সে-ই স্বাধীন যে সিজদা করে এক আল্লাহকে
১৮ নভেম্বর ২০২৪, ১২:০৩ এএম | আপডেট: ১৮ নভেম্বর ২০২৪, ১২:০৭ এএম
মুসলিম জাহানের বিভিন্ন অঞ্চলের দায়িত্বশীলদের প্রতি হযরত ওমর ইবনুল খাত্তাব (রা.)-এর একটি ফরমান ছিল- “তোমাদের সব বিষয়ের মধ্যে আমার কাছে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে ‘সালাত’। যে তা রক্ষা করেছে অথবা বলেছেন, যে এ ব্যাপারে যত্নবান হয়েছে সে তার দ্বীনকে রক্ষা করেছে। আর যে তা ধ্বংস করেছে সে তো অন্যান্য ব্যাপারে হবে আরো বিধ্বংসী।” (মুয়াত্তা মালেক-৬) আল্লাহর রাসূলের দ্বিতীয় খলিফার এ বাণী ও ফরমান এক অমোঘ বাস্তবতার তরজুমান। আল্লাহর ভয়ই হচ্ছে ওই মহা নিয়ন্ত্রক শক্তি যা মানুষের ভিতর-বাহির গোপন-প্রকাশ্য সব অবস্থাকে নিয়ন্ত্রণ করে। যে শক্তি দুর্বলকেও নিয়ন্ত্রণ করে, শক্তিমানকেও নিয়ন্ত্রণ করে, ক্ষমতাহীনকেও নিয়ন্ত্রণ করে, ক্ষমতাসীনকেও নিয়ন্ত্রণ করে। আল্লাহর ভয় না থাকলে শত ব্যবস্থার মাঝেও অন্যায়-অনাচার চলতে থাকে এবং অন্যায়-নিয়ন্ত্রণের ও সুবিচার প্রতিষ্ঠার দায়িত্ব যাদের তারাই অন্যায়-অবিচারে জড়িয়ে পড়ে; বরং আকণ্ঠ নিমজ্জিত হয়ে পড়ে। আর তখনই রক্ষক পরিণত হয় ভক্ষকে আর ব্যবস্থার বজ্র আঁটুনি পর্যবসিত হয় ফস্কা গেরোতে। সত্য যে, পার্থিব জীবনের স্থিতি ও ভারসাম্যের জন্যও তাকওয়া ও আল্লাহ-ভীরুতার কোনো বিকল্প নেই।
আল্লাহভীরু মানুষের মনেই প্রশ্ন জাগে ন্যায়-অন্যায় এবং করণীয়-বর্জনীয়ের। এ কারণেই যে কুরআন সর্বমানবের পথ-প্রদর্শনের জন্য অবতীর্ণ তার শুরুতেই আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের ঘোষণাÑ ‘এ কুরআন পথপ্রদর্শক আল্লাহ-ভীরুদের জন্য।’ (সূরা বাকারা ২ : ৩) অর্থাৎ কুরআনের বিধান ও নির্দেশনায় এদের উপকার হয়। তো এই আসমানি কালাম ও সর্বোত্তম ব্যবস্থার দ্বারাই যখন শুধু তারাই পরিশুদ্ধ হয় যারা আল্লাহভীরু, তাহলে অন্য সব ব্যবস্থার নীতিকথার উপদেশ বাণীতে আল্লাহর ভয় ছাড়া কীভাবে কারো পরিশুদ্ধি ঘটতে পারে।
এ কারণে ব্যক্তি-সংশোধন ও সমাজ-সংশোধনের গোড়ার কথা হচ্ছে, মানুষের মনে আল্লাহর স্মরণ ও আল্লাহর ভয় জাগ্রত করা। এ সেবাই ব্যক্তি ও সমাজের সবচেয়ে বড় সেবা। এ সেবায় যারা নিয়োজিত তারাই সমাজ ও ব্যক্তির সবচেয়ে বড় সেবক। এ সত্য যে জাতি উপলব্ধি করে না সে জাতি আপন শত্রু-মিত্র নির্ভুলভাবে নির্ণয়ে ব্যর্থ হয়। আর যে নেতৃত্ব এ বাস্তবতা সম্পর্কে উদাসীন হয় বা উদাসীন বনে তার দ্বারা জাতীয় কল্যাণের আশা আত্মপ্রবঞ্চনা মাত্র।
জাতীয় উন্নতি-অগ্রগতির জন্য প্রয়োজনীয় জাগতিক শিক্ষা ও কুশলতা অপরিহার্য। আর এ কারণে জাতির সর্ব প্রকারের যোগ্যতা ও কর্ম-কুশলতার বিকাশ-চেষ্টা অতি জরুরি। এ অঙ্গনেও সত্যিকারের কর্ম-পরিকল্পনা ও কর্ম-তৎপরতা তাদের মাধ্যমেই সম্ভব যারা সত্যিকার অর্থেই জাতির ওফাদার সেবক। জাতির প্রতি ওফাদারীর প্রভাবক চেতনা এবং ব্যক্তিস্বার্থ ও দলীয় স্বার্থের ঊর্ধ্বে ওঠার সৎসাহসেরও প্রধান সূত্র ঈমান ও তাকওয়া। এ দু’য়ের অনুপস্থিতিতে ওই বাস্তবতাই ঘুরে ঘুরে আসে, মুসলিম জাহান এখন যার ভুক্তভোগী।
