আল্লাহর দিকে দাওয়াত দেয়া উম্মতের ওপরও ফরজ
১৮ মে ২০২৩, ১১:২১ পিএম | আপডেট: ১৯ মে ২০২৩, ১২:১১ এএম
সমস্ত নবী ও রাসূলগণের সর্বপ্রথম কর্তব্য হচ্ছে মানবজাতিকে আল্লাহর দিকে আহŸান করা ও আল্লাহর দ্বীনের প্রতি অনুপ্রাণিত করা। এ প্রসঙ্গে আল কুরআনে ঘোষণা করা হয়েছে : (হে প্রিয় রাসূল (সা.)! আপনি মানুষকে আপনার প্রতিপালকের পথে দাওয়াত দিন হিকমত ও সদুপদেশ দ্বারা এবং তাদের সাথে উত্তম পন্থায় তর্ক করবেন। নিশ্চয় আপনার প্রতিপালক তাঁর পথ ছেড়ে কে বিপথগামী হয়েছে, সে সম্বন্ধে বেশি জানেন এবং কারা সৎপথে আছে তাও তিনি ভালোভাবেই জানেন। (সূরা আন্ নাহল : ১২৫)।
আরবি ‘দাওয়াত’ শব্দের শাব্দিক অর্থ হচ্ছে ডাকা বা আহŸান করা, আমন্ত্রণ জানানো। নবী ও রাসূলগণের সমস্ত শিক্ষা-আমল হচ্ছে এ দাওয়াতেরই ব্যাখ্যা। কুরআনুল কারীমে রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর বিশেষ পদবি হচ্ছে আল্লাহর দিকে আহŸানকারী হওয়া। এ ব্যাপারে এক আয়াতে ইরশাদ হয়েছে : আপনি হলেন আল্লাহর অনুমতিক্রমে তাঁরই দিকে আহŸানকারী ও সিরাজুম মুনীর অর্থাৎ সমুজ্জ্বল প্রদীপ। (সূরা আল আহজাব। আয়াত-৪৫)। আল্লাহর পথে কীভাবে দাওয়াত দিবে সে তরীকা ও সূরা আন নাহল-এর ১২৫ নং আয়াতে বলে দেয়া হয়েছে। প্রথমত : হেকমতের দ্বারা এবং দ্বিতীয়ত : মাওয়িজাতিল হাসানাহ বা সদুপদেশ দ্বারা।
(ক) ‘হেকমত’ শব্দটি আল কুরআনে বিশ বার ব্যবহৃত হয়েছে। তাই, হেকমত শব্দটি কুরআনুল কারীমে অনেক অর্থে ব্যবহৃত হয়েছে। এ স্থলে কোনো কোনো মুফাসসীর হেকমতের অর্থ নিয়েছেন ‘কুরআন’। কেউ কেউ বলেছেন, হেকমত হলো ‘কুরআন ও সুন্নাহ’। (তাফসীরে তারাবী)। আবার কেউ কেউ হেকমত বলতে ‘অকাট্য যুক্তি প্রমাণ’ স্থির করেছেন। (ফাতহুল কাদীর)। আবার কোনো কোনো মুফাসসিরের মতে, ‘বিশুদ্ধ ও মজবুত সহিহ কথাকে হেকমত বলা হয়’।
(খ) ‘মাওয়িজাতিল হাসানাহ’ বা সদুপদেশ দ্বারা আল্লাহর প্রতি দাওয়াত দেয়ার নির্দেশ আল কুরআনে বিবৃত হয়েছে। ‘মাওয়িজাতুন’ শব্দটি আল কুরআনে ৯ বার ব্যবহৃত হয়েছে। আরবি ওয়াজ এবং মাওয়িজাতুন শব্দের অভিধানিক অর্থ হচ্ছে কোনো শুভেচ্ছামূলক বা উপকারী কথা এমনভাবে বলা, যাতে প্রতিপক্ষের মন তা’ কবুল করার জন্য নরম ও কোমল হয়ে যায়। (ফাতহুল কাদীর)।
উদাহরণ স্বরূপ বলা যায় যে, আহŸানকারী যাকে দাওয়াত দিচ্ছেন তার কাছে দাওয়াত কবুল করার সওয়াম ও উপকারিতা তুলে ধরবেন এবং কুবল না করার শাস্তি ও অপকারিতা সম্পর্কেও অবহিত করবেন (ইবনে কাসরি)। এ জন্যই আলকুরআনে ‘মাওয়িজাতিন’ শব্দের সঙ্গে ‘আল হাছানাতি’ শব্দটি যোগ করে বিষয়টিকে নিশ্চিত করা হয়েছে। এতে বুঝা যায় যে, মাওয়িজাতিল হাসানাহ বা সদুপদেশ সম্বলিত আহŸানের বর্ণনা ও শিরোনাম এমন হওয়া উচিত, যাতে প্রতিপক্ষের অন্তর নিশ্চিত হয়ে যায়, যাবতীয় সন্দেহ দুর হয়ে যায় এবং সে অনুভব করে যে, এতে আহŸানকারীর কোনো স্বার্থ নেই। বরং সে শুভেচ্ছা ও কল্যাণের খাতিররেই সদুপদেশ প্রদান করেছে।
