আন্দোলনে সংহতি জানানোয় বাসা ছেড়ে পালাতে হয় তাসরিফকে

Daily Inqilab বিনোদন ডেস্ক

১৭ আগস্ট ২০২৪, ০১:১৫ পিএম | আপডেট: ১৭ আগস্ট ২০২৪, ০১:১৫ পিএম

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে অংশ নেয়া সাধারণ শিক্ষার্থীদের ওপর দফায় দফায় হামলা, নির্যাতন ও গুলি চালানোর ঘটনার কথা সবার জানা। সাধারণ শিক্ষার্থী ও মানুষের রোষানলে পড়ে গত ৫ আগস্ট প্রধানমন্ত্রীর ক্ষমতা থেকে পদত্যাগ করে দেশ ছেড়ে পালিয়ে যান শেখ হাসিনা। এদিকে শিক্ষার্থীরা আন্দোলনে জয় পেলেও এর আগ পর্যন্ত তাদের ওপর নির্যাতন করা হয়েছে। একইভাবে সংগীত ও শোবিজ তারকা, কনটেন্ট ক্রিয়েটর ও সোশ্যাল মিডিয়া ইনফ্লুয়েন্সারদের সরকারের পক্ষে কথা বলার জন্য চাপ প্রয়োগ করা হয়েছিল বলে অভিযোগ অনেকের। এবার এ বিষয়ে কথা বললেন তরুণ সংগীতশিল্পী তাসরিফ খান।

 

‘কুঁড়েঘর’ গানের দলের তরুণ এই গায়ক বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন চলাকালে ‘রাজার রাজ্যে সবাই গোলাম’ শীর্ষক একটি গানের মাধ্যমে প্রতিবাদ জানিয়েছিলেন। সবমিলে আন্দোলনের পক্ষে কথা ছিলেন তাসরিফ খান। এ কারণে গত জুলাইয়ে মানসিক নির্যাতনের শিকার হতে হয়েছে তাকে। ব্যান্ডের ড্রামার শান্তকে রড দিয়ে বেধড়ক মারধরও করা হয়েছিল। তারই বর্ণনা দিয়েছেন তরুণ প্রজন্মের এ গায়ক।

 

বৃহস্পতিবার (১৫ আগস্ট) রাত সাড়ে ১১টায় ফেসবুক ভেরিফায়েড পেজে এক স্ট্যাটাসে তাসরিফ খান ‘কিছু নির্মম ইতিহাস টাইমলাইনে থাকুক’ শিরোনাম দিয়ে লিখেছেন, ‘২৩ জুলাই রাত ১টার কথা বলছি। একজন সিনিয়র ইনফ্লুয়েন্সার কল দিয়ে বললেন, “তাসরিফ, তোর বাসার নিচে নাম, চা খাইতে আসতেছি, গুরুত্বপূর্ণ কিছু কথা আছে।” ৫ জুলাই থেকে ছাত্রদের পক্ষে বিভিন্ন পোস্ট করা, কবিতা লিখতে থাকা এবং “রাজার রাজ্যে সবাই গোলাম” গানটা ফেসবুকে চলতে থাকায় সরকারি গুন্ডা বাহিনীর থ্রেটে আমি তখন বাসার বাইরে অবস্থান করছিলাম। ওই সিনিয়র ইনফ্লুয়েন্সারের কথায় বিশ্বাস করে, আমি তখন বাসার সামনে আসি উনার সঙ্গে দেখা করতে। গাড়ি থেকে ৬-৭ জনের মতো নেমে আসে। ইনফ্লুয়েন্সার সাহেব আমাকে একটু সাইডে নিয়ে আস্তে করে বুঝিয়ে বলে, “সঙ্গে যারা আছে তারা একটা এজেন্সির লোক এবং আইন প্রয়োগ সংস্থার বাহিনীর কয়েকজনও আছে এখানে।” আমি তখন উনার কাছে জানতে চাই যে উনারা কেন এসেছেন এবং কি চাচ্ছেন মূলত।’

 

