হজের প্রস্তুতি
২৭ মে ২০২৩, ১১:১৭ পিএম | আপডেট: ২৮ মে ২০২৩, ১২:০০ এএম
হজ একটি দৈহিক, আর্থিক ও আত্মিক ইবাদত। এতে যেমন আছে দীর্ঘ সফর ও বিশেষ স্থানে বিশেষ আমলের অপরিহার্যতা তেমনি আছে গভীর রূহানিয়াত ও আধ্যাত্মিক তাৎপর্যের বিষয়। আল্লাহর ঘরে হাজিরি মুমিন জীবনের পরম সৌভাগ্য। ওই পুণ্য ভূমিতে পৌঁছে বান্দা তার রবের উদ্দেশ্যে নিজের আবদিয়ত ও দাসত্বের এবং ইশ্ক ও মহব্বতের প্রমাণ দিবে। আল্লাহর শিআর ও নিদর্শনাবলীর প্রতি ভক্তি ও শ্রদ্ধা প্রকাশ করবে। নিজের জাহের ও বাতেনকে ইবরাহীম খলীলুল্লাহর রঙে রঙিন করার অনুপ্রেরণা অর্জন করবে এবং ওই পবিত্র ভূমির নূর ও নূরানিয়াত দ্বারা নিজেকে আলোকিত করবে, এটাই তো হজের দর্শন ও তত্ত্বকথা।
বায়তুল্লাহ অভিমুখে হজের সফর তো ইবাদতের সফর। আল্লাহর সন্তুষ্টি ও নৈকট্য লাভের সফর। তাই আল্লাহর যে বান্দা হজের নিয়ত করে তার অবশ্যইকর্তব্য এই ইবাদতের জন্য পস্তুতি গ্রহণ করা। এক্ষেত্রে জাগতিক প্রস্তুতির চেয়ে বেশি প্রয়োজন রূহানী প্রস্তুতি। কারণ যে ইবাদত ইখলাস ও তাকওয়ার সাথে এবং সুন্নাহসম্মত পন্থায় আদায় করা হয় তা কবুলিয়তের অতি নিকটবর্তী হয়ে যায়। তাই শুধু হজ নয়, নামাজ-রোযা, জাকাত-সদকাসহ সকল ইবাদতকে জাহের-বাতেন উভয় দিক থেকে রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর নামাজ, রোজা, হজ ও জাকাতের অনুরূপ করার চেষ্টায় নিয়োজিত হওয়া সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন।
কিন্তু ধরুন, হজ উপলক্ষে যদি শুধু বৈষয়িক প্রস্তুতির চিন্তা করা হয়, রূহানী বা আত্মিক পস্তুতির কোনো প্রয়োজনই বোধ করা না হয় তাহলে তো প্রচুর অর্থ ও দীর্ঘ সময় ব্যয় করে যেভাবে যাওয়া হয় সেভাবেই ফিরে আসতে হবে। বাস্তব জীবনে হজের কোনো প্রভাব প্রতিক্রিয়াই পরিলক্ষিত হবে না।
এটা ঠিক যে, হজের জন্য পাথেয় সংগ্রহ করা, বৈষয়িক প্রস্তুতি নেয়া সম্পূর্ণ জায়েজ বরং প্রয়োজনীয় পরিমাণ প্রস্তুতি তো আবশ্যক এবং শরীয়তের নির্দেশ। উপরন্তু শরীয়তে ওইসব লোকের নিন্দা করা হয়েছে, যারা তাওয়াক্কুল ও তাকওয়ার নামে হজের সফরে প্রয়োজনীয় পাথেয় না নিয়েই চলে যেত এবং সেখানে মানুষের নিকট ভিক্ষার হাত প্রসারিত করত। তবে বৈষয়িক প্রস্তুতির চেয়েও গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে ভালোভাবে হজের আহকাম ও মাসায়েল শেখা এবং নিজের হৃদয় ও অন্তরকে হজের কল্যাণ ধারণের উপযোগী করা।
কুরআনে কারীমে তাকওয়ার পাথেয় অর্জনের প্রতি অধিক গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেন : হজের সফরে তোমরা পাথেয়র ব্যবস্থা কর, বস্তুত তাকওয়াই উৎকৃষ্ট পাথেয়। হে জ্ঞানী লোকেরা তোমরা আমাকে ভয় করে চল। (সূরা বাকারা : ১৯৭)।
স্মরণ রাখা উচিত, হজ হলো পুরো জীবনের আমল। পুরো জীবনে একবারই হজ করা ফরজ। তাহলে যে হজ পুরো জীবনব্যাপী পরিব্যপ্ত তার প্রভাব তো জীবনের শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত অবশিষ্ট থাকতে হবে। তাহলে হজকে প্রথাগত হজের চেয়ে জীবন্ত হজে পরিণত করার চেষ্টা করা কি অবশ্য কর্তব্য নয়? এই প্রচেষ্টা ও সাধনায় আত্মনিয়োগ করতে পারাটাই তো হজ কবুল হওয়ার অন্যতম বড় আলামত। আর আল্লাহ তায়ালার রহমত, মাগফিরাত ও জান্নাতের ওয়াদা তো মকবুল হজের ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য।
