ঢাকা   শুক্রবার, ২২ নভেম্বর ২০২৪ | ৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১

আস্থার সম্পদ যেন না হারাই

Daily Inqilab মাওলানা মুহাম্মাদ আব্দুল মালেক

২২ আগস্ট ২০২৩, ১১:২৭ পিএম | আপডেট: ২৩ আগস্ট ২০২৩, ১২:০৩ এএম

মুসলিম উম্মাহর ঈর্ষণীয় সৌভাগ্য হলো শিকড়ের সঙ্গে তাদের সংযুক্তি। এক মুহূর্তের জন্যও এই সম্পর্কে কোনোরূপ ছেদ ঘটেনি। রিজালুল্লাহর অবিচ্ছিন্ন সূত্রে কিতাবুল্লাহ ও সুন্নাতু রাসূলিল্লাহর সঙ্গে এই উম্মাহ সদা সংযুক্ত ছিল। সাহাবা-তাবেয়ীন, ফুকাহা-মুহাদ্দিসীন এবং প্রতি যুগের বিশ্বস্ত উলামায়ে উম্মত কুরআন-সুন্নাহর পবিত্র আমানতকে পরবর্তী প্রজন্মের কাছে পৌঁছে দিয়েছেন। তাঁদের বিশ্বস্ততা ও আমানতদারী ছিল প্রশ্নাতীত। কেননা, তাঁদের মাধ্যমে মহান রাব্বুল আলামীনের অমোঘ ঘোষণা : আমি এই কুরআন নাজিল করেছি এবং আমিই তা সংরক্ষণ করব, বাস্তবায়িত হয়েছে। সমগ্র মুসলিম উম্মাহ দ্বীনের বিষয়ে এই মহান কাফেলার প্রতিই আস্থাশীল ছিল এবং এই আস্থা ও বিশ্বাসের বদৌলতে তাঁরা সংযুক্ত ছিলেন তাদের সুমহান ঐতিহ্যের সঙ্গে।

তবে এর অর্থ এই নয় যে, মুসলিম উম্মাহর মাঝে আস্থার সংকট সৃষ্টির কোনো প্রচেষ্টা কেউ কখনো গ্রহণ করেনি; বরং বাস্তব কথা এই যে, কোনো যুগই এই অপপ্রয়াস থেকে মুক্ত ছিল না। প্রতি যুগেই যেমন দ্বীনের উৎসগুলোর বিষয়ে, তেমনি এই উৎসের ধারক-বাহক-সংরক্ষকদের সম্পর্কেও মুসলিম উম্মাহকে আস্থাহীন করার অপপ্রয়াস চালানো হয়েছে। যাদের নসিব মন্দ ছিল তারা এসবে বিভ্রান্ত হলেও গোটা মুসলিম উম্মাহ কখনো বিভ্রান্তির আঁধারে নিমজ্জ্বিত হয়নি।

ইসলামের বিরুদ্ধে পরিচালিত কর্মকা-ের ইতিহাস অতি প্রাচীন। ইসলামের নবী হযরত মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সম্পর্কে, তাঁর পুণ্যাত্মা স্ত্রীগণ ও আহলে বাইত সম্পর্কে এবং তাঁর সাহাবিদের সম্পর্কে মিথ্যা প্রচার কম হয়নি। এরাই যখন নিষ্কৃতি পাননি তো পরবর্তী যুগের ব্যক্তিগণ নিষ্কৃতি পাবেন তা আশা করাও বাতুলতা মাত্র। পরবর্তী যুগের ফকিহ-মুহাদ্দিস, আলিম-উলামা, দায়ী ইলাল্লাহ ও মুজাহিদ ফী সাবীলিল্লাহ সকলেই বিভিন্ন দল ও গোষ্ঠীর মিথ্যা প্রচারের নিশানা হয়েছেন।

এসব গোষ্ঠীর সবার উদ্দেশ্য অভিন্ন ছিল এমন কথা আমরা বলব না, তবে ফলাফল বিচারে এদের কাজকর্মের মধ্যে উল্লেখযোগ্য ভিন্নতা ছিল একথাও বলা যায় না। ইসলাম বিদ্বেষী গোষ্ঠীর মিথ্যা প্রচারের উদ্দেশ্য যদি হয় মুসলিম মন-মানসকে তাদের দ্বীনি ব্যক্তিবর্গ সম্পর্কে আস্থাহীন করা তবে মুসলিম উম্মাহর নাদান দোস্তদের হঠকারিতার ফলাফলও ভিন্ন কিছু হয়নি।