‘উনি তখন বুঝায় বলে, “সরকারি একটা কাজ আছে, এই সরকার আরও ৭-৮ বছর ক্ষমতায় থাকব। আমরা ঠিকমত বাঁচতে চাইলে সরকারের পক্ষে কাজ করতে হইব, এর বাইরে কোনো রাস্তা নাই।” এই কথা বলে উনি আবার আমাকে গাড়ির কাছে নিয়ে যায়। সেই ৬-৭ জনের মধ্য থেকে একজন আমাকে বলে, “তাসরিফ, তোমাকে আমরা চিনি। আমরা তোমাকে একটা স্ক্রিপ্ট দিতেছি, ছোট্ট একটা ভিডিও করতে হবে। এই ভিডিওটা আমাদের কালকের মধ্যে লাগবে। পরশু সরাসরি প্রধানমন্ত্রী এই ভিডিওটা দেখবে এবং তারপর তুমি আপলোড করবা।” সেই ইন্সুরেন্সার তাদের সঙ্গে সুর মিলিয়ে আমাকে বলে, “দেখ তাসরিফ, পিএম’র চোখে পড়ার এটাই সুবর্ণ সুযোগ, ভিডিওটা ভালো করে কর, সরকার যতদিন আছে সুবিধা পাবি।” কথা শেষ করার আগেই উনি পকেট থেকে এক লাখ টাকার তিনটি বান্ডেল, মোট তিন লাখ টাকা আমার হাতে ধরিয়ে দিয়ে বলে, “এইটা সামান্য ছোট একটা গিফট। টাকা যত চাস, তত দেয়া হবে, ভিডিওটা সুন্দর কইরা কর।”’

 

তাসরিফ খান লিখেছেন, ‘ঠিক এই সময় আমার ফোনে আমার ব্যান্ডের ড্রামার শান্তর নম্বর থেকে একটা ফোন আসে। ফোন রিসিভ করতেই শান্ত আমাকে কাঁদতে কাঁদতে বলে, “তাসরিফ, পাঁচ-ছয় জন পুলিশ এবং সিভিল ড্রেসের কয়েকজন মিলে আমাকে রোল দিয়া সারা শরীরে মারছে।” শান্তর কথা শুনে আমার হাত-পা একরকম কাঁপতে থাকে। আমি বোঝার চেষ্টা করি, এই মাইর খাওয়াটা কি আমাকে এদিকে রাজি করানোর জন্য, ভয় দেখানো? নাকি কেবলমাত্র একটা বিচ্ছিন্ন ঘটনা? শান্তর লাইন কেটে যায়। আমি আমার পাশে দাঁড়িয়ে থাকা আইন প্রয়োগকারী সংস্থার পরিচয় দেয়া তাদেরকে বলি, “ভাই, এইমাত্র কয়েকজন মিলে আমার ভাই, আমার ব্যান্ডের ড্রামার শান্তকে প্রচুর মারছে।” ওরা জাস্ট আমাকে সান্ত্বনা দিয়ে বলে, “আরেহ, দেশের যে অবস্থা, এটা এখন কিছু করা যাবে না। ওরে বলো বাসায় চলে যাইতে।”

 

‘উনি তখন বুঝায় বলে, “সরকারি একটা কাজ আছে, এই সরকার আরও ৭-৮ বছর ক্ষমতায় থাকব। আমরা ঠিকমত বাঁচতে চাইলে সরকারের পক্ষে কাজ করতে হইব, এর বাইরে কোনো রাস্তা নাই।” এই কথা বলে উনি আবার আমাকে গাড়ির কাছে নিয়ে যায়। সেই ৬-৭ জনের মধ্য থেকে একজন আমাকে বলে, “তাসরিফ, তোমাকে আমরা চিনি। আমরা তোমাকে একটা স্ক্রিপ্ট দিতেছি, ছোট্ট একটা ভিডিও করতে হবে। এই ভিডিওটা আমাদের কালকের মধ্যে লাগবে। পরশু সরাসরি প্রধানমন্ত্রী এই ভিডিওটা দেখবে এবং তারপর তুমি আপলোড করবা।” সেই ইন্সুরেন্সার তাদের সঙ্গে সুর মিলিয়ে আমাকে বলে, “দেখ তাসরিফ, পিএম’র চোখে পড়ার এটাই সুবর্ণ সুযোগ, ভিডিওটা ভালো করে কর, সরকার যতদিন আছে সুবিধা পাবি।” কথা শেষ করার আগেই উনি পকেট থেকে এক লাখ টাকার তিনটি বান্ডেল, মোট তিন লাখ টাকা আমার হাতে ধরিয়ে দিয়ে বলে, “এইটা সামান্য ছোট একটা গিফট। টাকা যত চাস, তত দেয়া হবে, ভিডিওটা সুন্দর কইরা কর।”’

