সংবিধান পুনর্লিখন : প্রয়োজনীয়তা ও চ্যালেঞ্জ
১৪ অক্টোবর ২০২৪, ১২:১৪ এএম | আপডেট: ১৪ অক্টোবর ২০২৪, ১২:১৪ এএম
গলি থেকে রাজপথ, চায়ের দোকান থেকে বিদ্যারত্ন পাড়া- সর্বত্রই সংবিধান চর্চা চলছে। প্রথমেই আসা যাক সংবিধান জিনিসটা কী? আইন পন্ডিতর মতে, যেসব নিয়মের মাধ্যমে রাষ্ট্র পরিচালিত হয় সেগুলোকে একত্রে সংবিধান বলে। দার্শনিক এরিস্টটল বলেছেন, A constitution is the way of life that the state has chosen for itself. (অর্থাৎ, সংবিধান হল এমন এক জীবনপদ্ধতি, যা রাষ্ট্র স্বয়ং নিজে বেছে নিয়েছে)। যাই হোক, বাংলাদেশ এখন সংবিধান পুনর্লিখনের প্রেক্ষাপটে উপনীত হয়েছে। ৫ আগস্টের গণ-অভ্যুত্থান একটি তাৎপর্যপূর্ণ ঘটনা, যেখানে সাধারণ জনগণ তাদের ন্যায়বিচার, মানবাধিকার ও সুশাসনের দাবি নিয়ে জেগে উঠেছিল। এই ঘটনাটি দেশের রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা এবং সরকার কাঠামোর উপর এক প্রকার আস্থাসঙ্কটের জন্ম দেয়। তাই সংবিধান পুনর্লিখনের প্রয়োজনীয়তা এখন তীব্রভাবে অনুভূত হচ্ছে। এটা অনস্বীকার্য যে, বাংলাদেশে বর্তমান রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে নতুন বাস্তবতা সৃষ্টি হয়েছে। গণ-অভ্যুত্থানের মাধ্যমে জনসাধারণের মধ্যে গণতন্ত্র এবং সমতা প্রতিষ্ঠার তীব্র আকাক্সক্ষা প্রকাশ পেয়েছে। সংবিধান পুনর্লিখনের প্রয়োজনীয়তা অত্যন্ত স্পষ্ট হয়ে উঠেছে। ড. আলী রিয়াজ সংবিধান পুনর্লিখনের প্রয়োজন কেন, সে প্রসঙ্গে বলেন, ‘সংবিধান পুনর্লিখনের কথা বলছি এই কারণে যে, সংবিধান সংশোধনের উপায় নেই। বর্তমান সংবিধান সংশোধনের উপায় সীমিত। কারণ, সংবিধানের এক তৃতীয়াংশ এমনভাবে লেখা যে, তাতে হাতই দেওয়া যাবে না। এর মধ্যে এমন সব বিষয় আছে, যেগুলো না সরালে কোনো কিছুই করতে পারবেন না। এ কারণে পুনর্লিখন শব্দটা আসছে। পুনর্লিখনের পথ হিসেবে গণপরিষদের কথা বলছি। আর কোনো পথ আছে কিনা আমি জানি না।’
অধ্যাপক আলী রিয়াজ আরো বলেন, ‘আমার ব্যক্তিগত মতামত হচ্ছে, সংবিধানের পুনর্লিখন করতে হবে। এর বাইরে আপনি প্রতিষ্ঠানগুলো তৈরি করতে পারবেন না।’ প্রধান উপদেষ্টা যখন সংবিধান সংস্কারের জন্য ড. শাহদীন মালিককে সংস্কার কমিশনের প্রধান হিসেবে ঘোষণা করেছিলেন, তখন ড. শাহদীন মালিক প্রথম আলোর সঙ্গে সাক্ষাৎকারে বলেছিলেন, ‘আইনে সবসময় ভালো কথা লেখা থাকে। উদাহরণস্বরূপ, চুরি করা অপরাধ এবং এতে শাস্তি সাত বছরের জেল; কিন্তু চুরি তো হয়েই যাচ্ছে। আমি মনে করি, এখানে আইনের দোষ খুব কম। দোষ তাদের যারা আইন লঙ্ঘন করছে।’
