ঢাকা   শুক্রবার, ২২ নভেম্বর ২০২৪ | ৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১

দয়া ও করুণার আঁধার রাসূল (সা.)-১

Daily Inqilab মাওলানা আবুল বাশার মুহাম্মাদ সাইফুল ইসলাম

৩০ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ১২:০৪ এএম | আপডেট: ৩০ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ১২:০৪ এএম

হযরত আনাস ইবনে মালিক (রা.) বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে লক্ষ্য করে ইরশাদ করেন, হে বাছা! যদি তোমার পক্ষে সকাল-সন্ধ্যা এভাবে কাটানো সম্ভব হয় যে, তোমার অন্তরে কারও প্রতি মলিনতা নেই, তবে সেভাবে কাটাবে। তারপর বললেন, হে বাছা! এটা আমার সুন্নত। আর যে ব্যক্তি আমার সুন্নতকে যিন্দা করল, সে আমাকেই ভালোবাসল। আর যে ব্যক্তি আমাকে ভালোবাসল, সে জান্নাতে আমার সঙ্গে থাকবে। (জামে তিরমিযী : ২৬৭৮)।

এ হাদিস দ্বারা নবী কারীম (সা.)-এর সুন্নত ও জীবনাদর্শের একটি দিক সম্পর্কে আলো পাওয়া যায়। তিনি সে আলোয় আলোকিত হওয়ার জন্য সরাসরি প্রিয় খাদেম হযরত আনাস ইবনে মালিক (রা.)-কে উপদেশ দিয়েছেন। আর তাঁর মাধ্যমে এ উপদেশ তাঁর উম্মতের সকলের প্রতি। যেন তাঁর উম্মতের প্রত্যেকে এ আলোয় আলোকিত হয়।

তিনি হযরত আনাস ইবনে মালিক (রা.)-কে উপদেশ দিয়েছেন, যেকোনও মানুষের ব্যাপারে তার অন্তর নির্মল রাখতে। সকাল-সন্ধ্যা এভাবে কাটাবেন যে, তার অন্তরে কারও প্রতি কোনও হিংসা-বিদ্বেষ নেই, কোনও দুঃখ-কষ্ট নেই এবং কোনও রাগ ও ক্ষোভ নেই। যে যতো দুঃখ-কষ্ট দিক, মনে যতো বড় আঘাতই দিক, অবিলম্বে সে আঘাতের চিহ্ন মুছে ফেলবে। মুখে ক্ষমা ঘোষণা করবে এবং অন্তর পরিষ্কার করে ফেলার চেষ্টা করবে। যেন কোনও দিন তার পক্ষ থেকে সে কোনও কষ্ট পায়ইনি।

প্রিয়নবী (সা.) জানাচ্ছেন এটা তাঁর সুন্নত, তাঁর জীবনাদর্শ। তিনি সারাটা জীবন এভাবেই কাটিয়েছেন। কতো মানুষ তাঁকে কতো ভাবে কষ্ট দিয়েছে। তিনি জগতের শ্রেষ্ঠতম সত্যবাদী। তা সত্ত্বেও বিরুদ্ধবাদীরা তাঁকে মিথ্যুক বলে গালি দিয়েছে। তাঁর মতো সুস্থ-নিখুঁত বুদ্ধি কার কখন ছিল? তথাপি তারা তাঁকে পাগল আখ্যায়িত করেছে। সর্বকালের-সর্বোত্তম সারগর্ভ কথা তিনিই বলতেন। তারপরও তাঁর অমূল্য কথাকে অসার কল্পনা ঠাওরানোর মতলবে তাঁকে কবি বলে কটাক্ষ করত। মানুষের শ্রেষ্ঠতম দরদী বন্ধু হওয়া সত্ত্বেও তাঁকে প্রাণে মেরে ফেলার হুমকি দিত। তাঁর পবিত্র শরীরে আঘাতের পর আঘাত করেছে, তাঁকে রক্তাক্ত করেছে। তাঁকে দেশ ছাড়া পর্যন্ত করেছে।

তিনি তাদের সকল নিষ্ঠুরতা ক্ষমা করেছেন। মন থেকে আঘাতের সব চিহ্ন মুছে ফেলেছেন। প্রাণের শত্রুরা যখন আসামিরূপে সামনে হাজির হয়েছে, অতীতের সব মলিনতা ভুলে পরম মমতায় তাদের বুকে জড়িয়ে ধরেছেন। এমন স্নেহ-ভালোবাসা ও এমন ইজ্জত-সম্মান তাদের দেখিয়েছেন যে, তারা নিজেরাও সব তিক্ততা চিরতরে ভুলে গেছে এবং একান্ত সেবকরূপে তাঁর জন্য কুরবান হয়ে গেছে।

