ঢাকা   শুক্রবার, ২২ নভেম্বর ২০২৪ | ৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১

মীরাছে নারীর হিস্যা, শরীয়তের হুকুম ও সমাজের প্রচলন

Daily Inqilab মুফতী রশীদ আহমদ (রাহ.)

১৪ জানুয়ারি ২০২৪, ১২:০৩ এএম | আপডেট: ১৪ জানুয়ারি ২০২৪, ১২:০৩ এএম

অনেক মুসলমান সম্পদের মোহে পড়ে শরীয়তের হুকুম মোতাবেক মীরাছ বণ্টন করে না। তারা যদি অন্যায় ও গুনাহর কাজ মনে করেও তা করে তাহলে তা একটি ফাসেকি ও মারাত্মক গুনাহ। আর আল্লাহ না করুন- যদি কুরআনী বিধানের প্রতি অশ্রদ্ধা ও অস্বীকারের কারণে হয় তাহলে তো পরিষ্কার কুফরি। মীরাছের ক্ষেত্রে শরীয়তের বিধান লঙ্ঘন করার একটি ঘৃণ্য দিক হচ্ছে নারীদেরকে তাদের হিস্যা থেকে বঞ্চিত করা। অনেক জায়গায় অনেক ধরনের প্রথা ও কুসংস্কার আছে, যেগুলোর মাধ্যমে নারীদেরকে তাদের হক থেকে বঞ্চিত করা হয়। যেমন :

বিধবাকে সম্পত্তি থেকে বঞ্চিত করা। কোনো কোনো জায়গায় এ রকম আছে যে, স্বামীর মৃত্যুর পর অন্যত্র বিবাহ-বন্ধনে আবদ্ধ হলে তাকে মৃত স্বামীর সম্পত্তি থেকে বঞ্চিত করা হয়। এজন্য ওই অসহায় নারীরা দ্বিতীয় বিবাহ থেকে বিরত থাকে। আর জীবনভর বৈধব্যের চিতায় জ্বলতে থাকে এরপর স্বামীর আত্মীয়-স্বজনদের লাঞ্ছনা-গঞ্জনা তো আছেই।

কোনো কোনো অঞ্চলে এই প্রচলন আছে যে, স্ত্রী স্বামীর বংশের না হলে তাকে স্বামীর পরিত্যক্ত সম্পত্তি থেকে বঞ্চিত করা হয়। এটিও চরম মূর্খতা ও অবিচার। কুরআন মজীদে স্ত্রীর অংশ সুনির্ধারিত। বিধবা চাই স্বামীর বংশের হোক বা অন্য বংশের, দ্বিতীয় বিবাহ করুক বা না করুক সর্বাবস্থায় তার নির্ধারিত অংশ তাকে দিতেই হবে।

বোনের হিস্যা না দেয়া। এই অপরাধ তো অনেক ‘দ্বীনদার’ ও ‘শিক্ষিত’ পরিবারেও পাওয়া যায়। তারা বোনদের কাছ থেকে মীরাছের হিস্যা মাফ করিয়ে নেয়। মনে রাখতে হবে, বোনদের কাছে মাফ চেয়ে দায়মুক্ত হওয়া যাবে না। কারণ জাহেলী প্রথা ও রেওয়াজের কারণে মেয়েরা নিজেরাও সম্পদ চাওয়াকে দোষের মনে করে, উপরন্তু ভায়েরা অসন্তুষ্ট হবে, সমাজের লোকে নিন্দা করবে এসবের ভয় করে। এই জাহেলী প্রথা শুধু তাদেরকে ন্যায্য অধিকার থেকে বঞ্চিতই করেনি, তাদের মুখে তালা লাগিয়ে দিয়েছে।

আল্লাহর ওয়াস্তে এই অবলা নারীদের বুকচেরা ‘হাহাকার’-কে ভয় করুন। এর একটি স্ফুলিঙ্গ আপনার সাজানো বাগানকে ছারখার করে দিতে পারে। হাদিস শরীফে আছে, মাজলুমের ফরিয়াদকে ভয় করো। আল্লাহ তাআলা ও মাজলুমের ফরিয়াদের মাঝে কোনো আড়াল থাকে না (অতি দ্রুত তা কবুল হয়ে যায়।) আর দুনিয়ার আযাব থেকে বেঁচে গেলেও আখিরাতের কঠিন আযাব থেকে তো বাঁচার কোনোই উপায় নেই। যে আযাব সম্পর্কে কুরআন মজীদে বলা হয়েছে : আর নিঃসন্দেহে আখিরাতের আযাবই হলো সবচেয়ে বড়।

