ঢাকা   শুক্রবার, ২২ নভেম্বর ২০২৪ | ৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১

খোঁটা দেওয়ার কুফল-২

Daily Inqilab মাওলানা আবুল বাশার মুহাম্মাদ সাইফুল ইসলাম

০৪ জুন ২০২৩, ১১:০১ পিএম | আপডেট: ০৫ জুন ২০২৩, ১২:০০ এএম

আল্লাহর পথে কৃত ব্যয়ের সুফল লাভের জন্যে শর্ত হলো, পরবর্তীকালে সেই দানের জন্য কোনও রূপ খোঁটা না দেওয়া এবং কোনও কষ্ট না দেওয়া। বলা বাহুল্য, কোনও দান আল্লাহর পথে হয় তখনই, যখন তাতে ইখলাস থাকে।

তাহলে এই আয়াত দ্বারা বোঝা গেল, কেবল দানকালীন ইখলাসই যথেষ্ট নয়, বরং দানের পরও ইখলাস রক্ষা জরুরি। খোঁটা দেওয়া ইখলাসের পরিপন্থি। কেননা খোঁটা দেওয়াই হয় পার্থিব প্রত্যাশা পূরণ না হলে। খোঁটা দ্বারা কেবল দান-খয়রাত ও পরোপকারের ছওয়াবই নষ্ট হয় না; বরং এটা একটা কঠিন পাপও বটে। কেননা এর দ্বারা উপকৃত ব্যক্তির অন্তরে আঘাত দেওয়া হয়। মানুষের মনে আঘাত দেওয়া কবীরা গুনাহ। সুতরাং খোঁটা দেওয়া ইসলাম ও ঈমানের সংগে সংগতিপূর্ণ নয়। কেননা মুসলিম বলাই হয় তাকে, যার হাত ও মুখ থেকে সকল মুসলিম নিরাপদ থাকে (সহিহ বুখারী : ১০)।

আর মুমিন সেই, যার ক্ষতি থেকে সকল মানুষ নিরাপদ থাকে (মুসনাদে আহমাদ : ১২৫৬১)। এজন্যেই খোঁটা দেওয়াকে কুরআন মাজীদে কাফের-বেঈমানের কাজ হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। ইরশাদ হয়েছে : হে মুমিনগণ! খোঁটা দিয়ে ও কষ্ট দিয়ে নিজেদের দান-সদকাকে সেই ব্যক্তির মতো নষ্ট করো না, যে নিজের সম্পদ ব্যয় করে মানুষকে দেখানোর জন্য এবং আল্লাহ ও পরকালে বিশ^াস রাখে না। সুতরাং তার দৃষ্টান্ত এরকম, যেমন এক মসৃণ পাথরের উপরে মাটি জমে আছে, অতঃপর তাতে প্রবল বৃষ্টি পড়ে এবং তা সেই মাটিকে ধুয়ে নিয়ে যায় এবং সে’টিকে পুনরায় মসৃণ পাথর বানিয়ে দেয়। এরূপ লোক যা উপার্জন করে, তার কিছুমাত্র তারা হস্তগত করতে পারে না। আর আল্লাহ এরূপ কাফেরদেরকে হেদায়াতপ্রাপ্ত করেন না’। (সূরা বাকারা : ২৬৪)।

অর্থাৎ খোঁটা দেওয়া কাফেরদেরই বৈশিষ্ট্য। তারা যেহেতু আখিরাতে বিশ্বাস করে না, তাই ছওয়াবেরও কোনও আশা থাকে না। আশা থাকে কেবল নগদপ্রাপ্তি। হয় সে ব্যক্তি তাকে আরও বেশি দেবে, নয় তার অনুরূপ উপকার তারও করবে। অন্ততপক্ষে তার গুণগান করে তো বেড়াবেই। যখন এর কোনোটা পায় না, তখন মনে করে-বৃথাই টাকা-পয়সা নষ্ট করল।

এভাবে সে হতাশার শিকার হয় আর নিমক হারাম, অকৃতজ্ঞ ইত্যাদি বলে গালাগাল করে। এখন মুমিনব্যক্তিও যদি খোঁটা দিয়ে বসে, তবে তা কাফেরসুলভ আচরণই হলো। এর দ্বারা প্রমাণ হবেÑ দান বা উপকার করার সময় আল্লাহর সন্তুষ্টি তার উদ্দেশ্য ছিল না। যেমন কাফের ব্যক্তির সেরকম উদ্দেশ্য থাকে না।

