আল্লাহর সন্তুষ্টিই হোক উপকারের প্রতিদান-২
৩০ আগস্ট ২০২৩, ১১:৪০ পিএম | আপডেট: ৩১ আগস্ট ২০২৩, ১২:০১ এএম
হাদিস শরীফে ইরশাদ হয়েছেÑ কারও সঙ্গে যখন কোনো ভালো আচরণ করা হয় এরপর সে যদি ভালো আচরণকারীকে বলে- জাযাকাল্লাহু খায়রান অর্থাৎ আল্লাহ তোমাকে উত্তম প্রতিদান দান করুন, তাহলে সে যথোপযুক্ত প্রশংসা করল। (জামে তিরমিযী : ২০৩৫)। কেউ যদি কিছু হাদিয়া দেয়, অথবা বিপদে-সংকটে পাশে এসে দাঁড়ায়, ভালো কোনো পরামর্শ দেয়, কিংবা অন্য যেকোনোভাবে সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেয়, তাহলে তার জন্যে কমপক্ষে দুআ করো- আল্লাহ তোমাকে উত্তম প্রতিদান দান করুন। মানুষের সবকিছুই যেখানে সীমিত, সীমাবদ্ধ, আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের সবকিছুই অসীম, সীমাহীন। আল্লাহ যখন কাউকে পুরস্কৃত করেন, সেটা তাঁর শান মোতাবেকই করেন। কারও কাছ থেকে কোনো ভালো আচরণ পাওয়ার পর তাই আন্তরিকতাপূর্ণ এ ছোট দুআটুকুও অনেক বড় কৃতজ্ঞতা।
সার কথা হল, কেউ যদি তোমার সঙ্গে ভালো কোনো আচরণ করে তাহলে প্রথমে তাকে এর প্রতিদান দেয়ার চেষ্টা করো। যদি সম্ভব না হয় তাহলে কমপক্ষে তার প্রশংসা করো। আর সর্বাবস্থায় তার জন্য আল্লাহ পাকের দরবারে এ দুআ তো করবেই- আল্লাহ তোমাকে উত্তম প্রতিদানে ভূষিত করুন।
প্রিয় নবীজী (সা.) নিজের জীবনে কীভাবে এ শিক্ষা প্রতিফলিত করেছেন- এর একটি উদাহরণ দিই। একবার রাসূলুল্লাহ (সা.) এক ব্যক্তির কাছ থেকে একটি পশু ধার নিয়েছিলেন। এরপর লোকটি এসে তার পাওনা ফেরত চাইল এবং খুবই কঠোর ও মন্দ আচরণ করল। তখন সাহাবায়ে কেরাম ক্ষিপ্ত হয়ে তাকে মারতে উদ্যত হলেন। কিন্তু রাসূলুল্লাহ (সা.) তাদেরকে থামিয়ে বললেন, তাকে ছেড়ে দাও; কেননা পাওনা যার, তার কিছু বলারও অধিকার রয়েছে।
এরপর বললেন, তোমরা তাকে তার পশুটির মতো একটি পশু কিনে দিয়ে দাও। সাহাবায়ে কেরাম বললেন, আমরা তো এর মতো কিছু পাচ্ছি না, যা পাই তা এর চেয়ে বড়। রাসূলুল্লাহ (সা.) বললেন, বড়টিই তাকে দিয়ে দাও। সন্দেহ নেই, তোমাদের মধ্যে সে-ই উত্তম, যে সবচেয়ে সুন্দরভাবে পাওনা পরিশোধ করে। (সহীহ বুখারী : ২৩০৫, ২৩০৬)।
কারও কাছ থেকে কিছু ধার নিলে তার পাওনা তাকে পরিশোধ করে দেয়াটাকে যেন আমরা এখন নিজেদের পক্ষ থেকে অনুগ্রহ মনে করি। কখনো তো সক্ষমতা থাকা সত্ত্বেও পাওনাদারকে দিনের পর দিন ঘোরানো হয়। অথচ রাসূলুল্লাহ (সা.) পাওনার চেয়ে আরও বাড়িয়ে দিলেন।
বললেন, যে যত সুন্দরভাবে পাওনা পরিশোধ করবে, সে ততোটাই ভালো মানুষ! যদি আগে থেকে বাড়িয়ে দেয়ার কোনো শর্ত করা না হয় এবং বাড়িয়ে দেয়ার কোনো বাধ্যতামূলক রেওয়াজও না থাকে, ঋণদাতার পক্ষ থেকে এমন কোনো দাবিও না থাকে, তাহলে ঋণ পরিশোধের সময় কিছু টাকা বাড়িয়ে দেয়ায় কোনো অসুবিধা নেই; এটা বরং ভালো। এতেও উপকারের এক ধরনের কৃতজ্ঞতা আদায় করা হয়।
রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন : তোমাদের প্রতি যে ব্যক্তি কোনো ভালো আচরণ করে তোমরা তার প্রতিদান দাও। যদি দেয়ার মতোা কিছু না পাও তাহলে তার জন্যে দুআ করো, যাতে সে বুঝতে পারে- তোমরা তার প্রতিদান দিয়েছ। (আল-আদাবুল মুফরাদ : ২১৬)।