দ্বিতীয়ত, জাতির সম্মিলিত মেধা ও কুশলতাকে সঠিক পথে পরিচালিত করার জন্যও প্রয়োজন তাকওয়া ও খোদাভীতির। এর অনুপস্থিতিতে সব যোগ্যতা ও কর্মশক্তি ব্যবহৃত হয় ভোগ-বিলাস, অন্যায়-অনাচার ও যুলুম-অবিচারের নিত্য নতুন কৌশল উদ্ভাবনে। ফলে জাতি নিমজ্জিত হয় আত্মবিস্মৃতির এক সর্বগ্রাসী অন্ধকারে এবং জড়িয়ে পড়ে আত্মঘাতী ও ভ্রাতৃঘাতী এক অনিঃশেষ চক্রে।
যে আল্লাহকে সিজদা করে না সে সিজদা করে শয়তানকে; সিজদা করে নিজ খাহিশ ও প্রবৃত্তিকে, সিজদা করে অর্থ ও স্বার্থকে, সিজদা করে প্রচলিত সব পার্থিব রীতি-নীতিকে, সিজদা করে সব অন্যায়-অনাচারকে, সর্বোপরি সিজদা করে এবং করতেই থাকে দেশি-বিদেশি অসংখ্য প্রভুকে। যে ব্যক্তি ও জাতি সৃষ্টিকর্তা আল্লাহকে সিজদা করতে ‘অপমান’ বোধ করে আল্লাহ তাঁর অসংখ্য দাসকে তার প্রভুতে পরিণত করেন। সে তখন ওদেরকেও সিজদা করতে থাকে। এ সব দাস-প্রভুর অধীনতা ও দাসত্বই হয় তার ললাট-লিপি।
এই অধীনতা-প্রবণ মানবের কীভাবে পরিচয় ঘটবে প্রকৃত স্বাধীনতার সাথে? আর কীভাবেই বা সে রক্ষা করবে তার ক্ষুদ্র ও বৃহৎ স্বাধীনতা। অতঃপর এই শ্রেণিই যদি নিয়োজিত হয় জাতি-গোষ্ঠির হক্ব রক্ষার দায়িত্বে তখন যে ধ্বংসযজ্ঞের সূচনা হয় তার ধারা প্রবাহিত হতে থাকে প্রজন্ম থেকে প্রজন্মান্তরে।
আল্লাহর নবীর খলীফা, অর্ধ বিশ্ব বিস্তৃত মুসলিম জাহানের আমীরুল মুমিনীন সত্যই বলেছেন- ‘যে সালাত ধ্বংস করে সে তো অপরাপর বিষয়ে হয় আরো বিধ্বংসী।’ আল্লাহ তাআলা আমাদের ক্ষমা করুন এবং আমাদের ক্ষুদ্র-বৃহৎ, নৈতিক জাগতিক, ভূখণ্ডগত, আদর্শগত সর্বপ্রকারের স্বাধীনতা রক্ষার তাওফীক দান করুন। (আমীন)
বিভাগ : শান্তি ও সমৃদ্ধির পথ ইসলাম
মন্তব্য করুন
আরও পড়ুন
নকলায় নবম শ্রেণির শিক্ষার্থীর ঝুলন্ত মরদেহ উদ্ধার
কালীগঞ্জে বিএনপি'র মহাসচিব মির্জা ফখরুলকে ফুলের শুভেচ্ছা জানালেন হামিদ
পর্ন তারকা স্টর্মিকে ডোনাল্ড ট্রাম্পের ঘুষ প্রদান মামলার রায় স্থগিত করলো আদালত
দৌলতপুরে মাদকাসক্ত যুবকের হাতে মাছ ব্যবসায়ী খুন : যুবক আটক
রাস্তা আটকে যমুনা ফিউচার পার্কের সামনে বিক্ষোভ, অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা
পবিত্র কোরআন শরীফের পরে সত্য হিসেবে মানুষ সংবাদপত্রকে মনে করতো-বিটিভি মহা পরিচালক
লালমোহনে বিদ্যুৎ স্পৃষ্টে ৭০ বছরের বৃদ্ধ নিহত
বিচারের আগে ফ্যাসিস্ট আ. লীগের রাজনীতিতে ফেরার সুযোগ নেই : নাহিদ
ড. ইউনূসকে নিয়ে এক দশক আগে যা বলেছিলেন নরেন্দ্র মোদি
গাজীপুরে পিকনিকের বাসে বিদ্যুতের তারের স্পর্শে ৩ শিক্ষার্থীর মৃত্যু
লেবাননে জাতিসংঘ মিশনে হামলা, চার ইতালীয় সেনা আহত
এ আর রহমানের নামে মিথ্যাচার রটানোর অভিযোগে তীব্র ক্ষোভ ঝাড়লেন ছেলে এ আর আমিন
ধর্মদ্রোহী সরকারের সময় কোন ধর্মই নিরাপদ ছিল না-এড.আহমেদ আযম খান
শব্দের চেয়ে দ্রুতগতিসম্পন্ন বাধ মানে না এমন ক্ষেপণাস্ত্র প্রস্তুত আছে : পুতিন
ঢাকা আজ বিশ্বের দূষিত শহরের তালিকায় চতুর্থ
পলাতক পুলিশ সদস্যদের বেতন বন্ধ, হচ্ছে মামলা
ছয়-সাত মাসেই টিয়ার কাবিখার ২০০ কোটি লুটেছিলেন হাসিনা দোসর মহিবুর
আদানির দুই চুক্তি বাতিল করলো কেনিয়া
হেলিকপ্টার থেকে ছোড়া গুলিতে ক্ষতবিক্ষত বাবুকে থাইল্যান্ড নেয়া হচ্ছে
দীর্ঘ ১৭ বছর পর মানিকগঞ্জে জামায়াতে ইসলামীর কর্মী সম্মেলন অনুষ্ঠিত