সকল ইবাদতের মতো এই ইবাদতেরও প্রাণ হচ্ছে ইখলাস। অর্থাৎ একমাত্র আল্লাহ তায়ালার সন্তুষ্টি ও নৈকট্য লাভের উদ্দেশ্যে হজ করা। লৌকিকতা, সুনাম-সুখ্যাতি, হাজী উপাধী লাভ ইত্যাদি যে কোনো দুনিয়াবী স্বার্থ ও উদ্দেশ্য থেকে এই আমলকে মুক্ত রাখা অতি জরুরি। ইখলাস ছাড়া কোনো আমলই আল্লাহর দরবারে কবুল হয় না। আল্লাহ তায়ালা বলেন : তারা তো আদিষ্ট হয়েছিল আল্লাহর ইবাদত করতে তার আনুগত্যে বিশুদ্ধচিত্ত হয়ে একনিষ্টভাবে। (সূরা বায়্যিনাহ : ৫)।
হজ ও উমরা সম্পর্কে তো আল্লাহ তায়ালা আরো বিশেষ ঘোষণা দিয়েছেন : আর তোমরা আল্লাহর সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে হজ ও উমরা পরিপূর্ণরূপে পালন কর। (সূরা বাকারা : ১৯৬)। জুনদুব আল-আলাকী (রাহ.) হতে বর্ণিত এক হাদিসে রাসূলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেছেন : যে ব্যক্তি লোকসমাজে প্রচারের উদ্দেশ্যে নেক আমল করে, আল্লাহ তায়ালা তার কর্মের প্রকৃত উদ্দেশ্যের কথা লোকদের শুনিয়ে দিবেন। আর যে ব্যক্তি লোক দেখানোর উদ্দেশ্যে কোনো সৎকাজ করে, আল্লাহ তায়ালাও তার প্রকৃত উদ্দেশ্যের কথা লোকদের মাঝে প্রকাশ করে দিবেন। (সহিহ বুখারী : ৬৪৯৯)।
এজন্য হজের সৌভাগ্যলাভকারীদের উচিত, আল্লাহ তায়ালার নিকট রিয়ামুক্ত হজের জন্য দুয়া করতে থাকা। এ তো স্বয়ং আল্লাহর প্রিয় হাবিব (সা.)-এর আদর্শ ও শিক্ষা। আনাস (রা.) হতে বর্ণিত হয়েছে, রাসূলুল্লাহ (সা.) একটি পুরাতন বাহন এবং চার দিরহাম বা তার চেয়ে কম মূল্যের একটি পশমী বস্ত্রে হজ করলেন, তখন তিনি এই দুয়া করলেন : হে আল্লাহ! আমার হজকে রিয়া ও খ্যাতির আকাক্সক্ষামুক্ত হজরূপে কবুল করেন। (সুনানে ইবনে মাজাহ : ২৮৯০)। আল্লাহ তায়ালা আমাদের সবাইকে রাসূলের সুন্নত ও আদর্শ মোতাবেক হজ করার তাওফিক দান করুন।
বিভাগ : শান্তি ও সমৃদ্ধির পথ ইসলাম
মন্তব্য করুন
আরও পড়ুন
কিশোরগঞ্জের আওয়ামী লীগ নেতা আনোয়ার কামালসহ তিনজন গ্রেফতার
প্রেসিডেন্টের সঙ্গে তিন বাহিনীর প্রধানের সাক্ষাৎ
বেইজিং সংস্কৃতি ও পর্যটন ব্যুরো ও আটাবের মধ্যে চুক্তি স্বাক্ষরিত
উইন্ডিজের বিপক্ষে মাঠে নামছে বাংলাদেশ
গাজায় যুদ্ধবিরতি ছাড়া বন্দী বিনিময় হবে না : হামাস
শান্তিরক্ষা মিশন মোতায়েন করতে চায় জাতিসংঘ হাইতিতে
চকরিয়ার বিএনপি নেতা আবু তাহের চৌধুরীর মৃত্যুতে সালাহউদ্দিন আহমদ ও হাসিনা আহমদের শোক
পুতিন পারমাণবিক অস্ত্র ব্যবহার করতে দ্বিধা করবেন না : সার্বিয়া
ক্লাইমেট অর্থায়ন ইস্যুতে দেশগুলোর মধ্যে দ্বন্দ্ব
লালমোহনে দুই গ্রুপের সংঘর্ষে আহত যুবদল নেতা চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যু
ট্রাম্পের অ্যাটর্নির বিরুদ্ধে তদন্ত প্রতিবেদন আটকে গেল
‘ফিলিস্তিনের পর ইরান, সউদী ও তুরস্ক হবে পরবর্তী টার্গেট’
প্রতি বছর ৩ লাখ নথিবিহীন অভিবাসীকে বৈধতা দানের ঘোষণা স্পেনের
প্রেম-ভালোবাসা নিয়ে সবচেয়ে অসুখী দেশ জাপান-কোরিয়া
মুসলিম চিকিৎসক
শীর্ষে দিল্লি
সৈয়দ মোসাদ্দেক বিল্লাহ আল মাদানীকে জমিয়াতুল মোদার্রেসীন ও দারুননাজাত মাদরাসা’র সংবর্ধনা
ইসলামিক ফাউন্ডেশন এর বোর্ড অব গভর্নর সৈয়দ মোসাদ্দেক বিল্লাহ আল মাদানীকে জমিয়াতুল মোদার্রেসীন ও দারুননাজাত মাদরাসা’র সম্বর্ধনা
বাংলাদেশ, নেপাল ও ভুটানের মধ্যে আঞ্চলিক সহযোগিতার আহ্বান
মানসিক সুস্থতায় কর্মবিরতি