কে অন্ধ, কে চক্ষুষ্মান
১৯ নভেম্বর ২০২৪, ১২:০২ এএম | আপডেট: ১৯ নভেম্বর ২০২৪, ১২:০২ এএম
এ আবার কেমন প্রশ্ন! ছোট বাচ্চাও তো জানে কে অন্ধ, কে চক্ষুষ্মান। অন্ধ হলো- যে চোখে দেখে না; যার দৃষ্টিশক্তি নেই। যার কাছে সূর্যের আলো আর অমাবশ্যার অন্ধকার সমান। যার কাছে আলো-আঁধার, কালো-সাদা সমান। আর যে চোখে দেখে সে চক্ষুষ্মান। তাহলে এ প্রশ্ন কেন, আর এর উত্তরই বা কী? এ অন্ধ তাহলে কোন্ অন্ধ?
হ্যাঁ, প্রকৃত অন্ধ কে, এ প্রশ্নের উত্তর জেনে নিই সৃষ্টিকর্তার কাছ থেকে। যিনি সৃষ্টি করেছেন মানুষকে। তাকে দান করেছেন দৃষ্টিশক্তি ও চিন্তাশক্তি। আল্লাহ বলেছেনÑ ‘প্রকৃতপক্ষে চোখ অন্ধ হয় না, বরং অন্ধ হয় বক্ষস্থিত হৃদয়।’ (সূরা হজ-৪৬)
তাহলে হৃদয়ও অন্ধ হয়! বরং যার হৃদয় অন্ধ সেই সবচেয়ে বড় অন্ধ। হৃদয় যদি অন্ধ না হয় তাহলে তো নবীকে চর্মচক্ষে না দেখেও একজন অন্ধ হেদায়েতের আলো গ্রহণ করে সাহাবীর মর্যাদায় ধন্য হতে পারে। দৃষ্টির অন্ধত্ব আলোর পথে বাধা হয়ে দাঁড়ায় না। কতো অন্ধ আছে, যে হেদায়েতের আলোয় আলোকিত হচ্ছে। কিন্তু যার হৃদয় অন্ধ; সূর্যের আলোতেও সে পথ খুঁজে পায় না! ইরশাদ হয়েছেÑ ‘হে আমাদের রব! তুমি আমাদের যে হেদায়েত দান করেছ তারপর আর আমাদের অন্তরকে বক্র ও সত্যলঙ্ঘনপ্রবণ করো না। এবং তোমার পক্ষ থেকে আমাদেরকে বিশেষ রহমত দান করো। নিশ্চয় তুমিই মহাদাতা।’ (সূরা আলে ইমরান-৮)
যে এই পৃথিবীতে অন্ধ সে তো চিরঅন্ধ নয়। বরং চিরঅন্ধ হলো, এই পৃথিবীতে যার দৃষ্টিশক্তি আছে কিন্তু তা দিয়ে সে ‘আলো’ দেখতে পায় না। পার্থক্য করতে পারে না আলো-আঁধারের মাঝে, হক-বাতিলের মাঝে। আলোকে ভাবে অন্ধকার, আর মরীচিকাকে ভাবে পিপাসা নিবারণকারী শীতল পানি। এরা ‘আল্লাহর নূর’-কে অন্ধকার ভেবে (বরং আলো বলে জানার পরও) মুখ ফিরিয়ে নেয় আর ছোটে ‘অন্য আলো’র পিছে।
আল্লাহ ওদের সম্পর্কেই বলেছেন- ‘আর যে আমার উপদেশ থেকে মুখ ফিরিয়ে নেবে, তার জীবন হবে বড় সংকটময়। আর কিয়ামতের দিন আমি তাকে অন্ধ করে উঠাব। সে বলবে, হে রব! আমাকে যে অন্ধ করে ওঠালে? আমি তো দুনিয়ায় চক্ষুষ্মান ছিলাম! আল্লাহ বলবেন- ‘এভাবেই তোমার কাছে আমার আয়াতসমূহ এসেছিল, কিন্তু তুমি তা ভুলে গিয়েছিলে। আজ সেভাবেই তোমাকে ভুলে যাওয়া হবে।’ (সূরা ত্ব-হা : ১২৪-১২৬)
হ্যাঁ, আজ যেমন তারা নিজেদের চক্ষুষ্মান, মহাজ্ঞানী বলে দাবি করছে আর যারা আল্লাহর ‘জিকর’ ও আল্লাহর হেদায়েতের অনুসরণ করছে, যারা ‘অন্য সব আলো’ (আলো নামক অন্ধকার) ছেড়ে ‘ইসলামের নূর’-এর অনুসরণ করছে- তাদেরকে অন্ধ বলছে, ‘ধর্মান্ধ’ বলছে, যারা মঙ্গলপ্রদীপে মঙ্গল খুঁজে ফিরছে, আর দ্বীনদারিকে বলছে, সেকেলে, পশ্চাৎপদ ও কুসংস্কার, কাল কিয়ামতের দিন তারা দেখতে পাবে কারা অন্ধ আর কারা চক্ষুষ্মান!
