তারেক রহমান জাতীয় নেতায় পরিণত হয়েছেন
২০ ডিসেম্বর ২০২৪, ১২:০৮ এএম | আপডেট: ২০ ডিসেম্বর ২০২৪, ১২:০৮ এএম
৫ আগস্ট পরবর্তী নতুন বাংলাদেশে যদি জাতীয় নেতার কথা বিবেচনা করা হয়, তাহলে প্রথমেই যে নামটি আসে, তা হচ্ছে, বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের নাম। তিনি কেন জাতীয় নেতায় পরিণত হয়েছেন, তার ব্যাখ্যা করা অবশ্যক। ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনাকে উচ্ছেদে যে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থান হয়েছে, তাতে একক কোনো নেতৃত্ব ছিল না। ছিল অভিন্ন লক্ষ্য অর্জনে প্রায় দেড় শতাধিক শিক্ষার্থীর সমন্বিত নেতৃত্ব। অভ্যুত্থান সফল করতে তারা একে অপরের সাথে সমন্বয় করে কর্মসূচি ঠিক ও তা বাস্তবায়ন করেছেন। আন্দোলনের কর্মসূচি দিয়ে সকল শ্রেণী-পেশার মানুষকে অংশগ্রহণে উদ্ভুদ্ধ করেছেন। সাধারণ মানুষও দীর্ঘ প্রায় ১৬ বছর ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনার সীমাহীন নিপীড়ন, নির্যাতন, গুম, খুন, জেল-জুলুমের শিকার হয়ে তাকে উচ্ছেদে জীবনবাজি রেখে অভ্যুত্থানে অংশগ্রহণ করেছে। এই অভ্যুত্থান বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-আন্দোনের ব্যানারে হলেও এতে সকল শ্রেণি-পেশার মানুষ এবং বিএনপিসহ আওয়ামীবিরোধী সকল রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মী অংশগ্রহণ করেছিল। রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীরা অভ্যুত্থানের বড় শক্তি হয়েছিল। অভ্যুত্থানে শিক্ষার্থীসহ প্রায় দুই হাজার মানুষ হাসিনাবাহিনীর গুলিতে জীবন দিয়েছেন। হাত-পা, চোখ হারিয়ে আহত হয়েছেন প্রায় ত্রিশ হাজারের বেশি। নিহতদের মধ্যে বিএনপির প্রায় চার শতাধিক নেতাকর্মী ছিলেন। আবার হাসিনার ফ্যাসিজমের বিরুদ্ধে ১৬ বছর ধরে সবচেয়ে বেশি জীবন দিয়েছেন বিএনপিরই নেতাকর্মীরা। শুধু জীবনই দেননি, জেল-জুলুম, হামলা-মামলা, গ্রেফতার, গুমের শিকার এবং ঘরবাড়ি ছাড়া হয়েছেন। লাখ লাখ রাজনৈতিক ও গয়েবি মামলায় দলটির প্রায় ৬০ লাখ নেতাকর্মী আসামী হয়েছেন। দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ সিনিয়র অনেক নেতার বিরুদ্ধে শত শত মামলা করা হয়েছে। অনেকের বিরুদ্ধে চার থেকে পাঁচশ মামলা হয়েছে। ফ্যাসিস্ট হাসিনার বিদায়ের পরও তারা এই মামলা থেকে পুরোপুরি খালাস পাননি। শুধু দলের মহাসচিব ও অন্য নেতাদের বিরুদ্ধেই নয়, দলটির দুই প্রাণশক্তি চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়া ও ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের বিরুদ্ধে ফ্যাসিস্ট হাসিনা সরকার অনেক মিথ্যা মামলা করেছে। কোনো কোনো মামলায় তাদেরকে সাজা দেয়া হয়েছে। বেগম খালেদা জিয়াকে সাজা খাটতে হয়েছে। সাজা খাটতে গিয়ে তিনি জীবনমৃত্যুর সন্ধিক্ষণে চলে গিয়েছিলেন। এখনো পুরোপুরি সুস্থ হননি। তারেক রহমানের বিরুদ্ধে যাবজ্জীবনসহ বিভিন্ন মেয়াদে সাজা হয়েছে। মামলার কারণে তিনি দেশে ফিরতে পারেননি। এসব মিথ্যা মামলা থেকে তারা ধীরে ধীরে খালাস পাচ্ছেন। বেগম খালেদা জিয়া বন্দি, তারেক রহমান প্রবাসে, এমন এক পরিস্থিতিতে প্রবল পরাক্রমশালী ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে লড়াই করা কতটা কঠিন ছিল, তা দেশের মানুষ প্রত্যক্ষ করেছে। দেশের ইতিহাসে এমন লড়াই আর কোনো দলকে করতে হয়নি। কোনো দলের দুই শীর্ষ নেতার অনুপস্থিতিতে মৃত্যুকূপের মতো পরিস্থিতিতে টিকে থাকা অসম্ভব। এমন পরিস্থিতিতেও বিএনপি নামক দলটিকে তারেক রহমান টিকিয়ে রেখেছেন। কঠিনতম এ কাজটি তিনি কীভাবে সম্ভব করেছেন?
