ইচ্ছাপূরণের অত্যাচার ঘরে-বাইরে
০৯ আগস্ট ২০২৩, ১১:০৮ পিএম | আপডেট: ১০ আগস্ট ২০২৩, ১২:০০ এএম
হযরত আনাস ইবন মালিক রা. নবী (সা.) থেকে বর্ণনা করেন যে, তিনি ইরশাদ করেন, আমি নামায শুরু করি আর আমার ইচ্ছা থাকে তা দীর্ঘ করার। এ অবস্থায় যখন কোনো শিশুর কান্না শুনি, আমি নামায সংক্ষেপ করে ফেলি।
কারণ আমি জানি, তার কান্নায় তার মায়ের কী কঠিন কষ্ট হয়। (সহীহ বুখারী : ৭১০)। কী বোঝা গেল এ হাদিস দ্বারা? এতটুকু কথা তো স্পষ্ট যে, নামায অবস্থায় কোনো শিশুর কান্না শুনতে পেলে তার মায়ের কষ্ট হয় বিবেচনা করে নবী (সা.) নামায সংক্ষেপ করে দিতেন। নামায ছিল প্রিয়নবী (সা.)-এর সর্বাপেক্ষা প্রিয় কাজ। তিনি ইরশাদ করেছেন, নামাযে আমার নয়ন জুড়ায়। নামায দ্বীনেরও সর্বাপেক্ষা গুরুত্বপূর্ণ রুকন। কুরআন মাজীদে সবচেয়ে বেশি হুকুম নামায কায়েমেরই দেওয়া হয়েছে। তো সর্বাপেক্ষা গুরুত্বপূর্ণ ও সবচেয়ে বেশি প্রিয় এ বিধান পালনে রত থাকা অবস্থায় শিশুর কান্না শুনে তা সংক্ষেপে শেষ করার দ্বারা স্পষ্টই বোঝা যায় তিনি অন্যের আবেগ-অনুভূতির কতটা মূল্য দিতেন এবং অন্যের কষ্ট-ক্লেশের প্রতি কী গভীর লক্ষ রাখতেন।
বস্তুত নিজ আমল ও সে আমলের ব্যাখ্যা প্রদান দ্বারা প্রিয়নবী (সা.) আমাদের শিক্ষা দিচ্ছেন কিভাবে অন্যের আবেগ-অনুভূতি ও সুবিধা-অসুবিধার প্রতি লক্ষ রাখতে হয়। নিজ ইচ্ছাপূরণই বড় কথা নয়। এমনকি সেই ইচ্ছা যদি ইবাদত-সংক্রান্ত হয়, সে ক্ষেত্রেও অন্যের সুবিধা-অসুবিধার প্রতি লক্ষ রাখাও জরুরি। কোনো মানুষই একা এক ব্যক্তি মাত্র নয়। কোনো না কোনোভাবে অন্যের সঙ্গে তার সংশ্লিষ্টতা থাকেই। যখন ঘরে থাকে, পরিবারের লোকজনের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট থাকে।
যখন বাইরে যায়, সেখানে থাকে আরো বিস্তৃত পরিম-লের সাথে সম্পৃক্ততা। একদম একা সে কোনো অবস্থায়ই থাকে না। একদম একা যখন সে নয়, তখন নিজ ইচ্ছা-অনিচ্ছাকেও একান্তই তার একার বিষয় ভাবার সুযোগ নেই। সেরকম ভাবতে গেলে দেখা দেয় নানা বিপত্তি। পারিবারিক ও সামাজিক সব ক্ষেত্রেই মানুষ ব্যাপকভাবেই এরকম বিপত্তিতে আক্রান্ত। অধিকাংশ লোক নিজ ইচ্ছাকে একান্তই নিজের বিষয় হিসেবে দেখছে। যখনই তার মনে কোনো ইচ্ছা জাগে তা পূরণে ব্যস্ত হয়ে ওঠে। পরিপার্শ্ব নজরে রাখে না।
চিন্তা করে না তার ইচ্ছাপূরণের কোনো পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া আছে কি না। তার হয়তো ইচ্ছাপূরণ হয়ে যাবে। তাতে সে আরাম পাবে। ইচ্ছাপূরণজনিত তৃপ্তি বোধ হবে। এর পাশাপাশি যাদের সঙ্গে সে কোনো না কোনোভাবে সম্পৃক্ত, তাদের যে পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া ভোগ করতে হবে, তাতে তাদের জান-মালেরও ক্ষয়-ক্ষতির আশঙ্কা রয়েছে, অন্তত মানসিক কষ্ট স্বীকার করতে হবে তা ভাবার কোনো প্রয়োজনই বোধ করছে না।
এভাবে প্রত্যেক সক্ষম ও সামর্থ্যবান ব্যক্তির দ্বারা সংশ্লিষ্টজনেরা সমানে তার ইচ্ছাপূরণের নির্যাতন ভোগ করছে। ঘরে-বাইরে এর দৃষ্টান্তের কোনো অভাব নেই। ঘরে স্বামীর ইচ্ছাÑ পাঁচজন মেহমান খাওয়াবে। ইচ্ছা যখন জেগেছে তা অবশ্যই পূরণ করতে হবে। সুতরাং সে তাদের দাওয়াত করে ফেলল। তাদের যাতে পরিতৃপ্তি হয় এবং নিজেরও সম্মান রক্ষা হয়, সেই বিবেচনায় বাজার করে আনল। খুব ভালো কথা। মেহমান খাওয়ানো প্রশংসনীয় কাজ। সহীহ নিয়তের সঙ্গে করলে এর ছওয়াবও অনেক।