আজ যেমন তারা নিজেদের জ্ঞানী ও দৃষ্টিশক্তিসম্পন্ন বলে দাবি করে, কাল কিয়ামতের দিনও বলবে, ‘আল্লাহ! আমাকে যে অন্ধ করে ওঠালে? আমি তো দুনিয়ায় দৃষ্টিশক্তিসম্পন্ন ছিলাম (বরং দৃষ্টিশক্তিসম্পন্নদের সেরা ছিলাম)! ওরা আসলে দুনিয়াতেও অন্ধ; যদিও ওদের চোখ আছে। কারণ অন্ধ যেমন বুঝতে পারে না, কোনটা সাদা কোনটা কালো, তেমনি ওরাও চিনতে পারে না সাদা-কালো, আলো-আঁধার। আল্লাহ ওদেরকে বলেছেন- ‘আর যে ব্যক্তি দুনিয়ায় অন্ধ হয়ে থেকেছে সে আখেরাতেও অন্ধ ও অধিকতর পথভ্রষ্ট থাকবে।’ (সূরা বনি ইসরাইল-৭২)
আরেকটি বিষয় হলো, (ওদের কথা থেকে যেমনটা মনে হয়) বাস্তবেই যদি ধর্মান্ধ বলে তারা এ রকম বোঝাতে চায় যে, ধার্মিক ব্যক্তিরা ধর্মের কারণে মঙ্গলপ্রদীপ, মঙ্গল শোভাযাত্রা, প্রতিকৃতিতে পুষ্পস্তবক অর্পণ ইত্যাদি সংস্কৃতি (হোক তা পৌত্তলিকদের ধর্মীয় বিষয়) গ্রহণ করছে না, এগুলো থেকে বারণ করছে- এগুলো হলো, ধর্মান্ধতা; তাহলে তাদের প্রতি করুণাই করতে হয়। এগুলোর পর ধর্ম বলে আর কী থাকে?
