মুমিনের জীবনে ব্যক্তি স্বাধীনতা-১

Daily Inqilab মাওলানা মুহাম্মাদ হেমায়েত উদ্দীন

১৯ আগস্ট ২০২৩, ১১:৩৮ পিএম | আপডেট: ২০ আগস্ট ২০২৩, ১২:০১ এএম

‘স্বাধীনতা’ কথাটি ‘পরাধীনতা’-এর বিপরীত। স্বাধীনতার শাব্দিক অর্থ নিজের অধীনতা। আর পরাধীনতার শাব্দিক অর্থ পরের অধীনতা। রাষ্ট্রবিজ্ঞানের পরিভাষায় বিদেশি কর্তৃক শাসিত হওয়াকে পরাধীনতা আর এর বিপরীতকে বলা হয় স্বাধীনতা।

আলোচ্য প্রবন্ধে রাষ্ট্রের স্বাধীনতা বা পরাধীনতা সম্বন্ধে নয় বরং ব্যক্তির নিজস্ব স্বাধীনতা বা পরাধীনতা সম্বন্ধে আলোচনা করা উদ্দেশ্য। এটা আলোচনা করা উদ্দেশ্য এ কারণে যে, সম্প্রতি ব্যক্তি-স্বাধীনতা কথাটার চরম অপব্যবহার চালু হয়েছে। অবস্থা এমন দাঁড়িয়েছে যে, একজন কোনো অন্যায় কাজ করলেও নাকি অন্যজন তাকে বাধা দিতে পারে না। কারণ তাতে নাকি তার ব্যক্তি-স্বাধীনতা খর্ব হয়। এ কারণেই নাকি পাশ্চাত্য দেশগুলোতে বিয়ে ছাড়া নর-নারীর একত্র বসবাস (লিভ ইন লাভার) এমনকি সমকামীদের বিয়েও চার্চ কর্তৃক স্বীকৃত ও অনুমোদিত হয়েছে। কারণ বিপরীত হলে নাকি ব্যক্তি-স্বাধীনতা খর্ব হয়। এই ব্যক্তি-স্বাধীনতার দোহাই দিয়েই অনেকে অবাধ যৌনাচারিতাকে বৈধতার লেবাস পরানোর চেষ্টা চালাচ্ছেন।

কিন্তু প্রশ্ন হলো, যাচ্ছে তাই করাই যদি ব্যক্তি-স্বাধীনতা বলে স্বীকৃতি পেতে পারে, তাহলে চুরি-ডাকাতি, খুন-খারাবী ইত্যাদি যার যা ইচ্ছা তা করুক, সেটা তার ব্যক্তি-স্বাধীনতা, তাতে বাধা দেওয়া হয় কেন? চুরি-ডাকাতি, খুন-খারাবী ইত্যাদির মন্দ প্রভাব সমাজের অন্যের প্রতিও বিস্তৃত হয়, অন্যেও ক্ষতিগ্রস্ত হয় এর দ্বারা, এ কারণে এগুলো যদি ব্যক্তি-স্বাধীনতা বলে স্বীকৃতি না পায় ও নিন্দিত হয়, তাহলে অবাধ যৌনাচারিতা ও অবাধ অসামাজিক কার্যকলাপের ফলে যখন সমাজে নৈতিক অধঃপতনসহ নানা রকম রোগ-ব্যাধির বিস্তৃতি হয় (এমনকি এইডসের মতো রোগও) তার ফলে কি সেটা নিন্দিত হতে পারে না?

আসলে ব্যক্তি-স্বাধীনতা বলে এরূপ যেসব বিষয়কে চালিয়ে দেওয়ার চেষ্টা চালানো হচ্ছে তা আদৌ ব্যক্তি স্বাধীনতা নয়; বরং তা হলো বল্গাহীনতা। ব্যক্তি স্বাধীনতা ও বল্গাহীনতার মধ্যে যে দুস্তর পার্থক্য রয়েছেÑ এতটুকুও কি তারা চিন্তা করে দেখেন না?

ব্যক্তি-স্বাধীনতা কথাটিকে যদি নিজের ইচ্ছার স্বাধীনতা অর্থে গ্রহণ করতে চাওয়া হয়, তাহলে একজন মুমিনের জীবনে সেরূপ ব্যক্তি স্বাধীনতা কতটুকু রয়েছে, সেটা বোঝা নির্ভর করছে তার জীবন কিসের জন্য তা বোঝার ওপর। মুমিনের জীবন হলো আল্লাহর ইবাদত করার জন্য, আল্লাহর দাসত্ব করার জন্য। আর ইবাদতের সংজ্ঞা হলো, জীবনের সর্বস্তরে আল্লাহর হুকুম-আহকামের সামনে চরমভাবে নতি স্বীকার করা। মুমিনের জীবনের সব কিছু আল্লাহর হুকুমের সামনে নত হয়ে যাবেÑ মুমিনের কথা-বার্তা, তার কাজ-কর্ম, তার হাটা-চলা, তার শয়ন-স্বপন, তার নিদ্রা-জাগরণ সব কিছু আল্লাহর হুকুমের সামনে চরমভাবে নতি স্বীকার করবে।