কয়েকদিন পরে ড. শাহদীন মালিক এই পদ থেকে সরে দাঁড়ান এবং তার স্থলাভিষিক্ত হন অধ্যাপক ড. আলী রিয়াজ। ফলে সংবিধান সংস্কার কমিশন কি পুনর্লিখন কমিশনে পরিণত হয়েছে, এমন প্রশ্ন থেকেই যায়। এখন এই পুনর্লিখন জিনিসটা কী? বিদ্যমান সংবিধান বাতিল করে একটি সম্পূর্ণ নতুন সংবিধান প্রণয়ন করাই হলো সংবিধান পুনর্লিখন। সাধারণত রাজনৈতিক বিপ্লব, যুদ্ধ, গণ-অভ্যুত্থান বা সরকার কাঠামোর বড় ধরনের পরিবর্তনে সংবিধান পুনর্লিখনের প্রয়োজনীয়তা দেখা দেয়। প্রতিটি দেশ বা জাতির সংবিধান মূলত তাদের রাজনৈতিক, সামাজিক এবং অর্থনৈতিক আকাক্সক্ষার দলিল। কিন্তু বিদ্যমান আইনি কাঠামো জনগণের আকাক্সক্ষা ও চাহিদার সাথে সঙ্গতিপূর্ণ না হলে জনগণের নতুন চাওয়া-পাওয়ার ভিত্তিতে সংবিধান পুনর্লিখন অবশ্যম্ভাবী হয়ে ওঠে এবং সংবিধান পুনর্লিখনের মাধ্যমে জনগণ তাদের প্রত্যাশিত নতুন রাজনৈতিক চুক্তিতে উপনীত হয়, যার মাধ্যমে রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানের ওপর জনগণের আস্থা পুনঃপ্রতিষ্ঠিত হয়। গণতন্ত্রের প্রতি জনগণের আকাক্সক্ষা ও স্বাধীনতার ধারণাগুলো আরো সুসংহত হওয়ার সুযোগ তৈরি হয়।
সংবিধান পুনর্লিখনের ক্ষেত্রে কী ধরনের ঝুঁকি ও চ্যালেঞ্জ রয়েছে তা দেখা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। সংবিধান পুনর্লিখন একটি জটিল ও সময়সাপেক্ষ প্রক্রিয়া, যা সাধারণত বড় ধরনের আর্থিক এবং মানবসম্পদের প্রয়োজন হয়। বিভিন্ন দেশ থেকে প্রাপ্ত অভিজ্ঞতা অনুযায়ী এই প্রক্রিয়া দীর্ঘমেয়াদে চালিত হয় এবং কখনও কখনও এটি একটি দেশের পুরো রাজনৈতিক ও প্রশাসনিক ব্যবস্থাকে পুনর্গঠনের জন্য অনেক বছর সময় নেয়। যেমন, ইকুয়েডরে এই প্রক্রিয়াটি এক থেকে দুই বছর ধরে চলে। আনুমানিক ৩-৫ মিলিয়ন ডলারের মতো খরচ হয়েছে। ভেনেজুয়েলায় এই প্রক্রিয়াটি প্রায় এক বছর ধরে চলে। কেনিয়ায় কয়েক বছর ধরে চলে। এতে খরচ হয়েছিল প্রায় ৫৬ বিলিয়ন কেনিয়ান শিলিং। দক্ষিণ আফ্রিকায় এই প্রক্রিয়াটি প্রায় দুই বছর ধরে চলে। ধারণা করা হয়, এতে প্রচুর অর্থ ব্যায় হয়। ফিলিপাইনে সময় লেগেছিল এক বছরের মতো। নতুন সংবিধান প্রণয়ন করতে গিয়ে প্রাথমিকভাবে যে সময় এবং অর্থের প্রয়োাজন হয়, তা কেবল নতুন আইন এবং বিধিবিধান তৈরি করাতেই সীমাবদ্ধ থাকে না, বরং এটির বাস্তবায়ন এবং প্রশাসনিক কাঠামোতে তা কার্যকর করার জন্যও বড় ধরনের ব্যয় হয়।