এই আস্থাহীনতা সৃষ্টি কেবল ইসলামী ব্যক্তিত্বদের ক্ষেত্রেই সীমাবদ্ধ থাকেনি, বিভিন্ন ভিত্তিহীন প্রচারের মাধ্যমে ইসলামের উৎস ও শাস্ত্রাদি সম্পর্কেও গণমানসে অবিশ্বাস সৃষ্টির প্রচেষ্টা হয়েছে। এ ধারাবাহিকতায় কুরআন, সুন্নাহ, ফিকহ, ইসলামের ইতিহাস ইত্যাদি সকল বিষয়ই ভিত্তিহীন সমালোচনার শিকার হয়েছে।

আমাদের এই উপমহাদেশে ইংরেজ রাজশক্তি তাদের রাজনৈতিক স্বার্থে মিস্টার-মৌলভীর যে বিভেদ সৃষ্টি করেছিল এই বিভেদকে চিরস্থায়ী করার জন্য ইসলামের ধারক-বাহকদের সম্পর্কে এবং দ্বীন ও দ্বীনের উৎস সম্পর্কে আস্থার সংকট সৃষ্টির প্রয়োজনীয়তা ছিল অপরিহার্য। এ উদ্দেশে তারা তাদের কার্যক্রম খুব সুচারুরূপে সম্পাদন করেছে। দুঃখের বিষয় এই যে, মুসলিম উম্মাহর কিছু গোষ্ঠী সচেতনভাবে কিংবা অসচেতনতার কারণে তাদের লক্ষ্য পূরণে সহযোগীর ভূমিকা পালন করেছে।

এ বিষয়ে তাদেরও সচেতন হওয়া উচিত এবং সাধারণ মুসলিম জনগণেরও সতর্ক হওয়া কর্তব্য। তবে আশার কথা এই যে, প্রতি যুগে যেমন ছিল, এ যুগেও এই প্রবল বিরুদ্ধ স্রোতের মুখে দাঁড়িয়ে একটি কাফেলা কাজ করে চলেছেন। তারা হয়তো বিভিন্ন স্থানে বিক্ষিপ্ত রয়েছেন এবং খুব শক্তিশালী পার্থিব উপকরণে সমৃদ্ধ নন, কিন্তু মহান আল্লাহর নুসরতের প্রতি আস্থা রেখে তারা কাজ করে চলেছেন।

দ্বীনের প্রতি মুসলিম উম্মাহর আস্থা ও বিশ্বাস পুনর্বহালকরণে তাদের সম্মিলিত প্রচেষ্টা উম্মাহর জন্য শুভফল বয়ে আনবে ইনশাআল্লাহ। আল্লাহ তাআলা এই মহান কাফেলার সকলের অবদানকে কবুল করুন এবং আমাদেরকেও ক্ষুদ্র সামর্থ্য নিয়ে এই কাফেলার সঙ্গে সংযুক্ত থাকার তাওফিক দান করুন।


বিভাগ : শান্তি ও সমৃদ্ধির পথ ইসলাম


মন্তব্য করুন

HTML Comment Box is loading comments...

এই বিভাগের আরও

বড়কে মান্য করুন, বৃদ্ধকে সম্মান করুন-১
সন্তানদের কিসের উপর রেখে যাচ্ছি-২
সন্তানদের কিসের উপর রেখে যাচ্ছি-১
কে অন্ধ, কে চক্ষুষ্মান
সে-ই স্বাধীন যে সিজদা করে এক আল্লাহকে
আরও

আরও পড়ুন

সিঙ্গেল সিটের দাবিতে গভীর রাতেও হলের বাইরে ছাত্রীরা

সিঙ্গেল সিটের দাবিতে গভীর রাতেও হলের বাইরে ছাত্রীরা

ইসরাইলি হামলায় গাজায় নিহতের সংখ্যা ৪৪ হাজার অতিক্রম করলো

ইসরাইলি হামলায় গাজায় নিহতের সংখ্যা ৪৪ হাজার অতিক্রম করলো

ট্রাম্প প্রশাসনের নতুন অ্যার্টনি জেনারেল পাম বন্ডি

ট্রাম্প প্রশাসনের নতুন অ্যার্টনি জেনারেল পাম বন্ডি

‘আ.লীগকে রাজনীতিতে সুযোগ দেওয়া মানে শহীদদের সঙ্গে গাদ্দারি করা’

