ঢাকা   শুক্রবার, ২২ নভেম্বর ২০২৪ | ৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১

তাগুত থেকে সাবধান

Daily Inqilab এ. কে. এম. ফজলুর রহমান মুনশী

৩১ আগস্ট ২০২৩, ১০:৫৪ পিএম | আপডেট: ০১ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ১২:০১ এএম

‘তাগুত’ আরবি ভাষায় বহুল ব্যবহৃত একটি শব্দ। এ শব্দটি সীমালংঘনকারী বা নির্ধারিত সীমা অতিক্রমকারী ব্যক্তিকে বুঝানোর জন্য ব্যবহার করা হয়ে থাকে।

আল্লামা ইবনুল কাইয়্যেম ‘ইলামুল মুয়াক্কেয়ীন’ গ্রন্থে উল্লেখ করেছেন যে, ‘তাগুত বলা হয় এমন প্রত্যেক ইবাদতকৃত সত্তাকে কিংবা অনুসৃত সত্তাকে অথবা আনুগত্যকৃত সত্তাকে, যার সম্বন্ধে ইবাদতকারী বা অনুসরণকারী অথবা আনুগত্যকারী তার বৈধসীমা অতিক্রম করেছে এবং ইবাদাতকৃতসত্তা বা অনুসৃত সত্তা অথবা আনুগত্যকৃত সত্তা তা সন্তুষ্টচিত্তে কবুল করে নিয়েছে বা সেদিকে আহ্বান বা অনুপ্রাণিত করেছে।’

সুতরাং এর দ্বারা বুঝা যায় যে, তাগুত এমন ব্যক্তিকে বলা হয়, যে বন্দেগী ও দাসত্বের সীমা অতিক্রম করে নিজেই প্রভু ও উপাস্য হবার দাবিদার সাজে এবং আল্লাহর বান্দাহগণকে নিজের বন্দেগী ও দাসত্বে নিযুক্ত করে। আল কুরআনে ‘তাগুত’ শব্দটি আটবার ব্যবহৃত হয়েছে।

যথা : (১) ইরশাদ হয়েছেÑ অতএব যে তাগুতকে অস্বীকার করবে ও আল্লাহর উপর ঈমান আনবে সে এমন এক শক্ত ও দৃঢ়তার রজ্জু ধারণ করল যা কখনো ছিড়বে না, ভাঙ্গবে না। আর আল্লাহ সর্বশ্রোতা, সর্বজ্ঞানী। (সূরা বাকারাহ : ২৫৬)।

(২) ইরশাদ হয়েছেÑ আর যারা কুফরী করে তাগুত তাদের অভিভাবক, এরা তাদেরকে আলো থেকে অন্ধকারে নিয়ে যায়, তারাই অনলকু-ের অধিবাসী, সেখানে তারা চিরকাল থাকবে। (সূরা বাকারাহ : ২৫৭)। (৩) ইরশাদ হয়েছেÑ তুমি কি তাদেরকে দেখনি যাদেরকে কিতাবের এক অংশ দেয়া হয়েছিল, তারা ‘জ্বিবত’ ও ‘তাগুতে’ বিশ্বাস করে? (সূরা নিসা : ৫১)।

(৪) ইরশাদ হয়েছেÑ তুমি কি তাদেরকে দেখনি যারা দাবি করে যে, তোমার প্রতি যা নাযিল হয়েছে এবং তোমার পূর্বে যা নাযিল হয়েছে তাতে তারা ঈমান এনেছে, অথচ তারা তাগুতের কাছে বিচার প্রার্থী হতে চায়, যদিও সেটাকে প্রত্যাখ্যান করার জন্য তাদেরকে নির্দেশ দেয়া হয়েছে। (সূরা নিসা : ৬০)।

(৫) ইরশাদ হয়েছেÑ যারা মুমিন তারা আল্লাহর পথে যুদ্ধ করে, আর যারা কাফের তারা তাগুতের পথে যুদ্ধ করে। (সূরা নিসা : ৭৬)।

(৬) ইরশাদ হয়েছেÑ এবং তাদের কেউ তাগুতের এবাদত করেছে। তারাই অবস্থানের দিক থেকে নিকৃষ্ট এবং সরল পথ থেকে সবচেয়ে বেশি বিচ্যুত। (সূরা মায়েদাহ : ৬০)।

