও ২ এপ্রিলে ঘোষিত শুল্ক বৃদ্ধির হারের তালিকায় চীন ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের চেয়ে বাংলাদেশ, ভিয়েতনাম ও শ্রীলঙ্কার পণ্যের উপর সর্বোচ্চ হারে ট্যাক্স বসানো হয়েছে । শুধু চীন, রাশিয়া, ভারতের মত স্ট্রাটেজিক প্রতিদ্বন্দ্বি দেশগুলোই ট্রাম্পের বাণিজ্য যুদ্ধের শিকার হচ্ছে না, ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও কানাডা-অস্ট্রেলিয়ার মত মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পুরনো বন্ধু রাষ্ট্রগুলোও ট্রাম্পের নয়া শুল্ক নীতির দ্বারা আক্রান্ত হয়ে পাল্টা ব্যবস্থা গ্রহণের কথা ভাবতে বাধ্য হচ্ছে। তবে বড় অর্থনীতির দেশগুলোর পাল্টা ব্যবস্থা গ্রহণের সক্ষমতা থাকলেও বাংলাদেশের মত ছোট ও দুর্বল অর্থনীতির দেশগুলোর সে সক্ষমতা নেই। পূর্ব ঘোষণা অনুসারে ২ এপ্রিল মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র শুল্কবৃদ্ধির বিস্তারিত প্রকাশ করেছে। দিনটিকে ট্রাম্প প্রশাসনের পক্ষ থেকে ‘লিবারেশন ডে’ বা স্বাধীনতা দিবস বলে ঘোষণা করা হলেও ট্রাম্পের এই নয়া শুল্ক নীতি বিশ্ববানিজ্য ও বিশ্ব অর্থনীতির জন্য একটি বড় ঝুঁকি ও চ্যালেঞ্জ সৃষ্টি করেছে। লিবারেশন ডে-তে ঘোষিত সিদ্ধান্ত অনুসারে বাংলাদেশি সকল পণ্যের উপর ৩৭ শতাংশ শুল্ক আরোপের কথা বলা হয়েছে, যা বাংলাদেশের তৈরী পোশাক খাতের জন্য অনেক বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়াবে। এ ক্ষেত্রে চীন ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের মত দেশগুলোর পাল্টা ব্যবস্থা গ্রহণ করে আলোচনার মধ্য দিয়ে সমঝোতার পৌঁছানোর সুযোগ থাকলেও বাংলাদেশের সে সুযোগ কম। তবে ড. ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অর্ন্তবর্তী সরকারের সাথে ট্রাম্প প্রশাসনের দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের প্রতিশ্রুতি ও আন্ত:যোগাযোগ এক নতুন উচ্চতা লাভ করেছে। নতুন শুল্ক ব্যবস্থার অধীনে বাংলাদেশের চ্যালেঞ্জসমুহ নিয়ে আলোচনার মধ্য দিয়ে সমাধানের পথ তৈরীর উদ্যোগ নিতে হবে।
বাংলাদেশের তৈরী পোশাক রফতানি খাতের প্রধান বাজার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের এমন শুল্ক বৃদ্ধির ঘোষণা দেশের শিল্প বিনিয়োগের উপর অনেক বড় ঝুঁকি সৃষ্টি করতে চলেছে। তবে প্রতিটি প্রতিকূল পরিস্থিতির একটা বিপরীত ইতিবাচক সম্ভাবনাও থাকে। লক্ষ্য করলে দেখা যায়, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে গার্মেন্ট রফতানির ক্ষেত্রে বাংলাদেশের প্রতিদ্বন্দ্বি দেশ ভিয়েতনাম ও শ্রীলঙ্কার উপর যথাক্রমে ৪৬ ও ৪৪ শতাংশ শূল্ক আরোপের ঘোষণা দেয়া হয়েছে। এ ক্ষেত্রে নতুন শুল্ক নীতির ভারসাম্য কিছুটা বাংলাদেশের অনুকুলে রয়েছে। তবে ভারত ও পাকিস্তানের শুল্ক বাংলাদেশের চেয়ে কম হওয়ায় তারা বাড়তি সুবিধা পেতে পারে। অবশ্য পরিবর্তিত রাজনৈতিক-অর্থনৈতিক বাস্তবতায় ড. ইউনূসের অর্ন্তবর্তী সরকারের গতিশীল ক’টনৈতিক যোগাযোগের যে লক্ষণ দেখা যাচ্ছে, তাতে উচ্চতর পর্যায়ে আলোচনা ও সমঝোতার মধ্য দিয়ে বাংলাদেশের উপর আরোপিত শুল্কসহ রফতানি পণ্যের মূল্য