সংবিধান পুনর্লিখনের ক্ষেত্রে অন্যতম বড় চ্যালেঞ্জ হল, এর সঙ্গে সংশ্লিষ্ট রাজনৈতিক ও সামাজিক বাস্তবতা। নতুন একটি কাঠামো গ্রহণ করার সময় যদি পুরনো কাঠামো থেকে প্রাপ্ত শিক্ষা বা অভিজ্ঞতাকে আমলে না নেওয়া হয়, তবে তা একটি অকার্যকর কিংবা অপূর্ণাঙ্গ নথিতে পরিণত হতে পারে। উদাহরণস্বরূপ, অনেক দেশেই রাজনৈতিক বিপ্লবের পর নতুন সংবিধান তৈরি করতে গিয়ে পুরনো কাঠামোর অভিজ্ঞতাকে অবহেলা করা হয়েছে, যার ফলে নতুন কাঠামো কার্যকর হতে দীর্ঘ সময় লেগেছে এবং প্রায়শই তা রাজনৈতিক বা সামাজিক সংকট তৈরি করেছে। ইরাকে ২০০৩ সালে মার্কিন আগ্রাসনের পর সংবিধান প্রণয়ন প্রক্রিয়াটি দ্রæততর করার চেষ্টা করা হয়েছিল। কিন্তু অনেক ক্ষেত্রে পুরনো শাসন কাঠামোর অভিজ্ঞতাকে বিবেচনায় না আনার ফলে রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে দীর্ঘমেয়াদী স্থিতিশীলতা অর্জনে দেশটি ব্যর্থ হয়েছে।
অপরদিকে, একটি নতুন সংবিধান বাস্তবায়নের প্রক্রিয়ায় যদি অর্থনৈতিক এবং প্রশাসনিক কাঠামো সঠিকভাবে পরিকল্পিত না হয়, তবে এটি দেশের অর্থনীতিতে নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে। সংবিধান পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে দেশের প্রশাসনিক, আইনগত এবং বিচারিক ব্যবস্থাগুলোকেও পুনর্গঠন করতে হয়, যা ব্যাপক মাত্রায় সরকারি ব্যয়ের প্রয়োজন হতে পারে। দক্ষিণ সুদানের মতো নতুন রাষ্ট্রগুলিতে সংবিধান প্রণয়ন ও বাস্তবায়নের প্রক্রিয়া যথেষ্ট দীর্ঘ হয়েছে এবং এর সাথে সম্পর্কিত অর্থনৈতিক ব্যয় এবং রাজনৈতিক অস্থিরতা দেশের স্থিতিশীলতাকে হুমকির মুখে ফেলেছে। দীর্ঘমেয়াদে এ ধরনের প্রক্রিয়া যদি সঠিকভাবে পরিচালিত না হয়, তবে তা দেশের অর্থনৈতিক বৃদ্ধি এবং উন্নয়নে ব্যাপকভাবে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করতে পারে।
সংবিধান পুনর্লিখন প্রক্রিয়ায় রাজনৈতিক পক্ষগুলোর মধ্যে সমঝোতা ও ঐকমত্যের অভাব থাকলে এটি সামাজিক অস্থিরতা সৃষ্টি করতে পারে। নতুন সংবিধান প্রণয়ন করতে গিয়ে যদি দেশের বিভিন্ন গোষ্ঠী বা সম্প্রদায়ের স্বার্থ রক্ষা না করা হয়, তবে তা সামাজিক বিভেদ এবং সংঘাতের সূত্রপাত ঘটাতে পারে। যেমন, আফগানিস্তানে ২০০১ সালে তালেবান পতনের পর ২০০৪ সালে নতুন সংবিধান প্রণয়নের সময় বিভিন্ন নৃতাত্তি¡ক গোষ্ঠী এবং রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে ঐকমত্যের অভাবে এটি একটি দীর্ঘমেয়াদী প্রক্রিয়ায় পরিণত হয়, যা দেশটির রাজনৈতিক স্থিতিশীলতায় দীর্ঘমেয়াদী প্রভাব ফেলেছে। বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে ৫ আগস্ট ২০২৪ সালের গণঅভ্যুত্থানের পর সংবিধান পুনর্লিখনের প্রশ্নটি বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ। তবে এটি অত্যন্ত ব্যয়বহুল এবং দীর্ঘমেয়াদী প্রক্রিয়া হতে পারে। কিন্তু সেটা যদি সঠিকভাবে এবং পরিকল্পিতভাবে না হয়, তবে তা দেশের অর্থনৈতিক অগ্রগতির ওপর বিরূপ প্রভাব ফেলতে পারে। একইসাথে সংবিধান প্রণয়নের সময় পুরনো অভিজ্ঞতা এবং দেশের রাজনৈতিক-সামাজিক বাস্তবতা বিবেচনায় না নিলে তা দেশের স্থায়িত্ব এবং অগ্রগতিকে হুমকির মুখে ফেলতে পারে।
