শীতকাল : ইবাদতের সহজ সুযোগ কাজে লাগাই-১
২২ জানুয়ারি ২০২৪, ১২:০৪ এএম | আপডেট: ২২ জানুয়ারি ২০২৪, ১২:০৪ এএম
আমাদের দেশ ষড়ঋতুর দেশ। প্রতি দুই মাস পরপর ঋতুর পালাবদল হয়। পৌষ ও মাঘ শীতকাল হলেও শীতের আবহ বইতে শুরু করে আরেকটু আগে থেকেই। প্রতিটি ঋতুর মতো শীতকাল নিজস্ব রূপ ও বৈশিষ্ট্য নিয়ে আমাদের মাঝে হাজির হয়। শীতকালে প্রকৃতি সাজে নতুন রূপে। বাগ-বাগিচা সমৃদ্ধ হয় ফল-ফুলে। মাঠ-ঘাট ছেয়ে যায় শাক-সবজি-ফসলে। একইভাবে শীতকাল মুমিনের জন্য নিয়ে আসে ইবাদতের সহজ সুযোগ। শীতকালে কিছু কিছু নেক কাজ সহজে করে নেয়া যায়। চলুন, জেনে নিই, শীতকাল আমাদের জন্য কী কী সুযোগ নিয়ে আসে।
আল্লাহ তাআলার কুদরতের নিদর্শনাবলিতে চিন্তা-ফিকির করে তাঁর পরিচয় লাভ করা গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। আসমান-জমিন ও এ দু’য়ের মাঝে এবং খোদ আমাদের মাঝে তাঁর কুদরতের ছোট-বড় অসংখ্য নিদর্শন ছড়িয়ে রয়েছে। একটি নিদর্শন হচ্ছে ঋতুর পালাবদল। যেমন- শীতের পর গ্রীষ্ম আসে এবং গ্রীষ্মের পর শীত। শীত-গ্রীষ্ম আমরা হাড়ে হাড়ে টের পাই।
যেহেতু এ দুই ঋতু দীর্ঘ সময় থাকে এবং দুটোর চরিত্রও সম্পূর্ণ আলাদা। গরমের সময় হালকা-পাতলা কাপড় গায়ে জড়িয়ে পাখা চালিয়েও স্বস্তি মেলে না। বিদ্যুৎ চলে গেলে তো নাভিশ্বাস উঠে যায়। পক্ষান্তরে শীতে দরজা-জানালা বন্ধ করে ভারি-মোটা শীতবস্ত্রে আপাদমস্তক ঢেকেও শীত শীত লাগে।
এ আবর্তন আমাদের জন্য আল্লাহর পরিচয় লাভের সুযোগ নিয়ে আসে। এই আবর্তনে চিন্তা করে আমরা আল্লাহর পরিচয় লাভ করতে পারি, তাঁর প্রতি বিশ্বাসকে সুদৃঢ় করতে পারি। আমরা উপলব্ধি করতে পারি, আল্লাহ কত শক্তিমান! তিনি কত নিপুণ, কত কুশল! আল্লাহর কুদরতের নিদর্শনাবলি থেকে যারা তাঁর পরিচয় লাভ করে, কুরআনের ভাষায় তারা বুদ্ধিমান : নিশ্চয় আকাশমণ্ডলী ও পৃথিবীর সৃষ্টিতে এবং রাত-দিনের আবর্তনে বহু নিদর্শন রয়েছে বুদ্ধিমানদের জন্য, যারা আল্লাহকে স্মরণ করে দাঁড়িয়ে, বসে ও শুয়ে (এবং বলে,) হে আমাদের রব! আপনি এসব নিরর্থক সৃষ্টি করেননি। আপনি পবিত্র। সুতরাং আপনি আমাদের জাহান্নামের শাস্তি থেকে রক্ষা করুন। (সূরা আলে ইমরান : ১৯০-১৯১)।
আল্লাহ তাআলার নির্দেশমতো জীবনযাপন করলে তিনি জান্নাত দান করবেন আর তাঁর নির্দেশ অমান্য করলে জাহান্নাম দেবেন। জাহান্নামের শাস্তি অতি ভয়াবহ। জাহান্নামে বিভিন্নভাবে শাস্তি দেয়া হবে। উত্তপ্ত আগুনের শাস্তি যেমন থাকবে, তেমনি থাকবে তীব্র শীতের শাস্তিও।
হাদিসে এসেছে : জাহান্নাম তার রবের কাছে অভিযোগ করল, হে রব, আমার কিছু অংশ কিছু অংশকে খেয়ে ফেলছে। অতঃপর তিনি তাকে দুটি নিঃশ্বাসের অনুমতি দিলেন, একটি নিঃশ্বাস শীতে আরেকটি নিঃশ্বাস গ্রীষ্মে। তোমরা গরমের যে প্রচণ্ডতা অনুভব কর তা জাহান্নামের উত্তপ্ততা থেকে আর শীতের যে তীব্রতা অনুভব কর তা জাহান্নামের যামহারীর (শীতলতা) থেকে। (সহীহ বুখারী : ৩২৬০)।
শীতকাল আমাদের জন্য জাহান্নাম থেকে আল্লাহ তাআলার আশ্রয় গ্রহণের সুযোগ নিয়ে আসে। আমরা আল্লাহ তাআলার কাছে নিবেদন করতে পারি, ইয়া আল্লাহ! দুনিয়ার ‘সামান্য’ শীতেই তো আমাদের জীবন দুর্বিষহ হয়ে উঠেছে, জাহান্নামের ‘তীব্র’ ঠাণ্ডা ও শীত কীভাবে সহ্য করব?