দুই.
ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনার সীমাহীন নিপীড়ন ও নির্যাতনের বর্বর যুগে যখন খুব আশাবদীরাও বিএনপিকে নিয়ে আশা করা ছেড়ে দিয়েছিলেন, কিছু হবে না, হাসিনার ফ্যাসিসজমের বিরুদ্ধে টিকে থাকতে পারবে না, তখন শহর থেকে ইউনিয়ন পর্যায়ের অনেক নেতাকর্মীর সাথে কথা বলেছি। তাদের কাছ থেকে জানতে চেয়েছি, কীভাবে এত হামলা-মামলা, গ্রেফতার, জেল-জুলুম, খুন, গুম, পরিবার-পরিজন থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে, ব্যবসাপাতি হারিয়ে টিকে আছেন? কী মোহে, কী আশায়, কোন মন্ত্রণায় তারা বিএনপিকে আঁকড়ে ধরে আছেন? তাদের কাছ থেকে যে উত্তর পেয়েছিলাম তা হচ্ছে, ‘দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার আপোসহীনতা এবং দেশনায়ক তারেক রহমানের দূর থেকে দূরদর্শী নেতৃত্ব আমাদের প্রেরণা হয়ে আছে। তারেক রহমান আমাদের সাথে সরাসরি ফোনে কথা বলতেন। দিক নির্দেশনা দিতেন, অনুপ্রাণিত করতেন। দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান যখন ইউনিয়ন পর্যায়ের একজন নেতাকে সরাসরি ফোন করে কথা বলেন, তখন এর চেয়ে বড় আর কী হতে পারে! তখন সব অত্যাচার-নির্যাতন, দুঃখ-কষ্ট ভুলে যেতাম। উজ্জীবিত হয়ে ফ্যাসিস্ট হাসিনার পুলিশ ও সন্ত্রাসীবাহিনীর গুলি বুকে নেয়ার জন্য চিতিয়ে দাঁড়াতাম। দলের কর্মসূচি সফল করতে ঝাপিয়ে পড়তাম। একজন দলপ্রধান যখন তাঁর হাজার হাজার তৃণমূল পর্যায়ের নেতাকর্মীর সাথে দিনরাত এক করে সরাসরি কথা বলেন, নাম ধরে ডাকেন, তখন বুঝতে বাকি থাকে না, বিএনপি কীভাবে টিকে ছিল। তখন সাধারণ মানুষের কাছ থেকে অহরহ শুনেছি, বিএনপিকে দিয়ে কিছু হবে না। এমনকি, বিএনপির ঘোর সমর্থকরাও হতাশার কণ্ঠে একই কথা বলতেন। তারা আশাহীন হয়ে পড়েছিলেন। আবার যখন, হাসিনাবাহিনীর বাধাবিঘœ ও গুলি উপেক্ষা করে বিএনপির নেতাকর্মী ও সাধারণ মানুষ জনসভাগুলোতে উপস্থিত হতো, তখন তারা টানেলের শেষ প্রান্তে আশার আলো দেখতেন। মিছিল-সমাবেশ পÐ হয়ে গেলে আশাহত হতেন। তখন তাদের বলতাম, আজ বিএনপির