সংবিধান পুনর্লিখনের সময় সর্বাপেক্ষা বেশি সর্তকতা অবলম্বন করতে হবে তা হল, বর্তমান পরিস্থিতি বিবেচনা করা এবং সংবিধান পুনর্লিখনের সময় অতীতের ভুলগুলোকে এড়িয়ে যাওয়া। অনেক দেশে এই প্রক্রিয়া সফল হলেও কিছু দেশে তা রাজনৈতিক উত্তেজনা ও সংঘর্ষের কারণ হয়েছে। উদাহরণস্বরূপ, মিশরের ২০১২ এবং ২০১৪ সালের সংবিধান প্রণয়ন রাজনৈতিক অস্থিরতার উদাহরণ। ২০১২ সালের সংবিধান প্রণয়ন চলাকালীন রাজনৈতিক বিরোধীদের মধ্যে তীব্র বিরোধ দেখা দেয় এবং জনগণের চাহিদার প্রতি অমনোযোগিতা দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি আরও জটিল করে তোলে। এর ফলে সে দেশের পরিস্থিতি সামাল দিতে সরকারি পদক্ষেপ হিসেবে ২০১৪ সালে নতুন সংবিধান প্রণয়ন করা হয়। তবে এই পরিবর্তনগুলোও জনগণের বৈধতা অর্জন করতে পারেনি। ফলে রাজনৈতিক অস্থিরতা চলতে থাকে।
ভেনিজুয়েলার সংবিধান পুনর্লিখন প্রক্রিয়া একটি গুরুত্বপূর্ণ উদাহরণ। ১৯৯৯ সালে হুগো শ্যাভেজের নেতৃত্বে নতুন সংবিধান প্রণীত হয়, যা জনগণের ভোটে অনুমোদিত হয়। কিন্তু পরবর্তী সময়, রাজনৈতিক বিরোধ ও অস্থিতিশীলতা বৃদ্ধি পায়। হুগো শ্যাভেজের শাসনামলে সংবিধানকে বিশেষ উদ্দেশ্যে ব্যবহার করে সরকার বিরোধীদের ওপর দমন-পীড়ন শুরু করে, যা রাজনৈতিক সংঘর্ষের জন্ম দেয়। বাংলাদেশেও একই ধরনের ঝুঁকি রয়েছে। যদি সংবিধান পুনর্লিখনের প্রক্রিয়া সঠিকভাবে পরিচালিত না হয়, তবে এটি জনগণের আস্থা হারাতে পারে। বিশেষ করে, যদি প্রক্রিয়াটিকে জনগণ বৈধ মনে না করে, তবে সেটি বিরোধ এবং সংঘাতের জন্ম দিতে পারে। সংবিধান সংশোধন বা পরিবর্তনের বিষয়ে এক প্রশ্নের জবাবে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ‘আমার ব্যক্তিগত বক্তব্য হচ্ছে, সংবিধান পরিবর্তন করতে হলে আগে মানুষের কাছে যেতে হবে, তারা কীভাবে সংবিধানের পরিবর্তনটা চায়। আরেকটা বিষয় আছে, আমি-আপনি-আমরা কয়েকজন এক্সপার্ট (বিশেষজ্ঞ) মিলে করে দিলাম, সেটা একটা। কিন্তু সংবিধানের আমূল পরিবর্তন বা নতুন সংবিধানে এটা করতে হলে আপনাকে গণপরিষদ করতে হবে। এ ক্ষেত্রে জনমতের বিষয়টি তো আছেই, তারপরে আইনগত দিকগুলোও দেখতে হবে।’ তাই সঠিকভাবে আলোচনার মাধ্যমে সম্মিলিত প্রক্রিয়ায় এই পুনর্লিখন করতে হবে।