শত্রুর শত্রুতা ভুলে তাকে বন্ধুতে পরিণত করা ছিল নবী করীম (সা.)-এর আদর্শ। আঘাতের বিপরীতে কল্যাণকামনা ও কাদার বদলে সুবাস বিলানোই ছিল তাঁর সুন্নত। অন্তরে মলিনতা পুষে রাখা তাঁর সুন্নতের পরিপন্থী। তিনি নিজে কোনও দিনই তা পুষে রাখেননি এবং তা পুষে রাখাকে অন্যের জন্যও অনুমোদন করেননি। প্রিয়নবী (সা.)-এর সীরাতগ্রন্থ যারা পড়েছে, তারা জানে, জীবনে তিনি কতো শত্রুকে ক্ষমা করেছেন, কতো নিষ্ঠুরতা বিস্মৃত হয়েছেন এবং কতো গভীর আঘাতের চিহ্ন অন্তর থেকে সম্পূর্ণরূপে মুছে ফেলেছেন।

উহুদ যুদ্ধের ঘটনা কে না জানে! বিজয়োন্মত্ত কাফেরগণ মুসলিম মুজাহিদদের সঙ্গে কেমন আচরণ করেছিল? শহীদদের লাশ কেটে টুকরো টুকরো করেছিল। হাত-পা, নাক-কান কেটে বিকৃত করে দিয়েছিল। হযরত হামযা (রা.)-এর বুক ফেড়ে হৃৎপি- বের করে ফেলেছিল। আবূ সুফয়ানের স্ত্রী হিন্দের উন্মত্ত আক্রোশ তাতেও মেটেনি। তার দাঁতের কামড়ে সে হৃৎপি- ছিন্নভিন্ন হয়ে গিয়েছিল। তাদের হিংস্রতা যেন কোনোক্রমেই তৃপ্তি পাচ্ছিল না। তারা একযোগে নবী কারীম (সা.)-এর উপর হামলে পড়েছিল। তাদের আঘাতে তাঁর শিরোস্ত্রাণ ভেঙে যায়। তার কড়া চোয়ালে ঢুকে পড়ে। তাতে তাঁর নূরানী দাঁত শহীদ হয়ে যায়। এতোসব পৈশাচিকতা যারা চালিয়েছিল, সে বাহিনীর নেতৃত্ব কে দিয়েছিল? নেতৃত্ব যে দিয়েছিল তার নাম আবূ সুফয়ান।

আবূ সুফয়ানের অতীত জীবনের কুখ্যাতি অনেক। সে জীবনে তিনি ছিলেন বহু কুকর্মের হোতা। মক্কা বিজয়ের আগ পর্যন্ত ইসলাম ও ইসলামের নবীর বিরুদ্ধে বহু ষড়যন্ত্র তিনি চালিয়েছেন। অনেক অঘটন তখন তিনি ঘটিয়েছেন। তার সে জীবনের দুষ্কৃতির ফিরিস্তি অনেক লম্বা। কিন্তু তার উপর্যুপরি দুষ্কর্মের একসময় ছেদ ঘটে। তা ঘটার পেছনে ছিল যে জিনিসের ভূমিকা, তা কেবলই নবী কারীম (সা.)-এর ওই সুন্নত, যা তিনি জীবনভর সকল শত্রুর সঙ্গে রক্ষা করেছেন।


বিভাগ : শান্তি ও সমৃদ্ধির পথ ইসলাম


মন্তব্য করুন

HTML Comment Box is loading comments...

এই বিভাগের আরও

বড়কে মান্য করুন, বৃদ্ধকে সম্মান করুন-১
সন্তানদের কিসের উপর রেখে যাচ্ছি-২
সন্তানদের কিসের উপর রেখে যাচ্ছি-১
কে অন্ধ, কে চক্ষুষ্মান
সে-ই স্বাধীন যে সিজদা করে এক আল্লাহকে
আরও

আরও পড়ুন

টিসিবির তালিকায় আ'লীগের লোকজন বহাল থাকায় সাধারণ মানুষের ক্ষোভ

টিসিবির তালিকায় আ'লীগের লোকজন বহাল থাকায় সাধারণ মানুষের ক্ষোভ

দৌলতখানে মা -মেয়েকে পিটিয়ে আহত

দৌলতখানে মা -মেয়েকে পিটিয়ে আহত

স্টেশন থেকে দুই কিলোমিটার দূরে থামল সীমান্ত এক্সপ্রেস

স্টেশন থেকে দুই কিলোমিটার দূরে থামল সীমান্ত এক্সপ্রেস

কুষ্টিয়ায় প্রতিমা ভাঙচুরের পর যুবক আটক, কথাবার্তা অসংলগ্ন

কুষ্টিয়ায় প্রতিমা ভাঙচুরের পর যুবক আটক, কথাবার্তা অসংলগ্ন

জুরাইনে পুলিশের সঙ্গে অটোরিকশা চালকদের সংঘর্ষ, রেলপথ অবরোধ

জুরাইনে পুলিশের সঙ্গে অটোরিকশা চালকদের সংঘর্ষ, রেলপথ অবরোধ

রাশিয়ার নতুন ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবহারে বিশ্বকে প্রতিক্রিয়া জানাতে হবে : জেলেনস্কি