জায়গায় যদি আওয়ামী লীগ থাকত, তাদেরও একই অবস্থা হতো। বিএনপি যে, এই হাসিনার এই নিশ্চিহ্নকরণের মধ্যে টিকে আছে, আওয়ামী লীগ কি টিকে থাকতে পারত? পারত না। এত নিপীড়ন-নির্যাতন, মাঠে নামতে না দেয়া, নেতাকর্মীদের উদ্বাস্তু করে ধ্বংস প্রক্রিয়ার মধ্যেও যে বিএনপি টিকে ছিল, তার মূল কারণ হচ্ছে, প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের খাঁটি দেশপ্রেম এবং তাঁর দর্শন নেতাকর্মী ও সমর্থকদের অন্তরে ধারন করা। তারা দেখেছেন, জেনেছেন, বুঝেছেন, স্বাধীনতা যুদ্ধের আগেই আওয়ামী লীগের সব নেতা দেশকে অরক্ষিত করে ভারতে নিরাপদ স্থানে চলে গিয়েছিলেন। সেই সময় হানাদার বাহিনীর ক্রেকডাউনের মধ্যে নেতৃত্বহীন ও দিশেহারা পরিস্থিতিতে জিয়াউর রহমান স্বাধীনতার ঘোষণা দিয়ে জাতিকে ঐক্যবদ্ধ করে মুক্তিযুদ্ধে নামার আহŸান জানিয়েছিলেন। তিনি তখন মেজর ছিলেন। তার উপরে অনেক জেনারেল ছিলেন, তারা কেউ জিয়াউর রহমানের মতো বিদ্রোহ করে নেতৃত্বহীন দেশে স্বাধীনতা ঘোষণার তাকিদ অনুভব করেননি। এ কথা চিন্তাও করেননি। একজন মধ্যমসারির অফিসার হয়ে জিয়াউর রহমান স্বাধীনতা ঘোষণার যে চিন্তা করেছেন, এ চিন্তা তখন কেউ করেননি। জিয়াউর রহমান সে চিন্তা করেছেন এবং অসীম সাহস নিয়ে এবং খাঁটি স্বাধীনতাকামী হয়ে স্বাধীনতার ঘোষণা দিয়ে সম্মুখ যুদ্ধে নেমেছিলেন। দেশের স্বাধীনতার জন্য তাঁর এই যে ভূমিকা, এটা দেশপ্রেমিক স্বাধীনতাকামী মানুষের মন ও মননে তখন থেকেই গেঁথে রয়েছে। আওয়ামী লীগ তাঁর এই ভূমিকা অস্বীকার করে মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস নিজের মতো করে বয়ান করা শুরু করে। প্রখ্যাত বুদ্ধিজীবী, লেখক ও চিন্তক বদরুদ্দীন উমর এক সাক্ষাৎকারে স্পষ্ট করেই বলেছেন, মুক্তিযুদ্ধে নেতৃত্ব দূরের কথা শেখ মুজিবুর রহমান জানতেনই না যুদ্ধ হচ্ছে। স্বাধীনতা যুদ্ধকে প্রথম থেকে এমনভাবে বলা হয়েছে যে, শেখ মুজিবই এ যুদ্ধের মহানায়ক। পরবর্তীতে শেখ হাসিনা মুক্তিযুদ্ধের কথা এমনভাবে বলতেন যেন, তাদের পরিবার যুদ্ধ পরিচালনা