মোটকথা, তারা যেহেতু স্বতঃস্ফূর্তভাবে মাফ করে না তাই তারা মাফ করে দিলেও শরীয়তে তা গ্রহণযোগ্য নয়। উপরন্তু এই মাফ করা ও মাফ চাওয়া দু’টোই গুনাহর কাজ। কারণ এর দ্বারা হিন্দুদের একটি কুপ্রথা এবং শরীয়তবিরোধী ভ্রান্ত প্রচলনকে প্রতিষ্ঠিত রাখা হয়, যা একটি কবীরা গুনাহ।

বর্তমান সময়ে এটা অপরিহার্য যে, বোন দাবি না করলেও ভাই তাদেরকে তাদের অংশ বুঝিয়ে দিবে। এটা ফরয। এ বিষয়ে কোনোরূপ অবহেলা করা যাবে না। আর ভাই যদি অবহেলা করে তাহলে বোনের কর্তব্য, নিজের হক দাবি করা। এ বিষয়ে কারো নিন্দা-সমালোচনার পরোয়া করবে না এবং এই ভেবে নিজের হিস্যা দাবি করা থেকে বিরত থাকবে না যে, আমি তো স্বচ্ছল। এই হিস্যার আমার প্রয়োজন নেই; বরং প্রয়োজন না থাকলেও নিজের হক উসূল করবে। যেন এই কুরসম বিলুপ্ত হয় এবং আল্লাহর বিধান প্রতিষ্ঠিত হয়।

কেউ কেউ বলে, বিভিন্ন উপলক্ষে ভাইরা বোনদেরকে যে উপহার ইত্যাদি দিয়ে থাকে তার বিপরীতে বোনেরা তাদের মীরাছের অংশ ভাইদের দেয়। এই ধারণাও ভুল। কারণ এই লেনদেনে কি বোনদের সম্মতি নেয়া হয়েছে, না তা একতরফা ঘোষণা? দ্বিতীয়ত রেওয়াজের কারণে তাদের তো কিছু বলারও উপায় নেই। সুতরাং এই সম্মতি গ্রহণযোগ্য নয়। তৃতীয়ত ‘বিভিন্ন সময় দেয়া উপহার ইত্যাদি’ কিছু অনির্দিষ্ট বস্তু, যার পরিমাণ, মূল্য সবই অনির্দিষ্ট ও অজানা। তাহলে এটি মীরাছের বিনিময় কীভাবে হতে পারে?

চতুর্থ কথা এই যে, এই উপহার আদান-প্রদান তো হয়ে থাকে আত্মীয়তা সম্পর্কের দাবিতে, যা বোনদের একটি আলাদা হক। মীরাছের সাথে এ কোনোই সম্পর্ক নেই। যারা বোনদেরকে উপরোক্ত অজুহাতে বঞ্চিত করে তারা প্রকৃতপক্ষে মীরাছের হক ও আত্মীয়তার হক কোনোটাই আদায় করে না। আর যেখানে এই প্রচলন আছে যে, বোন নিজের হিস্যা দাবি করলে এবং তাকে হিস্যা দেয়া হলে তার সাথে আত্মীয়তার সম্পর্ক ছিন্ন করা হয় এটা তো এত বড় মূর্খতা ও জাহালত, যা ভাষায় প্রকাশ করা যায় না। মনে রাখতে হবে, যারা এমন কাজ করে তারা অভিশপ্ত, তাদের দুনিয়া ও আখিরাত দু’টোই বরবাদ।

মোটকথা, হারামকে হালাল করার জন্য এবং অবলা বোনদের মীরাছের হিস্যা আত্মসাৎ করার জন্য যত ফন্দি-ফিকিরই করা হোক না কেন শরীয়তের দৃষ্টিতে তা সব প্রত্যাখ্যাত। -অনুবাদ : আব্দুল্লাহ মাসুম


বিভাগ : শান্তি ও সমৃদ্ধির পথ ইসলাম


মন্তব্য করুন

HTML Comment Box is loading comments...

এই বিভাগের আরও

বড়কে মান্য করুন, বৃদ্ধকে সম্মান করুন-১
সন্তানদের কিসের উপর রেখে যাচ্ছি-২
সন্তানদের কিসের উপর রেখে যাচ্ছি-১
কে অন্ধ, কে চক্ষুষ্মান
সে-ই স্বাধীন যে সিজদা করে এক আল্লাহকে
আরও

আরও পড়ুন

উন্নয়নের নামে লুটপাট করেছে আ.লীগ সরকার: সিলেট জেলা বিএনপির সেক্রেটারি এড. এমরান চৌধুরী

উন্নয়নের নামে লুটপাট করেছে আ.লীগ সরকার: সিলেট জেলা বিএনপির সেক্রেটারি এড. এমরান চৌধুরী

সেবা পৌঁছে দেয়া হবে সারাদেশে -স্বাস্থ্য উপদেষ্টার বিশেষ কর্মকর্তা তুহিন ফারাবী

সেবা পৌঁছে দেয়া হবে সারাদেশে -স্বাস্থ্য উপদেষ্টার বিশেষ কর্মকর্তা তুহিন ফারাবী

"আজ গানে গানে সউদি মাতাবেন নগরবাউল জেমস"