অর্থাৎ, তার কোনো কিছুই তার নিজের ইচ্ছা মতো চলবে না; বরং চলবে আল্লাহর হুকুম মতো। এটাকেই বলা হয় দাসত্ব। এটাই হলো ইবাদত। মুমিন আল্লাহর দাসত্ব করবে। মুমিন হলো আল্লাহর দাস। দুনিয়ার একজন দাস তার মুনিবের হুকুম মতো তার সব কিছু চালায়, তার নিজের ইচ্ছা মতো সে কিছুই করে না। একজন দাস যেমন এটা ভাবতে পারে না যে, আমার যেমন ইচ্ছা তেমন করব, যা ভালো বুঝি তা-ই করব, তদ্রƒপ একজন মুমিন তথা আল্লাহর দাসও নিজের ইচ্ছা মতো কোনো কিছু করার কথা ভাবতে পারে না। একমাত্র আল্লাহ ছাড়া আর কারো ইচ্ছা মতো সে চলতে পারে না।

একজন মুমিন যেহেতু আল্লাহ ছাড়া আর কারো দাসত্ব করতে পারে না, তাই দুনিয়ার কোনো মানুষের হুকুম মতো, দুনিয়ার কোনো মানুষের কথা মতো তার কোনো কিছু চালাতে পারবে না। এমনকি তার নিজের ইচ্ছা মতোও নিজেকে চালাতে পারবে না। তার মন যা বলবে, তার চিন্তা যা বলবে সে অনুযায়ীও সে চলতে পারবে না। তার নিজের চাহিদা বা চিন্তা-চেতনার দাসত্বও চলবে না, তার নিজের পছন্দ-অপছন্দের দাসত্বও চলবে না, তার নিজের ইচ্ছা-অনিচ্ছার দাসত্বও চলবে না। শুধু চলবে এক আল্লাহর দাসত্ব।

কুরআনে কারীমে ইরশাদ হয়েছে : তিনি হুকুম দিয়েছেন একমাত্র তাঁরই ইবাদত করার জন্য। (সূরা ইউসুফ : ৪০)। দুনিয়ার দাসত্বের সাথে আল্লাহর দাসত্বের আর একটা মিল হলো-দুনিয়ায় যে দাসত্ব করে অর্থাৎ, যে দাস হয়, সে কোনো দিন মুনিবের সামনে নিজস্ব যুক্তি বা নিজস্ব বুঝ প্রকাশ করতে পারে না। মুনিব যা বলবে তাই তাকে করে যেতে হবে। মুনিবের হুকুমের সামনে তার নিজস্ব বিবেচনা বা যুক্তির কোনো স্থান নেই।

কোনো দাস এটা বলতে পারবে না যে, আমার বিবেচনায় এটাই ভালো মনে হয়, তাই-আমি এটাই করব মুনিব যাই বলুক না কেন! আমার যুক্তিতে এটাই ভালো মনে হয়, তাই আমি এটাই করব মুনিব যাই বলুক না কেন! কোনো দাস এরকম বলতে পারে না। কারণ, মুনিবের কথার সামনে দাসের কোনো যুক্তি বিবেচনা চলে না। আল্লাহপাক আমাদেরকে এরকম দাসত্বই শিক্ষা দিয়েছেন যে, তুমি নিজের যুক্তি বিবেচনায় চলতে পারবে না। কুরআনে কারীমে ইরশাদ হয়েছে : অনেক কিছুকে তোমরা খারাপ মনে করবে, অথচ সেটা খারাপ নয়; বরং ভালো, আবার অনেক কিছুকে তোমরা ভালো মনে করবে কিন্তু আসলে তা ভালো নয়; বরং খারাপ। (সূরা বাক্বারা : ২১৬)।


বিভাগ : শান্তি ও সমৃদ্ধির পথ ইসলাম


মন্তব্য করুন

HTML Comment Box is loading comments...

এই বিভাগের আরও

আপন অস্তিত্ব রক্ষার স্বার্থে করণীয়-১
ধর্ম নিয়ে তাচ্ছিল্যকারীদের বিরুদ্ধে জিহাদের ডাক দিলেন আজহারী
ভালো কাজে দেরি করা উচিত নয়-২
ভালো কাজে দেরি করা উচিত নয়-১
জালেমের সামনে সত্য প্রকাশে নির্ভীক ছিলেন যারা
আরও