করেছে। একেবারেই ভুয়া কথা। তিনি বলেছেন, আওয়ামী লীগের প্রস্তুতি ছিল একটা বায়বীয় ব্যাপার। অথচ যুদ্ধের জন্য আসল শক্তি হচ্ছে, সামরিক শক্তি। তার কোনো প্রস্তুতি আওয়ামী লীগের ছিল না। শেখ মুজিব বাংলাদেশের স্বাধীনাত চাননি। তিনি চেয়েছিলেন, পাকিস্তানের রাষ্ট্রীয় কাঠামোর মধ্যে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী হতে।’ স্বাধীনতার এই প্রকৃত ইতিহাস আড়াল করে আওয়ামী লীগ স্বাধীন বাংলাদেশকে তাদের পৈত্রিক সম্পদ মনে করে যা খুশি তা করেছে। অথচ প্রকৃত সত্য হচ্ছে, জিয়াউর রহমান স্বাধীনতার ঘোষণা দিয়ে যুদ্ধে নেমে পড়েছিলেন। স্বাধীনতার পর জিয়াউর রহমান তার চাকরিতে ফিরে গিয়েছিলেন। স্বাধীনতা ঘোষণা এবং মুক্তিযুদ্ধের উদ্যোগ নেয়ার কৃতিত্বের কথা তিনি কখনো বলেননি। বলার প্রয়োজন মনে করেননি। কারণ, দেশের মানুষ তা জানে। দেশের প্রয়োজনেই তিনি ভূমিকা রেখেছেন। রাজনৈতিক যুদ্ধ আর সামরিক যুদ্ধ এক নয়। দেশ স্বাধীন করতে হলে সশস্ত্র যুদ্ধ করতে হয়। আলোচনা দিয়ে হয় না। জিয়াউর রহমান জীবন বাজি রেখে এবং দেশের মানুষকে জীবন বাজি রাখতে ঐক্যবদ্ধ করে সশস্ত্র যুদ্ধের ঘোষণা ও যুদ্ধ করেছেন। স্বাধীনতার পর দেশ যখন আবার বিপদে পড়েছে, তিনি এগিয়ে এসেছেন। ’৭৫ সালের ৭ নভেম্বরে ঐতিহাসিক সিপাহী-জনতার বিপ্লবের মধ্য দিয়ে তিনি আবির্ভূত হয়েছেন। দেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব বিপন্নের হাত থেকে বাঁচানোর জন্য হাল ধরেছেন। এমন বীর ও দেশপ্রেমিকের স্ত্রী ও সন্তান দেশপ্রেমিক হবে, এটাই তো স্বাভাবিক। তার দলের নেতাকর্মীসহ বিপুল মানুষ তাতে শামিল হবে, এটাও স্বাভাবিক। তাই হয়েছে। ফলে জিয়াউর রহমানের মতো বেগম খালেদা জিয়ার আপোসহীনতা এবং তারেক রহমানের মেধাদীপ্ত নেতৃত্ব ও দূরদর্শিতার কারণে ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনার শত নিপীড়ন-নির্যাতন, খুন-গুম, হামলা-মামলা, গ্রেফতার, জেল-জুলুমের মধ্যেও বিএনপির নেতাকর্মীরা অসীম ত্যাগ স্বীকার করে টিকে আছেন এবং থাকবেন।
তিন.
