অহেতুক ও অবান্তর প্রশ্ন ত্যাগ করাই সদ্গুণ
০৫ মার্চ ২০২৪, ১২:৪৫ এএম | আপডেট: ০৫ মার্চ ২০২৪, ১২:৪৫ এএম
প্রশ্নকে বলা হয়ে থাকে অজ্ঞতার চিকিৎসা। প্রশ্নকে বলা হয়ে থাকে জ্ঞান বা ইলমের অর্ধেক। এটা তো তখনই বলা হয়, যখন প্রশ্ন করে কোনো ইলম হাসিল করা উদ্দেশ্য হয় প্রশ্নকারীর। প্রশ্নটি যদি অর্থবোধক ও ইতিবাচক হয় তাহলে আহলে ইলম ও প্রাজ্ঞজনদের উত্তরে জ্ঞানের নতুন সুন্দর ভুবন উন্মোচিত হয় প্রশ্নকারীর সামনে। কিন্তু প্রশ্ন যদি অর্থহীন, অহেতুক কিংবা বিভ্রান্তিকর হয়, তবে কি সে প্রশ্ন কোনো সুফল বয়ে আনে?
ফালতু ও বিরক্তিকর প্রশ্ন করা কি সমীচীন? কল্পিত কোনো বিষয় নিয়ে, তাৎপর্য ও উদ্দেশ্যহীন কোনো কৌতুহল নিয়ে প্রশ্ন সব বিবেচনা থেকেই নিরুৎসাহযোগ্য একটি প্রবণতা। এ প্রবণতা পরিত্যাগ করতে পারাই হচ্ছে সফলতা। রাসূলে আকরাম (সা.), সাহাবায়ে কেরাম ও পরবর্তী মনীষীগণের বাণী ও আমল থেকে এ বার্তাই পাওয়া যায়। হযরত মুআবিয়া (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেছেন, নবী (সা.) বিভ্রান্তিকর ও জটিলতা সৃষ্টিকারী প্রশ্ন করতে নিষেধ করেছেন।
হযরত সাহল ইবনে সা’দ (রা.) প্রমুখ থেকে বর্ণিত, রাসূলে আকরাম (সা.) কিছু প্রশ্নকে অপছন্দ করেছেন এবং সেগুলোকে মন্দরূপে চিহ্নিত করেছেন। তিনি বলেছেন, নিশ্চয়ই আল্লাহ তাআলা তোমাদের জন্য এটা কেন, ওটা কীভাবে (এমনতর জিজ্ঞাসা) এবং অধিক প্রশ্ন করাকে অপছন্দনীয় করেছেন।
হযরত আমীর ইবনে সা’দ ইবনে আবি ওয়াক্ক্সা (রা.) তার পিতাকে বলতে শুনেছেন যে, রাসূলে আকরাম (সা.) ইরশাদ করেছেন, মুসলমানদের ওপর সেই ব্যক্তি সবচেয়ে বড় নিপীড়নকারী যে মুসলমানদের জন্য নিষিদ্ধ নয় এমন বিষয়ে প্রশ্ন করার ফলে বিষয়টি নিষিদ্ধ হয়ে যায়।
তাউস থেকে বর্ণিত, হযরত উমর ইবনুল খাত্তার (রা.) মিম্বরে অবস্থান করা কালে বলেন, ‘ওইসব ব্যক্তির ব্যাপারে আমি আল্লাহর নামে সতর্ক করছি, যারা ভিত্তিহীন বিষয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করে। নিশ্চয়ই আল্লাহ তাআলা অস্তিত্ব আছে এমন সব বিষয়ই সুস্পষ্ট বর্ণনা করেছেন।’ তাউস বর্ণিত হযরত উমর (রা.)-এর আরো একটি বর্ণনা পাওয়া যায়। হযরত উমর বলেন, কোনো মানুষের জন্য বৈধ নয় এমন বিষয়ে প্রশ্ন করা, যা আসলে কিছুই নয়। নিশ্চয়ই আল্লাহ তাবারাকা ওয়া তাআলা যে বিষয়ের ভিত্তি রয়েছে সে বিষয়ে সিদ্ধান্ত ব্যক্ত করেছেন।