"আজ গানে গানে সউদি মাতাবেন নগরবাউল জেমস"

কপ২৯-এর এনসিকিউজি টেক্সট হতাশাজনক : সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান

কপ২৯-এর এনসিকিউজি টেক্সট হতাশাজনক : সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান

বল হাতে বাংলাদেশের ভালো শুরু

বল হাতে বাংলাদেশের ভালো শুরু

বেনাপোল দিয়ে যাত্রী পারাপার কমেছে অর্ধেক, রাজস্ব আয় ও ব্যবসা বাণিজ্যে ধস

বেনাপোল দিয়ে যাত্রী পারাপার কমেছে অর্ধেক, রাজস্ব আয় ও ব্যবসা বাণিজ্যে ধস

'জুলাই অনির্বাণ’ এ রক্তপিপাসু হাসিনার নির্মমতা দেখে কাঁদছেন নেটিজেনরা

'জুলাই অনির্বাণ’ এ রক্তপিপাসু হাসিনার নির্মমতা দেখে কাঁদছেন নেটিজেনরা

অবশেষে ২৬ মামলার আসামি কুমিল্লার শীর্ষ সন্ত্রাসী আল-আমিন গ্রেফতার

অবশেষে ২৬ মামলার আসামি কুমিল্লার শীর্ষ সন্ত্রাসী আল-আমিন গ্রেফতার

তারেক রহমানের আর্থিক সহায়তা নিয়ে সিয়ামের বাড়িতে মীর হেলাল

তারেক রহমানের আর্থিক সহায়তা নিয়ে সিয়ামের বাড়িতে মীর হেলাল

মানবপাচারকারীদের প্ররোচনায় : স্বপ্ন পূরণে হাতছানি!

মানবপাচারকারীদের প্ররোচনায় : স্বপ্ন পূরণে হাতছানি!

অবিলম্বে ফারাবিসহ সকল মাজলুম আলেমদের মুক্তি দিন, বিক্ষোভ সমাবেশে নেতৃবৃন্দ

অবিলম্বে ফারাবিসহ সকল মাজলুম আলেমদের মুক্তি দিন, বিক্ষোভ সমাবেশে নেতৃবৃন্দ

জগন্নাথের সহকারী প্রক্টরকে গুলি করে হত্যার হুমকির অভিযোগ

জগন্নাথের সহকারী প্রক্টরকে গুলি করে হত্যার হুমকির অভিযোগ

আপনারা এখন কোথায়: আ.লীগকে জামায়াত নেতা

আপনারা এখন কোথায়: আ.লীগকে জামায়াত নেতা

আনন্দে গুলি ছুড়তে গিয়ে নিজেই গুলিবিদ্ধ, যুক্তরাষ্ট্রে মৃত্যু ভারতীয় শিক্ষার্থীর

আনন্দে গুলি ছুড়তে গিয়ে নিজেই গুলিবিদ্ধ, যুক্তরাষ্ট্রে মৃত্যু ভারতীয় শিক্ষার্থীর

বিশ্বস্ত পাম বন্ডিকে অ্যাটর্নি জেনারেল হিসেবে বেছে নিলেন ট্রাম্প

বিশ্বস্ত পাম বন্ডিকে অ্যাটর্নি জেনারেল হিসেবে বেছে নিলেন ট্রাম্প

জনসমর্থন হারাচ্ছে জার্মানির ক্ষমতাসীন দল

জনসমর্থন হারাচ্ছে জার্মানির ক্ষমতাসীন দল

ফ্যাসিস্ট হাসিনা সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলন সংগ্রামে আহত, নিহত ও কারা নির্যাতিত নেতাকর্মীদের পাশে বিএনপি'র সব সময় থাকবে!

ফ্যাসিস্ট হাসিনা সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলন সংগ্রামে আহত, নিহত ও কারা নির্যাতিত নেতাকর্মীদের পাশে বিএনপি'র সব সময় থাকবে!

বিপ্লবী সরকারের উপদেষ্টা হবেন বিপ্লবী, তাদের চেতনা থাকবে গতিশীল: রিজভী

বিপ্লবী সরকারের উপদেষ্টা হবেন বিপ্লবী, তাদের চেতনা থাকবে গতিশীল: রিজভী

আয়ারল্যান্ড নারী ক্রিকেট দল এখন ঢাকায়

আয়ারল্যান্ড নারী ক্রিকেট দল এখন ঢাকায়

‘আন্তর্জাতিক আদালতের সিদ্ধান্তকে সম্মান জানাবে কানাডা’

‘আন্তর্জাতিক আদালতের সিদ্ধান্তকে সম্মান জানাবে কানাডা’