আর যে দান-খয়রাত আল্লাহ তায়ালার সন্তুষ্টির জন্য হয় না, তার পরিণাম সম্পর্কে হাদিসে ইরশাদ হয়েছে : হাশরের দিন আল্লাহ তায়ালা এরূপ ব্যক্তিকে বলবেন, তোমাকে আমি যে অর্থ-সম্পদ দিয়েছিলাম, তা দ্বারা তুমি আমার জন্য কী করেছ? সে বলবে, হে আল্লাহ! আমি তা তোমার পথে ব্যয় করেছি। আল্লাহ বলবেন, তুমি মিথ্যা বলছ। তুমি তো এজন্য করেছিলে যে, লোকে তোমাকে দাতা বলবে। তা বলাও হয়েছে। অর্থাৎ যে উদ্দেশ্যে দান করেছিলে তা পেয়ে গেছ। আজ আমার কাছে তোমার কোনও বদলা নেই। অতঃপর তাকে জাহান্নামে নিক্ষেপ করা হবে। (মুসতাদরাকে হাকেম : ২৫২৮)।

অথবা প্রমাণ হবেÑ উপকার করার সময় আল্লাহর সন্তুষ্টি উদ্দেশ্য থাকলেও পরবর্তী সময়ে সেই উদ্দেশ্যের উপর সুদৃঢ় থাকতে পারেনি। নজর চলে গেছে নগদপ্রাপ্তির দিকে। ফলে যেই ছওয়াব তার পাওয়ার ছিল, তা তো বরবাদ করে ফেলেছেই, উপরন্তু আমলনামায় কবীরা গুনাহ যোগ করেছে। কেননা নগদ-বদলা না পাওয়ার কারণে সে তাকে খোঁটা দিয়েছে, অকৃতজ্ঞ বলেছে। এভাবে তার মনে কঠিন আঘাত দিয়েছে।

যে ব্যক্তি কারও উপকার নেয়, সে এমনিতেই মানসিকভাবে দুর্বল থাকে। তার উপর যদি খোঁটা দেওয়া হয়, তবে তা তার অন্তরে রীতিমতো রক্তক্ষরণ ঘটায়। সেই রক্তক্ষরণের বিপরীতে তার দান-খয়রাত ও উপকার কোনও ধর্তব্যেই আসে না। বরং আঘাতের উৎপত্তি যেহেতু ওই উপকার থেকে, তাই উপকারটাও উপকৃত ব্যক্তির পক্ষে হয়ে যায় এক পাষাণ ভার। যেন এই উপকার না করাই তার পক্ষে ভালো ছিল। তাই তো ইরশাদ হয়েছে : ‘উত্তম কথা বলে দেওয়া ও ক্ষমা করা সেই দান-সদকা অপেক্ষা শ্রেয়, যার পর কোনও কষ্ট দেওয়া হয়। আল্লাহ অতি বেনিয়ায ও সহনশীল’। (সূরা বাকারা : ২৬৩)।


বিভাগ : শান্তি ও সমৃদ্ধির পথ ইসলাম


মন্তব্য করুন

HTML Comment Box is loading comments...

এই বিভাগের আরও

বড়কে মান্য করুন, বৃদ্ধকে সম্মান করুন-১
সন্তানদের কিসের উপর রেখে যাচ্ছি-২
সন্তানদের কিসের উপর রেখে যাচ্ছি-১
কে অন্ধ, কে চক্ষুষ্মান
সে-ই স্বাধীন যে সিজদা করে এক আল্লাহকে
আরও