বাংলাদেশে সংবিধান পুনর্লিখন প্রক্রিয়ায় সবার অংশগ্রহণ নিশ্চিত করার জন্য একটি সম্মিলিত প্রচেষ্টা অত্যন্ত জরুরি। ৫ আগস্ট ২০২৪ সালের গণ-অভ্যুত্থান দেশের মানুষের ঐক্য ও সমষ্টিগত আকাক্সক্ষার প্রতিফলন, যা দীর্ঘদিন ধরে চলে আসা বৈষম্য, শোষণ এবং ক্ষমতার অপব্যবহারের বিরুদ্ধে একটি সজাগ প্রতিবাদ। এই গণ-আন্দোলন প্রমাণ করেছে যে, জনগণ একটি নতুন ধরনের শাসন-কাঠামো চায়, যেখানে সবার অধিকার সুরক্ষিত থাকবে এবং সাম্য ও ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠিত হবে। সুতরাং, সংবিধান পুনর্লিখনের মাধ্যমে এমন একটি সমাজ গড়ে তোলার প্রয়োজনীয়তা অনস্বীকার্য, যেখানে প্রতিটি নাগরিকের অধিকার ও সমান সুযোগের নিশ্চয়তা থাকবে।
সংবিধান পুনর্লিখন এমন একটি প্রক্রিয়া, যা কেবলমাত্র বিশেষজ্ঞ বা রাজনৈতিক নেতাদের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকলে তা কখনো টেকসই ও কার্যকর হতে পারে না। এজন্য দরকার সমাজের প্রতিটি স্তরের মানুষের সক্রিয় অংশগ্রহণ। এর মাধ্যমে কেবল শাসনব্যবস্থা বা আইনি কাঠামোর সংস্কারই সম্ভব নয়, বরং একটি সুশৃঙ্খল গণতান্ত্রিক সংস্কৃতিও গড়ে তোলা সম্ভব, যেখানে সবার মতামত গুরুত্ব পায় এবং প্রতিটি শ্রেণী-পেশার মানুষ তাদের কণ্ঠস্বর শোনাতে পারে।
প্রথমত, সংবিধান পুনর্লিখনের আগে একটি সুসংগঠিত এবং ব্যাপক আলোচনাপর্ব শুরু করা প্রয়োজন। এই আলোচনায় দেশের বিভিন্ন রাজনৈতিক দল, সামাজিক সংগঠন, আইন বিশেষজ্ঞ, শিক্ষাবিদ এবং সাধারণ মানুষকে অংশগ্রহণের সুযোগ দিতে হবে। এক্ষেত্রে গণমাধ্যমের ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কারণ, গণমাধ্যমই হলো সেই মাধ্যম যা সাধারণ মানুষের কণ্ঠকে উচ্চারণ করার সুযোগ দেয়। গণমাধ্যমের মাধ্যমে সংবিধান প্রণয়ন প্রক্রিয়ার প্রতিটি ধাপ সম্পর্কে জনগণকে সচেতন করতে হবে এবং তাদের মতামত সংগ্রহ করতে হবে।
এই প্রক্রিয়ায় অংশগ্রহণের জন্য কেবল শহরের নয়, গ্রামাঞ্চলের মানুষদেরও সম্পৃক্ত করতে হবে। গ্রামের কৃষক, শ্রমিক, নারী, যুবক এবং ছাত্র-ছাত্রীদের মতামতও সংবিধানে প্রতিফলিত হতে হবে। এক্ষেত্রে আধুনিক প্রযুক্তির সাহায্যে দেশব্যাপী একাধিক গণশুনানি, ফোকাস গ্রæপ আলোচনা এবং জনমত জরিপের আয়োজন করা যেতে পারে। এছাড়া, দেশের সাংস্কৃতিক ও ধর্মীয় বৈচিত্র্য মাথায় রেখে সংবিধান পুনর্লিখনের সময় বিভিন্ন সম্প্রদায়ের প্রতিনিধিদের সাথে আলোচনা করা অত্যন্ত জরুরি। সংবিধানে সংখ্যালঘু, ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী এবং অন্যান্য প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর অধিকার এবং সুরক্ষা নিশ্চিত করতে হবে, যাতে দেশের প্রতিটি নাগরিকের সমান অধিকার এবং মর্যাদা প্রতিষ্ঠিত হয়। দক্ষিণ আফ্রিকার মতো দেশগুলোতে সংবিধান পুনর্লিখন প্রক্রিয়ায় এ ধরনের সমন্বয়মূলক প্রচেষ্টা দেখা গেছে, যেখানে বিভিন্ন জাতিগত এবং সামাজিক গোষ্ঠীর অধিকার সংরক্ষিত হয়েছে, যার ফলস্বরূপ দেশটি একটি স্থায়ী গণতান্ত্রিক কাঠামো প্রতিষ্ঠা করতে সক্ষম হয়েছে।
