রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর রিসালাত সমগ্র সৃষ্টিকুলের জন্য
২৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ১২:০৮ এএম | আপডেট: ২৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ১২:০৮ এএম
নূর নবী মোহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর রিসালাত সমগ্র সৃষ্টিকুলের জন্য, বিশ্বের প্রতিটি ভাষাভাষীর জন্য। বিশ্বের প্রতিটি জাতি, প্রতিটি ভাষাভাষীর কাছে এ বাণী পৌঁছে দেয়া রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর দায়িত্ব ও কর্তব্য। এতদপ্রসঙ্গে মহান আল্লাহতায়ালা আল কুরআনে ইরশাদ করেছেন : {হে প্রিয় হাবীব (সা.)}! আপনি বলুন, হে মানুষ! নিশ্চয় আমি তোমাদের সবার প্রতি আল্লাহর রাসূল, যিনি আসমানসমূহ ও যমীনের সার্বভৌমত্বের অধিকারী। (আল আ’রাফ :১৫৮)। এই আয়াতে কারীমায় ইসলামের মূলনীতি সংক্রান্ত বিষয়াবলির মধ্য থেকে রিসালাতের একটি গুরুত্বপূর্ণ দিক আলোচিত হয়েছে।
রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর রিসালাত সারা দুনিয়ার সমস্ত জ্বিন ও মানবজাতি তথা কেয়ামত পর্যন্ত তাদের বংশধরদের জন্য ব্যাপক ও বিস্তৃত। এ জন্য নূর নবী মোহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ (সা.)-কে সাধারণভাবে ঘোষণা করে দেয়ার জন্য নির্দেশ প্রদান করা হয়েছে যে, আপনি মানুষকে বলে দিন : ‘আমি তোমাদের সকলের প্রতি নবী ও রাসূল-রূপে প্রেরীত হয়েছি। আমার নবুওয়াত লাভ ও রিসালাত প্রাপ্তি বিগত নবী ও রাসূলগণের মতো কোন বিশেষ জাতি অথবা বিশেষ ভূখণ্ড কিংবা কোন নির্দিষ্ট সময়ের জন্য নয়; বরং সমগ্র বিশ্ব মানবের জন্য। বিশ্বের প্রতিটি অংশ, প্রতিটি দেশ ও রাষ্ট্র এবং বর্তমান ও ভবিষ্যত বংশ ধরদের জন্য কেয়ামতকাল পর্যন্ত প্রলম্বিত ও পরিব্যাপ্ত।’ (কুরআনুল কারীম : অনুবাদ ও সংক্ষিপ্ত তাফসীর, খ.-১ প. ৮৩০)।
হাফেজ ইবনে কাসির (রাহ.) বলেছেন : এ আয়াতে কারীমায় রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর শেষ নবী খাতামুন্নাবিয়্যিন হওয়ার বিষয়ে ইঙ্গিত করা হয়েছে। কারণ, রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর আবির্ভাব ও রিসালাত যখন কেয়ামত পর্যন্ত আগত সমস্ত বংশধরদের জন্য এবং সমগ্র বিশ্বের জন্য ব্যাপক ও বিস্তৃত, তখন আর অন্য কোন নতুন রাসূল আগমনের প্রয়োজনীয়তা অবশিষ্ট নেই। (তাফসীরে ইবনে কাসির)।