ধর্মান্ধ শব্দের আরেকটি কপটতা হলো, যাদেরকে ওরা ‘ধর্মান্ধ’ বলছে তারা যেন অন্ধভাবে ধর্ম পালন করছে আর ওরা সঠিকভাবে ধর্ম পালন করছে? মাঝেমধ্যেই ওরা ওদের লেখা ও বক্তব্যে বা নাটক ও টকশোতে ‘ধর্মান্ধ’ শব্দ ব্যবহার করছে এবং একরকম উপদেশের সুরে বলতে চাচ্ছে, ধর্ম সঠিকভাবে পালন করা দরকার। অথচ বাস্তবতা হলো, ওদের কেউ নাস্তিক, কেউ ধর্মবিদ্বেষী।
আসলে ওরা আখেরাতে অবিশ্বাসী, প্রবৃত্তিপূজারী, সত্য প্রত্যাখ্যানকারী ও প্রকৃত অন্ধ। আল্লাহ ওদেরকে অন্ধ বলছেন আর ওরা যাদেরকে ধর্মান্ধ বলে গালি দিচ্ছে তাদের জ্ঞানী (চক্ষুষ্মান) বলছেন- ‘আপনার প্রতিপালকের পক্ষ থেকে আপনার প্রতি যা অবতীর্ণ হয়েছে, যে ব্যক্তি তা সত্য বলে বিশ্বাস করে আর যে অন্ধ তারা কি সমান? বস্তুত উপদেশ কেবল তারাই গ্রহণ করে, যারা জ্ঞানী।’ (সূরা রা’দ-১৯)
সুতরাং আমরা দিল থেকে বলি, ‘রব হিসেবে আমি আল্লাহকে পেয়ে সন্তুষ্ট। দ্বীন হিসেবে ইসলাম পেয়ে সন্তুষ্ট। নবী হিসেবে মুহাম্মদ (সা.)-কে পেয়ে আমি সন্তুষ্ট। হে আল্লাহ! ঈমানকে আমাদের কাছে (সবচেয়ে) প্রিয় বানিয়ে দিন এবং ঈমানকে আমাদের অন্তরে সুশোভিত করে দিন। কুফর, পাপাচার ও নাফরমানীকে আমাদের কাছে ঘৃণার বিষয় বানিয়ে দিন আর আমাদের করুন সুপথপ্রাপ্তদের অন্তর্ভুক্ত। (আমিন)
বিভাগ : শান্তি ও সমৃদ্ধির পথ ইসলাম
মন্তব্য করুন
আরও পড়ুন
সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার সঙ্গে ছাত্র আন্দোলনের নেতাদের কুশল বিনিময়
নেতানিয়াহুর বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেছে আইসিসি
শিখ নেতা হত্যা, মোদীর বিরুদ্ধে গুরুতর অভিযোগ কানাডার
দলীয় ভিত্তিতে প্রশাসন সাজিয়ে কেউ ক্ষমতায় আসতে পারবে না: এ এম এম বাহাউদ্দীন
আদানির সঙ্গে জড়িত মোদিও: রাহুল গান্ধী
আইসিসির প্রধান কৌঁসুলি ২৫ নভেম্বর ঢাকায় আসছেন
সোহেল-টুকু-হেলালসহ খালাস পেলেন বিএনপির ২২ নেতাকর্মী
ইরানে উদ্ভাবনে নারীদের অবদান ২৪ শতাংশের বেশি
প্রকাশায় ৯৩ শতাংশ নকল করেও পদোন্নতি পান রাবি অধ্যাপক সাহাল উদ্দিন
বোরহানউদ্দিনে নিখোঁজের দুই ঘন্টা পর লেবু বাগানে মিললো শিশুর লাশ
নাবালক ছাত্রের সঙ্গে জবরদস্তি যৌন সঙ্গম, ৩০ বছরের জেল শিক্ষিকার
সেনাকুঞ্জে আয়োজিত সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ-এর প্রতিনিধি দলের অংশগ্রহণ
মার্কিন সংসদের নারী শৌচাগার ব্যবহার করতে পারবেন না রূপান্তরকামী এমপি
বাগেরহাটে হত্যা মামলায় যুবকের যাবজ্জীবন কারাদন্ড
অন্তবর্তীকালীন সরকারের নির্দেশনা পালনের প্রত্যয় ব্যক্ত করলেন জিওসি
কুড়িগ্রামের উলিপুরে অগ্নিদগ্ধ হয়ে শিশুর মৃত্যু
ভারতে পাচারকালে সাতক্ষীরা সীমান্ত থেকে দুই নারী উদ্ধার
কুরআন-সুন্নাহর আইন ছাড়া দেশে শান্তি আসবে না : চাঁদপুরে হাবিবুল্লাহ মিয়াজী
শাহজাহান ওমরকে জুতা ও ডিম নিক্ষেপ
জীবনে উত্তম কর্ম, জ্ঞান ও উন্নত চরিত্র অর্জন করতে হলে সফল ব্যক্তিদের সান্নিধ্য অবলম্বন আবশ্যক