যৌক্তিক পর্যায়ে উন্নীত করা অসম্ভব নয়। সেই সাথে বাংলাদেশের গার্মেন্ট রফতানি বাণিজ্যের নতুন বাজার সৃষ্টি এবং রফতানি বহুমুখীকরণের উদ্যোগের উপর নতুন করে উদ্যোগ ও পদক্ষেপ নিতে হবে। সেই সাথে বাংলাদেশের ভূরাজনৈতিক গুরুত্ব এবং বাণিজ্যিক অংশীদারিত্বের প্রশ্নে সরকার, বিজিএমইএ এবং মার্কিন আমদানিকারকদের মধ্যে আন্ত:যোগাযোগ ও বৈষম্য দূরিকরণে ট্রাম্প প্রশাসনের সংশ্লিষ্টদের সাথে লবিং জোরদার করার উদ্যোগ নিতে হবে। মার্কিন শুল্ক আরোপের হার প্রকাশিত হওয়ার পর গতকাল প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে দেয়া এক পোষ্টে মার্কিন নতুন শুল্ক ব্যবস্থা নিয়ে বাংলাদেশ পর্যালোচনা করে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে বলে জানিয়েছেন। বিশেষত যুক্তরাষ্ট্র থেকে আমদানি করা পণ্যের শুল্ক পর্যালোচনা ও পুনর্বিবেচনার মাধ্যমে বিষয়টি নিয়ে আলোচনার সুযোগ রয়েছে। ট্রাম্প প্রশাসনের সাথে সরকারের কর্মক্ষেত্র ও সমঝোতার প্রশ্নে তিনি যথেষ্ট আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন।
ট্রাম্পের নতুন শুল্কনীতি মার্কিন অর্থনীতির জন্য কতটা সহায়ক হবে তা সময়ই বলে দেবে। তবে চীনের পাশাপাশি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ঘনিষ্ট পশ্চিমা সহযোগী ইউরোপীয় ইউনিয়ন পাল্টা শক্ত অবস্থানের ঘোষণা দিয়েছে। এটি শেষ পর্যন্ত একটি বৈশ্বিক বাণিজ্য যুদ্ধে পরিনত হয় কিনা সে আশঙ্কাও করছেন বিশ্লেষকরা। ডোনাল্ড ট্রাম্পের পরিকল্পিত পররাষ্ট্রনীতি, শুল্কবৃদ্ধি ও বাণিজ্য যুদ্ধ বিশ্বব্যবস্থার উপর মার্কিন সা¤্রাজ্যবাদী নিয়ন্ত্রণ সংহত করার অংশ। বিশ্লেষকরা এর নাম দিয়েছেন ট্রাম্পের অর্থনৈতিক জাতীয়তাবাদ। মুক্তবাজার অর্থনীতি ও পুঁজির অবাধ প্রবাহের এ যুগে একহাতে পণ্যের উপর শুল্ক আরোপের মধ্য দিয়ে পরিস্থিতি নিজেদের অনুকুলে রাখা কতটা সম্ভব তা আগেই অনুমান করা সম্ভব নয়। ট্রাম্পের নতুন শুল্কনীতির দীর্ঘমেয়াদী প্রভাব যাই হোক, এ বিষয়ে মার্কিন বাজারে ইতিমধ্যেই এক ধরণের নেতিবাচক প্রভাব দেখতে পাচ্ছেন বাজার বিশ্লেষকরা। মার্কিন শেয়ার বাজারে বড় বড় কোম্পানির সূচকে নি¤œগামিতা দেখা দিয়েছে। হাইটেক কোম্পানিগুলো শত শত কোটি ডলারের মূলধন হারাচ্ছে। নতুন বাস্তবতায় বাংলাদেশের জন্য নতুন সম্ভাবনা নিয়ে আসতে পারে। বিশেষত বাংলাদেশের প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী দেশগুলোর উপর আরোপিত শুল্কের হার বেশি হওয়ায় এমনিতেই এর সুফল বাংলাদেশ পেতে পারে। প্রধান উপদেষ্টার সুযোগ্য নেতৃত্ব এবং তাঁর সহকর্মীদের দক্ষতা ও আন্তরিক উদ্যোগে বাংলাদেশের সামনে নতুন বিনিয়োগ ও বিশাল অর্থনৈতিক সম্ভাবনা হাতছানি দিচ্ছে। এ সম্ভাবনাকে কাজে লাগানোই এ সরকারের মূল চ্যালেঞ্জ। পতিত স্বৈরাচারের লুটপাট ও আর্থিক খাত ধ্বংসের বিপরীতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নতুন শুল্কনীতির চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করে সামনে এগিয়ে যেতে পারলে বাংলাদেশের অগ্রযাত্রা কেউ ঠেকাতে পারবে না।
বিভাগ : সম্পাদকীয়
মন্তব্য করুন
আরও পড়ুন