হযরত ইবনে উমর (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, হে লোক সকল! তোমরা এমন বিষয়ে প্রশ্ন করো না, যার কোনো ভিত্তি নেই। নিশ্চয়ই হযরত উমর (রা.) ভিত্তিহীন বিষয়ে প্রশ্নকর্তাকে অভিশাপ দিয়েছেন। আওযায়ী বলেন, যখন আল্লাহ তাঁর কোনো বান্দাকে ইলমের বরকত থেকে মাহরূম করতে ইচ্ছা করেন তখন তার মুখে অহেতুক ও বিভ্রান্তিকর কথা নিক্ষেপ করেন।
হযরত হাসান বসরী (রাহ.) বলেন, নিশ্চয়ই আল্লাহর বান্দাদের মাঝে মন্দ লোক তারা, যারা মন্দ প্রশ্ন করে এবং সেসব প্রশ্ন দ্বারা আল্লাহর বান্দাদের ফিৎনায় ফেলে দেয়। ইয়াহইয়া ইবনে আইয়ুব বলেন, আমার কাছে এ তথ্য পৌঁছেছে যে, প্রাজ্ঞজনেরা বলতেন, যখন আল্লাহ ইচ্ছা করেন তাঁর বান্দাকে ভালো কিছু শেখাবেন না তখন তাকে বিভ্রান্তিকর কথাবার্তায় নিমগ্ন করে দেন।
অহেতুক ও অবান্তর প্রশ্নে কোনো উপকার নেই। কিন্তু এ ধরনের প্রশ্নের কোনো সীমানাও নেই। দ্বীনী ইলমের পোশাক পরিয়েই এসব প্রশ্ন নিয়ে এক শ্রেণির মানুষকে ব্যাকুল হয়ে যেতে দেখা যায়। এগুলো হচ্ছে অবান্তর, অহেতুক ও বিভ্রান্তিকর প্রশ্ন। অধিকাংশ সময়ই মেধার চাতুর্য ও মনের বিলাস প্রবণতা থেকে এ ধরনের প্রশ্নের উদ্ভব হয়।
প্রশ্নকারীর নিজের কোনো ফায়দা যেমন এসবে জড়িত নেই তেমনি এসবের উত্তরের সঙ্গে বিশ্বাসগত, আমলগত কিংবা শরীয়ত প্রবর্তকের পক্ষ থেকে নির্দেশ ও নিষেধাজ্ঞাগত কোনো বিধানেরও সম্পর্ক নেই। এ ধরনের প্রশ্ন তো সাধারণভাবে উত্তরযোগ্য নয়ই, তবে তিরস্কার, তাচ্ছিল্য ও বিভ্রান্তি সৃষ্টির উদ্দেশ্যে এ ধরনের প্রশ্ন করা হলে নিঃসন্দেহে তা নিষিদ্ধ ও অবৈধ।
প্রশ্ন যদি জানার জন্য, বাস্তব ভিত্তিক ও প্রয়োজনীয় বিষয়ে হয় তাহলে উত্তরদাতা প্রশ্নকারীর চাহিদা পূরণ করতে পেরে তৃপ্তি বোধ করেন, শান্তি পান। সর্বোপরি তার ওপর অর্পিত ইলমী দায়িত্ব সম্পন্ন করতে পারার আনন্দ লাভ করেন। তাই আহলে ইলম ও প্রাজ্ঞজনকে দ্বীনের যে কোনো বিষয়ে প্রশ্ন করার ক্ষেত্রে সে প্রশ্নের বাস্তবতা, উপকারিতা সম্পর্কে পূর্ণ সচেতনতা বজায় রাখা সবারই প্রয়োজন।
বিভাগ : শান্তি ও সমৃদ্ধির পথ ইসলাম