 

তাসরিফ খান লিখেছেন, ‘ঠিক এই সময় আমার ফোনে আমার ব্যান্ডের ড্রামার শান্তর নম্বর থেকে একটা ফোন আসে। ফোন রিসিভ করতেই শান্ত আমাকে কাঁদতে কাঁদতে বলে, “তাসরিফ, পাঁচ-ছয় জন পুলিশ এবং সিভিল ড্রেসের কয়েকজন মিলে আমাকে রোল দিয়া সারা শরীরে মারছে।” শান্তর কথা শুনে আমার হাত-পা একরকম কাঁপতে থাকে। আমি বোঝার চেষ্টা করি, এই মাইর খাওয়াটা কি আমাকে এদিকে রাজি করানোর জন্য, ভয় দেখানো? নাকি কেবলমাত্র একটা বিচ্ছিন্ন ঘটনা? শান্তর লাইন কেটে যায়। আমি আমার পাশে দাঁড়িয়ে থাকা আইন প্রয়োগকারী সংস্থার পরিচয় দেয়া তাদেরকে বলি, “ভাই, এইমাত্র কয়েকজন মিলে আমার ভাই, আমার ব্যান্ডের ড্রামার শান্তকে প্রচুর মারছে।” ওরা জাস্ট আমাকে সান্ত্বনা দিয়ে বলে, “আরেহ, দেশের যে অবস্থা, এটা এখন কিছু করা যাবে না। ওরে বলো বাসায় চলে যাইতে।”’


বিভাগ : বিনোদন


মন্তব্য করুন

HTML Comment Box is loading comments...

এই বিভাগের আরও

সেদিন প্রাণ নিয়ে ফিরেছিলাম, নয়তো আজ শহিদের তালিকায় থাকতাম
মেঘনা আলমকে ‘নিরাপত্তা হেফাজতে’ নেওয়া হলো কেন, জানালো ডিএমপি
সিডি জোনের বিরুদ্ধে মালিকানা জালিয়াতির অভিযোগ তুললেন সোহাগ
বিশেষ ক্ষমতা আইনে কারাগারে অভিনেত্রী মেঘনা আলম
'মঙ্গল শোভাযাত্রা' নাম পাল্টে নতুন নাম 'বর্ষবরণ আনন্দ শোভাযাত্রা'
আরও
X

আরও পড়ুন

কারা হেফাজতে মৃত্যুর শিকার ছাত্রদল নেতা মিলনের পরিবারের খোঁজ নিলেন তারেক রহমান

কারা হেফাজতে মৃত্যুর শিকার ছাত্রদল নেতা মিলনের পরিবারের খোঁজ নিলেন তারেক রহমান

ফিলিস্তিনে গণহত্যায় ইসরাইলের বিরুদ্ধে পীরগঞ্জে বিক্ষোভ - মিছিল সমাবেশ

ফিলিস্তিনে গণহত্যায় ইসরাইলের বিরুদ্ধে পীরগঞ্জে বিক্ষোভ - মিছিল সমাবেশ

ঢাবি ক্যাম্পাসজুড়ে ফিলিস্তিনের পতাকা উত্তোলন ছাত্র শিবিরের

ঢাবি ক্যাম্পাসজুড়ে ফিলিস্তিনের পতাকা উত্তোলন ছাত্র শিবিরের

রাবিতে ভর্তি পরীক্ষার দামামা, ‘বি’ ইউনিটে প্রতি আসনে লড়বে ৭৬ জন!

রাবিতে ভর্তি পরীক্ষার দামামা, ‘বি’ ইউনিটে প্রতি আসনে লড়বে ৭৬ জন!