আরও পড়ুন

কিশোরগঞ্জের আওয়ামী লীগ নেতা আনোয়ার কামালসহ তিনজন গ্রেফতার

কিশোরগঞ্জের আওয়ামী লীগ নেতা আনোয়ার কামালসহ তিনজন গ্রেফতার

প্রেসিডেন্টের সঙ্গে তিন বাহিনীর প্রধানের সাক্ষাৎ

প্রেসিডেন্টের সঙ্গে তিন বাহিনীর প্রধানের সাক্ষাৎ

বেইজিং সংস্কৃতি ও পর্যটন ব্যুরো ও আটাবের মধ্যে চুক্তি স্বাক্ষরিত

বেইজিং সংস্কৃতি ও পর্যটন ব্যুরো ও আটাবের মধ্যে চুক্তি স্বাক্ষরিত

উইন্ডিজের বিপক্ষে মাঠে নামছে বাংলাদেশ

উইন্ডিজের বিপক্ষে মাঠে নামছে বাংলাদেশ

গাজায় যুদ্ধবিরতি ছাড়া বন্দী বিনিময় হবে না : হামাস

গাজায় যুদ্ধবিরতি ছাড়া বন্দী বিনিময় হবে না : হামাস

শান্তিরক্ষা মিশন মোতায়েন করতে চায় জাতিসংঘ হাইতিতে

শান্তিরক্ষা মিশন মোতায়েন করতে চায় জাতিসংঘ হাইতিতে

চকরিয়ার বিএনপি নেতা আবু তাহের চৌধুরীর মৃত্যুতে সালাহউদ্দিন আহমদ ও হাসিনা আহমদের শোক

চকরিয়ার বিএনপি নেতা আবু তাহের চৌধুরীর মৃত্যুতে সালাহউদ্দিন আহমদ ও হাসিনা আহমদের শোক

পুতিন পারমাণবিক অস্ত্র ব্যবহার করতে দ্বিধা করবেন না : সার্বিয়া

পুতিন পারমাণবিক অস্ত্র ব্যবহার করতে দ্বিধা করবেন না : সার্বিয়া

ক্লাইমেট অর্থায়ন ইস্যুতে দেশগুলোর মধ্যে দ্বন্দ্ব

ক্লাইমেট অর্থায়ন ইস্যুতে দেশগুলোর মধ্যে দ্বন্দ্ব

লালমোহনে দুই গ্রুপের সংঘর্ষে আহত যুবদল নেতা চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যু

লালমোহনে দুই গ্রুপের সংঘর্ষে আহত যুবদল নেতা চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যু

ট্রাম্পের অ্যাটর্নির বিরুদ্ধে তদন্ত প্রতিবেদন আটকে গেল

ট্রাম্পের অ্যাটর্নির বিরুদ্ধে তদন্ত প্রতিবেদন আটকে গেল

‘ফিলিস্তিনের পর ইরান, সউদী ও তুরস্ক হবে পরবর্তী টার্গেট’

‘ফিলিস্তিনের পর ইরান, সউদী ও তুরস্ক হবে পরবর্তী টার্গেট’

প্রতি বছর ৩ লাখ নথিবিহীন অভিবাসীকে বৈধতা দানের ঘোষণা স্পেনের

প্রতি বছর ৩ লাখ নথিবিহীন অভিবাসীকে বৈধতা দানের ঘোষণা স্পেনের

প্রেম-ভালোবাসা নিয়ে সবচেয়ে অসুখী দেশ জাপান-কোরিয়া

প্রেম-ভালোবাসা নিয়ে সবচেয়ে অসুখী দেশ জাপান-কোরিয়া

মুসলিম চিকিৎসক

মুসলিম চিকিৎসক

শীর্ষে দিল্লি

শীর্ষে দিল্লি

সৈয়দ মোসাদ্দেক বিল্লাহ আল মাদানীকে জমিয়াতুল মোদার্রেসীন ও দারুননাজাত মাদরাসা’র সংবর্ধনা

সৈয়দ মোসাদ্দেক বিল্লাহ আল মাদানীকে জমিয়াতুল মোদার্রেসীন ও দারুননাজাত মাদরাসা’র সংবর্ধনা

ইসলামিক ফাউন্ডেশন এর বোর্ড অব গভর্নর সৈয়দ মোসাদ্দেক বিল্লাহ আল মাদানীকে জমিয়াতুল মোদার্রেসীন ও দারুননাজাত মাদরাসা’র সম্বর্ধনা

ইসলামিক ফাউন্ডেশন এর বোর্ড অব গভর্নর সৈয়দ মোসাদ্দেক বিল্লাহ আল মাদানীকে জমিয়াতুল মোদার্রেসীন ও দারুননাজাত মাদরাসা’র সম্বর্ধনা

বাংলাদেশ, নেপাল ও ভুটানের মধ্যে আঞ্চলিক সহযোগিতার আহ্বান

বাংলাদেশ, নেপাল ও ভুটানের মধ্যে আঞ্চলিক সহযোগিতার আহ্বান

মানসিক সুস্থতায় কর্মবিরতি

মানসিক সুস্থতায় কর্মবিরতি