সবকিছুর প্রতিদান নগদই হয়ে যেতে হবে- এমন কোনো কথা নেই। আসল বিষয় তো শোকর ও কৃতজ্ঞতা। এ কৃতজ্ঞতা কখনোা প্রকাশ পায় কোনো উপহারের বিনিময়ে অন্য আরেকটি উপহার প্রদানের মাধ্যমে, কখনো প্রকাশ পায় কোনো উপকার করার মধ্য দিয়ে, কখনো অন্য কোনো উপায়ে।
মোটকথা, কৃতজ্ঞতার মানসিকতা লালন করে যেতে হবে। এমন যেন না হয়, আমার বিপদে একজন পাশে দাঁড়াল, সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিল, কিন্তু আমি তা ভুলেই গেলাম, তার প্রতিপক্ষ হয়ে গেলাম। এমন হলে পারস্পরিক সম্প্রীতি বিনষ্ট হয়। ওদিকে শয়তানের প্ররোচনায় তখন খুলে যেতে পারে খোঁটা দেয়ার দুয়ার। এ আশঙ্কা যদি বাস্তবে রূপ নেয় তাহলে তো পারস্পরিক যতটুকু সহযোগিতা আগে করা হয়েছিল সবটাই নিষ্ফল হয়ে যাবে।
তাই তা না করে বরং অন্য কারও উপকার ও সহযোগিতার কথা মনে রাখতে হবে আজীবন। যখনই তার কোনো উপকার করার সুযোগ পাওয়া যায়, তা ছোট হোক আর বড় হোক, এ সুযোগকে কাজে লাগাতে হবে। এতে পারস্পরিক সহযোগিতার বন্ধন আরও সুদৃঢ় হবে। সামাজিক সম্প্রীতি বৃদ্ধি পাবে। ভ্রাতৃত্বের সম্পর্ক সুসংহত হবে।
একে অন্যকে এই যে সহযোগিতা- এটা হতে হবে কেবলই আল্লাহকে সন্তুষ্ট করার জন্যে। এ সহযোগিতা হতে পারে কোনো বিপদ ও সংকটের মুহূর্তে, হতে পারে স্বাভাবিক কোনো অবস্থায়, এমনকি আনন্দঘন কোনো পরিবেশকে আরও আনন্দময় করে তোলার মধ্য দিয়েও হতে পারে। যে অবস্থাতেই হোক, যে পদ্ধতিতেই হোক, মুমিনের সবকাজের উদ্দেশ্যই তো এই একটাই- আল্লাহ তায়ালার সন্তুষ্টি অর্জন। একে অন্যকে হাদিয়া ও উপহার দিলে তাতেও আল্লাহকে সন্তুষ্ট করাই লক্ষ্য হওয়া উচিত।
বিভাগ : শান্তি ও সমৃদ্ধির পথ ইসলাম
মন্তব্য করুন
আরও পড়ুন
মার্কিন শ্রম প্রতিনিধি দল ঢাকা আসছে আজ
পার্থে শুরুতেই চাপে ভারত
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ১৮ সদস্যবিশিষ্ট কেন্দ্রীয় কমিটি ঘোষণা
সেনাকুঞ্জে খালেদা জিয়ার সঙ্গে জামায়াত আমীরের কুশল বিনিময়
সিঙ্গেল সিটের দাবিতে গভীর রাতেও হলের বাইরে ছাত্রীরা
ইসরাইলি হামলায় গাজায় নিহতের সংখ্যা ৪৪ হাজার অতিক্রম করলো
ট্রাম্প প্রশাসনের নতুন অ্যার্টনি জেনারেল পাম বন্ডি
‘আ.লীগকে রাজনীতিতে সুযোগ দেওয়া মানে শহীদদের সঙ্গে গাদ্দারি করা’
বাংলাদেশের বিপক্ষে যে একাদশ দিয়ে মাঠে নামছে ওয়েস্ট ইন্ডিজ
কিশোরগঞ্জের আওয়ামী লীগ নেতা আনোয়ার কামালসহ তিনজন গ্রেফতার
প্রেসিডেন্টের সঙ্গে তিন বাহিনীর প্রধানের সাক্ষাৎ
বেইজিং সংস্কৃতি ও পর্যটন ব্যুরো ও আটাবের মধ্যে চুক্তি স্বাক্ষরিত
উইন্ডিজের বিপক্ষে মাঠে নামছে বাংলাদেশ
গাজায় যুদ্ধবিরতি ছাড়া বন্দী বিনিময় হবে না : হামাস
শান্তিরক্ষা মিশন মোতায়েন করতে চায় জাতিসংঘ হাইতিতে
চকরিয়ার বিএনপি নেতা আবু তাহের চৌধুরীর মৃত্যুতে সালাহউদ্দিন আহমদ ও হাসিনা আহমদের শোক
পুতিন পারমাণবিক অস্ত্র ব্যবহার করতে দ্বিধা করবেন না : সার্বিয়া
ক্লাইমেট অর্থায়ন ইস্যুতে দেশগুলোর মধ্যে দ্বন্দ্ব
লালমোহনে দুই গ্রুপের সংঘর্ষে আহত যুবদল নেতা চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যু
ট্রাম্পের অ্যাটর্নির বিরুদ্ধে তদন্ত প্রতিবেদন আটকে গেল