সম্প্রতি দৈনিক ইনকিলাব আগামী জাতীয় নির্বাচন নিয়ে দেশব্যাপী একটি জরিপ করে। সেই জরিপে ৬১ ভাগের বেশি মানুষ সেই নির্বাচনে বিএনপিকে ভোট দিয়ে বিজয়ী করবে বলে মত দিয়েছে। দেখা যাচ্ছে, বিএনপি দেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষের প্রতিনিধিত্ব করছে। সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন হলে বিএনপিই আগামীতে এককভাবে সরকার গঠন করবে। তবে বিএনপির এই জয়ের পথে অনেক বাধা ইতোমধ্যে দৃশ্যমান হয়ে উঠেছে। তারেক রহমান তা বারবার দলের নেতাকর্মীদের স্মরণ করিয়ে সতর্ক করে দিচ্ছেন। ইতোমধ্যে, অভিযোগ উঠেছে, তথাকথিত কিংস পার্টির নামে দল গড়ে তোলা হচ্ছে। এটা যে, বিএনপিকে মূল প্রতিদ্ব›দ্বী ভেবে গড়ে উঠছে, তাতে সন্দেহ নেই। তারেক রহমান তাঁর দূরদর্শী চিন্তা দিয়ে নতুন বাংলাদেশের শুরুতেই তা উপলব্ধি করে নেতাকর্মীদের সাবধান করে দিয়েছেন। এটা সত্য, প্রায় ১৭ বছর বিএনপির নেতাকর্মীরা ফ্যাসিস্ট হাসিনার যে নিশ্চিহ্নকরণ প্রক্রিয়ার শিকার হয়েছিলেন, তা থেকে মুক্ত হয়ে আনন্দের আতিশয্যে বিভ্রান্ত হতে পারেন। এখানেই তারেক রহমান তাদেরকে সতর্ক করে দিয়ে বলেছেন, আমাদের আরও অনেক পথ পাড়ি দিতে হবে। যুদ্ধ এখনো শেষ হয়নি। ধৈর্য ধরতে হবে। তিনি যথার্থই বলেছেন। কারণ, যত দিন যাচ্ছে, দৃশ্যমান ও অদৃশ্য শক্তি বিএনপির পথে কাঁটা বিছাতে শুরু করেছে। বিএনপিকে এই কণ্টকাকীর্ণ পথ পাড়ি দিয়েই মূল গন্তব্যে পৌঁছতে হবে। এর ব্যতিক্রম হলে বিপদ অনিবার্য। দেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব আবারও ঝুঁকির মধ্যে পড়তে পারে। এমন পরিস্থিতিতে তারেক রহামান বিএনপি ক্ষমতায় গেলে দেশ ও জাতির জন্য কী করবেন, তা অত্যন্ত বিচক্ষণতার সাথে তুলে ধরছেন। সভা-সেমিনার, জনসমাবেশের মাধ্যমে দেশের মানুষের কাছে, সে বার্তা পৌঁছে দিচ্ছেন। আজকে যে সংবিধান ও রাষ্ট্র সংস্কার করার কথা বলা হচ্ছে, এ সংস্কারের কথা বিএনপি গত বছরের জুলাইয়ের মাঝামাঝি ৩১ দফার মাধ্যমে তুলে ধরেছে। স্বাধীনতার ৫৪ বছরে এ ধরনের সংস্কারের কথা কোনো দল বা ব্যক্তি বলেনি। সংবিধান ও রাষ্ট্রযন্ত্র যে সময়ের সাথে তাল মিলিয়ে পরিবর্তন করা প্রয়োজন, এ প্রয়োজনীয়তা অন্য কেউ উপলব্ধি করেনি। তারেক রহমান সেই উপলব্ধি করেছেন। আধুনিক ও যুগোপযোগী চিন্তা ও দর্শন নিয়ে তিনি দেশকে এগিয়ে নেয়ার কথা ভেবেছেন। জাতীয় নেতাদের চিন্তা-ভাবনা এমনই হতে হয়। তাদের চিন্তায় দেশ ও জনগণ থাকে। শুধু দলের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকে না। তারেক রহমান দেশের অর্থনীতি, রাজনীতি, কূটনীতি, গণতন্ত্র, আইনের শাসন, বাকস্বাধীনতা, মানবাধিকার, সামাজিক ও পারিবারিক মূল্যবোধ, তরুণ প্রজন্মের আকাক্সক্ষাসহ রাষ্ট্রের সকল বিষয় নিয়ে অত্যন্ত গঠনমূলক ও বাস্তবতার আলোকে