অন্য এক বর্ণনায় এসেছে, নূর নবী মোহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ (সা.) তাবুক যুদ্ধের সময় গভীর রাতে তাহাজ্জুদের নামায আদায় করছিলেন। সাহাবায়ে কেরামের ভয় হচ্ছিল যে, শত্রুরা নাজানি এ অবস্থায় আক্রমণ করে বসে। তাই তারা রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর চারদিকে সারিবদ্ধভাবে দাঁড়িয়ে গেলেন। রাসূলুল্লাহ (সা.) নামায শেষ করে বললেন : আজকের রাতে আমাকে এমন পাঁচটি জিনিস দান করা হয়েছে, যা আমার পূর্ববর্তী নবী ও রাসূলকে দেয়া হয়নি। তার একটি হলো এই যে, আমার রিসালাত ও নবুওয়াতকে সমগ্র দুনিয়ার জাতিসমূহের জন্য ব্যাপক ও বিস্তৃত করা হয়েছে। আর আমার পূর্বে যতো নবী ও রাসূলই এসেছেন, তাদের আবির্ভাব ও দাওয়াত নিজ নিজ সম্প্রদায়ের সাথেই সম্পৃক্ত ছিল।
দ্বিতীয়ত : আমাকে আমার শত্রুর মোকাবেলায় এমন প্রভাব দান করা হয়েছে যে, তারা যদি আমার থেকে এক মাসের দূরত্বেও থাকে, তবুও তাদের উপর আমার প্রভাব বিস্তার লাভ করবেই। তৃতীয়ত : অবিশ্বাসী কাফেরদের সাথে যুদ্ধেপ্রাপ্ত মালে গণিমত আমার জন্য হালাল করা হয়েছে। অথচ পূর্ববর্তী উম্মতদের জন্য তা হালাল ছিল না। বরং এসব মালের ব্যবহার মহাপাপ বলে মনে করা হতো। তাদের মালে গণিমত ব্যয়ের পন্থা ছিল এই যে, আকাশ থেকে বিদ্যুৎ এসে সে সমস্তকে জ্বালিয়ে ভস্ম করে দিয়ে যেত।
চতুর্থত : আমার জন্য সমগ্র ভূমণ্ডলকে মসজিদ করে দেয়া হয়েছে এবং মাটিকে পবিত্র করার উপকরণ বানিয়ে দেয়া হয়েছে। যাতে-আমাদের নামায ভূখণ্ডের যে কোন অংশে, যে কোন জায়গায় শুদ্ধ হয়। কোন বিশেষ মসজিদে সীমাবদ্ধ না হয়। পক্ষান্তরে, পূর্ববর্তী উম্মতদের ইবাদত কেবলমাত্র উপাসনালয়েই হতো, অন্য কোথাও নয়। নিজেদের গৃহে অথবা মাঠে ময়দানে তাদের ইবাদত বা নামায হতো না। তাছাড়া যখন পানি ব্যবহারের সামর্থ্য না থাকে, তা পানি না পাওয়ার কারণে বা রোগ-শোকের কারণে হোক, তখন মাটির দ্বারা তায়াম্মুম করে নেয়া পবিত্রতা অর্জন ও অযুর পরিবর্তে যথেষ্ট হয়ে যায়। পূর্ববর্তী উম্মতদের জন্য এ সুবিধা ছিল না।
আর পঞ্চমটি হচ্ছে এই যে, আল্লাহ জাল্লাশানুহু তাঁর প্রত্যেক রাসূলকে একটি দোয়া কবুল হওয়ার এমন নিশ্চয়তা প্রদান করেছেন, যার কোন ব্যতিক্রম হতে পারে না। প্রত্যেক নবী রাসূলই তাদের নিজ নিজ দোয়াকে বিশেষ বিশেষ উদ্দেশে ব্যবহার করেছেন এবং সে উদ্দেশ্যও পূরণ হয়েছে। আমাকেও বলা হয়েছে যে, আপনিও কোন একটা দোয়া করুন? আমি আমার দোয়াকে আখেরাতের জন্য সংরক্ষিত করে রেখেছি। সে দোয়া তোমাদের জন্য এবং কেয়ামত পর্যন্ত ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ’ কালেমার সাক্ষ্যদানকারী যেসব লোক জন্মগ্রহণ করবে, তাদের কাজে লাগবে। (মুসনাদে আহমাদ : ২/২২২)।
হযরত আবু মূসা আশয়ারী (রা.) হতে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন : যে লোক আমার আবির্ভাব সম্পর্কে শুনবে, তা সে আমার উম্মতদের মধ্যে হোক কিংবা ইয়াহুদি নাসারা হোক। যদি সে আমার উপর ঈমান না আনে তাহলে জাহান্নামে যাবে। (মোসনাদে আহমাদ : ২/৩৫০)।
বিভাগ : শান্তি ও সমৃদ্ধির পথ ইসলাম