ঢাকা   শুক্রবার, ২২ নভেম্বর ২০২৪ | ৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১

শীতকাল : ইবাদতের সহজ সুযোগ কাজে লাগাই-২

Daily Inqilab মাওলানা মুহাম্মাদ আবদুর রহমান

২৩ জানুয়ারি ২০২৪, ১২:০৪ এএম | আপডেট: ২৩ জানুয়ারি ২০২৪, ১২:০৪ এএম

শীতে সুস্থ থাকার জন্য দরকার পর্যাপ্ত শীতবস্ত্র এবং শীতজনিত রোগের নিরাময়ের জন্য প্রয়োজন সুচিকিৎসা ও ওষুধপথ্য। কিন্তু এই সামর্থ্য অনেকেরই থাকে না। বিভিন্ন জায়গায় বিশেষত দেশের উত্তরাঞ্চলে শীতের প্রকোপ থেকে রক্ষার জন্য অনেক মানুষের প্রয়োজনীয় শীতবস্ত্রও থাকে না। আমাদের আশপাশেও এমন মানুষের সংখ্যা কম নয়। রাস্তার পাশে, বাস ও ট্রেন স্টেশনে, বাজার-ঘাটে রাতের বেলা এমন অনেক অসহায় মানুষ দেখা যায়।
আমরা যখন লেপ-কম্বল গায়ে জড়িয়ে সুখ নিদ্রায় বিভোর তখন তাদের রাত কাটে নির্ঘুম, শীতের প্রকোপে জবুথবু হয়ে। শীতে গরিব-অসহায় মানুষের ভোগান্তি চরমে পৌঁছে এবং নানা রকম রোগ ছড়িয়ে পড়ে। এ সময় আমাদের উচিত শীতার্ত গরিব-অসহায় মানুষের প্রতি সহানুভূতিশীল হওয়া এবং নিজ নিজ সামর্থ্য অনুযায়ী তাদের পাশে দাঁড়ানো। এটা আমাদের নৈতিক, সামাজিক ও ধর্মীয় দায়িত্ব। আমাদের সামান্য সহযোগিতা তাদের জীবনে এনে দিতে পারে এক টুকরো সুখ। কনকনে শীতে ঠকঠক করে কাঁপা মানুষের গায়ে শীতবস্ত্র জড়িয়ে হাসি ফোটানোর চেয়ে আনন্দের বিষয় আর কী হতে পারে?

শীতকালের জন্য বিশেষ কোনো বিধান নেই। গরমকালে যা করণীয় শীতকালেও তাই করণীয়। উপরে যে বিষয়গুলো আলোচনা করা হয়েছে তা গরমেও করণীয়। হাঁ, শীতকালে তা অধিক প্রাসঙ্গিক বা সহজ। আবার কিছু নেক কাজ এমন আছে, যা শীতকালে কষ্ট হয়। বিশেষত যখন শীতের তীব্রতা বেড়ে যায়, শৈত্যপ্রবাহ বইতে থাকে। যেমন- ওযু করা, ফজর নামাযে মসজিদে যাওয়া ইত্যাদি।

শীত আমাদের জন্য অধিক সওয়াব অর্জনের সুযোগ নিয়ে আসে। আমরা যদি এ জাতীয় আমলগুলো শীতকালেও সুন্দরভাবে করি, তাহলে অধিক সওয়াব মিলবে ইনশাআল্লাহ। ওই আমল করার সওয়াব মিলবে, সঙ্গে শীতের কষ্টের কারণে অতিরিক্ত সওয়াব মিলবে। আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, একদিন নবী (সা.) বললেন : আমি কি তোমাদেরকে এমন বিষয় সম্পর্কে অবহিত করব না, যার দ্বারা আল্লাহ তাআলা তোমাদের পাপসমূহ মোচন করবেন এবং মর্যাদা বৃদ্ধি করবেন? তাঁরা বললেন, হাঁ, অবশ্যই। তিনি বললেন : (তা হল-) কষ্ট সত্ত্বেও পূর্ণরূপে ওযু করা, মসজিদের দিকে বেশি বেশি হাঁটা এবং এক নামায আদায়ের পর পরবর্তী নামাযের জন্য অপেক্ষায় থাকা। এটাই রিবাত (সীমান্ত প্রহরা)। (সহীহ মুসলিম : ২৫১)।