উপরোক্ত আয়াতসমূহের আলোকে দুটি বিষয়ের সন্ধ্যান লাভ করা যায়। এর একটি হলো ‘জ্বিবত’ এবং দ্বিতীয়টি হলো ‘তাগুত’। এই শব্দ দুটির মর্ম সম্পর্কে তাফসীরকার মনীষী বৃন্দের বিভিন্ন মতামত রয়েছে। যথা : (১) হযরত ইবনে আব্বাস (রা.) বলেন : অবিসিনীয় ভাষায় ‘জ্বিবত’ বলা হয় যাদুকরকে। আর ‘তাগুত’ বলা হয় গনক বা জ্যোতিষীকে। (২) হযরত উমর (রা.) বলেন : ‘জ্বিবত’ অর্থ যাদু এবং ‘তাগুত’ অর্থ শয়তান। (৩) হযরত মালেক ইবনে আনাস (রা.) বলেন : আল্লাহ ব্যতীত যে সমস্ত জিনিসের উপাসনা করা হয়, সে সবই তাগুত বলে অভিহিত হয়।

(৪) ইমাম কুরতুবী (রহ.) বলেন : হযরত মালেক ইবনে আনাস (রা.)-এর উক্তিটির অধিক পছন্দনীয়। তার কারণ, আল কুরআন থেকে এর সমর্থন পাওয়া যায়। আল্লাহ রাব্বুল ইজ্জত বলেন : তোমরা আল্লাহর এবাদত করো এবং তাগুত থেকে বেঁচে থাক। (সূরা নাহল : ৩৬)। কিন্তু উল্লেখিত বিভিন্ন মতের মধ্যে কোন বিরোধ নেই, কাজেই এর যে কোন একটিই গ্রহণ করা যায়। মূলত, জ্বিবত বলতে প্রতিমা ও মূর্তিকেই বোঝানো হতো। পরে আল্লাহ ব্যতীত অন্যান্য পুজ্য বস্তুতে এর প্রয়োগ হতে আরম্ভ করে। (রুহুল মায়ানী)।

মোট কথা, আল্লাহর মোকাবেলায় বান্দাহর প্রভুত্বের দাবিদার সাজার এবং বিদ্রোহ করার তিনটি পর্যায় রয়েছে। (১) প্রথম পর্যায়ে বান্দাহ নীতিগতভাবে আল্লাহর শাসন কর্তৃত্বকে সত্য বলে মেনে নেয়। কিন্তু জীবনযাত্রার সর্বত্র আল্লাহর বিধানের বিরুদ্ধাচরণ করে। একে বলা হয় ‘ফাসেকী’।

(২) দ্বিতীয় পর্যায়ে এসে বান্দাহ আল্লাহ রাব্বুল ইজ্জতের শাসন কর্তৃত্বকে নীতিগতভাবে মেনে না নিয়ে নিজের স্বাধীনতার ঘোষণা দেয় অথবা আল্লাহকে বাদ দিয়ে অন্য কারো বন্দেগী ও দাসত্ব করতে থাকে। একে বলা হয় কুফরী ও শিরক।

(৩) তৃতীয় পর্যায়ে বান্দাহ মূল মালিক ও সর্ব শক্তিমান আল্লাহর বিরুদ্ধে বিদ্রোহ ঘোষণা করে এবং স্বীয় রাজ্যে এবং তার প্রজাদের মধ্যে নিজের হুকুম চালাতে থাকে। এই শেষ পর্যায়ে যে ব্যক্তি পৌঁছে যায়, তাকেই বলা হয় ‘তাগুত’। সুতরাং তার মাঝে ফাসেকী, কুফরী ও শিরক এবং আল্লাহ দ্রোহীতার সকল দোষই বিদ্যমান থাকে।


বিভাগ : শান্তি ও সমৃদ্ধির পথ ইসলাম


মন্তব্য করুন

HTML Comment Box is loading comments...

এই বিভাগের আরও

বড়কে মান্য করুন, বৃদ্ধকে সম্মান করুন-১
সন্তানদের কিসের উপর রেখে যাচ্ছি-২
সন্তানদের কিসের উপর রেখে যাচ্ছি-১
কে অন্ধ, কে চক্ষুষ্মান
সে-ই স্বাধীন যে সিজদা করে এক আল্লাহকে
আরও

আরও পড়ুন

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ১৮ সদস্যবিশিষ্ট কেন্দ্রীয় কমিটি ঘোষণা

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ১৮ সদস্যবিশিষ্ট কেন্দ্রীয় কমিটি ঘোষণা