রাউজানে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কর্মীর ওপর হামলা, ছাত্রলীগ কর্মী আটক

রাউজানে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কর্মীর ওপর হামলা, ছাত্রলীগ কর্মী আটক

রাষ্ট্রীয় স্বাস্থ্য ও চিকিৎসা ব্যবস্থাপনার সমসাময়িক প্রসঙ্গে ফার্মাসিস্টদের মতবিনিময় সভা

রাষ্ট্রীয় স্বাস্থ্য ও চিকিৎসা ব্যবস্থাপনার সমসাময়িক প্রসঙ্গে ফার্মাসিস্টদের মতবিনিময় সভা

রামগতিতে স্কুলের জায়গায় দোকান নির্মাণ করে ভাড়া তুলছেন আ.লীগ নেতা

রামগতিতে স্কুলের জায়গায় দোকান নির্মাণ করে ভাড়া তুলছেন আ.লীগ নেতা

বড়লেখায় গৃহবধূর লাশ উদ্ধার

বড়লেখায় গৃহবধূর লাশ উদ্ধার

কালিয়াকৈরে বাক প্রতিবন্ধী শিশুকে ধর্ষণ চেষ্টার অভিযোগে যুবক আটক

কালিয়াকৈরে বাক প্রতিবন্ধী শিশুকে ধর্ষণ চেষ্টার অভিযোগে যুবক আটক

ফিলিস্তিনে আগ্রাসন ও গণহত্যার বিরুদ্ধে বিশ্বব্যাপী গড়ে তুলুন প্রতিরোধ আন্দোলন

ফিলিস্তিনে আগ্রাসন ও গণহত্যার বিরুদ্ধে বিশ্বব্যাপী গড়ে তুলুন প্রতিরোধ আন্দোলন

পটুয়াখালীতে ইসরাইলি হামলা ও গণহত্যা বন্ধের প্রতিবাদে বিক্ষোভ

পটুয়াখালীতে ইসরাইলি হামলা ও গণহত্যা বন্ধের প্রতিবাদে বিক্ষোভ

একদিকে বৃষ্টিবলয়, অন্যদিকে ভূমিকম্প, সিলেটজুড়ে ছড়াচ্ছে আতংক !

একদিকে বৃষ্টিবলয়, অন্যদিকে ভূমিকম্প, সিলেটজুড়ে ছড়াচ্ছে আতংক !

মধ্যপ্রাচ্যে আরেকটি মার্কিন রণতরী মোতায়েনে বাড়ছে উত্তেজনা

মধ্যপ্রাচ্যে আরেকটি মার্কিন রণতরী মোতায়েনে বাড়ছে উত্তেজনা

কালকিনিতে মাদকসহ স্বেচ্ছাসেবকলীগ নেতা গ্রেফতার

কালকিনিতে মাদকসহ স্বেচ্ছাসেবকলীগ নেতা গ্রেফতার

ফিলিস্তিনিদের প্রতি সংহতি জানিয়ে রাজশাহীতে বিক্ষোভ

ফিলিস্তিনিদের প্রতি সংহতি জানিয়ে রাজশাহীতে বিক্ষোভ

চাকরি দেওয়ার নামে অর্থ আত্মসাত, রুয়েট কর্মকর্তা কারাগারে

চাকরি দেওয়ার নামে অর্থ আত্মসাত, রুয়েট কর্মকর্তা কারাগারে

ঘরের মাঠে বেঙ্গালুরুকে হারিয়ে রাহুলের হুঙ্কার

ঘরের মাঠে বেঙ্গালুরুকে হারিয়ে রাহুলের হুঙ্কার

পাচার হওয়া মেধা ফিরিয়ে এনে উন্নত দেশ বিনির্মাণে ড. ইউনূসের যুগান্তকারী কৌশল

পাচার হওয়া মেধা ফিরিয়ে এনে উন্নত দেশ বিনির্মাণে ড. ইউনূসের যুগান্তকারী কৌশল

ঘোড়াঘাটে বাসের ধাক্কায় প্রাণ গেল বৃদ্ধের

ঘোড়াঘাটে বাসের ধাক্কায় প্রাণ গেল বৃদ্ধের

নাচোলে বিএনপি'র ঈদ পরবর্তী মতবিনিময় সভা

নাচোলে বিএনপি'র ঈদ পরবর্তী মতবিনিময় সভা