কিন্তু বিষয়টা যেহেতু তার ও মেহমানদের মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়, এর আয়োজন ও বন্দোবস্তে ঘরের অন্যান্য লোকেরও সংশ্লিষ্টতা আছে, তাদের মানসিক ও কায়িক পরিশ্রমের ব্যাপার আছে, তখন তার উচিত ছিল ইচ্ছাপূরণে নেমে পড়ার আগে তাদের মতামত জানতে চাওয়া। কিন্তু সে তা জানতে চায়নি। সরাসরি ইচ্ছাপূরণের দায়ভার তাদের ওপর চাপিয়ে দিয়েছে। সাক্ষাৎ নির্যাতন।
পারিবারিকভাবে এরকম সাধ জাগে স্ত্রীর, সাধ জাগে ছেলের এবং সাধ জাগে মেয়ের। সাধের আছে নানা রকমফের। প্রত্যেকে আপন-আপন সাধ আপনিই পূরণ করতে যায় বা পূরণ করতে চায়। অন্যকে জিজ্ঞেস করার গরজ বোধ করে না। তা পূরণে করতে হয় অর্থব্যয়। হয়তো সেই বাড়তি অর্থব্যয়ের বাড়তি চাপ খামোখাই অন্যকে পোহাতে হয়। অথবা সেই ইচ্ছাপূরণে সৃষ্টি হয় কোলাহলের, যে কোলাহলে মাতোয়ারা হওয়ার জন্য অন্যরা প্রস্তুত ছিল না। তা প্রস্তুত নাই বা থাকুক, একজনের উটকো ইচ্ছাপূরণের মাশুলে মাথাব্যথা ভোগ তাদের করতেই হবে।
মোটকথা উপরিউক্ত আলোচনা থেকে শিক্ষা নিয়ে আমাদের কর্তব্য জীবনের অন্যান্য কাজেও নিজ ইচ্ছাপূরণে সাবধানী হওয়া। প্রথমত, চিন্তা করতে হবে, যে কাজের ইচ্ছা হয়েছে সে কাজটি শরিয়তসম্মত কি না। দ্বিতীয়ত, ভাবতে হবে কাজের পদ্ধতি নিয়ে।
কোন্ পদ্ধতিতে করলে তা দ্বারা অন্য লোক কষ্ট পাবে না বা ক্ষতিগ্রস্ত হবে না, সেই পদ্ধতি খুঁজে নিতে হবে। যে সকল পন্থা অন্যদের পক্ষে পীড়াদায়ক তা অবশ্যই পরিহার করতে হবে, তাতে সেসব পন্থা অবলম্বনের ইচ্ছা যতই প্রবল হোক না কেন। মনে রাখতে হবে, নিজ ইচ্ছাপূরণের নাম দ্বীনদারি নয়। দ্বীনদারি বলে শরিয়তের অনুসরণকে। অন্যকে কষ্ট দিয়ে নিজ ইচ্ছাপূরণের অনুমতি শরিয়ত দেয় না। এরকম ইচ্ছা দমন করা অবশ্যকর্তব্য। তা দমনের জন্য যে মানসিক শক্তির দরকার, তাকওয়া ও আল্লাহভীতির চর্চা দ্বারা তা সহজেই অর্জন করা সম্ভব। আল্লাহ তা’আলা আমাদের মুত্তাকী হয়ে ওঠার তাওফীক দান করুনÑ আমীন।
বিভাগ : শান্তি ও সমৃদ্ধির পথ ইসলাম
মন্তব্য করুন
আরও পড়ুন
ইসরাইলি হামলায় গাজায় নিহতের সংখ্যা ৪৪ হাজার অতিক্রম করলো
ট্রাম্প প্রশাসনের নতুন অ্যার্টনি জেনারেল পাম বন্ডি
‘আ.লীগকে রাজনীতিতে সুযোগ দেওয়া মানে শহীদদের সঙ্গে গাদ্দারি করা’
বাংলাদেশের বিপক্ষে যে একাদশ দিয়ে মাঠে নামছে ওয়েস্ট ইন্ডিজ
কিশোরগঞ্জের আওয়ামী লীগ নেতা আনোয়ার কামালসহ তিনজন গ্রেফতার
প্রেসিডেন্টের সঙ্গে তিন বাহিনীর প্রধানের সাক্ষাৎ
বেইজিং সংস্কৃতি ও পর্যটন ব্যুরো ও আটাবের মধ্যে চুক্তি স্বাক্ষরিত
উইন্ডিজের বিপক্ষে মাঠে নামছে বাংলাদেশ
গাজায় যুদ্ধবিরতি ছাড়া বন্দী বিনিময় হবে না : হামাস
শান্তিরক্ষা মিশন মোতায়েন করতে চায় জাতিসংঘ হাইতিতে
চকরিয়ার বিএনপি নেতা আবু তাহের চৌধুরীর মৃত্যুতে সালাহউদ্দিন আহমদ ও হাসিনা আহমদের শোক
পুতিন পারমাণবিক অস্ত্র ব্যবহার করতে দ্বিধা করবেন না : সার্বিয়া
ক্লাইমেট অর্থায়ন ইস্যুতে দেশগুলোর মধ্যে দ্বন্দ্ব
লালমোহনে দুই গ্রুপের সংঘর্ষে আহত যুবদল নেতা চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যু
ট্রাম্পের অ্যাটর্নির বিরুদ্ধে তদন্ত প্রতিবেদন আটকে গেল
‘ফিলিস্তিনের পর ইরান, সউদী ও তুরস্ক হবে পরবর্তী টার্গেট’
প্রতি বছর ৩ লাখ নথিবিহীন অভিবাসীকে বৈধতা দানের ঘোষণা স্পেনের
প্রেম-ভালোবাসা নিয়ে সবচেয়ে অসুখী দেশ জাপান-কোরিয়া
মুসলিম চিকিৎসক
শীর্ষে দিল্লি