সেনাকুঞ্জে খালেদা জিয়ার সঙ্গে জামায়াত আমীরের কুশল বিনিময়

সেনাকুঞ্জে খালেদা জিয়ার সঙ্গে জামায়াত আমীরের কুশল বিনিময়

সিঙ্গেল সিটের দাবিতে গভীর রাতেও হলের বাইরে ছাত্রীরা

সিঙ্গেল সিটের দাবিতে গভীর রাতেও হলের বাইরে ছাত্রীরা

ইসরাইলি হামলায় গাজায় নিহতের সংখ্যা ৪৪ হাজার অতিক্রম করলো

ইসরাইলি হামলায় গাজায় নিহতের সংখ্যা ৪৪ হাজার অতিক্রম করলো

ট্রাম্প প্রশাসনের নতুন অ্যার্টনি জেনারেল পাম বন্ডি

ট্রাম্প প্রশাসনের নতুন অ্যার্টনি জেনারেল পাম বন্ডি

‘আ.লীগকে রাজনীতিতে সুযোগ দেওয়া মানে শহীদদের সঙ্গে গাদ্দারি করা’

‘আ.লীগকে রাজনীতিতে সুযোগ দেওয়া মানে শহীদদের সঙ্গে গাদ্দারি করা’

বাংলাদেশের বিপক্ষে যে একাদশ দিয়ে মাঠে নামছে ওয়েস্ট ইন্ডিজ

বাংলাদেশের বিপক্ষে যে একাদশ দিয়ে মাঠে নামছে ওয়েস্ট ইন্ডিজ

কিশোরগঞ্জের আওয়ামী লীগ নেতা আনোয়ার কামালসহ তিনজন গ্রেফতার

কিশোরগঞ্জের আওয়ামী লীগ নেতা আনোয়ার কামালসহ তিনজন গ্রেফতার

প্রেসিডেন্টের সঙ্গে তিন বাহিনীর প্রধানের সাক্ষাৎ

প্রেসিডেন্টের সঙ্গে তিন বাহিনীর প্রধানের সাক্ষাৎ

বেইজিং সংস্কৃতি ও পর্যটন ব্যুরো ও আটাবের মধ্যে চুক্তি স্বাক্ষরিত

বেইজিং সংস্কৃতি ও পর্যটন ব্যুরো ও আটাবের মধ্যে চুক্তি স্বাক্ষরিত

উইন্ডিজের বিপক্ষে মাঠে নামছে বাংলাদেশ

উইন্ডিজের বিপক্ষে মাঠে নামছে বাংলাদেশ

গাজায় যুদ্ধবিরতি ছাড়া বন্দী বিনিময় হবে না : হামাস

গাজায় যুদ্ধবিরতি ছাড়া বন্দী বিনিময় হবে না : হামাস

শান্তিরক্ষা মিশন মোতায়েন করতে চায় জাতিসংঘ হাইতিতে

শান্তিরক্ষা মিশন মোতায়েন করতে চায় জাতিসংঘ হাইতিতে

চকরিয়ার বিএনপি নেতা আবু তাহের চৌধুরীর মৃত্যুতে সালাহউদ্দিন আহমদ ও হাসিনা আহমদের শোক

চকরিয়ার বিএনপি নেতা আবু তাহের চৌধুরীর মৃত্যুতে সালাহউদ্দিন আহমদ ও হাসিনা আহমদের শোক

পুতিন পারমাণবিক অস্ত্র ব্যবহার করতে দ্বিধা করবেন না : সার্বিয়া

পুতিন পারমাণবিক অস্ত্র ব্যবহার করতে দ্বিধা করবেন না : সার্বিয়া

ক্লাইমেট অর্থায়ন ইস্যুতে দেশগুলোর মধ্যে দ্বন্দ্ব

ক্লাইমেট অর্থায়ন ইস্যুতে দেশগুলোর মধ্যে দ্বন্দ্ব

লালমোহনে দুই গ্রুপের সংঘর্ষে আহত যুবদল নেতা চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যু

লালমোহনে দুই গ্রুপের সংঘর্ষে আহত যুবদল নেতা চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যু

ট্রাম্পের অ্যাটর্নির বিরুদ্ধে তদন্ত প্রতিবেদন আটকে গেল

ট্রাম্পের অ্যাটর্নির বিরুদ্ধে তদন্ত প্রতিবেদন আটকে গেল

‘ফিলিস্তিনের পর ইরান, সউদী ও তুরস্ক হবে পরবর্তী টার্গেট’

‘ফিলিস্তিনের পর ইরান, সউদী ও তুরস্ক হবে পরবর্তী টার্গেট’

প্রতি বছর ৩ লাখ নথিবিহীন অভিবাসীকে বৈধতা দানের ঘোষণা স্পেনের

প্রতি বছর ৩ লাখ নথিবিহীন অভিবাসীকে বৈধতা দানের ঘোষণা স্পেনের