মতলবে উপজেলা বিএনপির বর্ষবরণ আনন্দ শোভাযাত্রা

ফিলিস্তিনবাসীদের শান্তি কামনায় বিশেষ দোয়া মাহফিল

বর্ণাঢ্য ‘ড্রোন শো’ দেখে মুগ্ধ লাখো মানুষ

নতুন বছরে সংস্কার ও নির্বাচন নিয়ে অনিশ্চয়তা দূর হোক : মঞ্জু

বুধবার ঢাকায় আসছেন যুক্তরাষ্ট্রের দুই উপসহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী

পুরোনো পদে ফিরলেন গাঙ্গুলি

আসছে দক্ষিণ আফ্রিকা ইমার্জিং নারী ক্রিকেট দল

রূপায়ণ সিটিতে শতকন্ঠে বর্ষবরণ

বর্ষবরণকে স্বাগত জানিয়ে গাজীপুরে জেলা বিএনপির শোভাযাত্রা

আমরা নতুন বাংলাদেশে প্রবেশ করেছি: ফারুকী

ভারতীয়দের হজ কোটা ৮০ শতাংশ কমাল সৌদি

চীনা দূতাবাসের সৌজন্যে ঢাকার আকাশে ব্যতিক্রমী ড্রোন শো

নাসিরনগর প্রশাসনের বর্ষবরণে উপস্থাপক ছাত্রলীগ কর্মী, সাংবাদিককে এসিল্যান্ড বললেন কিছু হবে না!

মালয়েশিয়ার সাবেক প্রধানমন্ত্রী আব্দুল্লাহ আহমাদ মারা গেছেন

পহেলা বৈশাখ আমাদের সংস্কৃতি, ভালোবাসা আর আনন্দের প্রতীক : সমাজকল্যাণ উপদেষ্টা

নববর্ষে আইন শৃঙ্খলা সুরক্ষায় প্রশংসনীয় ভূমিকায় র্যাব - ৯

ছাত্রদলের সহ সভাপতির পদ থেকে পদত্যাগ করায় কুপিয়ে আহত করলো সভাপতি-সম্পাদক

সর্বাধুনিক যুদ্ধজাহাজ তৈরি করছে উত্তর কোরিয়া

লৌহজংয়ে বিএনপির পহেলা বৈশাখ উপলক্ষে আনন্দ শোভাযাত্রা

নতুন বছরের প্রথমার্ধে এর মাধ্যমে নির্বাচনের মাধ্যমে গণতন্ত্র ফিরে আসবে - প্রিন্স