চব্বিশ ঘণ্টার মধ্যে শেষ রাত অত্যন্ত বরকত ও রহমতপূর্ণ সময়। এ সময় বান্দার প্রতি আল্লাহর রহমত নিবিষ্ট থাকে। আল্লাহ তাআলা শেষরাতে ডাকতে থাকেন : আছে কি কেউ, যে আমাকে ডাকবে, আমি তার ডাকে সাড়া দেব। কেউ আমার কাছে কিছু চাইবে, আমি তাকে তা দিয়ে দেব। কেউ আমার কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করবে, আমি তাকে ক্ষমা করে দেব! রাতের দুই-তৃতীয়াংশ অতিবাহিত হওয়ার পর থেকে ফজর পর্যন্ত আল্লাহ এভাবে বান্দাকে ডাকতে থাকেন। (সহীহ বুখারী : ৬৩২১)।
যারা শেষ রাতে উঠে আল্লাহর ডাকে সাড়া দিতে চান, কিন্তু রাত ছোট হওয়ায় উঠতে পারেন না, শীতকাল তাদের জন্য এই সুযোগ নিয়ে আসে। কেননা শীতকালে রাত বেশ বড় হয়। তাড়াতাড়ি ঘুমিয়ে পড়লে সহজে শেষ রাতে উঠে যাওয়া সম্ভব। সবার চেষ্টা করা উচিত, শীতকালে যেন এই সুযোগ হাতছাড়া না হয়। আমরা অন্তত শীতকালে তাদের মতো হওয়ার চেষ্টা করি, যাদের প্রশংসায় আল্লাহ বলেছেন : তারা রাতের অল্প সময়ই ঘুমাত এবং রাতের শেষ প্রহরে ক্ষমাপ্রার্থনা করত। (সূরা যারিয়াত : ১৭-১৮)।
আল্লাহর প্রিয় বান্দাগণ বছর জুড়ে এই বরকতপূর্ণ সময়ের প্রতি যত্নবান থাকেন। তাদের কাছে রাত ছোট ও বড় হওয়ার মধ্যে ফারাক নেই। তারা ছোট রাতেও অল্প ঘুমিয়ে বিছানা ত্যাগ করেন এবং আল্লাহর ইবাদতে মশগুল হয়ে যান। নামায পড়েন, ক্ষমা প্রার্থনা করেন, তওবা করেন, নিজের জন্য, পরিবারের জন্য, সমাজের জন্য, মুসলিম উম্মাহর জন্য দুআ করেন। রাত ছোট হওয়ায় বরং তাদের ইবাদতের তৃষ্ণা থেকে যায়। শীতের বড় রাতে তারা এই তৃষ্ণা নিবারণ করতে সক্ষম হন এবং প্রশান্তি লাভ করেন।
বিভাগ : শান্তি ও সমৃদ্ধির পথ ইসলাম
মন্তব্য করুন
আরও পড়ুন
"আজ গানে গানে সউদি মাতাবেন নগরবাউল জেমস"
কপ২৯-এর এনসিকিউজি টেক্সট হতাশাজনক : সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান
বল হাতে বাংলাদেশের ভালো শুরু
বেনাপোল দিয়ে যাত্রী পারাপার কমেছে অর্ধেক, রাজস্ব আয় ও ব্যবসা বাণিজ্যে ধস
'জুলাই অনির্বাণ’ এ রক্তপিপাসু হাসিনার নির্মমতা দেখে কাঁদছেন নেটিজেনরা
অবশেষে ২৬ মামলার আসামি কুমিল্লার শীর্ষ সন্ত্রাসী আল-আমিন গ্রেফতার
তারেক রহমানের আর্থিক সহায়তা নিয়ে সিয়ামের বাড়িতে মীর হেলাল
মানবপাচারকারীদের প্ররোচনায় : স্বপ্ন পূরণে হাতছানি!
অবিলম্বে ফারাবিসহ সকল মাজলুম আলেমদের মুক্তি দিন, বিক্ষোভ সমাবেশে নেতৃবৃন্দ
জগন্নাথের সহকারী প্রক্টরকে গুলি করে হত্যার হুমকির অভিযোগ
আপনারা এখন কোথায়: আ.লীগকে জামায়াত নেতা
আনন্দে গুলি ছুড়তে গিয়ে নিজেই গুলিবিদ্ধ, যুক্তরাষ্ট্রে মৃত্যু ভারতীয় শিক্ষার্থীর
বিশ্বস্ত পাম বন্ডিকে অ্যাটর্নি জেনারেল হিসেবে বেছে নিলেন ট্রাম্প
জনসমর্থন হারাচ্ছে জার্মানির ক্ষমতাসীন দল
ফ্যাসিস্ট হাসিনা সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলন সংগ্রামে আহত, নিহত ও কারা নির্যাতিত নেতাকর্মীদের পাশে বিএনপি'র সব সময় থাকবে!
বিপ্লবী সরকারের উপদেষ্টা হবেন বিপ্লবী, তাদের চেতনা থাকবে গতিশীল: রিজভী
আয়ারল্যান্ড নারী ক্রিকেট দল এখন ঢাকায়
‘আন্তর্জাতিক আদালতের সিদ্ধান্তকে সম্মান জানাবে কানাডা’
সৈয়দপুর রেলওয়ে কারখানাকে আধুনিকায়ন করা হবে- রেলপথ উপদেষ্টা
দেড় যুগ পর গোলাপগঞ্জে প্রকাশ্যে জামায়াতের কর্মী সম্মেলনে জনতার ঢল