জনগণের সামনে তুলে ধরছেন। দেশের মানুষ কী চায়, তা অনুধাবন করেছেন। ফলে তাঁর প্রত্যেকটি বক্তব্য ও বিবৃতি সাধারণ মানুষ তো বটেই সমালোচকদের কাছেও গ্রহণযোগ্যতা পাচ্ছে। সবচেয়ে বড় বিষয় হচ্ছে, তিনি তাঁর সমালোচনাকে ইতিবাচক হিসেবে দেখছেন এবং সমালোচনাকে উৎসাহিত করছেন। যেমন ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের পরপর তাঁকে নিয়ে একজনের ব্যঙ্গ কার্টুন নিজ ফেসবুকে শেয়ার করে তাকে স্বাগত এবং তা অব্যহত রাখার আহŸান জানিয়েছেন। এর মাধ্যমে তিনি এই বার্তা দিয়েছেন, গণতন্ত্র ও ভিন্নমতের প্রতি তিনি শ্রদ্ধাশীল, পাশাপাশি তিনি সমালোচনাকে ইতিবাচকভাবে গ্রহণ করেন। একজন জাতীয় নেতাকে যেমন সহনশীল, ভিন্নমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হতে হয়, তেমনি দেশকে সার্বিকভাবে সভ্য ও উন্নতির পথে এগিয়ে নেয়ার চিন্তা ও দর্শন থাকতে হয়। তারেক রহমান সেই পথেই হাঁটছেন, যা একজন জাতীয় নেতার পরিচায়ক। একজন জাতীয় নেতাকে দেশের প্রত্যেক শ্রেণী ও পেশার মানুষের দিকে দৃষ্টি থাকতে হয়। তাদের সুবিধা-অসুবিধা অনুধাবন করে যথাযথ পদক্ষেপ নিতে হয়। তারেক রহমান তা করছেন। ছাত্র-জনতার বিপ্লবে হাজার হাজার শিক্ষার্থী ও সবশ্রেণীর মানুষ আহত-নিহত হয়েছে। তিনি শুরু থেকেই নিজ দল বিএনপিকে নিয়ে তাদের পাশে দাঁড়িয়েছেন। তাদের চিকিৎসাসহ আর্থিক সহায়তা প্রদান করছেন। তাদের খোঁজ-খবর নিচ্ছেন। তিনি জাতীয় নেতায় পরিণত হয়েছেন বলেই এ কাজ করতে পারছেন।
চার.
ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনা সরকারের বিরুদ্ধে ১৬ বছর ধরে যে নিরন্তর আন্দোলন-সংগ্রাম বিএনপি করেছে, তার মোহনা এসে মিশেছিল ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে। এটা অস্বীকার করার উপায় নেই। কারণ, সে সময় ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনা ঠিকই বুঝতে পেরেছিলেন, ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের পেছনে বিএনপি রয়েছে এবং বলেছেনও এটা শিক্ষার্থীদের আন্দোলন নয়, তাদের বিভ্রান্ত করা হচ্ছে। এজন্য, বিশ্ববিদ্যালয়ের হলগুলো বন্ধ করে দিয়েছিলেন। শিক্ষার্থীদের আন্দোলন থেকে সরে যাওয়ার আহŸান জানিয়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী দিয়ে সর্বাত্মক অভিযান চালানোর ঘোষণা দিয়েছিলেন। শিক্ষার্থীরা যাননি এবং বিএনপির নেতাকর্মীরাও তাদের সাথে ছিলেন। অভ্যুত্থানে বিএনপির চার শতাধিক নেতাকর্মীর শহীদ হওয়া এবং হাজার হাজার আহত ও পঙ্গু হওয়া থেকেই তা বুঝতে অসুবিধা হয় না। এই যে অভ্যুত্থানে বিএনপির নেতাকর্মীরা জীবন বাজি রেখে লড়েছেন, কার নির্দেশে? এ নির্দেশ দিয়েছেন তারেক রহমান। তিনি প্রকাশ্যেই ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে দলের নেতাকর্মীদের যোগ দিতে নির্দেশ দিয়েছিলেন। ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে দীর্ঘ দেড় দশকের বেশি সময় আন্দোলন-সংগ্রাম, নেতাকর্মীদের জীবন দেয়ার অভিজ্ঞতা ও দূরদর্শিতা দিয়ে সঠিক সময়ে সঠিক সিদ্ধান্ত নিয়ে দলের নেতাকর্মীদের ঝাপিয়ে পড়ার নির্দেশ দিয়েছিলেন। হাসিনার পতন ও পালানোর পর নতুন যে বাংলাদেশের সূচনা হয়েছে, তাতে কোনো কোনো দলকে কৃতিত্ব নিতে দেখা যায়। আড়েঠারে বোঝাতে চায়, এ অভ্যুত্থান তাদের আন্দোলনের ফসল। যে অন্তর্বর্তী সরকার গঠিত হয়েছে, তা তাদের। এক্ষেত্রে ব্যতিক্রম তারেক রহমান। তিনি ও তাঁর দল বিএনপি একক কৃতিত্বের দাবি না করে ধ্বংসের দ্বারপ্রান্ত থেকে বাংলাদেশকে তুলে এনে কীভাবে পুনর্গঠন করা যায়, সেদিকে মনোনিবেশ করেছেন। গত ৮ ডিসেম্বর বরিশাল ও রংপুরে বিএনপির এক কর্মশালায় তিনি বলেছেন, ‘বিএনপি একা নয়, সকল শ্রেণি-পেশার মানুষ একত্রিত হয়ে স্বৈরাচারকে বিদায় করেছে। দেশের পুনর্গঠনে জাতীয় সরকারের প্রয়োজন রয়েছে। উচ্চাকাক্সক্ষা গঠনের মাধ্যমে বিশেষজ্ঞদের সম্পৃক্ত করতে হবে। সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে সেই প্রস্তুতি নিতে হবে। জনগণের আস্থা, আশা রক্ষা করাই এখন আমাদের বড় কাজ।’ একজন জাতীয় নেতাকে এভাবেই কথা বলতে হয়। তারেক রহমান এখন সেই জাতীয় নেতায় পরিণত হয়েছেন, যিনি ব্যর্থতাকে এককভাবে নিজের কাঁধে তুলে নেন, আবার বিজয়ের কৃতিত্ব সবাইকে দেন।
বিভাগ : সম্পাদকীয়
মন্তব্য করুন
আরও পড়ুন
শেখ হাসিনাসহ ৬৩ জনের নামে মামলা
অভিযানের খবরে পালাল শ্রাবণধারা কারখানার পরিচালক-ম্যানেজার
সর্বজনীন পেনশন স্কিমে নেই আশানুরূপ সাড়া
একতাই পারবে দেশের সার্বভৌমত্ব রক্ষা করতে
তিতাস গ্যাস টি.এন্ড ডি. পিএলসি’র ৫% নগদ লভ্যাংশ অনুমোদিত
ভারপ্রাপ্ত সভাপতি আল্লামা সাজিদুর নির্বাহী সভাপতি মাওলানা জুনায়েদ
‘আপনারা আমার খালেদকে ফেরত এনে দেন’ : নিখোঁজ সহ-সমন্বয়কের বাবা লুৎফর
২৮ ডিসেম্বর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে খেলাফত মজলিসের অধিবেশন প্রেস ব্রিফিংয়ে নেতৃবৃন্দ
ইসলামী ছাত্র আন্দোলন বাংলাদেশের পূর্ণাঙ্গ কমিটি ঘোষণা
ইনসেপ্টার বিক্রয় প্রতিনিধির ২২টি ব্যাংক হিসাব অবরুদ্ধ
পিকে হালদারের পাঁচ সহযোগীর ব্যাংক হিসাব ফ্রিজের নির্দেশ
ভূমধ্যসাগরে ৮ বাংলাদেশি নিহত
মুক্তি পেলেন ভারতের সমুদ্রসীমায় গ্রেফতার ১২ বাংলাদেশি
আ.লীগকে পুনর্বাসনকারীদের বিরুদ্ধে গণপ্রতিরোধ গড়বে গণঅধিকার পরিষদ
অন্তর্বর্তী এ সরকারের মধ্যে দুটি সরকার রয়েছে : মাহমুদুর রহমান মান্না
হাসিনার নভোথিয়েটার দুর্নীতি মামলার পুনঃতদন্ত শুরু
১১ ইউনিটে ছাত্রদলের কমিটি ঘোষণা
বাংলাদেশসহ ২০টিরও বেশি দেশ ব্রিকসে আগ্রহী : পুতিনের সহকারী
গেটজ কেলেঙ্কারিতে বিদ্ধ ট্রাম্প
সিরিয়ার পাশে থাকার আশ্বাস জর্ডান ও কাতারের