বস্তুত মাওয়িজাতুন্ শব্দের মাধ্যমে শুভেচ্ছামূলক কথা যথাযথ কার্যকর ভঙ্গিতে বলার বিষয়টি ফুটে উঠেছে। তবে, শুভেচ্ছামূলক কথা মাঝে মাঝে মর্ম বিদারক ভঙ্গিতে কিংবা এমনভাবে বলা হয় যে, প্রতিপক্ষ অপমান বোধ করে। এ পন্থা পরিত্যাগ করার জন্য ‘হাছানাতুন্’ শব্দটি সংযুক্ত করে বলে দেয়া হয়েছে যে, দাওয়াত দেয়ার সময় দু’টি জিনিসের প্রতি নজর রাখতে হবে। এক, প্রজ্ঞা ও বুদ্ধিমত্তা এবং দুই সদুপদেশ।
মূলত এ দু’টিই দাওয়াতের আসল পদ্ধতি। কিন্তু কখনো কখনো আহŸানকারীকে প্রতিপক্ষের সাথে যুক্তিতর্কে নামতে হয়। তাই কীভাবে সেটা করতে হবে, তাও জানিয়ে দেয়া হয়েছে যে, তাদের সাথে তর্ক করবেন উত্তম পন্থায়। আয়াতে কারীমায় বর্ণিত আরবি ‘জাদেল’ শব্দটি মুজাদালাহ ধাতু থেকে উদ্ভ‚ত। এর অর্থ যুদ্ধ-বিগ্রহ, ঝগড়া-বিবাদ ইত্যাদি।
তবে উল্লেখিত আয়াতে কালীমায় ‘মুজাদালাহ’ বলে তর্ক-বির্তক বোঝানো হয়েছে। এর অর্থ এই যে, যদি দাওয়াতের কাজে কোথাও তর্ক-বিতর্কের প্রয়োজন দেখা দেয়, তবে তর্ক-বির্তক ও উত্তম পন্থায় এতে হবে। উত্তম পন্থার মানে এই যে, কথাবার্তায় নম্রতা, কমনীয়তা ও কোমলতা অবলম্বন করতে হবে। (ইবনে কাসির)। আর এমন যুক্তি প্রমাণ পেশ করতে হবে, যা প্রতিপক্ষ সহজে বুঝতে পারে।
কুরআনুল কারীমের অন্যান্য আয়াত সাক্ষ্য দেয় যে, উত্তম পন্থায় তর্ক-বিতর্ক শুধু মুসলিমদের সাথেই সংশ্লিষ্ট নয়, বরং আহলে কিতাব বা পূর্ববর্তী কিতাবধারীদের সাথেও উত্তম পন্থায় তর্ক-বির্তক করতে হবে। এতদপ্রসঙ্গে আল কুরআনে ইরশাদ হয়েছে : আর তোমরা কিতাবধারীদের সাথেও উত্তম পন্থায় তর্ক-বিতর্ক করবে। (সূরা আল আনকাবুত : ৪৬)। অন্য এক আয়াতে হযরত মূসা (আ.) ও হারুন (আ.) কে নির্দেশ দিয়ে ইরশাদ হয়েছে যে, তোমরা উভয়ে ফিরআওনের মতো অবাধ্য কাফেরের সাথেও নম্রভাবে কথা বলবে। (সূরা তাহা : ৪৪)।
বিভাগ : শান্তি ও সমৃদ্ধির পথ ইসলাম
মন্তব্য করুন
আরও পড়ুন
বাংলাদেশের বিপক্ষে যে একাদশ দিয়ে মাঠে নামছে ওয়েস্ট ইন্ডিজ
কিশোরগঞ্জের আওয়ামী লীগ নেতা আনোয়ার কামালসহ তিনজন গ্রেফতার
প্রেসিডেন্টের সঙ্গে তিন বাহিনীর প্রধানের সাক্ষাৎ
বেইজিং সংস্কৃতি ও পর্যটন ব্যুরো ও আটাবের মধ্যে চুক্তি স্বাক্ষরিত
উইন্ডিজের বিপক্ষে মাঠে নামছে বাংলাদেশ
গাজায় যুদ্ধবিরতি ছাড়া বন্দী বিনিময় হবে না : হামাস
শান্তিরক্ষা মিশন মোতায়েন করতে চায় জাতিসংঘ হাইতিতে
চকরিয়ার বিএনপি নেতা আবু তাহের চৌধুরীর মৃত্যুতে সালাহউদ্দিন আহমদ ও হাসিনা আহমদের শোক
পুতিন পারমাণবিক অস্ত্র ব্যবহার করতে দ্বিধা করবেন না : সার্বিয়া
ক্লাইমেট অর্থায়ন ইস্যুতে দেশগুলোর মধ্যে দ্বন্দ্ব
লালমোহনে দুই গ্রুপের সংঘর্ষে আহত যুবদল নেতা চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যু
ট্রাম্পের অ্যাটর্নির বিরুদ্ধে তদন্ত প্রতিবেদন আটকে গেল
‘ফিলিস্তিনের পর ইরান, সউদী ও তুরস্ক হবে পরবর্তী টার্গেট’
প্রতি বছর ৩ লাখ নথিবিহীন অভিবাসীকে বৈধতা দানের ঘোষণা স্পেনের
প্রেম-ভালোবাসা নিয়ে সবচেয়ে অসুখী দেশ জাপান-কোরিয়া
মুসলিম চিকিৎসক
শীর্ষে দিল্লি
সৈয়দ মোসাদ্দেক বিল্লাহ আল মাদানীকে জমিয়াতুল মোদার্রেসীন ও দারুননাজাত মাদরাসা’র সংবর্ধনা
ইসলামিক ফাউন্ডেশন এর বোর্ড অব গভর্নর সৈয়দ মোসাদ্দেক বিল্লাহ আল মাদানীকে জমিয়াতুল মোদার্রেসীন ও দারুননাজাত মাদরাসা’র সম্বর্ধনা
বাংলাদেশ, নেপাল ও ভুটানের মধ্যে আঞ্চলিক সহযোগিতার আহ্বান