রাশিয়ার নতুন ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবহারে বিশ্বকে প্রতিক্রিয়া জানাতে হবে : জেলেনস্কি

সার্বিয়ার রেলওয়ে স্টেশন দুর্ঘটনা,দুর্নীতির অভিযোগে প্রতিবাদ

সার্বিয়ার রেলওয়ে স্টেশন দুর্ঘটনা,দুর্নীতির অভিযোগে প্রতিবাদ

রিকশা লীগ হয়ে ফিরে আসতে চায় স্বৈরাচার হাসিনা

রিকশা লীগ হয়ে ফিরে আসতে চায় স্বৈরাচার হাসিনা

"অভিষেক-ঐশ্বরিয়ার বিবাহ বিচ্ছেদের বিষয়ে মিডিয়ার গুজব নিয়ে অমিতাভ বচ্চন প্রতিক্রিয়া"

"অভিষেক-ঐশ্বরিয়ার বিবাহ বিচ্ছেদের বিষয়ে মিডিয়ার গুজব নিয়ে অমিতাভ বচ্চন প্রতিক্রিয়া"

জীবিত স্বামীকে মৃত দেখিয়ে মামলার পেছনের কারিগর শফিক-রুহুল গ্রেফতার

জীবিত স্বামীকে মৃত দেখিয়ে মামলার পেছনের কারিগর শফিক-রুহুল গ্রেফতার

আন্দোলনের মোড় ঘুরিয়েছিলেন বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা : শফিকুল আলম

আন্দোলনের মোড় ঘুরিয়েছিলেন বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা : শফিকুল আলম

শেরপুরে অগ্নিকাণ্ডের কোটি টাকার ক্ষতি : অল্পের জন্যে প্রাণে বাচঁলো ৪০ ছাত্র শিক্ষক

শেরপুরে অগ্নিকাণ্ডের কোটি টাকার ক্ষতি : অল্পের জন্যে প্রাণে বাচঁলো ৪০ ছাত্র শিক্ষক

আন্তর্জাতিক জলবায়ু সম্মেলন ও বিশ্বব্যাপী বাস্তুচ্যুতি, এক ভয়াবহ বাস্তবতা

আন্তর্জাতিক জলবায়ু সম্মেলন ও বিশ্বব্যাপী বাস্তুচ্যুতি, এক ভয়াবহ বাস্তবতা

রাশিয়া উ.কোরিয়াকে এক মিলিয়ন ব্যারেল তেল সরবরাহ করেছে

রাশিয়া উ.কোরিয়াকে এক মিলিয়ন ব্যারেল তেল সরবরাহ করেছে

শরীয়তপুরের জাজিরায় ব্রিজের নিচ থেকে অজ্ঞাত পরিচয়ে এক ব্যক্তির লাশ উদ্ধার

শরীয়তপুরের জাজিরায় ব্রিজের নিচ থেকে অজ্ঞাত পরিচয়ে এক ব্যক্তির লাশ উদ্ধার

ইমরান খানের সরকার পতনে সউদীর হাত ছিল : দাবি স্ত্রী বুশরার

ইমরান খানের সরকার পতনে সউদীর হাত ছিল : দাবি স্ত্রী বুশরার

'ভারতের গোয়ায় জয়া আহসানের বিশেষ প্রদর্শনী'

'ভারতের গোয়ায় জয়া আহসানের বিশেষ প্রদর্শনী'

ওমানে সড়ক দুর্ঘটনায় ২ জনের মৃত্যু, ২২ জন আহত

ওমানে সড়ক দুর্ঘটনায় ২ জনের মৃত্যু, ২২ জন আহত

লেবানন থেকে ফিরলেন আরো ৮২ বাংলাদেশি

লেবানন থেকে ফিরলেন আরো ৮২ বাংলাদেশি

"পিটিআই" প্রধান ইমরান খানকে নতুন মামলায় ৫ দিনের রিমান্ড

"পিটিআই" প্রধান ইমরান খানকে নতুন মামলায় ৫ দিনের রিমান্ড