লক্ষ্য করুন, কষ্ট সত্ত্বেও পরিপূর্ণভাবে ওযু করলে কত বড় প্রতিদান পাওয়া যাবে। এই কষ্টের মধ্যে শীতের কষ্টও অন্তর্ভুক্ত। কনকনে শীতে পানির স্পর্শ কষ্ট বৈকি। সারকথা হলো, শীতকাল মুমিনের জন্য ইবাদতের সহজ সুযোগ নিয়ে আসে। এই সুযোগ কাজে লাগিয়ে আমরা ঈমান ও কল্যাণের পথে বহুদূর এগিয়ে যেতে পারব। আমীরুল মুমিনীন উমর (রা.) যথার্থই বলেছেন : শীতকাল ইবাদতগুজারের জন্য গনীমত। (মুসান্নাফে ইবনে আবী শাইবা, বর্ণনা-৯৮৩৫)।

রোযা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত। এর অনেক ফযীলত ও বৈশিষ্ট্য রয়েছে। রোযার প্রতিদান আল্লাহ রাব্বুল আলামীন নিজে দেবেন এবং বিনা হিসাবে দেবেন। রোযাদারকে তিনি কিয়ামতের দিন পানি পান করাবেন। রোযাদার ‘রাইয়ান’ নামক বিশেষ দরজা দিয়ে জান্নাতে প্রবেশ করবে। সিদ্দিকীন ও শহীদগণের দলভুক্ত হবেন। রোযাদারের দুআ কবুল হয়। রোযা জান্নাত লাভের পথ। জাহান্নাম থেকে রক্ষাকারী ঢাল ও দুর্গ। আল্লাহর নৈকট্য লাভের শ্রেষ্ঠ মাধ্যম। গোনাহের কাফফারা। রোযা কিয়ামতের দিন সুপারিশ করবে।

রোযার বিভিন্ন প্রকার রয়েছে : ১. ফরয রোযা। ২. নফল রোযা। নফল রোযা সারা বছর রাখা যায়। তবে কিছু নফল রোযা আছে, যেগুলো বিশেষ সময়ের সঙ্গে নির্দিষ্ট এবং হাদিসে এগুলোর বিশেষ ফযীলত বর্ণিত হয়েছে। যেমন- সোমবার, বৃহস্পতিবার ও আইয়ামে বীযের রোযা। উম্মুল মুমিনীন আয়েশা (রা.) বলেন : নবী (সা.) সোমবার ও বৃহস্পতিবারে রোযা রাখার ইহতিমাম করতেন। (জামে তিরমিযী : ৭৪৫)।

যারা নফল রোযা রাখতে চান, কিন্তু গরমকালে দিন বড় হওয়ায় রাখতে পারেন না, শীতকাল তাদের জন্য এই সুযোগ নিয়ে আসে। কেননা শীতকালে দিন বেশ ছোট হয়। এ সময় সহজে রোযা রাখা সম্ভব। তাই আমরা এ সময় বেশি বেশি রোযা রাখতে পারি। বিশেষত, সোমবার, বৃহস্পতিবার ও আইয়ামে বীযের রোযাসমূহ। শীতকালে যেন এই সুযোগ হাতছাড়া না হয়। বিশিষ্ট সাহাবী আবু হুরায়রা (রা.) একদিন তাঁর শিষ্যদের বললেন : আমি কি তোমাদেরকে সহজ গনীমত সম্পর্কে অবহিত করব না? তারা বললেন, অবশ্যই। তিনি বললেন, শীতকালে রোযা রাখা। (সুনানে বায়হাকী ৪/২৯৭)। আল্লাহ তাআলা সবাইকে তাওফীক দান করুন।


বিভাগ : শান্তি ও সমৃদ্ধির পথ ইসলাম


মন্তব্য করুন

HTML Comment Box is loading comments...

এই বিভাগের আরও

বড়কে মান্য করুন, বৃদ্ধকে সম্মান করুন-১
সন্তানদের কিসের উপর রেখে যাচ্ছি-২
সন্তানদের কিসের উপর রেখে যাচ্ছি-১
কে অন্ধ, কে চক্ষুষ্মান
সে-ই স্বাধীন যে সিজদা করে এক আল্লাহকে
আরও

আরও পড়ুন

কপ২৯-এর এনসিকিউজি টেক্সট হতাশাজনক : সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান

কপ২৯-এর এনসিকিউজি টেক্সট হতাশাজনক : সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান

বল হাতে বাংলাদেশের ভালো শুরু

বল হাতে বাংলাদেশের ভালো শুরু

বেনাপোল দিয়ে যাত্রী পারাপার কমেছে অর্ধেক, রাজস্ব আয় ও ব্যবসা বাণিজ্যে ধস

বেনাপোল দিয়ে যাত্রী পারাপার কমেছে অর্ধেক, রাজস্ব আয় ও ব্যবসা বাণিজ্যে ধস

'জুলাই অনির্বাণ’ এ রক্তপিপাসু হাসিনার নির্মমতা দেখে কাঁদছেন নেটিজেনরা

'জুলাই অনির্বাণ’ এ রক্তপিপাসু হাসিনার নির্মমতা দেখে কাঁদছেন নেটিজেনরা

অবশেষে ২৬ মামলার আসামি কুমিল্লার শীর্ষ সন্ত্রাসী আল-আমিন গ্রেফতার

অবশেষে ২৬ মামলার আসামি কুমিল্লার শীর্ষ সন্ত্রাসী আল-আমিন গ্রেফতার

তারেক রহমানের আর্থিক সহায়তা নিয়ে সিয়ামের বাড়িতে মীর হেলাল

তারেক রহমানের আর্থিক সহায়তা নিয়ে সিয়ামের বাড়িতে মীর হেলাল

মানবপাচারকারীদের প্ররোচনায় : স্বপ্ন পূরণে হাতছানি!

মানবপাচারকারীদের প্ররোচনায় : স্বপ্ন পূরণে হাতছানি!

অবিলম্বে ফারাবিসহ সকল মাজলুম আলেমদের মুক্তি দিন, বিক্ষোভ সমাবেশে নেতৃবৃন্দ

অবিলম্বে ফারাবিসহ সকল মাজলুম আলেমদের মুক্তি দিন, বিক্ষোভ সমাবেশে নেতৃবৃন্দ

জগন্নাথের সহকারী প্রক্টরকে গুলি করে হত্যার হুমকির অভিযোগ

জগন্নাথের সহকারী প্রক্টরকে গুলি করে হত্যার হুমকির অভিযোগ

আপনারা এখন কোথায়: আ.লীগকে জামায়াত নেতা

আপনারা এখন কোথায়: আ.লীগকে জামায়াত নেতা

আনন্দে গুলি ছুড়তে গিয়ে নিজেই গুলিবিদ্ধ, যুক্তরাষ্ট্রে মৃত্যু ভারতীয় শিক্ষার্থীর

আনন্দে গুলি ছুড়তে গিয়ে নিজেই গুলিবিদ্ধ, যুক্তরাষ্ট্রে মৃত্যু ভারতীয় শিক্ষার্থীর

বিশ্বস্ত পাম বন্ডিকে অ্যাটর্নি জেনারেল হিসেবে বেছে নিলেন ট্রাম্প

বিশ্বস্ত পাম বন্ডিকে অ্যাটর্নি জেনারেল হিসেবে বেছে নিলেন ট্রাম্প

জনসমর্থন হারাচ্ছে জার্মানির ক্ষমতাসীন দল

জনসমর্থন হারাচ্ছে জার্মানির ক্ষমতাসীন দল

ফ্যাসিস্ট হাসিনা সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলন সংগ্রামে আহত, নিহত ও কারা নির্যাতিত নেতাকর্মীদের পাশে বিএনপি'র সব সময় থাকবে!

ফ্যাসিস্ট হাসিনা সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলন সংগ্রামে আহত, নিহত ও কারা নির্যাতিত নেতাকর্মীদের পাশে বিএনপি'র সব সময় থাকবে!

বিপ্লবী সরকারের উপদেষ্টা হবেন বিপ্লবী, তাদের চেতনা থাকবে গতিশীল: রিজভী

বিপ্লবী সরকারের উপদেষ্টা হবেন বিপ্লবী, তাদের চেতনা থাকবে গতিশীল: রিজভী

আয়ারল্যান্ড নারী ক্রিকেট দল এখন ঢাকায়

আয়ারল্যান্ড নারী ক্রিকেট দল এখন ঢাকায়

‘আন্তর্জাতিক আদালতের সিদ্ধান্তকে সম্মান জানাবে কানাডা’

‘আন্তর্জাতিক আদালতের সিদ্ধান্তকে সম্মান জানাবে কানাডা’

সৈয়দপুর রেলওয়ে কারখানাকে আধুনিকায়ন করা হবে- রেলপথ উপদেষ্টা

সৈয়দপুর রেলওয়ে কারখানাকে আধুনিকায়ন করা হবে- রেলপথ উপদেষ্টা

দেড় যুগ পর গোলাপগঞ্জে প্রকাশ্যে জামায়াতের কর্মী সম্মেলনে জনতার ঢল

দেড় যুগ পর গোলাপগঞ্জে প্রকাশ্যে জামায়াতের কর্মী সম্মেলনে জনতার ঢল

উইন্ডিজকে ব্যাটিংয়ে পাঠাল বাংলাদেশ

উইন্ডিজকে ব্যাটিংয়ে পাঠাল বাংলাদেশ