দক্ষিণ আফ্রিকার সংবিধানটি বর্ণবৈষম্য পরবর্তী একটি অন্তর্ভুক্তিমূলক সংবিধান হিসেবে গণ্য হয়, যেখানে নাগরিক অধিকার, রাজনৈতিক স্বাধীনতা এবং সামাজিক সাম্যের বিষয়গুলোতে গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে।
সংবিধান পুনর্লিখনের মাধ্যমে এমন একটি সরকারব্যবস্থা তৈরি করতে হবে, যেখানে গণতান্ত্রিক মূল্যবোধগুলো প্রতিষ্ঠিত হয় এবং জনগণের প্রত্যক্ষ অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা হয়। শক্তিশালী এবং স্বাধীন প্রতিষ্ঠান তৈরি করা দরকার, যা সরকারি ক্ষমতার অপব্যবহার প্রতিরোধে কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারবে। স্বাধীন বিচারব্যবস্থা, নির্বাচন কমিশন, এবং মানবাধিকার সংস্থা গঠন করতে হবে, যা সরকারের কাজকর্মের ওপর নজরদারি করতে পারবে এবং দেশের জনগণের স্বার্থে কাজ করবে।
লেখক: আইনজীবী, চট্টগ্রাম জেলা জজ কোর্ট।
বিভাগ : সম্পাদকীয়
মন্তব্য করুন
আরও পড়ুন
প্রবাসীদের যে জন্য সুখবর দিলো মালয়েশিয়া
জাবি শিক্ষার্থী মৃত্যুর ঘটনায় মামলা, তদন্ত কমিটি গঠন, ফটকে তালা, মশাল মিছিল
মাদকের বিরুদ্ধে শক্ত অবস্থানে থাকবে জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল
"নতুন সিনেমা নিয়ে ফিরছেন গ্লোবাল তারকা অ্যাঞ্জেলিনা জোলি"
ড. ইউনূসকে নিয়ে খালেদা জিয়ার পুরোনো যে বক্তব্য ভাইরাল
নতুন নির্বাচন কমিশনের প্রতি ইসলামী আন্দোলনের শুভ কামনা
আলোচনায় ফ্যাসিস্ট হাসিনার ‘টুস করে ফেলে দেয়ার’ হুমকি
দীর্ঘ ১৫ বছর সাংবাদিকরা বস্তুনিষ্ঠ সংবাদ পরিবেশন করতে পারেনি: খোকন
'ইউটিউব ট্রেন্ডিংয়ে রয়েছে অভিনেতা তারিক আনাম খানের নাটক'
বাংলাদেশ, নেপাল ও ভুটানের মধ্যে আঞ্চলিক সহযোগিতার আহ্বান
ইসলামিক ফাউন্ডেশন এর বোর্ড অব গভর্নর সৈয়দ মোসাদ্দেক বিল্লাহ আল মাদানীকে জমিয়াতুল মোদার্রেসীন ও দারুননাজাত মাদরাসা’র সম্বর্ধনা
সৈয়দ মোসাদ্দেক বিল্লাহ আল মাদানীকে জমিয়াতুল মোদার্রেসীন ও দারুননাজাত মাদরাসা’র সংবর্ধনা
লালমোহনে দুই গ্রুপের সংঘর্ষে আহত যুবদল নেতা চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যু
চকরিয়ার বিএনপি নেতা আবু তাহের চৌধুরীর মৃত্যুতে সালাহউদ্দিন আহমদ ও হাসিনা আহমদের শোক
উইন্ডিজের বিপক্ষে মাঠে নামছে বাংলাদেশ
বেইজিং সংস্কৃতি ও পর্যটন ব্যুরো ও আটাবের মধ্যে চুক্তি স্বাক্ষরিত
প্রেসিডেন্টের সঙ্গে তিন বাহিনীর প্রধানের সাক্ষাৎ
দেশের বাজারে ফের বাড়ল সোনার দাম
সবচেয়ে কম মূল্যে বাংলাদেশকে বিদ্যুৎ দিচ্ছে নেপাল: নেপাল রাষ্ট্রদূত
আগামী নির্বাচন নিয়ে দিল্লি ভয়ংকর পরিকল্পনা করছে: যুক্তরাষ্ট্র জাগপা