আরও পড়ুন

নতুন প্রজন্মকে বিজ্ঞানমনস্ক প্রজন্ম হিসেবে গড়ে তুলতে হবে

নতুন প্রজন্মকে বিজ্ঞানমনস্ক প্রজন্ম হিসেবে গড়ে তুলতে হবে

মহিপুরে ঘাট ইজারা নিয়ে সংঘর্ষে মৎস্য দল নেতাসহ‌ আহত  ২

মহিপুরে ঘাট ইজারা নিয়ে সংঘর্ষে মৎস্য দল নেতাসহ‌ আহত ২

মুজিবনগরে তারুণ্যের উৎসব উৎযাপনে আন্ত:  ইউনিয়ন  ফুটবল টূর্নামেন্টে  অনুষ্ঠিত

মুজিবনগরে তারুণ্যের উৎসব উৎযাপনে আন্ত:  ইউনিয়ন  ফুটবল টূর্নামেন্টে  অনুষ্ঠিত

ফ্যাসিস্ট হাসিনা হটানোর আন্দোলনের একটাই লক্ষ্য ছিল জনগণের ভোটের অধিকার প্রতিষ্ঠা করা  : হযরত আলী মিঞা

ফ্যাসিস্ট হাসিনা হটানোর আন্দোলনের একটাই লক্ষ্য ছিল জনগণের ভোটের অধিকার প্রতিষ্ঠা করা : হযরত আলী মিঞা

থানার ওসিদের অলিগলিতে পদচারণা থাকতে হবে  : ডিএমপি কমিশনার

থানার ওসিদের অলিগলিতে পদচারণা থাকতে হবে : ডিএমপি কমিশনার

পাত্র বিদেশে থাকাবস্থায় দেশে তার জন্য পাত্রী ঠিক করে রাখা প্রসঙ্গে।

পাত্র বিদেশে থাকাবস্থায় দেশে তার জন্য পাত্রী ঠিক করে রাখা প্রসঙ্গে।

মেঘনা ধনাগোদা সেচ প্রকল্পের পাম্প হাউজে পানি সেচ উদ্বোধনের ১০ মিনিটেই বন্ধ

মেঘনা ধনাগোদা সেচ প্রকল্পের পাম্প হাউজে পানি সেচ উদ্বোধনের ১০ মিনিটেই বন্ধ

রামগড়ে নবাগত জেলা প্রশাসকের পরিচিতি ও মতবিনিময় সভা

রামগড়ে নবাগত জেলা প্রশাসকের পরিচিতি ও মতবিনিময় সভা

বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ২৪ পদাতিক ডিভিশনের আন্ত ইউনিট কাবাডি প্রতিযোগিতার ফাইনাল

বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ২৪ পদাতিক ডিভিশনের আন্ত ইউনিট কাবাডি প্রতিযোগিতার ফাইনাল

সরিষাবাড়ী ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশনের উদ্যোগে কম্বল বিতরণ

সরিষাবাড়ী ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশনের উদ্যোগে কম্বল বিতরণ

চীনের রাষ্ট্রদূতের সঙ্গে এলডিপি মহাসচিবের বৈঠক

চীনের রাষ্ট্রদূতের সঙ্গে এলডিপি মহাসচিবের বৈঠক

এবার  মেডিকেলে মুক্তিযোদ্ধা কোটায় উত্তীর্ণদের ফল স্থগিত

এবার মেডিকেলে মুক্তিযোদ্ধা কোটায় উত্তীর্ণদের ফল স্থগিত

সুবিধাবঞ্চিত পথশিশুদের মাঝে ছাত্রদল নেতার শিক্ষা সামগ্রী বিতরণ

সুবিধাবঞ্চিত পথশিশুদের মাঝে ছাত্রদল নেতার শিক্ষা সামগ্রী বিতরণ

প্রেসক্লাবের সামনে মানববন্ধন, সন্ত্রাসীদের গ্রেফতারের ৭২ ঘণ্টার আল্টিমেটাম

প্রেসক্লাবের সামনে মানববন্ধন, সন্ত্রাসীদের গ্রেফতারের ৭২ ঘণ্টার আল্টিমেটাম

অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের মেয়াদ অনির্দিষ্টকাল হতে পারে না: ড. মোশাররফ

অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের মেয়াদ অনির্দিষ্টকাল হতে পারে না: ড. মোশাররফ

টিকটক ও ক্যাপকাটকে টক্কর দিতে মোক্ষম চাল মেটার!

টিকটক ও ক্যাপকাটকে টক্কর দিতে মোক্ষম চাল মেটার!

৩৩ বছরের পুরনো পত্রিকা ‘ভোরের কাগজ’ বন্ধের ঘোষণা

৩৩ বছরের পুরনো পত্রিকা ‘ভোরের কাগজ’ বন্ধের ঘোষণা

ফেরার সময় তিন ইসরাইলি বন্দীকে কী উপহার দিল হামাস?

ফেরার সময় তিন ইসরাইলি বন্দীকে কী উপহার দিল হামাস?

মানুষকে স্বস্তি দিতে অন্তবর্তীকালীন সরকার ব্যর্থ হচ্ছে : আমিনুল হক

মানুষকে স্বস্তি দিতে অন্তবর্তীকালীন সরকার ব্যর্থ হচ্ছে : আমিনুল হক

পিঠার নাম হৃদয়হরণ, মুখচাহনি

পিঠার নাম হৃদয়হরণ, মুখচাহনি