‘আ.লীগকে রাজনীতিতে সুযোগ দেওয়া মানে শহীদদের সঙ্গে গাদ্দারি করা’

বাংলাদেশের বিপক্ষে যে একাদশ দিয়ে মাঠে নামছে ওয়েস্ট ইন্ডিজ

বাংলাদেশের বিপক্ষে যে একাদশ দিয়ে মাঠে নামছে ওয়েস্ট ইন্ডিজ

কিশোরগঞ্জের আওয়ামী লীগ নেতা আনোয়ার কামালসহ তিনজন গ্রেফতার

কিশোরগঞ্জের আওয়ামী লীগ নেতা আনোয়ার কামালসহ তিনজন গ্রেফতার

প্রেসিডেন্টের সঙ্গে তিন বাহিনীর প্রধানের সাক্ষাৎ

প্রেসিডেন্টের সঙ্গে তিন বাহিনীর প্রধানের সাক্ষাৎ

বেইজিং সংস্কৃতি ও পর্যটন ব্যুরো ও আটাবের মধ্যে চুক্তি স্বাক্ষরিত

বেইজিং সংস্কৃতি ও পর্যটন ব্যুরো ও আটাবের মধ্যে চুক্তি স্বাক্ষরিত

উইন্ডিজের বিপক্ষে মাঠে নামছে বাংলাদেশ

উইন্ডিজের বিপক্ষে মাঠে নামছে বাংলাদেশ

গাজায় যুদ্ধবিরতি ছাড়া বন্দী বিনিময় হবে না : হামাস

গাজায় যুদ্ধবিরতি ছাড়া বন্দী বিনিময় হবে না : হামাস

শান্তিরক্ষা মিশন মোতায়েন করতে চায় জাতিসংঘ হাইতিতে

শান্তিরক্ষা মিশন মোতায়েন করতে চায় জাতিসংঘ হাইতিতে

চকরিয়ার বিএনপি নেতা আবু তাহের চৌধুরীর মৃত্যুতে সালাহউদ্দিন আহমদ ও হাসিনা আহমদের শোক

চকরিয়ার বিএনপি নেতা আবু তাহের চৌধুরীর মৃত্যুতে সালাহউদ্দিন আহমদ ও হাসিনা আহমদের শোক

পুতিন পারমাণবিক অস্ত্র ব্যবহার করতে দ্বিধা করবেন না : সার্বিয়া

পুতিন পারমাণবিক অস্ত্র ব্যবহার করতে দ্বিধা করবেন না : সার্বিয়া

ক্লাইমেট অর্থায়ন ইস্যুতে দেশগুলোর মধ্যে দ্বন্দ্ব

ক্লাইমেট অর্থায়ন ইস্যুতে দেশগুলোর মধ্যে দ্বন্দ্ব

লালমোহনে দুই গ্রুপের সংঘর্ষে আহত যুবদল নেতা চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যু

লালমোহনে দুই গ্রুপের সংঘর্ষে আহত যুবদল নেতা চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যু

ট্রাম্পের অ্যাটর্নির বিরুদ্ধে তদন্ত প্রতিবেদন আটকে গেল

ট্রাম্পের অ্যাটর্নির বিরুদ্ধে তদন্ত প্রতিবেদন আটকে গেল

‘ফিলিস্তিনের পর ইরান, সউদী ও তুরস্ক হবে পরবর্তী টার্গেট’

‘ফিলিস্তিনের পর ইরান, সউদী ও তুরস্ক হবে পরবর্তী টার্গেট’

প্রতি বছর ৩ লাখ নথিবিহীন অভিবাসীকে বৈধতা দানের ঘোষণা স্পেনের

প্রতি বছর ৩ লাখ নথিবিহীন অভিবাসীকে বৈধতা দানের ঘোষণা স্পেনের

প্রেম-ভালোবাসা নিয়ে সবচেয়ে অসুখী দেশ জাপান-কোরিয়া

প্রেম-ভালোবাসা নিয়ে সবচেয়ে অসুখী দেশ জাপান-কোরিয়া

মুসলিম চিকিৎসক

মুসলিম চিকিৎসক